ব্যাঙ্কে খুব ঝামেলা চলছে । নবাবগঞ্জে বিদেশ থেকে টাকা আসে অনেক। কেউ একজন জাল স্বাক্ষর দিয়ে তিন লক্ষ টাকার চেক তুলে নিয়ে চলে গেছে । ম্যানেজারে ঘাড়ে দায় এসেছে । মৌরিরা কিছুদিনের জন্য বেড়াতে গেছে বলে ওর চ্যাপ্টার আপাতত বন্ধ ।
ব্যাঙ্কের কাউন্টারে বসে আছি হঠাৎ একটি বয়স্ক সাদা লোকের সঙ্গে সুরভীকে দেখতে পেলাম । ও এই ভদ্রলোক তাহলে সুরভীর বাবা? তিনি আগেও এসেছেন এই ব্যাঙ্কে । আমি সামনে যেতেই সুরভী নিজে এগিয়ে এসে বললো, ভাইয়া, আপনি কি ঘটনা শুনেছেন?
- কি?
- আপনি মৌরির হাত দেখেছিলেন বলে তারা বিরাট বিপদ থেকে বেচে গেছে।
দৌলতপুরে তাদের আত্মীয়ের বাড়িতে যাবার জন্য কলিম চাচা “পদ্মা” লঞ্চের টিকেট কেটেছিল । বাড়ির কাছে ইছামতি লঞ্চঘাট। ওটাতেই সব সময় যান । আপনি পানি তে সাবধান থাকতে বলেছিলেন না। মৌরি ওটার জন্য জোর করে, কান্নাকাটি করে টিকেট বাদ দিয়েছে । অগত্য সবাই বাসে গেছে ।
বাসার সবাই জিজ্ঞেস করছিল লঞ্চে কী সমস্যা । মৌরি চুপ ছিল । খবরের কাগজে দেখেছেন? যে লঞ্চটি অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নিমতলীর চরে ডুবে গেছে সেটাতেই তাদের যাওয়ার কথা ছিল । তিরিশ জন যাত্রীর লাশ তুলেছিল । মৌরিরা গেলে হয়তো আর ফিরে আসতো না। যা হোক কাল রাতে ওরা ফিরেছে ।
আমি আৎকে উঠি । কী ভয়ানক কান্ড । পুরোটাই তো বানানো কথা । যদি আমি তাদের বলতাম স্থল পথ অশুভ তাহলে তো আমার কথায় তারা জাহাজেই উঠতো ।
মৌরির জন্য একটা মায়া অনুভব করতে থাকে আসাদ সাহেব । মেয়েটা তাকে কত বিশ্বাস করে ! অনেক রাত অবধি তাকে ব্যাঙ্কে কাজ করতে হলো । রাত এগারোটার পর বাড়ি ফিরলেন বলে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কলিম শেখের পরিবারের সঙ্গে দেখা হলো না । এসেই শুয়ে পড়লেন।
হঠাৎ আসাদুজ্জামান দেখতে পেলেন মৌরিকে । মৌরি সাদা শাড়ী পরেছে । বাঙালী মেয়েদের সবচেয়ে সুন্দর দেখায় সুতী শাড়ি আর লাল টিপে। মৌরিকে অনেক বড় দেখাচ্ছে । আবেগে, অস্থিরতা যেন হাপাতে হাপাতে এসে বাসায় এসে নক করছে ।
দরজা খুলতেই বলছে, ভাইয়া, আপনি আমাদের যে কী উপকার করেছেন। আমরা হয়তো সব মারা যেতাম আপনি যদি সেদিন সাবধান করে না দিতেন । আর কথা বলতে পারছেনা ।
- ভাইয়া, সেদিন সময় ছিল না । আজকে যতটা সময় লাগে নিয়ে আমার হাত দেখতে হবে । আসাদুজ্জামানের বলছেন ভেতরে এসো । মেঘের আনাগোনার মত ধীরে মৌরিকে দেখছেন । সুরভী থাকলে মৌরির দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারেন না।
বাম হাতের তলায়, কাঠের বাড়ির পাটাতনের মত তার হাত রেখে দেখে নিচ্ছেন হাতের গভীরতা, রঙ, কমনীয়তা । মৌরি বুঝেতে পারছে হয়তো । সে বড় মেয়ে । না বোঝার কারণ নেই। তার অনিচ্ছা থাকলে হাত সরিয়ে নিতো । রেগে যেত ।কিন্তু সে হাত সরাচ্ছে না ।
আসাদুজ্জামানের শক্ত কব্জি কখন যেন মৌরির আয়ুরেখার রেললাইন থেকে লাইনচ্যুত হয়ে বাহুর ওপর উঠে গিয়েছে । মৌরি কী চোখ বুজে ফেলছে? মাখনের মত গলে যেতে যেতে তার হাত জোড়া আসাদ সাহেবের হাতে আটকে গেছে । মোরি এখন চাইলেই পালাতে পারবে না ।
বাতাস বইছে বাইরে ঝড় হবে । মৌরি বাড়ি গেল না । বাতাসে তার চুলের ঝাপটা আসাদ সাহেবের মুখে আসছে । লম্বা কালো চুলের গোছায় একটা অচেনা গন্ধ পেলেন । উঠতি বয়সের ছেলেরা যেমন নানান ছুতোয় স্পর্শ চায়, তেমন করে তেমন করে তিনি বলতে চাইলেন, মৌরি তোমার চুলে এটা কি ..দাড়াও বলে চুলটা পরিস্কার করতে দিচ্ছি । কিন্তু কী দরকার । তার হাত এর মধ্যে হালকা স্পর্শে চিরুণীর মত তার কঠিন আঙুলগুচ্ছ আঁচড়ে দিচ্ছে মৌরিকে ।
বাইরে ঝড় শুরু হচ্ছে । বৃষ্টির ঝাপটা । বজ্রপাতের শব্দে অনেকটা নাটকীয় ভাবে মৌরি আসাদ সাহেবকে জাপটে ধরছেন । আসাদ সাহেব যেন পুরো ঘটনা আগেই জানতেন। অভয় দিতে মৌরিকে চুমু খেয়ে বললেন, আমি আছি । মৌ, আমি তোমাকে আমি ভালবেসে ফেলেছি । আমাকে বাঁচাও ।
আসাদ সাহেব ঘুম থেকে জাগলেন ।পানি খেলেন দুই গ্লাস।
ভিতরের মানুষটা তাকে থুতু ছেটানোর মত শব্দ করে ধমকাচ্ছে - ছি আসাদুজ্জামান তুমি না কর্মে সৎ থাকার কথা বলেছ? এখন এ কেমন তরো বিচ্যুতি? একটি মেয়েকে একা পেয়ে তাকে চুম্বন করার ইচ্ছা পোষন করছো? গায়ে হাত বুলাচ্ছ, তোমার আর ধর্ষকামী পশুর তফাৎ কই?
আবার দ্বিতীয় মনটি বলতে লাগলো,
- কী এমন ক্ষতি? ও যদি রাজি হয়ে থাকে তাহলে বয়সের দোষ দিয়ে কী লাভ? আমি কি রক্তমাসে গড়া মানুষ না? শুনেছি মেয়েরা বয়স নিয়ে ভাবেনা । এই বয়সে সে চায় নৈকট্য, ভালবাসা ..
.....................
আজকে ব্যাঙ্কে কলিম শেখ এসেছেন । সম্ভবত: লঞ্চের ঘটনাটার রহস্য জেনে গেছে বাড়ির সবাই। অনেক লোক দেখে বলে গেলেন, আজকে রাতে বাসায় আসবেন । অনেক কথা আছে ।
(চলবে...)
পর্ব ১: Click This Link
পর্ব ২: Click This Link
পর্ব ৩: Click This Link
পর্ব ৪: Click This Link
পর্ব ৫: Click This Link
পর্ব ৬: Click This Link
পর্ব ৭: Click This Link
পর্ব ৮: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১০ সকাল ৯:৪৮