somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: পাপ - ৬

২৬ শে জুন, ২০১০ দুপুর ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কলিম শেখ তার বাসার ভেতর থেকেই ডাকলেন, আসেন, আসাদ ভাই কেমন আছেন? ঢাকায় ভাবী বাচ্চারা ভাল?
- জ্বি আপনাদের দোয়ায় ভাল । মেয়েটার অসুখ ছিল । তেমন কিছু না ঠান্ডাজ্বর । এখন সেরেছে ।
- আপনার একটা গুণের কথা শুনলাম । সুরভী আজকে বলল যে আপনিই নাকি মৌরির হাত দেখে এ লঞ্চ দূর্ঘটনার সম্মন্ধে সাবধান করেছিলেন । মৌরি চাপা মেয়ে, আগে একবারও বলেনি । আপনার উছিলায় আল্লাহ পাক আমাদের বাচিয়ে দিলেন ।

আর আপনার ভাবী সেই থেকে কলের গানের মত বলে চলছে,
-ভাই এত গুণের । উনাকে বল আমার হাতটা যাতে একটু দেখে দেন।
আপনিতো আর দাওয়াত না দিলে নিজের মনে করে আসবেনই না, প্রথাগত ন্যাকামির টোনে বললেন, আজকে আর কোনভাবেই ছাড়বো নাই । যা আছে, দুটো ডালভাত একসঙ্গে খাবেন ।

ও ঘর থেকে চামুচ টেবিলের টুং টাং শব্দ আসছে । ভাজা পেঁয়াজের গন্ধ আসছে নাকে । বেরেস্তা বানাচ্ছে তার মেজ মেয়ে । ভাবী নিশ্চয়ই আজ তাক লাগানো কিছু করছেন । ডাল ভাতে তো বেরেস্তা থাকার কথা না ।

আসাদুজ্জামান খাবার ঘর টাতে ঢুকে ধাক্কা খেলেন । ফর্মিকা বিছানো টেবিল । হেন পদ নেই করা হয়নি । ভাত, পোলাও দুটোই আছে । আলু দিয়ে গরুর মাংস । কালো ঝোলের কসানো গরু দেখে জীভে পানি চলে আসছে ।

পাঙ্গাস মাছের চাক, খাসীর রেজালা, মুরগীর রোস্ট সহ বিশাল আয়োজন । আপনি সুটকী মাছ খান? পাকুন্দিয়া থেকে মৌরির মামা চ্যাপা সুটকী এনেছে । আরেকদিন ভর্তা খেতে ডাকবো।

মীম চিনা থালা আর পানির গ্লাস নিয়ে দৌড়ে এসেছে । টেবিলে বসেই হাত ধুয়ে ফেলা যাবে । আসাদুজ্জামানের দুই চোখ কিন্তু খুঁজছে মৌরিকে । বাসার সবাই এই রূমে । কিন্তু সে আসেনি কেন?

খাওয়া শুরু করার সময় না পেরে বলেই ফেললেন,
-আপনার বড় মেয়ে বাড়ি নেই? সবাই একসঙ্গে বসি ।

ভাবী বললেন, মৌরির শরীরটা একটু খারাপ । সে অন্য রূমে শুয়ে আছে।

আসাদুজ্জামান আর কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলেন না । বড়দের অনেক ইঙ্গিত বুঝে নিতে হয় । মৌরির সমস্যাটা স্বাভাবিক মেয়েলি চক্রের বিষয় । এজন্য ভদ্রমহিলা এটা এড়াতে চাচ্ছেন । অন্য কোন কিছু হলে অসুখের খবর পেটে রাখতে পারতেন না।

খাওয়া শেষে মিসেস কলিম হাত দেখার কথা ভুলে গেলেন না । আমি অনেকটা মুখস্ত বলে গেলাম, এখন রাহুর গ্রাস চলছে । সামনে বৃহস্পতি এবং মঙ্গলের যোগ

প্রত্যেকেই নিজেকে কষ্টে আছে ভাবে । সুতরাং রাহু শনি এগুলো অব্যর্থ । ভবিষ্যতে ভাল কিছু আসবে বললে খুশি হয় । বিপদ আপদ যে যত গুছিয়ে বলতে পারে সে তত বড় জ্যোতিষী।

আসাদ সাহেব মহিলার হাতের আয়ুরেখার দিকে একটু বিজ্ঞের ভাব করে বললেন,
-আচ্ছা, আপনার কি ছোটবেলায় একটা ভয়ানক অসুখ হয়েছিল যেটা পরে এমনিতে সেরে যায়? মিসেস কলিম শেখ হা করে চেয়ে থাকলেন,
-ভাই আপনি ঠিকই বলেছেন, সাইনাসের ভীষন সমস্যা ছিল ছোট থেকেই । পড়াশোনায় ভাল ছিলাম । মাথা ব্যথার জন্য পড়াশোনা করতে পারি নাই । চশমা নিয়েও কাজ হয় নাই। শেষে হোমিওপ্যাথিতে সেরেছে ।

আসাদুজ্জামানের মন ছিল অন্য খানে । তিনি আশা করছিলেন, অন্তত: যাবার আগে মৌরি বিদায় দিতে আসবে । কিন্তু সে আসেনি ।

বাড়ি ফেরার পথে দেখলেন আকাশে মস্ত চাঁদ উঠেছে । দুধ সাদা পূর্নিমা ।

মৌরির কি কোন কিছু হয়েছে? ইদানিং পথে দু’চারবার দেখা হলে কুশল বিনিময় শেষে চোখ নামিয়ে দ্রুত চলে যায় । এসএসসি পরীক্ষা কাছেই চলে এসেছে । হয়তো এজন্য পড়াশোনায় খুব ব্যস্ত ।

ছুটির দিনগুলোতে প্রায়ই একটা সারপ্রাইজের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন আসাদ সাহেব । তিনি জানেন পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে ওরা বাইরে বের হবার সময় পাবে না ।

কোন এক বুধবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি । স্বপ্নকুঞ্জের গেটে হঠাৎ কোথা থেকে মৌরির উদয় হলো ।

আসাদ সাহেব চমকে গিয়ে বললাম, আরে তুমি? আমার এখানে আসছিলে নাকি? জি ভাইয়া । আপনি আমাকে একটু উপকার করতে পারবেন? জরুরী দরকার ।

মৌরিকে আগে এমন কখনো দেখে নি । নিশ্চিত যে সে চাঁদা চাইতে আসে নি । চোখের নিচে কালি জমতে শুরু করেছে । মুখটা বড় শুকনা । বললাম
-শিওর, বলো কী সমস্যা । চোখের দিকে চাইলো, চোখে পানি । বললাম কী হয়েছে? বলো ।
-আপনি আর কাউকে বলবেন না ঠিক আছে? আব্বা আম্মা জানলে খুন করবে ।
-ঠিক আছে। বুঝলাম সে কিছু শেয়ার করতে চায়। গেট দিয়ে ভিতরে যেতে যেতে অভয় দিলাম, অস্থির হওয়ার কিছু নেই । ভিতরে এসে বস । নি:সঙ্কোচে বল ।

মৌরি ইসারায় ডাকলো গেটের দিকে, এই! ওপাশ থেকে ২৩/২৪ বছরের একটা ছেলে বের হয়ে এল ।

(চলবে...)
পর্ব ১: Click This Link
পর্ব ২: Click This Link
পর্ব ৩: Click This Link
পর্ব ৪: Click This Link
পর্ব ৫: Click This Link
পর্ব ৬: Click This Link
পর্ব ৭: Click This Link
পর্ব ৮: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১০ সকাল ৯:৪৭
১৫টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×