somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গানের দেশে অশ্রুৎসব

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এমন দেশে জন্মেছি যেখানে প্রতিদিন ডজন ডজন মানুষ প্রতিদিন বিনা কারণে মারা যায়... কিছু বলার কেউ নেই... দেখার কেউ নেই । এখন এমন দেশে বাস করছি যেখানে একটি ইঁদুর মারতে হলে ডজন খানেক অনুমতি, স্বাক্ষর, লাইসেন্স এবং আরও কত কি লাগে । দেশের সাধারণ মানুষের জন্য খারাপ লাগা কখনও কখনও সীমা অতিক্রম করে যায়। কিছুই করার নেই?... এই এতিম বাচ্চাটিকে কে দেখবে?...?????????

""" পেট্রলবোমা হামলায় দগ্ধ ফলবিক্রেতা ফরিদ মিয়া আজ বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে মারা যান। বাবার মৃতদেহের পাশে কান্নায় ভেঙে পড়ে ছোট ছেলে মো. লিটন। ছবিটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ থেকে তোলা ( প্রথম আলো) """



উপরের কথাগুলো আমার না। আমাকে একজন মেসেজ হিসেবে পাঠিয়েছে ফেসবুকে। এমন মেসেজ আমি অহরহ পাই- এমন নয়। আমি এমন কেউ না যার সাথে এসব কথা শেয়ার করার ইচ্ছা অনেকের হবে। এসব শোনানোর জন্য আরো অনেক বড় বড় মানুষ আছেন।


গত কয়েক মাস ধরে দেশে যে ভয়ানক সহিংসতা চলছে তার সাথে আমাদের চেনা বাংলাদেশের মিল পাওয়া দুষ্কর। ছোট বেলায় বাংলা বইয়ের প্রথম যে রচনাটি পড়তাম সেখানে থাকতো আমাদের দেশের মানুষে মানুষে ভালোবাসার কথা, সৌহার্দ্যের কথা, আমাদের গানের কথা, আমাদের প্রাণে প্রাণে অদৃশ্য বন্ধনের কথা।

সেই সব যেন উড়ে গেছে হিংসা, হিংস্রতা, বিভেদ আর বিভ্রান্তির তীব্র প্রবাহে।

গত কয়েকদিন ধরে দেশের জন গোষ্ঠীর এক অংশের ওপর নির্যাতনের খবরে পত্র পত্রিকা আর অনলাইন জগত মুখর হয়ে আছে। আমি ইচ্ছে করে জনগোষ্ঠী বললাম- কারণ ধর্ম, বর্ণ বা অন্য কারণে বাংলাদেশের কাউকে আমি আলাদা বলে মনে করি না। সেটা সেই ছোট বেলার পাঠ্য বইয়ের প্রভাব। যা শিখে এসেছি তাই পালন করার চেষ্টা করছি।

বিষয়টাকে আমি বা আমার মতো অনেকে আলাদা করে না দেখলেও তা ঐতিহাসিকভাবে বারবার আলাদা করা হয়েছে। সেই দেশ বিভাগ বা তারও আগে, তারপর আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, আমাদের গণতন্ত্রের সংগ্রাম, আমাদের বেঁচে থাকা লড়াই- সব জায়গায় এই বিষয়টা সামনে এসেছে- সুযোগ মতো।

ধর্ম ততক্ষণ সমস্যা নয় কারো জন্যই যতক্ষণ না এর পেছনে কোন রাজনৈতিক ইন্ধন যুক্ত হয়। উপরের যতগুলো ঘটনার কথা বললাম সব জায়গায় রাজনৈতিত ইন্ধন ছিলো। এমনিতে আমাদের কখনোই অন্য ধর্মের কারো সাথে ওঠায় বসায় খাওয়ায় সমস্যা হয় না। কিন্তু যখনই রাজনৈতিক অস্থিরতা বা পট পরিবর্তন হয়, তখনই ওই বিষয়টা সামনে আনা হয়। কারণ তার মধ্যে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার সুযোগ আছে।


সংখ্যা দ্বারা কীভাবে একটি দেশের নাগরিকের লঘুত্ব বা গুরুত্ব নির্ধারিত হতে পারে তা আমার বোধগম্য নয়। বাংলাদেশে জন্ম, বাংলাদেশে বেড়ে ওঠা- এর বাইরে আর কোন পরিচয় থাকার প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না।

কিন্তু বিষয়টা এমন সহজ নয়। অন্তত বারবার আমরা তার প্রমাণ পেয়েছি। রাজনীতি যখন অপ হয় তখন যত পার্থক্য আছে দেশের মানুষে মানুষে সেগুলো সব খুঁজে নিয়ে ব্যবহার করে। আমাদের দেশে তাই হচ্ছে। নিজেদের ধ্বংস করার এর চেয়ে মহোত্তম আরো কোন উপায় নাই। আমরা ধ্বংসের মধ্যে মহত্ব খুঁজে নিয়েছি। গত কয়েকমাসে যে পরিমাণ প্রাণহানি হলো তার জন্য দায়ী মানুষগুলোকে আমরা চিনি। কিন্তু পাছে আমাদের মতামতের কারণে তাদের রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই ভয়ে আমরা কিছু বলি না।


আমরা রাজনৈতিকভাবে দাস শ্রেণির। সেই দাস মনোবৃত্তির পরিচয় আমাদের প্রতিটা আচারে ফুটে ওঠে।

সম্প্রতি কতবার যে দেখলাম নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসের বিপরীত কারো সহিংসতার খবরের উচ্ছ্বসিত প্রকাশ! বিষয়টা কেবল এমন নয় যে, সহিংসতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কষ্টে এগুলো শেয়ার হচ্ছে। এগুলো শেয়ার হচ্ছে কারণ এরফলে বিপরীত পক্ষকে একটা ভালো চাপে ফেলা যাচ্ছে।

কোথাও মানুষ মারা গেছে সেটার জন্য শোক প্রকাশ করার আগে আমরা চিন্তা করি সে কোন দলের। সে যদি বিপরীত দলের হয়- তবে ইন্নালিল্লাহ নয়, আলহামদুলিল্লাহ। আর সে যদি নিজের দলের হয় তবে- "এর প্রতিশোধ চাই।" আমাদের মানবতাবোধ ভীষণ সিলেক্টিভ। এই সিলেক্টিভ মনোভাবই সন্ত্রাস ও সহিংসতাকে উস্কে দিচ্ছে।


পৃথিবীর যেখানে যত সন্ত্রাস হয় তারজন্য মুসলমানরা যেমন ইউজুয়াল সাসপেক্ট, তেমনি বাংলাদেশে গত কয়েক বছরের সব সন্ত্রাসের জন্য একটি বিশেষ দলকে দায়ী করা হয়েছে। এ বিষয়ে সন্দেহ নেই যে তারা অনেকগুলো ঘটনার পেছনে ভুমিকা রেখেছে। সেটার প্রেক্ষাপটও আছে।

কিন্তু এই ঢালাও দোষারোপের ফলে অন্য একটা প্রবণতাও তৈরি হয়েছে। সেটা হচ্ছে এই সুযোগে যত রকম অপকর্ম সম্ভব করে ওই দলের ওপর দোষ চাপানো। এর ফলে হয়তো ওই দলটি আরো ঘৃনিত হবে (তারা ইতোমধ্যেই যথেষ্ট হয়েছে- তাদের খুব বেশি কিছু হওয়ার নেই আর।) আমরাও হয়তো তাদের বিরু্দ্ধে আরো মহা উৎসাহে প্রচারণা করতে পারবো। তাদেরকে দেখা মাত্র হত্যার পেছনে আরো শক্ত যুক্তি খুঁজে পাবো। কিন্তু তাতে মূল সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ তারা এই সমস্যার ছায়া।


একটি দেশ যখন সামগ্রিকভাবে অস্থিতিশীল হয় তখন এর অলি-গলিতে অপরাধ বিস্তারিত হয়। বাংলাদেশের অস্থিতিশীলতা এখন সামিগ্রক। এখানাকর প্রতিটা মৃত্যু, প্রতিটা অগ্নিকাণ্ড, প্রতিটা ধ্বংসয জ্ঞের জন্য প্রধান প্রধান প্রায় সবগুলো রাজনৈতিক দল দায়ী। আমরা এই কারণগুলো না দেখে শুধু সহিংসতাকে আলাদা করে দেখছি। ফলে যদিও আমাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধ হচ্ছে কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সহিংসতার শিকার অসংখ্য সাধারণ মানুষ।

মানুষে মানুষে পার্থক্য করতে চাইলে তার অগণিত পথ আছে। কিন্তু তাদের মধ্যে সদ্ভাব চাইলে উপায় কয়েকটা মাত্র।

যেমন একটা সহজ উদাহারণ দিই- আমরা যদি ধরে নিই, বাংলাদেশে জন্ম নেয়া প্রতিটা মানুষই এদেশের এবং যতক্ষণ সে নিজ মুখে দেশদ্রোহিতার কথা ঘোষণা না করে ততক্ষণ তাকে ওই দেশ বা সেই দেশের দালাল বলার দরকার নেই তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু সেটা না করে আমরা শত শত রাত বিনিদ্র থেকে প্রমাণ করে ছাড়ছি তুমি কিন্তু ওই দেশ বা সেই দেশের । তুমি বাংলাদেশি নও।


আমাদের অনেক সমস্যারই সমাধান হতে পারে কেবল বাংলাদেশ নিয়ে কথা বললে। ধর্ম, সাম্প্রদায়, জাতি, উপজাতি, টুপি, দাড়ি, ক্লিন শেভড মুখ, গির্জা, মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, ধুতি, পৈতা, লুংগি, প্যান্ট, ফতুয়া, জোব্বা, শর্ট পাঞ্জাবি, শাড়ি, সালোয়ার, টি শার্ট, জিন্স, কালো চশমা, লাল টিপ, সিদুর- এমন শত শত পার্থক্যের মধ্যে আমাদের কেবল একটা জিনিসই ধ্রুব- সেটা হচ্ছে- বাংলাদেশ।

আমাদের প্রিয় গানের দেশ যে আজ অশ্রুসজল তার কারণ আমরা একতার পরিবর্তে বিভেদে বুদ হয়ে আছি। এটা দূর করে আমাদের সব ভাবনার কেন্দ্র করা হয় যদি বাংলাদেশ তখনই কেবল আমাদের এই অশ্রুৎসব বন্ধ হবে।

নইলে আমরা যার যার মতো করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের এই মহান ধ্বংসের খেলায় দেশের হেরে যাওয়াটা দেখতেই থাকবো।




৯ জানুয়ারি
৮ উইনচেস্টার রোড, অক্সফোর্ড।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×