somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১৩

২০ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৫:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
জরৎকারুর পত্নীত্যাগঃ


শৌনকাদি মুনিরা বললেন -সুত্রধরের পুত্র সৌতি অনেক অদ্ভূত কথা শোনালেন, এবার জরৎকারু মুনিকে বাসুকি ভগ্নী দিলে কি ভাবে আস্তিকের জন্ম হল তা বলুন।

সৌতি বললেন -জরৎকারু বিবাহ করে বনে বনে আবার ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। একদিন বাসুকি বোনকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন জরৎকারুর সাথে তার কি কথা হল। মুনি ঠিকভাবে বোনের দেখাশোনা করেন কিনা তাও জানতে চাইলেন।

বোন জরৎকারী বললেন –মুনিকে প্রায় আমি দেখতেই পাই না। তিনি কোথায় থাকেন, কোথায় যান-আমি কিছুই জানি না।

এসব শুনে বাসুকি দুঃখিত হলেন।

একদিন তিনি জরৎকারুর দেখা পেলেন।
বাসুকি বললেন –মুনি তোমাকে আমার বোন দান করেছি। তাকে যত্ন করে রেখেছিলাম তোমার জন্য, তুমি তাকে ভাল ভাবে পালন করবে ভেবে।


জরৎকারু বললেন –আমার বিয়ের ইচ্ছে ছিল না। পিতৃপিতামহদের জন্য বিবাহ করতে হল। ঘরে আমার মন লাগে না। বাড়িতে কারো কথা আমি সহ্য করতে পারি না। তোমার বোন সত্যবচন করুক যে, সে কখনও আমায় কোন কথা শোনাবে না, তাহলে ঘর করবো। যদি সত্যবচন ভাঙ্গে তা হলে তাকে আমি ত্যাগ করবো।

বাসুকি বললেন –আমার বোন সত্যবচন করবে। যেদিন সে তোমায় অপ্রিয় কথা শুনাবে সেদিন তুমি তাকে ত্যাগ করো।

তারপর বাসুকি বোনের জন্য অনেক মনিরত্ন দিয়ে প্রাসাদ বানিয়ে দিলেন। জরৎকারু পত্নীকে নিয়ে সেখানে সুখে বাস করতে লাগলেন। এভাবে জরৎকারী গর্ভবতী হলেন। এভাবে নাগিনীর গর্ভে মুনির সন্তান ধিরে ধিরে শশিকলার মত বাড়তে লাগলো। জরৎকারী সব সময় স্বামীর সেবা করেন, তার সামনে করযোড়ে থাকেন। যখন যা আজ্ঞা করেন জরৎকারু তখনই তা পালন করেন। এভাবে নাগিনী মুনির অনেক সেবা করতে লাগলেন।

একদিন দেখলেন দিন শেষ হচ্ছে, সূর্য ডুবছে, এদিকে মুনি তার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছেন। সন্ধ্যা উপস্থিত দেখে জরৎকারী ভয় পেলেন। সন্ধ্যাও যায়, এদিকে ডাকলে স্বামী যদি রাগ করেন! ভেবে ভেবে নাগিনী চিন্তিত হলেন। শেষে ঠিক করলেন মুনি যা করে করবেন কিন্তু সন্ধ্যা কর্ম না করলে পঞ্চপাপ হবে স্বামীর। এই ভেবে জরৎকারী মুনিকে ডেকে বললেন –প্রভু, সন্ধ্যা শেষ হতে চলেছে, উঠুন!

নিদ্রা ভঙ্গ হতে মুনি রাগে কাঁপতে লাগলেন। রাগে মুখ লাল হল, ঠোঁট কাঁপতে লাগলো।
তিনি বললেন –অহঙ্কার করে আমায় অমান্য করলি! আমি আর তোর মুখ দেখবো না।

জরৎকারী বললেন –প্রভু, আমার উপর অকারণে রাগ কর! আমার কোন দোষ নেই। সূর্য কখন ডুবে গেল, সন্ধ্যাও পিছে যায়। সন্ধ্যা না দিলে কত পাপ হয় তুমিতো তা জান! সে জন্যই ঘুম ভাঙালাম। এটাকে যদি দোষ ভাব তা হলে অবশ্যই ত্যাগ কর।

মুনি বললেন –নাগিনী না বুঝে কথা বলিস না। আমি সন্ধ্যা না করলে সন্ধ্যাকাল শেষ হতে পারবে না। সন্ধ্যার এত সাহস আমায় না বলে চলে যাবে!

সন্ধ্যাও করযোড়ে বলে –মুনি রাগ করো না, আমি এখনো তোমার জন্য আছি।

মুনি বলেন –শুনলি নাগিনী নিজের কানে! আমার কথা তুই অমান্য করেছিস, আমি অবশ্যই তোকে ত্যাগ করে বনে যাব। আর কখনও তোর মুখ দেখব না।


মুনির কথা শুনে জরৎকারী কাঁদতে কাঁদতে তার পায়ের উপর পড়লেন। বলেন –না জেনে প্রভু দোষ করেছি, এবারের মত ক্ষমা কর। ভাইরা আমার দুঃখ পাবে। ভাইরা তোমার হাতে আমায় অনেক আশা নিয়ে দিয়েছিলেন। মায়ের শাপে ভাইদের মনে ভয় হয়, তোমার হাতে আমায় দিয়ে সে ভয় দুর হয়। তোমার ঔরসে, আমার গর্ভে যে সন্তান হবে তারই আমার ভাইদের রক্ষা করার কথা। সন্তান না হতেই তুমি চলে যাচ্ছ! ভাইদের আমি কি বলবো। তুমি যদি আমায় ছেড়ে যাও তা হলে আমি তোমার সামনেই প্রাণ ত্যাগ করবো।

এত শুনে মুনি সদয় হলেন। তিনি নাগিনীর উদরে হাত দিয়ে ‘অস্তি, অস্তি’ বলে হাত বোলালেন।
বললেন –এই গর্ভে আছে নাগকুলের রক্ষাকর্তা এবং আমার ও তোমার কুল রক্ষক। চিন্তা ছেড়ে তুমি ভাইদের গৃহে যাও। ভাইদের বুঝিও তারা যেন দুঃখ না করেন। আমার কথা কখনও মিথ্যা হবে না, তোমাকে আমি অবশ্যই ত্যাগ করেছি। এতকিছু বলে পত্নীকে সান্ত্বনা দিয়ে মুনি গৃহ ত্যাগ করে বনে তপস্যা করতে যান।

ব্রাহ্মণের বাক্য অব্যর্থ বুঝে নাগিনী মুনিকে আর কিছু বললেন না। মাথায় ব্রাহ্মণের পদধুলি নিয়ে ভ্রাতৃগৃহে গমন করলেন।
..........................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..........................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ১২
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত – ১১
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ১০
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৯
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৮
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৭
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৬
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৫
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৪
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৩
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত -২
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ১
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১০ রাত ১০:০০
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×