somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বকচর : ঢাকার অদূরে সবুজের রাজধানী

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




রানা ভাই বললেন – দ্যাখো, নদী।
আমি বললাম – জ্বী, রানা ভাই। এটা হাগুগঙ্গা নদী। অতীতকালে এর নাম বুড়িগঙ্গা ছিল।


রানা ভাই হাসতে হাসতে বললেন, একদম ঠিক বলেছো। পানি একেবারে কালো বিষ হয়ে গেছে। আমি সম্মতি জানালাম, আসলেই তাই। এইটা হইলো হাগুগঙ্গা। আরেকটা নদী পাবো সামনে যার বর্তমান নাম হাগেশ্বরী, পূর্বে ছিল ধলেশ্বরী।


বৃহস্পতিবার বিকেলে ঠিক করা হলো আমরা যাব পাখির সন্ধানে। ঢাকার কাছাকাছি গ্রামের সন্ধান করতে ফোন দিলাম তুষার ভাইকে। তুষার ভাইয়ের সাথে অনেক ট্যুর করেছি আমি। অভিজ্ঞ লোক। তুষার ভাই বললেন মানিকগঞ্জ বা এর আশেপাশে যেতে। তারপর ওখান থেকে গ্রামগঞ্জ নদী-নালা ঘুরে দেখতে। তুষার ভাইয়ের পরামর্শ মেনে আমরা সিংগাইর যাওয়ার প্ল্যান করলাম। আমরা মানে আমি আর রানা ভাই, সাথে রানা ভাইয়ের সেই বিখ্যাত আমেরিকা থেকে আনা ক্যামেরা। উদ্দেশ্য একটাই – মাঠেঘাঁটে ঘুরে পাখির ছবি তোলা।


সকাল সাড়ে দশটায় গাবতলী থেকে রওনা দিলাম ‘শুকতারা’ নামক সিটিং কাম লোকাল বাসে। সিংগাইর পর্যন্ত ভাড়া ৪০টাকা করে। একঘন্টারও কম সময়ে আমরা পৌঁছে গেলাম সিংগাইর বাস স্ট্যান্ড। যাওয়ার পথে বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরীর নতুন নামকরণ করলাম যথাক্রমে হাগুগঙ্গা এবং হাগেশ্বরী। রানা ভাই হেসেই খুন। আমি বলি, এটাই প্রকৃত নাম রানা ভাই। এইগুলাকে নদী বললে নর্দমাও লজ্জা পাবে।


সিংগাইর নেমে আমরা প্রথমে একটা হোটেলে বসে খেয়ে নিলাম। গরুর মাংস, বেগুন ভর্তা, আলু ভর্তা, মিক্সড সবজি, আর ডাল। খাওয়া দাওয়া শেষ করে বেরিয়ে পড়লাম আশপাশের ক্ষেতখামারে। শীত শীত আবহাওয়ায় রোদের মৃদু তাপ মাথায় নিয়ে আমরা ধানক্ষেত, সরিষাক্ষেত কিংবা ফাঁকা মাঠের ভেতর ক্যামেরাবাজি করছি।


ক্যামেরা হাতে মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়ানো ভীষণ আনন্দের। সবসময় চোখ আর কান সতর্ক রাখতে হয়। যাতে করে পাখির সামান্যতম নড়াচড়া বা ডাক মিস না হয়। খুব সতর্কতার সাথে আস্তে আস্তে হেঁটে আমরা অনেকগুলো সাদা বকের খুব কাছাকাছি গিয়ে ছবি তুললাম। আহা, কী আনন্দ!


ছবি তুলতে তুলতে একসময় জুম্মার নামায পড়ার জন্য আমরা গ্রামের একটা মসজিদে যাত্রা বিরতি দিলাম। গ্রামের মসজিদ হলে কি হবে, একেবারে পাকা। এসিও আছে ভেতরে। নামায আদায় করে আবার নেমে পড়লাম রাস্তায়। একটা পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে আমি আর রানা ভাই টুনটুনি পাখির ছবি তোলার চেষ্টা করলাম। টুনটুনি এত ছটফট করে যে ভালো কোনো শট নেয়া গেল না। তবে একটা মাছরাঙার ছবি পেলাম সুন্দর।


পাখির একটা সুন্দর ছবি তুলে ফেলতে পারলে যে আনন্দ হয় তা অতুলনীয়।


সিংগাইর থেকে আমরা গেলাম ধলেশ্বরী নদীর পাড়ঘেষা বকচর নামক গ্রামে। ধলেশ্বরীর পানিতে এখন বিষ। এর একপাড়ে সারি সারি ট্যানারি। এর সকল বর্জ্য এসে পড়ছে ধলেশ্বরীর বুকে। নদীর এমন দূষণ দেখে মন খারাপ হলো আমাদের


যাহোক, আমরা নদীর অপর পাড়ের সবুজে হাঁটতে থাকলাম। জায়গাটার নাম বকচর। বকচরের মাটিতে নানারকম সবজির চাষ। মিষ্টিকুমড়া, লাউ, পটল, বরবটি, শিম, ধনিয়া পাতা, বেগুন, ভুট্টা, নানারকম শাক, কি নেই এখানে। আর এই সব ক্ষেতের মধ্যে এসে বসছে ঝাক ঝাক পাখি। বুলবুলি, কসাই, সাদা বক, মুনিয়া, ঘুঘু, শালিক, ফিঙে, মাছরাঙা আরও কতো নাম-না-জানা পাখি। মাটির মেঠোপথও আছে এখানে। সে পথ ধরে হেঁটে যেতে দারুণ লাগে।


এক চাষী ভাইয়ের সাথে কথা হলো। উনি উনার বাড়ির গরুর জন্য ঘাস কাটছিলেন। কথায় কথায় জানলাম উনি সৌদি ছিলেন ১৮ বছর। তারপর দেশে ফিরে এসেছেন। এখন ক্ষেতখামার করেন। এভাবেই চলছে তার দিনকাল।


বকচর আমাদের মন ভালো করে দিল। চারিদিকে সাদা বকের উড়াউড়ি চোখে বন্দী করে নিলাম আমরা। তারপর ক্যামেরাবাজি শেষে ঠিক সন্ধ্যা নামার মুখে নদীর পাড়ে বসে থাকলাম কিছুক্ষণ। রানা ভাই পড়ন্ত সূর্যের ছবি তুললেন। আমি মোবাইলে মৃদু গান ছেড়ে দিয়ে নদীর দিকে চেয়ে থাকলাম। এভাবে একটা চমৎকার দিন শেষ হয়ে এলো।


চরাচরে সন্ধ্যা নামিয়ে দিয়ে আমরা ফিরে এলাম আবার কংক্রিটের এই বিষাক্ত শহরে, জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে।























কিভাবে যাবেন?

বকচর

গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে শুকতারা বা মানিকগঞ্জগামী যে কোনো বাসে করে চলে যাবেন ধলেশ্বরী ব্রিজ। ব্রিজ পার হয়েই বাস থেকে নামতে হবে। এবং তারপর ব্যাটারি চালিত রিকশায় মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছানো যাবে বকচরে। গাবতলী থেকে মাত্র ৩০-৪০ মিনিটেই পৌঁছানো যায়। বাস-রিকশা মিলিয়ে খরচ মাত্র ৫০/৬০ টাকা।


সিংগাইর

ঢাকার গাবতলী থেকে ‘শুকতারা’ নামক বাসে করে সিংগাইর বাস স্ট্যান্ড। ভাড়া ৪০ টাকা মাত্র। সময় লাগবে ৪০/৫০মিনিট। তারপর ঘুরে দেখুন আশপাশের গ্রামগঞ্জ, মাঠঘাঁট।


[ ট্রাভেলিং এর ক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন যেন আপনার দ্বারা পরিবেশের কোনো ক্ষতি না হয়। ময়লা আবর্জনা অবশ্যই যথাস্থানে ফেলবেন কিংবা ব্যাগে করে নিয়ে এসে বাসায় ডাস্টবিনে ফেলবেন। ]


সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:০১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×