somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষ সকালের লেখা

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শেষ সকালের লেখা

একটু পরে এ বাসাটা ছেড়ে যাবার পালা শুরু করবো। কবে এসেছিলাম এখানে- ৮ উইনচেষ্টার রোডের এই তৃতীয় তলার ৮ নম্বর রুমে? গত বছর এই সময়ের দিকেই। আজ ছেড়ে যাবার কাল।
যাবো যেখানে সেখানটা গতরাতে দেখে এসেছি। সেই রুমে ঢুকে এক ধরনের শিরশিরে অনুভূতি হচ্ছিল। সেটা কেবল একটা থাকার জায়গা নয়। সেটা একটা বিরাট দায়বদ্ধতাও। আসবাবগুলো পরিষ্কার করে রাখা। টেবিলটা, চেয়ারগুলো পরিচচ্ছন্ন। আমি একে একে ওগুলো পরখ করলাম- হ্যাঁ আমাকে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত এখন ওরা।

খানিকক্ষণ সেই ফাকা রুমের বড় চেয়ারটায় বসলাম। অদ্ভুত অনুভূতি হলো। নির্বাচিত রাষ্ট্রনায়কেরা প্রথম যখন তাদের নতুন বাসভবনে বা অফিসে প্রবেশ করেন তখন নিশ্চয়ই তাদের এমন অনুভূতিই হয়। পুরনো আসবাব, পুরনো দেয়াল, ছবি- অনেকের অনেক স্মৃতি ধরতে ধরতে নিজেরা বিবর্ণ হয়ে যাবার পথে প্রায়।

৮ উইনচেষ্টারে যখন এসেছিলাম- জীবন একরকম ছিলো। এখন এর জটিলতা আরো বেড়েছে। অনেক বেড়েছে। এতটাই বেড়েছে যে মাঝে মাঝে একে হারিয়ে ফেলারও ইচ্ছে জেগেছে মনে। আমি যখন এখানে এসেছিলাম মনে মনে বলেছিলাম যখন বের হবো এখান থেকে একটা অন্যজীবন নিয়ে বের হবো। সেই অন্য জীবনটা নানানভাবে দেখেছি। কতগুলো এতটাই রঙিন যে সেগুলোর দিকে তাকিয়েই থাকি। কত হাসি আনন্দের স্মৃতি গড়েছি এখানে! আর কতগুলো ততটাই বিবর্ণ- কত নির্ঘূম রাত, আত্মবঞ্চনার সময়ও গেলো এখানে।

গতকাল শেষবারের মতো দু'জন বন্ধু আসলো। ওদের সাথে একটা দুপুর বিকেল কাটলো অনন্য। হাসি আনন্দে। কোথা দিয়ে পাঁচ ঘণ্টা সময় পাড় হয়ে গেলো! এমনভাবে দিন কাটে না এখন সহসা। কতগুলো জটিলতা মাথা থেকে বের হয় না কখনোই। সব হাসি আনন্দের মধে্য হাজির হয়ে মাথার পেছনের কুঠরিতে নড়চড় করে- মৃতপ্রায় কেঁচোর মতো বিশ্রীভাবে। গতকালও করলো।

আজ দিনটা উজ্জ্বল। এই সেপ্টেম্বরেও খুব চমতকার আবহাওয়া এখানে। কিছু কিছু গাছের পাতারা লাল হলুদ হয়ে শীতের আগ্রাসনে নিজেদের সমর্পনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ল্যাবে যাওয়ার পথে আশপাশে দেখি ব্ল্যাকবেরির ঝাড়ে উপচে পড়ছে কালো পাকা বন্য ব্ল্যাকবেরি! ইউনিভার্সিটি পার্কে নতুন ফুলের আগমন হয়েছে। সেখানে কখনো ফুলোর কমতি থাকে না। একটা যায় আরেকটা আসে। মাঠের ঘাসগুলোর বাড় বাড়ন্ত।

আমার এই বাসার পেছনে বড় বেশ বড় একটা গার্ডেন। সেখানে গতকাল বসলাম বন্ধুদের সাথে। স্মৃতিচারণ হলো, অযথা কথা হলো, নিষিদ্ধ শব্দের হিউমার হলো।

একজন মানুষের জন্য যত বড় রুম দরকার ততটাই আদর্শ আকারের রুম ছিলো আমার। জানালায় তাকালে উচু গাছের সবুজ আর গাড় বাদামী পাতার উপরে আকাশ দেখা যেতো। বৃষ্টি পড়তো যখন আমি মুগ্ধ হয়ে ওদের অবিরাম আছড়ে পড়া দেখতাম সবুজ ঘাসে, লনের ভেঙে পড়া টেবিলে, বাগানের ওপাশের বাড়ির ছাদে।

এক ধরনের প্রচণ্ড ভালোলাগার মতো নিরবতা ছিলো এখানে। সভ্যতার মধ্যে থেকেও মনে হতো কোথায় আলাদা হয়ে আছি। মাঝে মাঝে র্গিজার ঘণ্টাধ্বনি আর দূরের রাস্তায় পুলিশের গাড়ি বা এ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দ কানে আসতো কেবল নীরবতার পর্দা ভেদ করে।

যা যা করতে চেয়েছিলাম এই রুমে ঢোকার সময় তার অনেক কিছুই করা হয় নি। তারপরও জীবন এগিয়েছে। সময়ের সাথে সাথে।

এখানকার আগে ছিলাম গ্রাজুয়েট সেন্টারের রুমে। সে জায়গাটাকেও ভালোবেসেছিলাম। ছেড়ে আসার সময় ভেবেছিলাম- প্রায়শই ওখানটায় গিয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসবো। বলাবহুল্য সাকুলে্য সেখানে দুই বা তিনবার গিয়েছি গত এক বছরে।
আজও মনে হচ্ছে এইখানে, এই বাগানে প্রায়শই আসবো। খানিকটা নিরবতার জন্য হলেও আসবো।
হয়তো আসা হবে না। হয়তো নতুন জায়গাটার ব্যস্ততা, দায়, দায়িত্ব আর জীবনের নতুন কোলাহলে এই নিরবতাটুকু উপভোগ করার সময় পাবো না।
তারপরও এই জায়গাটা, এই কক্ষটা, এই বাগানটা, ওখানকার আপেল গাছটা, বুনো ঝোপটা আর খুব যত্ন করে কয়েক শিক্ষার্থীর লাউ কুমড়ার ছোট্ট প্লটগুলো চোখের সামনে ভাসবে।

জীবনের খুব অল্প বিষয় নিয়েই অনুশোচনা করি আমি। সবসময় ভালো কিছুর চেষ্টা থাকে। হয়তো নিদারুণ ব্যর্থ হয়েছি, হচ্ছি অনেক কিছুতেই। শুধু জানি উদ্দেশটা ভালো ছিলো। সেটা নিশ্চয়ই অন্তরীক্ষে কেউ একজন হিসেব রাখেন। এই ৮ উইনচেস্টার রুমের ৮ নম্বর কক্ষ থেকে বের হবার সময়ে এই বোধটাই সাথে করে নিয়ে যাচ্ছি।



৮ উইনচেস্টার রোড
অক্সফোর্ড
৭/৯/১৪
সকাল ১০.২৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×