অরূপ গাঙ্গুলী বুঝতেই পারছে না, জিনিসটা আসলে কি? চোখেমুখে একরাশ কৌতুহল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। তার ডান হাতের তালুতে একটা থকথকে মাংসপিন্ড। বহুক্ষণ ধরে বস্তুটিকে চেনার চেষ্টা করছে অরূপ। তার পাথরের মত চোখদুটো একদম স্থির। যেন ভুলেই গেছে পলক ফেলতে। বাম হাতে একটা স্বচ্ছ কাঁচের বোতল। হঠাৎ দেখে মনে হতে পারে, পা দুটো মাটির গভীরে গাথা। বুকের বাঁ দিকে একটা গর্ত। মাথাটা যদিও একটু নিচের দিকে হেলে আছে, চেহারা বুঝতে কোন অসুবিধাই হয় না। অস্থিরতার বাস্তব চিত্র অরূপ। মানুষের মাথার রঙ কখনো এমন হয়! সোজা কথায় বলা যায় অরূপের ন্যাড়া মাথাটায় আগুন জ্বলছে। পুরোপুরি জ্বলন্ত কয়লার মতই মনে হচ্ছে খুলিটাকে। সমগ্র দেহের মধ্যে শুধুমাত্র পুরুষাঙ্গটাই নড়েচড়ে উঠছে হঠাৎ হঠাৎ। আর কোথাও কোন স্পন্দন নেই।
সে ভাবছিল তার হাতের বস্তুটির কথা। কি হতে পারে এটা? গা বেয়ে টপটপ ঝরে পড়ছে লাল তরল। হতে পারে সেটা রক্ত। নড়াচড়া নেই কোন। তার চল্লিশ বছরের জীবনে জমানো স্মৃতির সবগুলো পৃষ্ঠা সে একে একে উল্টাতে থাকল। নাহ, মনে পড়ছে না কিছুই। এই আকৃতির মাংসপিন্ড সে কোথায় দেখেছে? আবার ভাবল সে।
অরূপকে কাঁপিয়ে দিয়ে লাফিয়ে উঠল বস্তুটি। এবং লাফাতেই থাকল একটা নির্দিষ্ট ছন্দ অনুসরণ করে। বুকের ভিতর অন্তহীন শুন্যতা অনুভব করল অরূপ। এই প্রথম সে তাকাল তার বুকের গর্তটার দিকে। সাথে সাথেই মুখটা বিবর্ণ হয়ে গেল। সে চিনতে পেরেছে তার হাতে ধরা বস্তুটি। আর একটু ভাল করে জিনিসটাকে পর্যবেক্ষণ করল বস্তুটি এবং এর গায়ের উপর লেখা নিজের নামটাও চিনতে পারল। নিজের হৃদপিন্ড হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অরুপ।
সে বুঝতে পারল না এখন সে কোথায় । বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে। নিজের হৃদপিন্ড হাতে নিয়ে কি কেউ বেঁচে থাকতে পারে? অবশ্য হৃদপিন্ডটা থেমে নেই। নিজের নিয়মেই নড়াচড়া করছে। তাছাড়া নিজের পুরুষাঙ্গের উত্তেজনাও অনুভব করছে অরুপ। সে নিশ্চিত হল। একজন পুরুষ সে। এবং বেঁচে আছে। নিজের শরীরের উত্তাপ সে নতুন করে টের পেল। নতুন করে জেগে উঠছে সে। তীব্র দহনে পুড়ে যাচ্ছে তার জৈব সত্তা। কামনার দহন! শুধু কি এইজন্যই বেঁচে আছে সে? নিজেকে প্রশ্ন করল অরুপ। কোষে কোষে পৌছে গেল প্রশ্নটা। সত্যিই কি বেঁচে আছে সে?
চোখদুটোকে সে স্বাধীনতা দিল সবকিছু দেখার। খুব ধীরে নড়ে উঠল দুটো পাথরের দরজা। যেন এইমাত্রই জন্ম হয়েছে চোখ দুটোর। এই মুহূর্তে যা সামনে আসবে তাই হবে তার দেখা প্রথম দৃশ্য। চারপাশে তাকাল অরুপ। এবং অবাক হল। সে একা নয়। তার মত অনেকেই এখানে দাঁড়িয়ে আছে হৃদপিন্ড হাতে নিয়ে। একটা ছোটখাট ঘর। ডাক্তারের চেম্বারের মত। পার্থক্য এই এখানে কোন বসার জায়গা নেই। সব রোগীই দেখতে একরকম। নগ্ন, একহাতে হৃদপিন্ড অন্যহাতে বোতল। দাঁড়িয়ে আছে পাথুরে মূর্তির মত। সমস্বরে চিৎকার করে উঠল মূর্তিগুলো। অরুপ তাকিয়ে দেখল তার পুরুষাঙ্গটা নেই। কারোরই নেই। উরুসন্ধিতে একটু যন্ত্রণা হচ্ছে বটে, কিন্তু কমে গেছে শরীরের সব জ্বালা। সেই সাথে মনের জ্বালা। বেঁচে থাকা বা মরে যাওয়ার মধ্যে কোন দেয়ালই নেই এখন। লিঙ্গহীন মানুষের কি কোন জীবন আছে?
ঘরের ঠিক মাঝখানে রক্তবর্ণ একটা টেবিলের সামনে যে মেয়েটি বসে আছে, অরুপ ভাবল সেই সম্ভবত ডাক্তার। আগাগোড়া শুভ্র সে। পুরো শরীরটা ঢাকা শ্বেত চামড়ার আবরণে। তার নগ্ন বুকে যেন লুকিয়ে আছে সুন্দরতম স্বর্গ। লাল টেবিলটা থাকা সত্বেও অরুপ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে তার সাদা যোনী। সাদা মুখ থেকে ছড়িয়ে পড়ছে এক অলৌকিক দীপ্তি। মেয়েটির চোখ দুটোই তাকে দিয়েছে অপার্থিব বিশেষত্ব। ভয়ঙ্কর সুন্দর! আর কোন শব্দ খুঁজে পেল না অরুপ। বন্ধ করে রাখা পাপড়ি খুলে ফেলল মেয়েটা। ভয়ে শিউড়ে উঠল অরুপসহ সবগুলো মূর্তি। মেয়েটার চোখে আগুন। আবার পুড়তে থাকল অরুপ। না, কোন রকম কামনা জেগে উঠেনি তার মনে। তার তো পুরুষাঙ্গই নেই। সে এখন পুড়ছে ক্রোধের আগুনে। পঁচা অতীত যার সলতে। মেয়েটার চোখ থেকে ঠিকড়ে বেরুচ্ছে ক্রোধ।
- আমরা এখানে কেন এসেছি?
ভাবল অরুপ।
- তোমাদের আত্মাকে শুদ্ধ করতে।
অদৃশ্য এক কনঠস্বর উত্তর দিল।
সাথে সাথে অস্থির হয়ে উঠল সবগুলো ছায়ামূর্তি। খুঁজতে লাগল চতুর্দিকে। কোথায় সেই অদৃশ্য উত্তরদাতা।?
ভাবল সবাই।
-তোমার নিজের ভিতরেই খুঁজে দেখছোনা কেন? লিঙ্গহীন পুরুষ!
সেই শুভ্র নারীর ঠোঁট হতে কথাগুলো বের হল এবার। আর ভয়ে চুপসে গেল অস্থির মূর্তিগুলো। মেয়েটার সামনের টেবিলের উপর রাখা আছে তাদের কর্তিত পুরুষাঙ্গ। সবাই মনোযোগ দিল সেই আশ্চর্য নারীর দিকে। অরুপ দেখল নারীর নতুন রুপ। এতকাল সে নারীকে শুধুমাত্র নমনীয় লাউডগাই ভেবে এসেছে। যার নিজের কোন শক্তি নেই, ইচ্ছে নেই , আকাঙ্খা নেই। এমনকি পুরুষের সাহায্য ছাড়া নিজের অস্তিত্বটুকু টিকিয়ে রাখার ক্ষমতা পর্যন্ত নেই। লাউডগা যেমন বেঁচে থাকে অন্য কারো আশ্রয়ে। যেদিকে অবলম্বন পায় সেদিকেই ছুটে।
কিন্তু, অরুপের দেখা আজকের এই নারী এক আশ্চর্য বিস্ময়। যেন এক দেবী সে। একদল মহাপাপী পুরুষ তার দিকে তাকিয়ে আছে কৃপা লাভের আশায়। চোখে মুখে অবিশ্বাস নিয়ে চারপাশটা আবার দেখল অরুপ।
একে একে হাটু গেড়ে বসছে সবাই। অরুপও তাই করল। হঠাৎ অন্ধকারে ডুবে গেল সবকিছু। শুধু সেই আশ্চর্য সুন্দর নারী ছাড়া কোন কিছুই দৃশ্যমান নয়। তার হাতে একটা কাগজের বান্ডিল। গেরস্থ বাড়ীর বউ স্বামীর হাতে যে বাজারের ফর্দ ধরিয়ে দেয় অনেকটা সেরকম দেখতে কাগজগুলো। উপস্থিত সবাই ঠিক বুঝে গেছে কাগজগুলো আসলে কি। পাপের লিস্ট। শীতল বাতাস বইছে ঘরের ভিতর। যেন আটলান্টিকের ঝড় । থরথর করে কাঁপছে অরুপ। পুবের জানালাটা খুলে দিল কেউ। একে একে সবগুলো। পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ। অরুপ দেখল কতগুলো হিংস্র জানোয়ার লকলকে জিহ্বা বের করে ঘুরছে আর চিৎকার করছে। হিম হয়ে গেল দেহের সমস্ত রক্ত।
- তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে এরা।
আবার সেই আশ্চর্য যান্ত্রিক কন্ঠ। চিবিয়ে চিবিয়ে কথাগুলো বলছে সেই নারী। যেন বজ্রপাত। ঠকঠক শব্দ হচ্ছে সবার বুকের ভেতর।
-তোমাদের বিচার আগেই হয়ে গেছে। আমি শুধু পরীক্ষা করব তোমাদের হৃদপিন্ড। কেননা স্বয়ং ঈশ্বরও অবাক হয়েছেন তোমাদের হৃদয়ের ক্ষমতা দেখে। কি করে এমন হল?
অরুপের ঠোঁটের কোণে একটুকরো হাসি দেখা দিল। নিজের প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে? কিন্তু পরক্ষণেই তার মুখে দেখা দিল সেই আগের অন্ধকার। কারণ, ততক্ষণে তার কানে পৌছে গেছে আরও কিছু বজ্রধ্বনি।
-তোমরা; এই অদ্ভুত হৃদয়ধারী পুরুষেরা, ভেঙে ফেলেছ ঈশ্বরের নিয়ম। নারীরা তোমাদের দেখে বিস্মিত হয়েছে, মুগ্ধ হয়েছে। বলি হয়েছে তোমাদের ইচ্ছার আগুনে। আর তোমরা হয়েছ সর্বভুক। ধারণ করেছো সবাইকে। এমনকি যখন তোমরা তাদেরকে আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলতে তখনও সেই সর্বভুকই থাকতে। কখনো ক্লান্ত হয়নি তোমাদের হৃদয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, ঈশ্বরের নিয়ম তা ছিল না। ঈশ্বর মানুষকে দিয়েছিলেন ভালবাসা। এবং তোমাদের ভিতরও তা ছিল। কিন্তু......
কিন্তু কখনোই তোমরা তার প্রকৃত অর্থ উদঘাটন করনি। এটা আসলে ছিল একটা অস্ত্র। মহান ঈশ্বরই তা বানিয়েছিলেন। তোমাদেরকে প্রকৃত মানুষ বানানোর জন্য। তোমরা শুধু নারী বধেই তা ব্যবহার করেছো। মানুষ হতে চাওনি। কি এর রহস্য? কেমন করে পারলে ঈশ্বরের তৈরি দেয়াল ভাঙতে? ঈশ্বর নিজেই বুঝতে পারছেন না ব্যাপারটা। তাই আমাকে, একজন জ্যোতির্ময়ি নারীকে পাঠানো হয়েছে তোমাদের দূষিত হৃদপিন্ডগুলো পরীক্ষা করার জন্য। আমি তোমাদের প্রত্যেকের হৃদপিন্ডের প্রতিটি পরত খুলে খুলে দেখব। তারপর সবাইকে দেব উপযুক্ত প্রতিষেধক। সবাই বোতল এনেছো তো সাথে করে?
অরুপ তার বাম হাতে ধরা বোতলটির দিকে তাকাল। মদের বোতল ছিল ওটা। মনে পড়ে গেল, এরকম শত শত বোতল সে খালি করেছে। নারীসঙ্গ লাভের আগে মদ না হলে কি চলে? নেশা ছাড়া কি যুদ্ধ জমে? অবশ্য জীবনের প্রথম মেয়েটিকে পাওয়ার সময় সে মদের নেশায় আচ্ছন্ন ছিল না। তখন ছিল অন্য নেশা। হঠাৎ করে যৌবন পাওয়ার এক ভয়ানক নেশা। সেই প্রথম পাওয়া মেয়েটির হাতেও একটা বোতল থাকত। দুধের বোতল। নিতান্তই শিশু ছিল মেয়েটি। না; অরুপ তার যোনীতে লিঙ্গ চালনা করেনি কখনো। অরুপের কিশোর মনও বুঝতে পেরেছিল সেটা সম্ভব না। হয়ত মরেই যাবে মেয়েটা। অরুপ শুধু চেপে ধরেছিল তার লিঙ্গ। মেয়েটির অপুষ্ট গহ্বরের গায়ে।
- লাইন ধরে দাঁড়াও সবাই। একে একে আমার কাছে নিয়ে এসো তোমাদের হৃদপিন্ড।
দেবী আদেশ দিলেন। অরুপ দুপা এগিয়ে গেল। তার মনে একে এক উঁকি দিচ্ছিল সবগুলো মুখ। সেই মেয়েটি যার কুমারীত্ব কেড়ে নেওয়ার সময় হাউমাউ করে কেঁদেছিল, অরুপের সামনে এস একটা ভেঙচি দিল। এবং তার মত সবাই। এরপর এর তারা যাদেরকে সে স্বপ্ন দেখিয়েছিল সুন্দরের। না, ওদের মুখে একটুও আকুতি নেই, দয়া নেই। কে যেন ওদের মিষ্টি মুখগুলোতে লোহার প্রলেপ বসিয়ে দিয়েছে। আর চোখে আগুনের গোলা। অরুপ নিজের চোখ বন্ধ করল। তাতেও কি মুক্তি আছে?
অরুপের সামনের মূর্তিটি এগিয়ে গেল সামনে। দেবীর হাতে তুলে দিল তার হৃদপিন্ড। জঘন্য দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন দেবী। মাত্র এক মুহূর্তের জন্য। খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলেন। একবার, দুবার , বারবার। এবং অবাক হলেন।
-এটা কি করে সম্ভব? এটা তো হৃদপিন্ড বলে মনে হচ্ছে না। হৃদপিন্ড কি এমন হয়? দাওতো দেখি তোমারটা।
অরুপের দিকে হাত বাড়ালেন তিনি। অরুপ এগিয়ে দিল।
-এটাও তো একই রকম।
সবার হৃদপিন্ড একে একে দেখলেন তিনি। সবগুলোই একই রকম।
-তোমাদের হৃদপিন্ডে কোন বিভাজন নেই। অলিন্দ, নিলয় কিচ্ছু নেই। নেই কোন শিরা, ধমনী। এটা শুধুই একটা মাংসপিন্ড। বড্ড ভুল হয়ে গেছে তোমাদের বানানোর সময়। অপরিপক্ক হৃদপিন্ড দিয়ে দেওয়া হয়েছিল তোমাদের। কোন বিভাজন না থাকার কারণেই তোমরা আলাদা করতে পারনি তোমাদের অন্তর্নিহিত গুণগুলোকে। আর চিরকালই অকেজো রয়ে গেছে হৃদপিন্ডটা। কাউকেই স্থায়ীভাবে ধরে রাখনি। তোমাদের হৃদয়ের কেন্দ্রে পৌছার রাস্তাই তো ছিল না। তাই নারীরা আশেপাশেই ঘুরেছে। অবশ্য ওরা এমনি এমনিই আশে নি। তোমাদের অপরিপক্ক হৃদয়ের ছিল আশ্চর্য ক্ষমতা। মাকাল ফলের যেমন থাকে। কোন ভাঙাচোরা নেই। বাইরে থেকে এজন্যেই হয়ত এতটা সুন্দর লাগত। বোতল আনতে বলেছিলাম তোমাদেরকে। ওষুধ দেওয়ার জন্যে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এ রোগের সহজ কোন ওষুধ নেই। ইচ্ছে করলে বোতলটা ফেলে দিতে পার। তোমাদের হৃদপিন্ডটা নতুন করে গড়তে হবে। বিভাজনটুকু করা বাকি ছিল, এখন তাই করা হবে। এটা অবশ্য করা হয় হৃদপিন্ডটাকে দেহে স্থাপন করার আগেই। কিন্তু তোমাদের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। ভুল করে হলেও তোমাদের দেহে হৃদপিন্ড দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন তোমাদের দেহের ভিতরে রেখেই সেটাকে পরিপুষ্ট করা হবে। একটু কষ্ট হবে তোমাদের। কিন্তু, এছাড়া আর কোন উপায় নেই। মেনে নিতেই হবে।
কথাগুলো বলার সময় এই কঠিন নারীর গলাও খানিকটা তরল হয়ে গেল। অরুপ বুঝতে পারল কাজটা নিশ্চই সাধারণ কিছু না। অজানা আতঙ্কে সে আঁতকে উঠল। সবার সাথে সুর মিলিয়ে শুরু করল আর্তনাদ ।
দুটো দরজা খুলে গেল। দুটো দানব বেরিয়ে এল। তাদের বলিষ্ঠ হাতে অসুরের শক্তি। থামের মত পায়ের চাপে কেপে উঠছে পুরো ঘর। গলায় লোহার শিকল। ঠোটের কোণে ভয়ানক হাসি। এক জন একজন করে ধরে নিয়ে যেতে থাকল পাশের একটা প্রান্তরে। তীব্র চিৎকার ভেসে আসছিল বারবার। সাক্ষাৎ যমকে না দেখলে কেউ এরকম করবে না। শরীরের সকল লোম দাঁড়িয়ে গেল। অরুপ ভাবল পালিয়ে যাবে। দৌড়াতে চাইল সে। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা করল তার পা। কিছুতেই ওগুলোকে নাড়াতে পারছে না অরুপ। নিরুপায় হয়ে অপেক্ষা করতে লাগল।
দানবদুটো ওকে নিয়ে গেল সেই প্রান্তরে। অরুপ একবারও চেষ্টা করেনি রক্ষা পাওয়ার। সে বুঝে গেছে কোন লাভ হবে না তাতে। পুরো মাঠটায় অসংখ্য বিছানা পাতা। বিছানা বলতে লোহার খাট। তার নিচে একটা জলন্ত চুল্লি। অরুপের আগে যাদেরকে ধরে আনা হয়েছিল, প্রত্যেকেই সেইসব খাটের উপর হাত পা বাঁধা অবস্থায় ঘুমাচ্ছে।সেই ঘুমন্ত মানুষগুলোর মুখে সদর্পে জেগে আছে ভয়। মাঝে মাঝেই একে বেঁকে যাচ্ছে বলিরেখা। অরুপকেও শোয়ানো হল সেরকম এক খাটে। আশ্চর্য, নিচে জ্বলন্ত চুল্লি অথচ খাটটা ভীষণ ঠান্ডা। অরুপের ঘুম পেয়ে গেল। ঠিকমত চোখের পাতা এক করার আগেই দানবদুটো এসে বেঁধে ফেলল হাত -পা। অরুপের বুকের গর্তটা পরিষ্কার করা হল জল ঢেলে। এরপরই বদলে গেল সব। চুল্লির আগুনটার রঙ । সবুজ শিখাটা এসে লাগল অরুপের ঠিক পিঠ বরাবর। মেরুদন্ড গলে যাওয়ার উপক্রম। একটু পর নিয়ে আসা হল অরুপের ধূসর হৃদপিন্ড। একটা সবুজ তরলে ডুবানো হল সেটা। চিনচিনে একটা অনুভূতি হল বুকে। হৃদপিন্ডটাকে এনে বসানো হল গর্তে। বেশ দ্রুতই বাড়তে থাকল যন্ত্রণা। সেই সবুজ তরল হৃদপিন্ড থেকে ছড়িয়ে পড়ছিল সমস্ত দেহে। অরুপের মনে হল সবচেয়ে শক্তিশালী এসিড ঢেলে দেওয়া হয়েছে। টগবগ করে ফুটছে সারা দেহে। নীরবতা ভেঙে গেল। অরুপের চিৎকারে দানবদুটো পর্যন্ত চমকে উঠল। অরুপ প্রাণপণে চেষ্টা করছিল তার হাত পায়ের বাঁধন খুলে ফেলার। কিন্তু এত সহজে কি শিকল খোলা যায়? সময় যতই যাচ্ছিল যন্ত্রণাও বাড়ছিল ততই। বাড়ছিল অরুপের চিৎকার দাপাদাপি। অসুরের শক্তি পেল সে। বাঁধনগুলো সত্যি সত্যিই খুলে ফেলল । সাথে সাথেই উঠে বসল সে। দুই হাত দিয়ে গর্ত থেকে বের করে আনল হৃদপিন্ড। ছুড়ে ফেলে দিল সেই জ্বলন্ত চুল্লিতে। তারপরও কমছিল না তার যন্ত্রণা। সে হাত ঢুকিয়ে দিল গর্তে। বের করতে থাকল গলিত মাংস।
একদিন পর
দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি পত্রিকার প্রথম পাতায় এক কোণায় প্রকাশিত একটি খবর ছিল এরকম:
গতকাল রাজধানীর বারিধারায় একটি বহুতল ভবনের অভিজাত ফ্ল্যাট-এ অরুপ গাঙ্গুলী নামে এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তির লাশ পাওয়া পাওয়া গেছে। পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী লাশটির হৃদপিন্ড ছিল বাইরে বের করা এবং তার হাত ছিল রক্তমাখা। ধারণা করা হচ্ছে অতিরিক্ত মদ্যপানের পর হিস্টিরিয়াগ্রস্ত হয়ে নিহত ব্যক্তি নিজেই তার হৃদপিন্ড বের করেছে। লাশটির পাশেই ছিল অনেকগুলো খালি বিদেশী মদের বোতল। ফ্ল্যাট তল্লাশী করে পাওয়া গেছে বিভিন্ন বয়সী একুশ জন নারীর সাথে নিহত ব্যক্তির অন্তরঙ্গ ছবি আর পাঁচটি অশ্লীল ভিডিও।
বাকি অংশ পৃ ২ ক ৩
06.10.10

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



