বাড়িওয়ালা বাড়িতে নেই । তার স্ত্রী দরজা খুললেন, সালাম দিয়ে পরিচয় জেনে বললেন, একটু বসুন । উনি বাজারে গেছেন । ফিরবেন এখনই ।
আসাদুজ্জামান সোফায় বসলেন । চিকন হাতলের সোফা, গার্মেন্টসের কুল্টি দিয়ে বানানো, কিন্তু আরাম । ঘর ভর্তি ছবি। একটি কাঁচা হাতের পেইন্টিং ও আছে ।
যেসব বাসায় মেয়ে থাকে তাদের দুটো জিনিস কমন । প্রথমটি একটি হারমোনিয়াম । মেয়েদের গান শেখানো আমাদের রীতি । অন্যটি দেয়ালভর্তি ছবি । ছবিতে ফ্যামিলির অনেক রহস্য বের হয় । আসাদুজ্জামান মনোযোগ দিয়ে ছবিগুলো দেখছিলেন। প্রথমেই চোখে পড়লো বয়স্ক এক বৃদ্ধার ছবি।
এক পাশের দেয়ালে ৭/৮ বছরের একটি মেয়ের ছবি । স্কুলের প্রোগ্রামে পুরস্কার নিচ্ছে হেড মাস্টারের কাছ থেকে । শোকেসের মত । তার উপর একটি বড় ফ্রেমে ৮/১০ টা ছবি ।
একটা জিনিস খটকা লাগছে – ছবিতে চারটি মেয়ে নিয়ে কলিম সাহেব এবং তার স্ত্রী । এদের একটি বাচ্চা দেখতে অন্যরকম । বোঝা যাচ্ছে গায়ের রঙটা কলিম শেখের স্ত্রীর মত চাপা । তাকে বলা হয়েছে তিনটি মেয়ের কথা । অন্য মেয়েটি কার? কোথায়?
ভাবলেন জিজ্ঞেস করলেই হয় । কিন্তু যদি অন্য কোন ঘটনা থাকে? তিনটি মেয়ে হোক আর চারটি । তাতে তার কি? প্রথম দেখায় পরিবারের কষ্ট জিজ্ঞেস করা অন্যায় ।
কিছুক্ষণ পর ট্রেতে মাখানো মুড়ি আর নুডলস দিয়ে এলো একটি ১৭/১৮ বছরের মেয়ে । ভাবী বললেন, আমাদের বড় মেয়ে, মৌরি । সামনে এসএসসি পরীক্ষা দেবে ।
ভেবেছিলাম কলিম শেখ নিজের মেয়ে সম্মন্ধে বাড়িয়ে বলেছেন। ফর্সা হলেই এদেশে সুন্দরী বলতে থাকে। অথচ চাইনিজ চ্যাপ্টা নাকের কুতকুতে চোখের মেয়ে গুলো কি সুন্দরী? এরাও তো ফর্সা।
কিন্তু তা নয়, মেয়েটি উজ্জ্বল ফর্সা । দেখলে স্বীকার করতেই হয় সে রূপবতী । চেহারাটা ভারী মিষ্টি, চোখগুলো বড় বড়। চুল লম্বা । বাড়ন্ত শরীর । একহাতে দুটো চুড়ি অন্য হাতে রুপার একটা ব্রেসলেটে । স্বাস্থটা আরেকটু হলে নায়িকাদের মতই লাগতো। এরকম রূপবতী মেয়েদের পিছনে বখাটেরা একটু আধটু ঘুরবে । এটাই স্বাভাবিক ।
মেয়েটা চটপটে । কথা বলার সময় চোখে চঞ্চলতা লুকাতে পারেনি । কাটা কাটা শব্দে সে শুরু করলো,
- স্লামালেকুম, আমাদের এখানটা কেমন লাগছে?
আসাদুজ্জামান হেসে বললেন,
-ভালই । এখনো ঘুরে দেখা হয়নি।
- চার্চে গিয়েছেন । বান্দুরা চার্চ? ঢাকা থেকে অনেকে আসে । জানেন গত নভেম্বরে দেবদাসের সিঙ্গার শ্রেয়া ঘোষাল এসেছিল।
- আচ্ছা অবশ্যই দেখবো ।
- তুমি হিন্দী ছবি দেখ বুঝি ।
- না, অত দেখিনা । আব্বু ডিভিডি দেখতে দেয়না । সামনে পরীক্ষা । শুধু আম্মু টিভি দেখে ।
- আপনি এসেছেন খুব ভাল হয়েছে ।
আম্মা খুব মজার রান্না করেন । আব্বার পছন্দ ইছামতির তাজা রুইয়ের মুড়িঘন্ট আর চিংড়ি দিয়ে লাল শাক । বলতে বলতে মৌরির মা ফিরে এলেন ।
- আসাদ সাহেব উনিতো এখনো এলো না । আপনি কিন্তু রাতে দুটো ডালভাত খেয়ে যাবেন । আমার মেয়েগুলোতো অতিথীর জন্য পাগল ।
ভদ্রমহিলা মিশুক । কথা বলতে বলতে টিভি ছেড়ে দিলেন । নিজেও মনে হয় গানের খুব সমঝদার । একটা চ্যানেলে গানের প্রোগ্রাম হচ্ছে
– আমার নাম কাসেম । আমার গান যদি আপনার এতটুকু হৃদয়ে ছোয়া দিয়ে থাকে তবে আমাকে প্লিজ প্লিজ প্লিজ এসএমএস করুন।
আড়চোখে মৌরিকে দেখছিলাম । মেয়েটি মনযোগ দিয়ে টিভি দেখছে । টিভির আলোর ওঠানামা করছে । টিনএজ বয়সে মেয়েদের একধরণের লাজুক ভাব থাকে । পুতু পুতু ভাব থাকে। বসার সময় ইচ্ছে করে কোলে হাত দিয়ে পা কুকড়ে বসে থাকে । মৌরির মধ্যে আড়স্ট ভাবটা নেই ।
আসাদুজ্জামান সাহেব মেয়েটিকে সরাসরি দেখতে চাইলেন না । মিসেস কলিম শেখ পাশেই । বয়স্ক মহিলাদের দৃষ্টিতে কিছু এড়ায় না । উনি এ থেকে অন্যকিছু আন্দাজ করবেন ।
নিরাপদ ভাবে মৌরির খোলা পায়ের পাতা দেখতে দেখতে মনে হলো, মৌরি কেয়ারলেস বিউটি নয় । মফস্বল শহর হলেও নিজের যত্ন নেয় । লম্বা আঙূলগুলোর নখে নেল পালিশ । পায়ের বন্দনা নিয়ে দেশ পত্রিকায় শচীন ভৌমিকের একটা লেখা মনে পড়ে গেল মৌরিকে দেখে।
একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে, আসাদুজ্জামান । ভিতরের অন্য একটা স্বত্বা কথা বলে উঠলো । মনে হলো কেউ তাকে চড় কষে দিয়েছে। শাসন করছে । নিরবে সে তর্ক শুরু করেছে নিজের সঙ্গেই
- ছি আসাদুজ্জামান । একটি ইস্কুলের বাচ্চা মেয়ের দিকে এভাবে তোমার লজ্জা করছে না? আসাদুজ্জামান, তোমার নিজেরও তো ক্লাস ফাইভের একটা মেয়ে আছে ।
- হতে পারে । কিন্তু আমি তো মৌরির জন্মদাতা বাবা না । একজন পুরুষ, বিপরীত লিঙ্গের সৌন্দর্য অবলোকন করবে, এটাই তো ন্যাচরাল । এতে পাপ কোথায়? কার ক্ষতি?
- কিন্তু আসাদুজ্জামান । তুমি ভুলে যাচ্ছ তুমি প্রায় পঞ্চাশের মানুষ । তোমার বয়সে এটা বেমানান।
- কেন বেমানান? যারা কবি সাহিত্যিক দার্শনিক তারা কি নারীর বন্দনা বয়সের সঙ্গে বন্ধ করে দিয়েছে? সবাই কি তাদের দুরে ঠেলে দিয়েছে? রবীন্দ্রনাথরা শেষ বয়সে নারীর রূপ নিয়ে কবিতা লেখেনি? আইনস্টাইন থেকে কলমপেষা কেরানী - কোন পুরুষ নারীর সৌন্দর্য অবগাহন করে নি?
পুরুষের মন যদি বাইরে থেকে দেখা যেত, কতগুলো পুরুষকে তাদের বয়সের সঙ্গে মানানসই মনে হতো?
- অন্যদের তুলনা বাদ দাও । তুমি নিজেকে দেখ । দৃষ্টিতে তোমার নোংরা শরীরের লোভ ।
- ভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করার কী দরকার? কর্মকে নিয়ন্ত্রণ করলেই তো দুনিয়া ঠান্ডা ।
আসাদুজ্জামান সাহেবের ভাল লাগছিল না । বাড়িওয়ালা ফিরে এসেছন । ভাড়াটা দিয়েই বেরিয়ে এলেন । অনেক সাধার পরও রাতে খেলেন না ।
(চলবে...)
-
পর্ব ১: Click This Link
পর্ব ২: Click This Link
পর্ব ৩: Click This Link
পর্ব ৪: Click This Link
পর্ব ৫: Click This Link
পর্ব ৬: Click This Link
পর্ব ৭: Click This Link
পর্ব ৮: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১০ সকাল ৯:৪৯