প্রযুক্তিগত উন্নতির কারনে বিশ্বব্যপী শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে আসছে। যন্ত্রই এখন প্রচুর জায়গায় মানুষের স্থান দখল করে নেয়াতে দেশে বিদেশে বাড়ছে বেকারত্ব । নতুন শ্রমবাজার তৈরীতে বিশ্বব্যাপী বিগত কয়েক বছরে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে পর্যটন শিল্প। এই খাত থেকেই এখন সবচেয়ে বেশি টাকা উপার্যন করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। মুসলিম দেশগুলো আগে পিছিয়ে থাকলেও এখন পর্যটন শিল্পে দারুন এগিয়ে গেছে বেশ কিছু দেশ যার মাঝে উল্ল্যখযোগ্য হচ্ছে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। সারা বছরব্যপী বিদেশী টুরিস্ট দিয়ে ঠাসা থাকে দেশগুলো। প্রাকৃ্তিক সৌন্দর্যের দিক দিয়ে আমাদের দেশও কোন অংশেই পিছিয়ে নেই। ইউরোপিয়ান টুরিস্টদের কাছে দারুন জনপ্রিয় মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার বিখ্যাত টুরিস্ট স্পট পেনাং, লাংকাউই, জেন্টিং , কিংবা বালি গেলে মনে হবে যে আমাদের দেশের কক্সবাজার , সিলেট,সুন্দরবন এসব জায়গাগুলোর চাইতে আরো অনেক বেশি সুন্দর। এ্সব জায়গা ছাড়াও আমাদের দেশের অন্যান্য জেলাতেও রয়েছে বহু দর্শনীয় স্থান।
কয়েকবছর আগে পারিবারিক ট্যূরে সিলেটের শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে গিয়ে পর্যটন কর্পোরেশনের একটি হোটেলে উঠেছিলাম। পাহাড় ও বন জঙ্গলের মধ্যে নির্মিত হোটেলটি এক কথায় অপুর্ব । ডিসেম্বর মাস সাধারনত টুরিস্ট সিজন, কিন্ত অবাক হয়ে দেখেছিলাম যে, হোটেলটি বলতে গেলে খালি। এত বড় হোটেলে আমরা ছাড়াও আর দুই তিনটি পরিবার কেবল ছিল সেখানে। ভাবছিলাম যে, এই জায়গাটি যদি মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে হত তাহলে টূরিস্ট দিয়ে ভরা থাকতো জায়গাটা।
একটা টুরিস্ট জোনে প্রচুর মানুষের কর্ম সংস্থান সম্ভব। ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরন করার যে কথা বারবার বলা হয়, তা এই পর্যটন শিল্পকে সম্প্রসারন করার মাধ্যমেই করা সম্ভব। তবে আমাদের দেশে পর্যটন শিল্প সম্প্রসারনে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে আমাদের দেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি। অনালাইনে How safe is Bangladesh to travel লিখে সার্চ দিলে দেখা যায় বাংলাদেশ high risk এলার্ট দেয়া একটি দেশ। কারন হিসেবে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন খারাপি, ড্রাগ ইত্যাদি ভয়ঙ্কর অপরাধের বিবরন পাওয়া আয়। এছাড়া নরবরে সিস্টেমের এয়ারপোর্ট আর ট্রাফিক জ্যামতো আছে।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক ও ট্রাভেল ব্লগার লিউক ডেম্যান্ট ফেসবুকে একটি ট্রাভেল ভিডিও আপলোড করেন। সেখানে দেখা যায়, কারওয়ান বাজার থেকে একজন বয়স্ক লোক তার সাথে বিরক্তিকর আচরণ করছে। লিউক ডেম্যান্ট এর ফেসবুকে প্রায় ৩.২ মিলিয়ন ফলোয়ার। এই ভিডিওটি ফেসবুকে আপলোড করলে সেটা নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। আর এরপরেই আমাদের নেট দুনিয়ার টার্গেট হয়ে পড়েন লিউক। তার চরিত্র হননে নেমে পড়েন হাজারো বাঙ্গালী। এমন নেতিবাচক ভিডিও আপ্লোড করাটা তার একেবারেই ঠিক হয়নি , তিনি আসলে ধান্দাবাজ ও খারাপ প্রকৃতির মানুষ ইত্যাদি ইত্যাদি!!!
এসব পোস্ট পড়ে কিছুটা দ্বিধায় পড়ে যেতে হয় এই কারনে যে, তাহলে কি অপ্রীতিকর ঘটনার খবর প্রকাশ করাটা অন্যায়? একজন মানুষ সে দেশি বা বিদেশী হোক , সে যদি অপ্রীতিকর কোন ঘটনার সম্মুখীন হন, তাহলে সেতো তার চারপাশের মানুষকে সচেতন করতে চাইতেই পারে। তার ভিডিও কন্টেন্ট ঠিক করে দেয়ার আমরা কে ? একজন বাংলাদেশী হিসেবে আমাদের বরং কালু মিয়ার এহেন আচরনের জন্য লজ্জিত হওয়া উচিত এবং এ ধরনের কর্মকান্ড কিভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে লেখালেখি করা উচিত। দেশের ভাবমুর্তি উদ্ধারে আমাদের দেশ যেন high risk এলার্ট থেকে safe zone এ আসতে পারে সে বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া উচিত। বিদেশী ট্যভেল ব্লগারদের আমাদের বস্তি , ট্রাফিক জ্যাম বা অপরাধ্মুলক ভিডিও আপ্লোডের সমালোচনা করে আর যাই হোক দেশের ভাবমুর্তি উন্নয়নে কোন ভুমিকাই রাখা সম্ভবপর হবে না।