স্বপ্নকুঞ্জের গেট দিয়ে অনেকটা স্বপ্নের মত মৌরি ঢুকেই বলে উঠলো
- স্লামালেকুম, আপনি তো আমাদের বাড়িতে আসলেন না আর ।
আম্মা আপনার জন্য পায়েস পাঠিয়েছে । বলে প্লাস্টিকের একটা টিফিন বক্স বের করে এগিয়ে দিল । দেশী খেজুরের গুড়ের পায়েস । মুড়ি দিয়ে খাবেন । মুড়িও এনেছি
এ আমার বন্ধু সুরভী । সুরভী মাথা নেড়ে সালাম দিল । সুরভীকে দেখেছে মাঠে । ময়লা রং । মৌরির পাশে ফিল্মের নেগেটিভের মত লাগছে । হাসলে মেয়েটার ঠোট সাপের লেজের মত বেঁকে যায় । এমন রূক্ষ্ম চেহারার মেয়ে কী করে মৌরির বন্ধু হয়?
- তোমরা বসো । নতুন স্টোভ কিনেছি । তোমরা কি চা খাও? চা বানাই?
সুরভী বললো, আমি চা খাইনা । মৌরি বললো আজ না । অন্যদিন । মন বলছে সুরভী গেলে যাক । মৌরিটা থেকে গেলে কী হয়? মুখে বললাম,
- আরে বলো কি । চা তো তোমাদের জন্য দরকার । বিদেশে তো বাচ্চাদের চা খেতে রীতিমত জোর করে । কারণ এতে এন্টি অক্সিডেন্ট আছে । মাথার বুদ্ধি বাড়ে ।
আমাদের কালচারে সব উল্টা । তোমরা বসো কয় মিনিট । সমস্ত বুদ্ধি চিন্তা করতে থাকলাম, কি করে এদের কে আরেকটু সময় রাখা যায় । সুরভীরই তাড়া বেশি । বললো,
- ভাইয়া আমরা আজ যাই ।
ভাইয়া!!একটা ইলেকট্রিক শক খেলেন আসাদ সাহেব । সুরভী কি বাপের বয়সী কে ভাইয়া ডেকে মজা করছে? ভুল করছে? নাকি তাকে দেখতে সত্যিই ইয়াং মনে হচ্ছে । মনে হচ্ছে দৌড়ে আয়নায় আরেকবার নিজেকে দেখে । আরেকটা কারণ পেলেন ।
অনেক পরিবারে বেশি ভাইবোন থাকে, বড় ভাইদের সঙ্গে বয়সের তফাত্ কুড়ি পঁচিশও হয়ে থাকে । সুরভীর তেমন বড় ভাই থাকলে তাকে ভাইয়া মনেও হতে পারে ।
আসাদুজ্জামানের আবারও মনে হলো – তিনি বার বার নিজেকে বয়স্কই ভাবছেন কেন? ছেলেদের আবার কীসের বয়স? পশ্চিমা দেশে এই ষাটেও লোকে ডেটিং করে । বীচে সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে লুটোপুটি খায়। এখনো তো পঞ্চাশ ও পুরো হয়নি । বিয়ে করেছিলেন কম বয়সে । শিল্পী সাদী মুহাম্মদ তো পঞ্চাশ পার করেও বিয়ে করেনি ।
তারা চলে গেল ।
..............
নবাবগঞ্জে মোবাইলের সিগনাল ভাল থাকেনা । ফোনের দোকানও হাতে গোনা । ব্যাঙ্কের লাইনটা ব্যস্ত থাকে । একদিন কাজের সময় স্ত্রীর ফোন পেলেন । দীর্ঘদিন বাড়িতে যান না বলে কড়া অভিযোগ । বাড়িতে যেতে হল । ঢাকা থেকে আসার সময় কিছু গিফট কিনে আনলেন লুকিয়ে ।
...............
পরের এক ছুটির দিন সেই রত্নযুগল মৌরি এবং সুরভী এসে হাজির ।
না । এবার পায়েস আনে নি । এসেছে বাণিজ্যিক কাজে । স্কুলের বনভোজনের চাঁদা লাগবে । আমার পকেট খালি । বেতন পাইনি। স্ত্রীর জন্য তুলে রাখা দুই হাজার টাকা থেকে একটা একশ’ টাকার নোট তুলে দিলাম মৌরির হাতে ।
যা হোক চাঁদা দিতে কারোই ভাল লাগে না । কিন্তু এটা প্রথম ব্যতিক্রম । মৌরির দিকে চেয়ে বললেন, যখন লাগবে নি:সঙ্কোচে বলো।
মৌরিকে জন্য শ’ খানেক কেন হাজার টাকা দিতেও তার খারাপ লাগবে না । মেয়েটা টাকা নেয়ার সময় আসাদ সাহেবের আঙুল ছুয়ে গেল । বিদ্যুতের মত শিহরিত হলেন । মনে হতে লাগলো হাতের গোপন স্পর্শগুলো টাকার চিঠিতে মৌরির হাতে বিলি করেছে কেউ ।
আবার মাথাটা বিগড়াতে লাগলো । এবার তার ভিতরের মানুষটাকে অগ্রাহ্য করতে চাইলেন । ইচ্ছে হলো মৌরির কোমল হাত মুঠোয় নিয়ে আদর করতে । কলেজ জীবনের পুরনো বুদ্ধিগুলো তার মাথায় ঘুরছে ।
আসাদ সাহেব তাদের দিকে চেয়ে বললেন,
- আচ্ছা তোমাদের জন্মদিন কবে? সুরভী বললো তারটা অক্টোবরের ২৯ । আর মৌরিরটা পরের মাসের ৯ । দুজনই বৃশ্চিক । বাহ । বৃশ্চিকে বৃশ্চিকে ভাল বন্ধুত হতে দেখি না ।
-তোমাদের মিল হয়েছে কেন জান? লগ্নের জন্য ।
রাশিফল আর হস্তরেখা নিয়ে একসময় পড়াশোনা করেছি বিস্তর । এখন সবাইকে জিজ্ঞেস করে ফেলি ।
আসাদুজ্জামান জানে তার পামিস্ট্রির দৌড় । বটতলা থেকে কেনা কীরোর “হাত দেখার সহজ উপায়” বইয়ের কয়েক পাতা আর কিছু রেখার নাম মুখস্ত । আসলে সেইযুগে মেয়েরা এগুলো খুব মানতো ।
টোপে দুর্দান্ত কাজে হলো । মৌরি অধৈর্য হয়ে বললো,
- ওয়াও! আপনি হাত দেখতে জানেন? প্লিজ একটু আমার হাতটা দেখেন । নিজ থেকে এগিয়ে কাছে এসে দু বাহু মেলে ডান হাতটা পেতে দিল । আমি ভুল করে যেন ডান হাত ধরেছি, বললাম মেয়েদের বাম হাত দেখাতে হয় ।
মৌরির হাত আমার হাতে বন্দি হয়েছে । কোমল চাঁপা কলির মত আঙূলের স্পর্শ । রেখার নাম ভুলে গেছি । হৃদয় রেখার চেয়ে হৃদয়টাই দেখতে ইচ্ছে হয় । ইচ্ছে হলো তার হাতের সন্ধি থেকে বাহুতে তালুতে তালুতে ঢেউ বইয়ে দেই । নদীর মানচিত্রের মত গোলাপী হাতের রেখায় হাত ঘষি, চুমু খেয়ে ফেলি ।
মুখে একটু গম্ভীর হয়ে বললাম,
-মৌরি, তুমি খুব সৌভাগ্যবতী, জীবনের মধ্য বয়সে প্রচুর অর্থের সমাগম হবে । তবে একটি কথা বলি, এই মাস শেষে তোমার সামনে একটা ফাড়া আছে । পানি থেকে খুব সাবধান । মাসের শেষে রাহুর গ্রাস কেটে যাবে । ৩ ৯ ১২ শুভ সংখ্যা ।
-আমার রেজাল্ট কেমন হবে? হার্ট লাইন কি বলছে?
- রেজাল্ট ভাল হবে তবে তুমি মনযোগ দিচ্ছ কম । মনযোগ বাড়াতে হবে । আর তোমার হার্ট লাইন বলছে, তোমাকে একজন খুব পছন্দ করে, মন দিয়ে ভালবাসে কিন্তু তুমি সেটা জানে না ।
মৌরির হাত দেখা শেষ করতে হবে । সুরভীরকে বললাম তোমার টা শুনতে চাও। মেয়েটা একটু বেশি চালাকই । কথা বিশ্বাস করছে কম । মৌরি হঠাৎ ঘড়ির দিকে চেয়ে বললো, আমাদের যেতে হবে ভাইয়া । পরে কথা হবে ।
সুরভীকে দেখে মৌরিও ভাইয়া ডাকতে শুরু করেছে । আসাদুজ্জামান অবাক হলেন না । মৌরির মাও ভাই বলেছিল । তিনি দু'দিনের ভাড়াটিয়া । যে যেটা ডাকতে চায় ডাকুক । রক্তের সম্পর্কতো আর না ।
এগিয়ে দিতে গিয়ে বললাম,
- যখন ভাল লাগে এখানে এসো । একা থাকি । তোমাদের সঙ্গে গল্প করলে মন্দ হয় না । মৌরি যাবার সময় তার দিকে চোখে চোখ পড়তেই একটা রহস্যজনক সম্মতি সুচক সাড়া পেলাম ।
তার হালকা গোলাপী ঠোটের হাসিটা বাতাসে মিলিয়ে যেতে সময় নিল।
(চলবে...)
পর্ব ১: Click This Link
পর্ব ২: Click This Link
পর্ব ৩: Click This Link
পর্ব ৪: Click This Link
পর্ব ৫: Click This Link
পর্ব ৬: Click This Link
পর্ব ৭: Click This Link
পর্ব ৮: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১০ সকাল ৯:৪৯