somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি গাছ এবং আমরা সবাই

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মন খারাপ? অমন পেঁচার মতন মুখ করে বসে আছো কেন? সেই বিকেল থেকে দেথছি ঠায় বসে আছো মাঠের দিকে তাকিয়ে। কেউ খুব কষ্ট দিয়েছে বুঝি? নাকি একঘেয়ে জীবনের ঘানি টানতে টানতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছ? হাজার হাজার লোকের ভিড়েও বুঝি একা একা লাগে? নাকি বেচে থাকাটাই মনে হয় অর্থহীন ? তাই যদি হয় তবে বস, আমার সাথে গল্প কর। অবাক করা সব ঘটনা শুনাব তোমায়। তোমাদের নামকরা লেখকরাও যে সব ঘটনার খবর রাখেন না। তখন হয়ত তোমার ধারণা বদলেও যেতে পারে। আর হ্যাঁ এটা কিন্তু খুব সত্যি কথা, বেঁচে থাকাটা মোটেই অর্থহীন নয়।

তোমার আর কতই বা হবে বয়েস। ছাব্বিশ কি সাতাশ? বড়জোড় তিরিশ। আমাকে দেখ। আশি বছর ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি। তুমি হয়ত শুনে অবাক হবে আমার না মোটেও ক্লান্তি লাগে না। দুম করে মরে যাবার মত এরকম সৃষ্টিছাড়া ইচ্ছা কখনো মনের মধ্যে ভর করেনি। আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই জানো, যতই দিন যাচ্ছে আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছাটা ততই বাড়ছে। আর বাড়বেই না কেন? প্রতিদিন কত কিছু দেখছি,শুনছি, জানছি মরে গেলে এগুলো কি করে হবে? তুমি হয়ত বলবে তোমার আর আমার জীবন আলাদা। তোমাকে অনেক কাজ করতে হয়, অনেক কিছু সামলাতে হয়। আমার করতে হয় না।
কি মনে হয় তোমার? গাছ হযেছি বলে কি দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কোন কাজ নেই আমার? আমারও কাজ আছে। তোমরা মানুষেরা এসবের কিছুই জান না। তুমি যদি নিতান্তই গন্ডমুর্খ না হও তাহলে নিশ্চই অক্সিজেনের নাম শুনে থাকবে? এইযে বুক ভরে নিশ্বাস নিচ্ছ, যে বাতাসটা ঢুকে যাচ্ছে তোমার ভিতর এর মাঝে আছে অক্সিজেন। আর এই অক্সিজেনের কেরামতিতেই তুমি বেঁচে আছ। এই অক্সিজেন তৈরি করতে যে আমাকে কত কষ্ট করতে হয় সেটা তো তুমি জান না। আর জানবেই বা কি করে? তুমি তো আর ওটা তৈরি কর না, করি আমি। একবার ভেবে দেখ তো আমরা বৃক্ষরা যদি না থাকতাম কি হতো? তোমরাও থাকতে না কারণ আমরা নেই মানে অক্সিজেন নেই আর অক্সিজেন নেই মানে তোমরাও নেই। শুধুই কি অক্সিজেন? আমার কিছু জ্ঞাতি ভাই আছে যারা তোমাদেরকে খাবার দেয়,কেউ দেয় ছায়া, কেউ কাঠ। বিনিময়ে তোমরা কি দাও বলতো? কেটে নিয়ে হয় আগুনে পোড়াও নয়ত বানাও আসবাবপত্র।

এই যে আমি আশি বছর ধরে এখানে একটা ছোট্ট নদীর ধারে দাঁড়িয়ে আছি,শুধু কি নিজের জন্যই? মোটেই না। হ্যাঁ আমি একা হয়ত কিছুই না। কিন্তু আমার স্বজাতি গাছগুলো আর আমি যদি এইখানে এভাবে দাঁড়িয়ে না থাকতাম তবে কি হতো একবার ভেবে দেখতো। পাশের এই ছোট্ট নদীটা কিন্তু সবসময় শান্ত থাকে না। ওর যখন যৌবন আসে তখন ফোঁসে ওঠে গোখরো সাপের মতন। গ্রাস করে নিতে চায় আশেপাশের সব। তখন আমরাই তো রক্ষা করি তোমাদের মাটিকে। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরি যেন এক টুকরো মাটিও নিতে না পারে নদী। এ শুধু নিজের বেঁচে থাকার জন্য না, তোমাদের কে বাঁচানোর জন্যও। আর আমরা যখন শক্তিতে পেরে উঠতে না পারি? সে তো দেখেছই কি হয়।

আরবআলীর ভিটে মাটি কিন্তু আমরা খাইনি। খেয়েছে ওই শান্ত নদীটাই। আমার তখন খুব কান্না পেয়েছিল জানো। আরব আলী বউ বাচ্চাসহ আমার নিচে সপ্তাহখানেক ছিল একটা কুঁড়ে বানিয়ে। আমার কি যে ভাল লেগেছিল তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না। আরব আলীর ছোট্ট নাতিটা ছিল বদের হাড্ডী। এখনো কথাই ফোটেনি ভালভাবে, কিন্তু গায়ে সে কি শক্তি! মায়ের হাতের মার খেয়ে যখন ভ্যা ভ্যা করে কাঁদত তখন আমার খুব খারাপ লাগত। ওর সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ত আমার উপর। হাতে একটা বাশের কঞ্চি নিয়ে আমার গায়ে দিত দুমদাম বাড়ি। আমি ব্যথা পেতাম কিন্তু কখনোই রাগ করিনি। তুমি হয়ত বলবে এগুলো অতি উদারতার ফসল। অথবা গাছ বলেই মেনে নিতে পেরেছি। আসলে কিন্তু তা নয়। আরব আলীর নাতিটা যখন খোশমেজাজে থাকত তখন আমার নিচেই খেলত। আমার গোড়ায় ঘর বানাত কলার পাতা দিয়ে। অযথাই আমার গায়ে হাত বুলিয়ে দিত। আমারও তখন খুব ইচ্ছা হত ওর গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে। কিন্তু তা কি করে হয়? আমার তো হাতই নেই। আমি তখন আমার পাতাগুলো নাড়িয়ে আনন্দ প্রকাশ করতাম। আর তাতে আমার ডালের স্থায়ী বাসিন্দা কাকগুলো উড়ে যেত। তা দেখে আরব আলীর নাতী লাফিয়ে চিৎকার করতো ” কাউয়্যা কা”।

আরব আলীর বউ আর ছেলের বউ এর প্রতিদিনের রুটিনকরা কাজ ছিল ঝগড়া করা আর কান্না করা। আরব আলীর ছেলেটার কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি। সেবার বানের বছর। একরাতে তোমরা সবাই ঘুমিয়ে ছিলে, কিন্তু আমি জেগে ছিলাম। জোনাকির সাথে আড্ডা দেয়া কিংবা প্যাঁচার গান শোনার জন্য নয়। কি এক অস্থিরতা আমাকে জাগিয়ে রেখেছিল। বিকেলবেলায় ঘাস খেতে খেতে ঈষাণ কোণের কালো মেঘটার দিকে তাকিয়ে টুকুদের লাল গাইটা যখন চিৎকার করে উঠেছিল তখন থেকেই শুরু হয়েছিল আমার অস্থিরতা। সন্ধ্যায় বাতাসের গন্ধ শুকেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম আজ কিছু একটা ঘটবে। আমি আমার শিকড়গুলোকে ভালভাবে মাটির সাথে গেঁথে দিলাম। আমার সকল কান্ড,শাখা,প্রশাখা,পত্রপল্লব শিরা উপশিরায় তখন একটাই বারতা প্রবাহিত হচ্ছিল,‘আজ রাতে ঘুমানো যাবে না’।
মাঝরাতেই ঘটল ঘটনাটা। প্রথমে একটা দমকা হাওয়া এসে আমাকে কাঁপিয়ে দিল। আমি সেটা ভালভাবেই প্রতিহত করলাম। কিন্তু নদীতে যে ঢলটা নেমে এসেছিল আরব আলীর ঘর সেটা প্রতিহত করতে পারল না। বেগতিক দেখে আরব আলী বউ ছেলের বউ আর নাতিকে নিয়ে ঘর ছেড়ে বের হয়ে এসেছিল। ওর ছেলেটা ঘরে ছিল না। ও গিয়েছিল নদীতে মাছ ধরতে। এমন না যে এই নদীতে দিনের বেলা মাছ পাওয়া যায় না। কিন্তু আরব আলীর ছেলে রঞ্জুর ছিল রাতে মাছ ধরার নেশা। নেশাই খেল ওকে।ও আর ফিরে আসে নি।

সেই থেকে রঞ্জুর বউ এর কান্নার সূচনা। সন্ধ্যাটা হতে না হতেই ঘাটে গিয়ে বসত আর শুরু করত রোদন। ছিপছিপে শ্যামা মেয়েটার রোদন দেখে আমি কি ,ওই বেহায়া নদীটা পর্যন্ত কাঁদত। কাঁদতনা শুধু রঞ্জুর মা। এমন নিষ্ঠুর মেয়েমানুষ আমি জীবনে দেখিনি। ওর মতে রঞ্জুর মৃত্যূর জন্য দায়ী ওই নদী না,রঞ্জুর বউ। আমার কি মনে হতো জানো, রঞ্জুর মায়ের সবচেয়ে প্রিয় সময় হল সন্ধ্যাবেলা। সারাদিন ধরে মনে মনে পরিকল্পনা করত বউটাকে আজ কি ভাবে শাস্তি দিবে। বিকাল থেকেই গলাটাকে ভালভাবে পরিষ্কার করে নিত যাতে গালি দিতে কোন সমস্যা না হয়।

রঞ্জুর বউ এর কান্না শুরু হওয়ার সাথে সাথে সে খুলে দিত তার বহু বছরের অভিজ্ঞতায় শিখে নেওয়া গালির ঝাপি।
“নটীর ঘরের নটী,আমার চান্দের লাহান ছেড়াডারে খাইছস। অহন আবার পিরিত দেহাস। তর পিরিতের কপালে ঝাডা মারি। বেশ্যা মাগী অহন কান্দস ক্যা? হেইবালা পোলাডারে আটকায়া রাখতে পারলি না। মাগী মরেও না।”

আরবআলীর বউ এর মত এমন সাজানো গোছানো গালি পৃথিবীর আর কেউ দিতে পারবে কিনা আমার সন্দেহ আছে। অনেক কিছুই বলত যার মধ্যে মড়ার বিষয়টা ছিল সাধারণ। সে তো একবারে মানত করে রেখেছে, রঞ্জুর বউ মরলে লেংটা পীরের দরগায় খাসি দিয়ে আসবে। লেংটা পীরের কেরামতিতেই কিনা রঞ্জুর বউ এর ্ও একদিন মরার সাধ হল। সেদিন গালির পরিমাণটা মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। রঞ্জুর বউ যে গালিবিদ্যায় একবারে মুর্খ তা না। বরং ভালই পারে। দিনের বেলা ঝগড়া হলে তো মাঝে মাঝে শাশুড়ীর সাথে বেশ টক্কর দেয়। কিন্তু সন্ধ্যেবেলায় ওর কি যেন হয়ে যায়। সে তখন অন্য মানুষ। রঞ্জুর মায়ের গালিগুলো যেন ওর কানে পৌছাতই না। চুপচাপ নদীর ধারে বসে কাঁদত। একটা কথার ও জবাব দিত না।
রাত বেড়ে গেলে আরব আলী চুপচাপ পাশে বসত। আমার খুব আশ্চর্য লাগে আরব আলী কাউকেই কিছু বলত না। বউয়ের গালি সে মনোযোগ দিয়ে শুনত আবার পুত্রবধুর কান্নাও নীরবে দেখত। রঞ্জুর বউয়ের পাশে বসে সেও তাকিয়ে থাকত অন্ধকারে। তখন রঞ্জুর বউ ঘোমটা টেনে ঘরে ফিরত।

আদতে সে জেলে। কিন্তু রান্নার হাত খুব পাকা। আশেপাশের দশগ্রামের বড় বড় বিয়ের রান্না আরব আলী ছাড়া হয় না। খায় দায় শেষে শদুয়েক টাকা পায়। আরব আলী তাই খুশি মনেই কাজটা করে। সেদিন আরব আলী বাড়িতে ছিল না। আনির মড়লের ছেলের বিয়ের রান্না করা জন্য তার ডাক পড়েছিল।
রোজকার রুটিন মত সন্ধ্যা হতেই রঞ্জুর বউ গিয়ে বসল নদীর ধারে। নাতিকে আরব আলীর বউ গিয়েছিল কচুশাক তুলতে। ফিরে এসে দেখে ঘরে বাতি দেয়নি কেউ। একলাফে মাথায় উঠে গেল রক্ত।

“বান্দরনী আমার সব শেষ কইরা দিল। ঘরে বাতি দেওনের কথাও তার মনে নাই। নবাবের ঝি। পিরিত দেহাইতাছে। আউজগা তর পিরিত আমি ছুডামু।”
চুলার পাশেই পড়ে ছিল একটা চেলি কাঠ। সে এটা দিয়ে রঞ্জুর বউকে পিটাল ইচ্ছামত।

রঞ্জুর বউ টু শব্দটি পর্যন্ত করল না। নদীর ধারেই পড়ে রইল অনেক রাত পর্যন্ত। আরব আলীও বাড়িতে ছিল না। তাই কেউ নিতেও আসে নি। আমার খুব ঘুম পাচ্ছিল,কিন্তু ঘুমাতে পারছিলাম না। দুঃখী মেয়েটাকে এভাবে একা রেখে আমি কি ঘুমাতে পারি? রাত তখন প্রায় এগারটা। রঞ্জুর মা ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। রঞ্জুর বউ আস্তে আস্তে উঠে দাড়াল। আমি খুশিই হলাম। ও এখন ঘরে ফিরবে। কিন্তু অভাগী এসে থামল আমার তলায়। গায়ে পুরোনো শাড়িটা খুলে আমার একটা ডালে বাধল। আমি শিউড়ে উঠলাম। মৃত্যূ আমার ভাললাগে না। একদম না। সেই একাত্তরে আমার নিচে অনেককে গুলি করে মারা হয়েছিল। সে ভয়ানক দৃশ্য আমি আজও ভূলতে পারি না। উফ আমার কান্না পায়। আজও সম্ভবত একটা মৃত্যূ দেখতে হবে আমায়। আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। প্রার্থনা করছিলাম আমার ডালটা যেন ভেঙে পড়ে যায়। রঞ্জুর বউ দুটো পিড়ি এনে তার উপর কয়েকটা কাঠের টুকরা দিল। এরপর এর উপর উঠে দাড়াল। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল আমার। কিচ্ছু করতে পারছি না। মেয়েটা আস্তে আস্তে ফাঁসিটা গলায় পড়ে নিল। কিন্তু কি মনে করে যেন পায়ের নিচ থেকে কাঠগুলো সরাল না। অনেকক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে থাকল। হয়ত কারো কথা ভাবছিল। ছেলেটাই হবে হয়ত। একসময় ও গলা থেকে কাপড়টা সরিয়ে নিল। আমি স্বস্তি পেলাম।


সেই মেয়েটার খবর তোমরা জান এখন? ও কিন্তু আর আগের মত নেই। রঞ্জুর ছেলেটা অনেক বড় হয়ে গেছে। এবং অনেক উন্নতিও করেছে। ওরা প্রায়ই আমার নিচ দিয়ে যায়। রঞ্জুর বউয়ের হাসি দেখলে মনে হয় ওই সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। কেন হবে না বলত? ওর ছেলে যে এখন এ গায়ের সবার প্রিয় সেলিম মাষ্টার।

কিভাবে মানুষ শুধুমাত্র ইচ্ছেশক্তি আর পরিশ্রম দিয়ে কালে কালে জয় করেছে সকল বাধার দেয়াল সেসব আমি জানি। একটা যুদ্ধ হয়েছিল। একদল মানুষ হয়েছিল হায়েনা। আর একদল ছিল হরিণের মত। কিন্তু সময় তাদেরকে বানিয়ে দিয়েছিল হিংস্র ব্যঘ্র। পৃথিবীর অফুরান রূপ আর ভালবাসার একটা অদৃশ্য বন্ধন তাদেরকে এক করেছিল। তারা হাল ছাড়েনি। শেষ রক্তবিন্দু ঝরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত লড়েছিল অসীম সাহসে। তাদের ইচ্ছেটাই ছিল সবচেয়ে বড় অস্ত্র। অবশেষে হায়েনারা বাধ্য হয়েছিল পালিয়ে যেতে। নিশ্চই বুঝতে পারছ আমি কিসের কথা বলছি। তোমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা। ওফ! বিজয়ের দিনে কি আনন্দই না করেছিল সবাই। সেসব যদি দেখতে তবে ভুলেও মরে যাওয়ার কথা ভাবতে না।
একবার বন্যা হয়েছিল। কোত্থেকে যেন হঠাৎ করেই জলের স্রোত এসে সবকিছু দখল করে নিল। খুব কষ্টে ছিল মানুষেরা। ভেসে গিয়েছিল ঘরবাড়ি,সহায় সম্পদ। তারপরও মানুষ বেঁচে আছে।

ফরিদ শেখের বড় ছেলেটা ছিল একবারে বিচ্ছু। যাত্রা দেখতে গিয়েছিল চান্দের বাজার। ফেরার পথে মারা গেল সাপের কামড়ে। দুদিন পরই মারা গেল ছোট ছেলেটাও। পুকুরে ডুবে। বেঁচে থাকল কেবল বোকাসোকা ছোট ছেলেটা। সেই ফরিদ শেখের ঘরে আজ মানুষের সংখ্যা চৌদ্দ। বিকেল বেলা নাতিদের নিয়ে যখন গ্রাম দেখতে বের হয় আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি পুতুলের মত মানুষগুলোর দিকে।

এরকম হাজার হাজার গল্প আমি জানি। আর প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকি এরকম আর একটি গল্পের স্বাক্ষী হ্ওয়ার জন্য। আমার পাতায় পাতায় লুকিয়ে আছে গল্প। অবাক কান্ড! এসব দেখতে আমার মোটেই ক্লান্তি লাগে না। যখন দখিনা বাতাস দোলা দেয় আমার পত্র-পল্লবে,যখন পাখিদের কিচির-মিচির আমাকে জাগিয়ে দেয়, পাশের নদীটায় যখন বয়ে যায় সুখের জোয়ার , যখন মানুষেরা লাঙল চালিয়ে কঠিন মাটির বুক থেকে তুলে আনে সোনালি শস্য, যখন বালকেরা খেলার ছলে আমার গায়ে আঁচড় দেয়, দাঁপিয়ে বেড়ায় পৃথিবী জুড়ে , তখন আমার খুব ভাল লাগে । বেঁচে থাকার ইচ্ছা বেড়ে যায় বহুগুণ।

তুমিও এসব দেখ। পৃথিবীর কাছ থেকে কি পেয়েছ, মানুষ তোমাকে কি দিয়েছে সেসব চিন্তা বাদ দিয়ে ভেবে দেখ তুমি কি দিয়েছ? আর কাউকে কিছু দেওয়ার মাঝেই লুকিয়ে আছে প্রকৃত আনন্দ, জীবনের সবচেয়ে স্বচ্ছ আনন্দ। তুমি এই পৃথিবীরই একটা অংশ।

কারা যেন আসছে। নিশ্চয়ই জেলে হবে। মাছ ধরতে আসছে নদীতে। আহ! বাচা গেল। ওরা থাকলে তো তুমি আর মরতে পারবে না। এইতো তুমি উঠে যাচ্ছ। কথা বলার সাধ জেগেছে বুঝি ওদের সঙ্গে। বেশ বেশ । কথা বলে মনটাকে হালকা কর। মানুষের কাছে মেলে ধর। একি? কি বের করছে ওরা বস্তার ভিতর থেকে? ওমা, এ যে দেখছি একটা মানুষ। ওর হাত পা এভাবে বেঁধে রেখেছে কেন? দাও এক্ষুণি খুলে দাও। কি বের করছ তুমি? এ তো ছুড়ি! দড়ি কাটবে বুঝি?
ওহ খোদা... ... ...কি করলে এটা তুমি? একটা মানুষের গলা কেটে ফেললে?

আমার মাথাটা খুব ঘুরছে। পৃথিবীটাকে এত নোংরা বানিয়ে ফেলেছ তোমরা, আমরা কি করে বেঁচে থাকি বলত?

রচনাকাল: ২২ মার্চ ২০১০ রাত ২.৫৫ মিনিট
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×