কলিম শেখ তার বাসার ভেতর থেকেই ডাকলেন, আসেন, আসাদ ভাই কেমন আছেন? ঢাকায় ভাবী বাচ্চারা ভাল?
- জ্বি আপনাদের দোয়ায় ভাল । মেয়েটার অসুখ ছিল । তেমন কিছু না ঠান্ডাজ্বর । এখন সেরেছে ।
- আপনার একটা গুণের কথা শুনলাম । সুরভী আজকে বলল যে আপনিই নাকি মৌরির হাত দেখে এ লঞ্চ দূর্ঘটনার সম্মন্ধে সাবধান করেছিলেন । মৌরি চাপা মেয়ে, আগে একবারও বলেনি । আপনার উছিলায় আল্লাহ পাক আমাদের বাচিয়ে দিলেন ।
আর আপনার ভাবী সেই থেকে কলের গানের মত বলে চলছে,
-ভাই এত গুণের । উনাকে বল আমার হাতটা যাতে একটু দেখে দেন।
আপনিতো আর দাওয়াত না দিলে নিজের মনে করে আসবেনই না, প্রথাগত ন্যাকামির টোনে বললেন, আজকে আর কোনভাবেই ছাড়বো নাই । যা আছে, দুটো ডালভাত একসঙ্গে খাবেন ।
ও ঘর থেকে চামুচ টেবিলের টুং টাং শব্দ আসছে । ভাজা পেঁয়াজের গন্ধ আসছে নাকে । বেরেস্তা বানাচ্ছে তার মেজ মেয়ে । ভাবী নিশ্চয়ই আজ তাক লাগানো কিছু করছেন । ডাল ভাতে তো বেরেস্তা থাকার কথা না ।
আসাদুজ্জামান খাবার ঘর টাতে ঢুকে ধাক্কা খেলেন । ফর্মিকা বিছানো টেবিল । হেন পদ নেই করা হয়নি । ভাত, পোলাও দুটোই আছে । আলু দিয়ে গরুর মাংস । কালো ঝোলের কসানো গরু দেখে জীভে পানি চলে আসছে ।
পাঙ্গাস মাছের চাক, খাসীর রেজালা, মুরগীর রোস্ট সহ বিশাল আয়োজন । আপনি সুটকী মাছ খান? পাকুন্দিয়া থেকে মৌরির মামা চ্যাপা সুটকী এনেছে । আরেকদিন ভর্তা খেতে ডাকবো।
মীম চিনা থালা আর পানির গ্লাস নিয়ে দৌড়ে এসেছে । টেবিলে বসেই হাত ধুয়ে ফেলা যাবে । আসাদুজ্জামানের দুই চোখ কিন্তু খুঁজছে মৌরিকে । বাসার সবাই এই রূমে । কিন্তু সে আসেনি কেন?
খাওয়া শুরু করার সময় না পেরে বলেই ফেললেন,
-আপনার বড় মেয়ে বাড়ি নেই? সবাই একসঙ্গে বসি ।
ভাবী বললেন, মৌরির শরীরটা একটু খারাপ । সে অন্য রূমে শুয়ে আছে।
আসাদুজ্জামান আর কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলেন না । বড়দের অনেক ইঙ্গিত বুঝে নিতে হয় । মৌরির সমস্যাটা স্বাভাবিক মেয়েলি চক্রের বিষয় । এজন্য ভদ্রমহিলা এটা এড়াতে চাচ্ছেন । অন্য কোন কিছু হলে অসুখের খবর পেটে রাখতে পারতেন না।
খাওয়া শেষে মিসেস কলিম হাত দেখার কথা ভুলে গেলেন না । আমি অনেকটা মুখস্ত বলে গেলাম, এখন রাহুর গ্রাস চলছে । সামনে বৃহস্পতি এবং মঙ্গলের যোগ
প্রত্যেকেই নিজেকে কষ্টে আছে ভাবে । সুতরাং রাহু শনি এগুলো অব্যর্থ । ভবিষ্যতে ভাল কিছু আসবে বললে খুশি হয় । বিপদ আপদ যে যত গুছিয়ে বলতে পারে সে তত বড় জ্যোতিষী।
আসাদ সাহেব মহিলার হাতের আয়ুরেখার দিকে একটু বিজ্ঞের ভাব করে বললেন,
-আচ্ছা, আপনার কি ছোটবেলায় একটা ভয়ানক অসুখ হয়েছিল যেটা পরে এমনিতে সেরে যায়? মিসেস কলিম শেখ হা করে চেয়ে থাকলেন,
-ভাই আপনি ঠিকই বলেছেন, সাইনাসের ভীষন সমস্যা ছিল ছোট থেকেই । পড়াশোনায় ভাল ছিলাম । মাথা ব্যথার জন্য পড়াশোনা করতে পারি নাই । চশমা নিয়েও কাজ হয় নাই। শেষে হোমিওপ্যাথিতে সেরেছে ।
আসাদুজ্জামানের মন ছিল অন্য খানে । তিনি আশা করছিলেন, অন্তত: যাবার আগে মৌরি বিদায় দিতে আসবে । কিন্তু সে আসেনি ।
বাড়ি ফেরার পথে দেখলেন আকাশে মস্ত চাঁদ উঠেছে । দুধ সাদা পূর্নিমা ।
মৌরির কি কোন কিছু হয়েছে? ইদানিং পথে দু’চারবার দেখা হলে কুশল বিনিময় শেষে চোখ নামিয়ে দ্রুত চলে যায় । এসএসসি পরীক্ষা কাছেই চলে এসেছে । হয়তো এজন্য পড়াশোনায় খুব ব্যস্ত ।
ছুটির দিনগুলোতে প্রায়ই একটা সারপ্রাইজের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন আসাদ সাহেব । তিনি জানেন পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে ওরা বাইরে বের হবার সময় পাবে না ।
কোন এক বুধবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি । স্বপ্নকুঞ্জের গেটে হঠাৎ কোথা থেকে মৌরির উদয় হলো ।
আসাদ সাহেব চমকে গিয়ে বললাম, আরে তুমি? আমার এখানে আসছিলে নাকি? জি ভাইয়া । আপনি আমাকে একটু উপকার করতে পারবেন? জরুরী দরকার ।
মৌরিকে আগে এমন কখনো দেখে নি । নিশ্চিত যে সে চাঁদা চাইতে আসে নি । চোখের নিচে কালি জমতে শুরু করেছে । মুখটা বড় শুকনা । বললাম
-শিওর, বলো কী সমস্যা । চোখের দিকে চাইলো, চোখে পানি । বললাম কী হয়েছে? বলো ।
-আপনি আর কাউকে বলবেন না ঠিক আছে? আব্বা আম্মা জানলে খুন করবে ।
-ঠিক আছে। বুঝলাম সে কিছু শেয়ার করতে চায়। গেট দিয়ে ভিতরে যেতে যেতে অভয় দিলাম, অস্থির হওয়ার কিছু নেই । ভিতরে এসে বস । নি:সঙ্কোচে বল ।
মৌরি ইসারায় ডাকলো গেটের দিকে, এই! ওপাশ থেকে ২৩/২৪ বছরের একটা ছেলে বের হয়ে এল ।
(চলবে...)
পর্ব ১: Click This Link
পর্ব ২: Click This Link
পর্ব ৩: Click This Link
পর্ব ৪: Click This Link
পর্ব ৫: Click This Link
পর্ব ৬: Click This Link
পর্ব ৭: Click This Link
পর্ব ৮: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১০ সকাল ৯:৪৭