somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছেঁড়া দ্বীপের সৌন্দর্যহানি

১২ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের মানচিত্রের সর্বদক্ষিণের শেষ বিন্দু ছেঁড়া দ্বীপ। এর দক্ষিণে বাংলাদেশের আর কোনো ভূমি নেই। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ ইউনিয়ন সেন্ট মার্টিনের অন্তর্গত এই দ্বীপের চারদিকে পাথরের রাজ্য। ভূভাগ সবুজ কেয়াগাছে ঢাকা। দ্বীপটির প্রায় অর্ধেক ডুবে যায় জোয়ারের সময়।
সম্প্রতি দ্বীপটিতে পর্যটকের ভিড় বেড়েছে। এ সুযোগে কিছু প্রভাবশালী দ্বীপের আকর্ষণীয় সৈকত ও পাথরস্তূপ দখল করে তৈরি করছে অবৈধ দোকানপাট এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ। এতে দ্বীপের সৌন্দর্য যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা পড়ে দ্বীপটি বিশাল ডাস্টবিনে পরিণত হচ্ছে। অথচ এটি সরকারঘোষিত পরিবেশ-প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা। এ দ্বীপে জমি কেনা বা যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি আইনত নিষিদ্ধ।
সেন্ট মার্টিন থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত ছেঁড়া দ্বীপে প্রতিদিন কয়েক হাজার পর্যটক ভ্রমণ করে। যাতায়াত করতে হয় ট্রলার বা স্পিডবোটে। আগে এ দ্বীপে জনবসতি ছিল না। সম্প্রতি কয়েকটি পরিবার সেখানে বাস করছে।
গত সোমবার দুপুরে কক্সবাজারের একদল সংবাদকর্মী দ্বীপটি পরিদর্শন করে। এ সময় দেখা যায়, ছোট্ট দ্বীপের যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। সৈকত থেকে শামুক-ঝিনুক ও প্রবাল-শৈবাল আহরণ করছে অনেকে। দ্বীপের বিভিন্ন স্থান দখল করে অবৈধ দোকানপাট, হোটেল-রেস্তোরাঁ ও বসতবাড়ি তৈরির জন্য জমি দখলের দৃশ্যও চোখে পড়ে।
নৌকা থেকে ছেঁড়া দ্বীপে নামতেই সামনে পড়ে বিশাল পাথরস্তূপ দখল করে তৈরি করা আটটি দোকান ও রেস্তোরাঁ। এসব দোকানে রান্নাবান্না, নাশতা তৈরি ও মাছ ভাজা হচ্ছে।
একটি হোটেলের মালিক সেন্ট মার্টিনের আবদুল কাদের জানান, দোকানটি তিনি টেকনাফের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছেন। এখানে তিনি মাছ, তরিতরকারি রান্না করে পর্যটকদের কাছে বিক্রি করেন এবং পরিবারের সবাইকে নিয়ে এখানেই রাত কাটান।
কাদেরের পাশের দোকানটিতে তখন জিলাপি ভাজা হচ্ছিল। দোকানের মালিক চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার আবদুর রশিদ জানান, তিন মাসের জন্য দোকানটি তিনি সেন্ট মার্টিনের একজনের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছেন।
রশিদের পাশের দোকানে নানা সামুদ্রিক মাছ ভেজে বিক্রি করছেন সেন্ট মার্টিনের আইয়ুব আলী। তিনি বলেন, ‘পর্যটকদের সেবা দিতে এই দোকানটি তৈরি করেছি। কেউ আমাকে বাধা দেয়নি।’
এ দোকানগুলোর একটু দূরে দক্ষিণ দিকে বালুচর দখল করে তৈরি করা হয়েছে আরও দুটি রেস্তোরাঁ ও তিনটি ছোট দোকান। ওইসব দোকানে বিক্রি হচ্ছে ডাব, প্লাস্টিক বোতলে পানিসহ নানা খাবার। তারও একটু দক্ষিণে পাথরস্তূপে চারটি দোকান তৈরি করে বিক্রি হচ্ছে চা, নাশতা ও কাঁকড়াসহ সামুদ্রিক মাছ ভাজা। পর্যটকেরা এসব দোকানে প্রতিনিয়ত ভিড় জমান কেনাকাটার জন্য।
প্রায় চার একরের দ্বীপটি ঘুরে দেখা গেছে, পর্যটকেরা দোকানপাট থেকে ডাব, মিনারেল ওয়াটার, সিগারেট ও চিপসসহ বিভিন্ন খাবার কিনে খাচ্ছে। এরপর ডাবের খোসা, প্লাস্টিক বোতল, সিগারেট ও পলিথিন প্যাকেট সৈকতেই ছুড়ে ফেলছেন।
ওই দিন সকালে দ্বীপটিতে ঘুরতে গিয়েছিলেন ঢাকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। দ্বীপের এ অবস্থা দেখে তাঁরা হতাশ। শেষে নিজেরাই দ্বীপের পশ্চিম অংশের সৈকতে পড়ে থাকা ডাবের খোসাগুলো কুড়িয়ে একটি জায়গায় জড়ো করেন। কয়েকজন শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের জানান, ‘ডাবের খোসাগুলো আমরা সৈকত থেকে তুলে এখানে জড়ো করেছি। কিন্তু এই খোসাগুলো এখান থেকে সরাবে কে? জোয়ারের পানিতে এসব ডাবের খোসাসহ ময়লা-আবর্জনা আবার সাগরে ছড়িয়ে পড়বে।’
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ গত ৩১ জানুয়ারি ছেঁড়া দ্বীপ দেখতে যান। সৈকত থেকে প্রবাল-শৈবাল ও শামুক-ঝিনুক তোলার দৃশ্য দেখে তিনি এগুলো বন্ধের নির্দেশ দেন। তবে স্থানীয় লোকজন জানান, আইজিপির পরিদর্শনের পর প্রবাল-শৈবাল ও শামুক-ঝিনুক আহরণ কিছুদিন বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি তা আবার শুরু হয়েছে। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী এগুলো আহরণের পর ট্রলারবোঝাই করে কক্সবাজার ও টেকনাফ পাচার করছে।
আলাপকালে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসাইন জানালেন, ছেঁড়া দ্বীপ থেকে প্রবাল-শৈবাল আহরণ বন্ধ ও অবৈধ দখল উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×