somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপ্রাসঙ্গিক প্রলাপ

১৮ ই এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চারটা বেজে গেছে। আজান দেবে একটু পর। জানলার ওপাশের আকাশ মিশ কালো নয়, আবছা আলো আছে।

বাবার ডাকাডাকিতে সেদিন ঘুম ভাঙার পর আবিষ্কার হলো যে ততক্ষণে সেহরির সময় শেষ। বাপ-বেটা না খেয়েই রোজা রেখে দিলাম। সেটা সমস্যা না, এমন রোজা বহু রাখা হয়েছে। সমস্যা শুরু হলো পরের রাত থেকে যখন একাধিক আত্মীয় সেহরির সময় ফোন দেয়া শুরু করলেন ঘুম থেকে তুলতে। এমনই চলছে প্রতিদিন। কী বিপদ!

সেদিন ইউটিউবে একটা ভিডিও দেখলাম (ফেসবুক, ব্লগের নেশা কেটে এখন ইউটিউবে পেয়েছে। লিংকডইনেও বসা হয় ভালোই)। মানুষকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলার পেশার ভিডিও। আপনি আগে থেকে জাগিয়ে রাখলে ভোর বেলা আপনার জানলার নিচে এসে একজন বাঁশির মতো একটা চিকন চোঙ্গা দিয়ে ছোট ছোট নুঁড়ি পাথর জানলায় ছুঁড়ে মেরে আপনার ঘুম ভাঙাবে।রস্মার্টফোনের যুগে এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙানোর বদলে এমন ব্যবস্থায় ঘুম ভাঙার সুযোগ এখনও আছে যেন অবাক হই। ভালোও লাগে। তবে পুরো ব্যাপারটায় হিউম্যান টাচ টাইপ ধরণের কাব্যিক ব্যাপার-স্যাপারের চেয়েও বেশি আছে দারিদ্র্যতার ছায়া। ওসব মানুষদের আসলে মোবাইল কেনার সামর্থ্য নেই।

আমার যখন নিতান্তই শৈশব তখন দেখেতাম রাস্তা দিয়ে এলাকার উৎসাহী মানুষজন চিৎকার চেঁচামেচি করে যেতে যেতে প্রতি রাতে সবার ঘুম ভাঙ্গাতো। ঘুম ভেঙে ওঠার পর মসজিদের মাইকে কানে আসতো একের পর এক সুরেলা বা অত্যন্ত বেসুরো হামদ, নাত, গজল। " আর মাত্র দশ মিনিট বাকি ", " আর মাত্র দুই মিনিট বাকি " জাতীয় লাগাতার ওয়ার্নিংয়ে সেহরি শেষ হয়ে যাচ্ছে তাড়াহুড়োয় পানি খেতে খেতে পেট ফুলিয়ে ফেলার পরও তৃষ্ণা না মেটার অনুভূতি মনে রাখার মতোই।

পানি যতই খাওয়া হোক, সব তৃষ্ণা তো আর মেটার নয়।

লালন মরলো জল পিপাসায়
থাকতে নদী যমুনা...
(অপ্রাসঙ্গিক কোটেশন)

লক্ষ্য করি হুজুরেরা ইদানীং খুবই দায়সারা হয়ে গেছেন। কেবল আজানটা ছাড়া সেহরির সময়ে তাদের সাড়াশব্দ পাওয়া খুবই দুষ্কর। মসজিদের মাইকে বাচ্চা-বাচ্চা গলায় হামদ, নাত তো নেই-ই। থাকবেই বা কী করে? করোনার জন্যে মাদ্রাসা ফাঁকা । সেইসব ছাত্রগুলো নেই .. খুব দরিদ্র পরিবার যেখানে খাবার জোটানোই কঠিন, কিংবা সবচেয়ে অমনোযোগী, দুষ্ট বাচ্চাটা যার উপর বাবা-মা'র রীতিমতো হাঁফ ধরে গেছে, অথবা সন্তানকে হাফেজ বানিয়ে নিজে মুফতে জান্নাতে যেতে চাওয়া বাবা-মা, স্বজন থাকা পরিবারের বাচ্চাগুলো। এদের আসল নাম মুছে যাবে কৈশোরের আগেই, অমুকের মা - তমুকের বউ পরিচয়ে যেমন মেয়েদের নাম ফিনাইল গোলা পানিতে ধুঁয়ে মুছে যায়, পরিচয় থাকবে একটাই - হুজুর।

সেহরিতে ঘুম থেকে ওঠা ছোট বেলায় খুব কষ্টসাধ্য কাজ ছিলো... আর এখন দেখা যায় ঘুমাতে যাওয়াই হয় সেহেরি খাওয়ার পর। আজ যেমন হলো।

প্রলাপ তো অপ্রাসঙ্গিকই হয়। প্রাসঙ্গিক প্রলাপ বলে কিছু থাকার কথা না।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×