somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: পাপ - ৪

২৬ শে জুন, ২০১০ রাত ১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্বপ্নকুঞ্জের গেট দিয়ে অনেকটা স্বপ্নের মত মৌরি ঢুকেই বলে উঠলো
- স্লামালেকুম, আপনি তো আমাদের বাড়িতে আসলেন না আর ।
আম্মা আপনার জন্য পায়েস পাঠিয়েছে । বলে প্লাস্টিকের একটা টিফিন বক্স বের করে এগিয়ে দিল । দেশী খেজুরের গুড়ের পায়েস । মুড়ি দিয়ে খাবেন । মুড়িও এনেছি

এ আমার বন্ধু সুরভী । সুরভী মাথা নেড়ে সালাম দিল । সুরভীকে দেখেছে মাঠে । ময়লা রং । মৌরির পাশে ফিল্মের নেগেটিভের মত লাগছে । হাসলে মেয়েটার ঠোট সাপের লেজের মত বেঁকে যায় । এমন রূক্ষ্ম চেহারার মেয়ে কী করে মৌরির বন্ধু হয়?

- তোমরা বসো । নতুন স্টোভ কিনেছি । তোমরা কি চা খাও? চা বানাই?
সুরভী বললো, আমি চা খাইনা । মৌরি বললো আজ না । অন্যদিন । মন বলছে সুরভী গেলে যাক । মৌরিটা থেকে গেলে কী হয়? মুখে বললাম,
- আরে বলো কি । চা তো তোমাদের জন্য দরকার । বিদেশে তো বাচ্চাদের চা খেতে রীতিমত জোর করে । কারণ এতে এন্টি অক্সিডেন্ট আছে । মাথার বুদ্ধি বাড়ে ।

আমাদের কালচারে সব উল্টা । তোমরা বসো কয় মিনিট । সমস্ত বুদ্ধি চিন্তা করতে থাকলাম, কি করে এদের কে আরেকটু সময় রাখা যায় । সুরভীরই তাড়া বেশি । বললো,
- ভাইয়া আমরা আজ যাই ।
ভাইয়া!!একটা ইলেকট্রিক শক খেলেন আসাদ সাহেব । সুরভী কি বাপের বয়সী কে ভাইয়া ডেকে মজা করছে? ভুল করছে? নাকি তাকে দেখতে সত্যিই ইয়াং মনে হচ্ছে । মনে হচ্ছে দৌড়ে আয়নায় আরেকবার নিজেকে দেখে । আরেকটা কারণ পেলেন ।

অনেক পরিবারে বেশি ভাইবোন থাকে, বড় ভাইদের সঙ্গে বয়সের তফাত্ কুড়ি পঁচিশও হয়ে থাকে । সুরভীর তেমন বড় ভাই থাকলে তাকে ভাইয়া মনেও হতে পারে ।

আসাদুজ্জামানের আবারও মনে হলো – তিনি বার বার নিজেকে বয়স্কই ভাবছেন কেন? ছেলেদের আবার কীসের বয়স? পশ্চিমা দেশে এই ষাটেও লোকে ডেটিং করে । বীচে সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে লুটোপুটি খায়। এখনো তো পঞ্চাশ ও পুরো হয়নি । বিয়ে করেছিলেন কম বয়সে । শিল্পী সাদী মুহাম্মদ তো পঞ্চাশ পার করেও বিয়ে করেনি ।

তারা চলে গেল ।

..............
নবাবগঞ্জে মোবাইলের সিগনাল ভাল থাকেনা । ফোনের দোকানও হাতে গোনা । ব্যাঙ্কের লাইনটা ব্যস্ত থাকে । একদিন কাজের সময় স্ত্রীর ফোন পেলেন । দীর্ঘদিন বাড়িতে যান না বলে কড়া অভিযোগ । বাড়িতে যেতে হল । ঢাকা থেকে আসার সময় কিছু গিফট কিনে আনলেন লুকিয়ে ।
...............

পরের এক ছুটির দিন সেই রত্নযুগল মৌরি এবং সুরভী এসে হাজির ।
না । এবার পায়েস আনে নি । এসেছে বাণিজ্যিক কাজে । স্কুলের বনভোজনের চাঁদা লাগবে । আমার পকেট খালি । বেতন পাইনি। স্ত্রীর জন্য তুলে রাখা দুই হাজার টাকা থেকে একটা একশ’ টাকার নোট তুলে দিলাম মৌরির হাতে ।

যা হোক চাঁদা দিতে কারোই ভাল লাগে না । কিন্তু এটা প্রথম ব্যতিক্রম । মৌরির দিকে চেয়ে বললেন, যখন লাগবে নি:সঙ্কোচে বলো।
মৌরিকে জন্য শ’ খানেক কেন হাজার টাকা দিতেও তার খারাপ লাগবে না । মেয়েটা টাকা নেয়ার সময় আসাদ সাহেবের আঙুল ছুয়ে গেল । বিদ্যুতের মত শিহরিত হলেন । মনে হতে লাগলো হাতের গোপন স্পর্শগুলো টাকার চিঠিতে মৌরির হাতে বিলি করেছে কেউ ।

আবার মাথাটা বিগড়াতে লাগলো । এবার তার ভিতরের মানুষটাকে অগ্রাহ্য করতে চাইলেন । ইচ্ছে হলো মৌরির কোমল হাত মুঠোয় নিয়ে আদর করতে । কলেজ জীবনের পুরনো বুদ্ধিগুলো তার মাথায় ঘুরছে ।

আসাদ সাহেব তাদের দিকে চেয়ে বললেন,
- আচ্ছা তোমাদের জন্মদিন কবে? সুরভী বললো তারটা অক্টোবরের ২৯ । আর মৌরিরটা পরের মাসের ৯ । দুজনই বৃশ্চিক । বাহ । বৃশ্চিকে বৃশ্চিকে ভাল বন্ধুত হতে দেখি না ।
-তোমাদের মিল হয়েছে কেন জান? লগ্নের জন্য ।
রাশিফল আর হস্তরেখা নিয়ে একসময় পড়াশোনা করেছি বিস্তর । এখন সবাইকে জিজ্ঞেস করে ফেলি ।

আসাদুজ্জামান জানে তার পামিস্ট্রির দৌড় । বটতলা থেকে কেনা কীরোর “হাত দেখার সহজ উপায়” বইয়ের কয়েক পাতা আর কিছু রেখার নাম মুখস্ত । আসলে সেইযুগে মেয়েরা এগুলো খুব মানতো ।

টোপে দুর্দান্ত কাজে হলো । মৌরি অধৈর্য হয়ে বললো,
- ওয়াও! আপনি হাত দেখতে জানেন? প্লিজ একটু আমার হাতটা দেখেন । নিজ থেকে এগিয়ে কাছে এসে দু বাহু মেলে ডান হাতটা পেতে দিল । আমি ভুল করে যেন ডান হাত ধরেছি, বললাম মেয়েদের বাম হাত দেখাতে হয় ।

মৌরির হাত আমার হাতে বন্দি হয়েছে । কোমল চাঁপা কলির মত আঙূলের স্পর্শ । রেখার নাম ভুলে গেছি । হৃদয় রেখার চেয়ে হৃদয়টাই দেখতে ইচ্ছে হয় । ইচ্ছে হলো তার হাতের সন্ধি থেকে বাহুতে তালুতে তালুতে ঢেউ বইয়ে দেই । নদীর মানচিত্রের মত গোলাপী হাতের রেখায় হাত ঘষি, চুমু খেয়ে ফেলি ।

মুখে একটু গম্ভীর হয়ে বললাম,
-মৌরি, তুমি খুব সৌভাগ্যবতী, জীবনের মধ্য বয়সে প্রচুর অর্থের সমাগম হবে । তবে একটি কথা বলি, এই মাস শেষে তোমার সামনে একটা ফাড়া আছে । পানি থেকে খুব সাবধান । মাসের শেষে রাহুর গ্রাস কেটে যাবে । ৩ ৯ ১২ শুভ সংখ্যা ।
-আমার রেজাল্ট কেমন হবে? হার্ট লাইন কি বলছে?
- রেজাল্ট ভাল হবে তবে তুমি মনযোগ দিচ্ছ কম । মনযোগ বাড়াতে হবে । আর তোমার হার্ট লাইন বলছে, তোমাকে একজন খুব পছন্দ করে, মন দিয়ে ভালবাসে কিন্তু তুমি সেটা জানে না ।

মৌরির হাত দেখা শেষ করতে হবে । সুরভীরকে বললাম তোমার টা শুনতে চাও। মেয়েটা একটু বেশি চালাকই । কথা বিশ্বাস করছে কম । মৌরি হঠাৎ ঘড়ির দিকে চেয়ে বললো, আমাদের যেতে হবে ভাইয়া । পরে কথা হবে ।

সুরভীকে দেখে মৌরিও ভাইয়া ডাকতে শুরু করেছে । আসাদুজ্জামান অবাক হলেন না । মৌরির মাও ভাই বলেছিল । তিনি দু'দিনের ভাড়াটিয়া । যে যেটা ডাকতে চায় ডাকুক । রক্তের সম্পর্কতো আর না ।

এগিয়ে দিতে গিয়ে বললাম,
- যখন ভাল লাগে এখানে এসো । একা থাকি । তোমাদের সঙ্গে গল্প করলে মন্দ হয় না । মৌরি যাবার সময় তার দিকে চোখে চোখ পড়তেই একটা রহস্যজনক সম্মতি সুচক সাড়া পেলাম ।

তার হালকা গোলাপী ঠোটের হাসিটা বাতাসে মিলিয়ে যেতে সময় নিল।

(চলবে...)

পর্ব ১: Click This Link
পর্ব ২: Click This Link
পর্ব ৩: Click This Link
পর্ব ৪: Click This Link
পর্ব ৫: Click This Link
পর্ব ৬: Click This Link
পর্ব ৭: Click This Link
পর্ব ৮: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১০ সকাল ৯:৪৯
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×