পরিমলের কথা মনে আছে আপনাদের? জানি আছে। কিন্তু কেউ কি জানেন পরিমল এখন কোথায়? তার কি শাস্তি হয়েছে? আমি জানি না। পরিমলের জাতভাইদের খোজ নেওয়ার জন্য “অভিযুক্ত শিক্ষক” লিখে গুগলে একটা সার্চ দিয়েছিলাম। এবং অত্যন্ত অবাক হয়ে দেখলাম আমাদের পরম পূজনীয় শিক্ষকেরা যে অপরাধটা সবচেয়ে বেশি করেছেন তার নাম “যৌন হয়রানি”। কেউ ধর্ষণ করেছেন, কেউ বা চেষ্টা করেছেন ধর্ষণের, কেউ অন্তস্বত্বা বানিয়েছেন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীকে, কেউ পর্ণো ছবি তৈরি করেছেন সহকর্মীর। আশ্চর্যের ব্যাপার হল এইসব শিক্ষকের বড় কোন শাস্তি হয়েছে এরকম কোন খবর আমি খুজে পাইনি। তবে পদোন্নতি হয়েছে এরকম খবর পেয়েছি। একজনের কথা জানলাম যিনি হয়ে গেছেন মানবাধিকার কমিশনের সদস্য। পরিমলের জাতভাইয়ের সংখ্যাটা অনেক বড়। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, সবখানেই আছে পরিমল। পড়তে পড়তে আমি শিউড়ে উঠেছি।
সর্বশেষ আমরা পরিমলের আরেক ভাইয়ের খোজ পেয়েছি গত শুক্রবার। নাম তার চন্দন কুমার পোদ্দার। আমার প্রিয় ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক , সাবেক সহকারি প্রক্টর এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতা। এই সেই পোদ্দার যাকে ২০০৮ সালে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার সময় হাতেনাতে ধরেছিলেন বিভাগীয় শিক্ষকেরা। ২০১০ সালে বর্ধিত বেতন-ফি বিরোধী আন্দোলনের সময় পুলিশকে সাথে নিয়ে ছাত্রী নির্যাতনে পালন করেছিলেন অগ্রণী ভুমিকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে অসহায় ছাত্রীর পেটে লাথি দিয়েছিল পুলিশ। পত্রিকার পাতায় ছাপা সেইসব অশ্লীল ছবিগুলো নিশ্চই ভুলে যাননি আপনারা। এরপরের কয়েকটা মাস কি অসহনীয় যন্ত্রণার মধ্যে কাটাতে হয়েছিল তা শুধুমাত্র আমরা ভুক্তভোগীরাই জানি।
পরিমল আর পোদ্দারের ঘটনায় একটা ব্যাপার খুব মিলে যাচ্ছে। তা হল গণমাধ্যমের ভুমিকা। পরিমলের ঘটনা জানাজানি হওয়ার প্রথমদিকে গণমাধ্যমে তেমন পাত্তা পায়নি।(পরে অবশ্য ভিকারুন্নেসার ছাত্রীদের অনড় অবস্থান আর ব্লগারদের কল্যাণে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছিল)। একই ঘটনা ঘটছে পোদ্দারকে নিয়ে। চট্রগ্রামের স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক পূর্বকোণ সহ বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা থেকে জানা যায়, চন্দন কুমার পোদ্দার বাসার গৃহপরিচারিকাকে দীর্ঘদিন ধরে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে আসছেন। গৃহপরিচারিকা লোকলজ্জার ভয়ে ধর্ষণের ঘটনা কাউকে বলেনি। কিন্তু দিনের পর দিন যৌন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত শুক্রবার ধর্ষকের স্ত্রীকে তার স্বামীর অপকর্মের কথা জানায়। এরপর ধর্ষকের স্ত্রী মুন্না ভৌমিক ও গৃহপরিচারিকা শুক্রবার বিকেল তিনটার দিকে নগরীর খুলশী থানায় অভিযোগ করেন। অথচ, প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং আমার দেশ- এর মত জাতীয় দৈনিকগুলোতে ছাপা হয়েছে পোদ্দারকে গ্রেফতার করা হয়েছে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে। ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা আসল ঘটনা যাইহোক না কেন তাতে পোদ্দারের অপরাধ একটুও কমে না। পোদ্দারের শাস্তি হওয়া উচিত এবং তা যাতে হয় সেজন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা- যারা আজ মানববন্ধন করছে বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে, শহীদ মিনারে তাদের সাথে গলা মিলিয়ে প্রতিবাদ জানানো উচিত।
আসুন বিচার চাই প্রতিটি ধর্ষণের।
শাস্তি হোক প্রত্যেক পরিমলের।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



