অল্পবয়সী ছেলেদের মতো একটা সমস্যা হচ্ছে আসাদ সাহেবের । রাতে ক্লান্ত ছিলেন খুব । এসেই ঘুমিয়ে পড়েছেন । কিন্তু ঘুমে একটা বাজে স্বপ্ন দেখলেন ।
সুন্দরী মেয়েদের জন্য পুরুষদের যে শ্বাশ্বত আকর্ষণ থাকে । আকর্ষণটা সংসারী হলে ভদ্রতার সুড়ঙ্গে ঘাপটি মেরে থাকে, মাঝে মাঝে বের হয়ে আসে কিন্তু মরে যায় না।
আসাদুজ্জামান সাহেব টের পেলেন অফিসে কাজ করতে করতে মৌরির চঞ্চলতা, দু পাশে চুলের বেনী, সরু লম্বা পায়ের আঙুল মাথায় ঘুরে ফিরে চলে আসছে । চা খেয়েছেন অনেক কাপ । একটু হেটেছেন বারান্দায় । ভাবলেন বাড়ির সঙ্গে কথা বললে এসব ভুত দুর হবে ।
মেয়ের সঙ্গে কথা বললেন ফোনে । মেয়ের গলা শুনে মনটা ভাল লাগলো । পুরো ঠিক হলো না ।
স্বয়ংক্রীয় একটা সিস্টেম যেন তাকে চালাচ্ছে । না হলে কেন আগে আগেই বাড়ি ফিরবেন? নিজেকে যুক্তি দিচ্ছেন যে অযথা বাইরে ঘোরাফেরা ঠিক না ।
কিন্তু কারণটা অন্য । ব্যাডমিন্টনের সিজন । বাড়ির উল্টোদিকে ব্যাডমিন্টনে প্রতিবেশীদের ছেলেমেয়েরা ভীড় করে। মাঝে মাঝে দুর থেকে দেখেছেন মৌরি আর তার এক বান্ধবী খেলা দেখতে আসে । দুর থেকে পুরো মৌরিকে আর কতটাই দেখা যায়, কিন্তু মৌরিকে দেখতে এক ধরনের নেশার মত পেয়ে যায় ।
বাড়িতে এসে চুলাতে ভাত বসিয়ে, পাশের একটা জানালা খুলে রাখেন আসাদুজ্জামান। একটা বই নিয়ে পড়ার ভান করেন । মৌরিকে খুঁজতে থাকেন । যেদিন পান না সেদিন মনটা খারাপ লাগে । তিনি কি মৌরির প্রেমে পড়ে গিয়েছেন?
শুক্রবার ছুটির দিন আসাদুজ্জামান সাহেব আগে ওঠেন । মাঝে মাঝে হার্টের বামদিকে একটু ব্যথা হয় । ডাক্তার বলেছে ভোরে উঠে কয়েক মাইল হাটতে । অন্যদিন হয়না বলে ছুটির দিনে পুষিয়ে নেন ।
আসাদ সাহেব দেখতে সুপুরুষ ছিলেন । কলেজ জীবনে ব্যায়াম করতেন, খেলাধুলা করতেন প্রচুর । ক্রিকেটে ব্যাট্সম্যান হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন। সেই বয়সে ভক্তের অভাব ছিল না ।
এখন তার চেহারা যেন জমিদার বাড়ির ধ্বংশস্তুপ । মাথার অর্ধেক সাদা রং এর দখলে চলে গেছে। তিরিশ পয়ত্রিশে ছেলেরা সাদা চুল দেখে নিদ্রাহারাম করে । অস্থির থাকে পাকা চুল তোলার জন্য । গোপনে কলপ দিয়ে হলেও বয়স কমাতে চায় । পাছে তাকে লোকে বুড়ো বলে ।
চল্লিশ পার হলে সেই আফসোসটা কমে যায়। গায়ের চামড়া, চোখের নিচ, সর্বোপরি ভুড়ির আয়তনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে থেমে যায় । বার্ধক্যের কাছে এক ধরণের আত্মসমর্পণ করে ফেলে ।
আসাদ সাহেব শনিবার সকালে সেলুনে গিয়ে চুল কেটে বেশ যত্ন করে ছাট দিয়েছেন । নাপিতকে বকশিশ দিয়েছেন যাতে কাজ ভাল করে ।
নিজেকে তিরিশ পয়ত্রিশের যুবকের মত ফুর ফুরে লাগছে । শনিবার বিকেলে টিভিতে হাসির নাটক হয় । নাটক দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে না । বারান্দায় চেয়ারে বসে থাকতে থাকতে যা দেখলেন যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ..
(চলবে..)
পর্ব ১: Click This Link
পর্ব ২: Click This Link
পর্ব ৩: Click This Link
পর্ব ৪: Click This Link
পর্ব ৫: Click This Link
পর্ব ৬: Click This Link
পর্ব ৭: Click This Link
পর্ব ৮: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১০ সকাল ৯:৪৯