somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বর্তমান বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি এবং কিছু উপলব্ধি

০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ, তবে আমি একজন পিতা, একজন সন্তান, একজন ভাই এবং একজন স্বামী এবং আমি আমার পরিবার প্রিয়জনদের খুব ভালোবাসি। তাই, তাদের কথা ভেবেই বর্তমান এই করোনা পরিস্থিতিতে সেই সরকারি সাধারণ ছুটির পর থেকে এখনো ঘরের বাহিরে যাইনি।বলতে পারেন, আমি আসলে আমার ফুটফুটে সন্তানদের জীবনে অযথা ঝুঁকি নিয়ে আসতে চাইনি। তবে হ্যা, পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর জন্য একান্ত প্রয়োজনে হয়ত এই অবস্থাতেও আমাকে বাহিরে যেতে হতে পারে! এবং সেটা করতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমি যথেষ্ট সাবধানতা মেনেই তারপর তা করার চেষ্টা করব।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে এই গৃহবন্দী দশা আমাদের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে প্রতিনিয়ত।এরপর টিভি খুললেই মন আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে, সারা পৃথিবীতে কেবল মৃত্যু মিছিল। আমাদের দেশেও রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে। আর এসবের মধ্যে আমাদের এই প্রিয় দেশের কিছু মানুষের অসচেতন কার্যকলাপ মন আরো বিষিয়ে তুলছে। তাই হয়ত কিছু বিষয় নিয়ে হঠাৎ এই লেখা শুরু করা ৷

যেমন ইদানিং অনেকেই ত্রান দিচ্ছেন..ছবি উঠিয়ে তা আবার সোস্যাল মিডিয়ায় দিচ্ছেন, অনেকেই নিজ উদ্যোগে নিজ নিজ এলাকায় লক ডাউনের ডাক দিচ্ছেন, মাইকিং করছেন...আবার সেদিন এক ভিডিওতে দেখা গেলো,টাংগাইল শহরে একজন জনপ্রতিনিধি কাউন্সিলর জনসাধারণকে ঘরে ফেরাতে লাঠিপেটা করেছেন। এই সকল কাজের সাথে যারা জড়িত তারা যে.. সব কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে পেরেছে বা করছে তা কিন্তু নয়, তা পুরোপুরি করা সম্ভবও নয়! কিন্তু সব কিছুর পরও তাদের মধ্যে হয়ত অনেকেই কোন ভালো উদ্যোগ থেকে সে কাজগুলো করার চেষ্টা করছেন..। অনেকেই আমরা বলি, যা করছে তারা.. সবই প্রচারের জন্য। যদি তাই হয়, তাহলে ওই যে বিজ্ঞাপন আছেনা.. দাগ থেকে যদি দারুণ কিছু হয়,তাহলে দাগই ভালো.. তবে কেবল কিছু দিক খেয়াল রাখতে হবে তাহলেই হয়ত কাজগুলো সুষ্ঠু হবে। যে মানুষটিকে ত্রান দিলেন তার পরিচয় বা ছবি যেন সোস্যাল মিডিয়ায় না আসে,কারণ এতে তার আত্মমর্যাদাকে অপমানিত করা হয়। ত্রান দেওয়ার সময় নিজে এবং গ্রহীতাদের মাঝে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাতে হবে। সবচেয়ে ভালো ঘর থেকে বাহির না হয়ে পরিচিত অসহায়দের বিকাশ,রকেটের মাধ্যমে টাকা দেওয়া কিংবা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের মত কিছু সংঘটন আছে যারা খুব সুন্দর ও গোছানো ভাবে অসহায়দের পাশে আছেন তাদের মাধ্যমে দান প্রদান করা ইত্যাদি। এছাড়া যারা লকডাউন করে ফেলছেন নিজেদের এলাকাগুলো,তারা কেবল খেয়াল রাখুন, কারো যদি একান্ত কিছুর প্রয়োজন থাকে বা ভবিষ্যতে পড়ে যায়, সেটা কোন না কোনভাবে ব্যবস্থা করে দেওয়ার ব্যবস্থা রাখার জন্য।
কাউকে পেটানো, মানবাধিকার অপরাধের মধ্যেই পড়ে.. কিন্তু সেটা যদি বৃহত্তর স্বার্থে হয় তাহলে সেটা স্বাগত জানানো দোষেরও নয় বলে মনে করি, তবে হ্যা সেক্ষেত্রে প্রশাসনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, প্রশাসন ব্যার্থ হলে উপযুক্ত গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে প্রথমে বুঝিয়ে তারপরে না হলে সেপথে এগুতে হবে। বৃহত্তর স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধে কিন্তু এদেশের সাধারণ মানুষেরই অংশগ্রহণ ছিল এবং সেটা সারা পৃথিবীতেই গ্রহনযোগ্যতাও পেয়েছিল।
তবে ☺ তারমানে এই বলছি না, আমরা সবাই এই মুহুর্তে লাঠি বন্দুক নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ব, সে জন্য আমাদের প্রশাসন এখনো আছেন।আপাতত আমাদের কাজ ঘরে থাকা। এটাই এখন বৃহত্তর স্বার্থে, আমাদের পরিবার প্রিয়জন আর দেশের স্বার্থে আমাদের মত সাধারনের কিছু করার মত বিশাল এক কাজ এবং দায়িত্ব । তবে প্রশাসন এর যে কাজ করা উচিত সে কাজ যদি সঠিক ভাবে তারা পালন না করে তাহলে বিকল্প কেউ না কেউ কিন্তু ঠিকই এগিয়ে আসবেন, অতীতেও এসেছেন এবং সেটাকে সাধুবাদ জানানোও উচিত।

আচ্ছা এমনিতেই একটা জিজ্ঞাসা ছিল, কাউন্সিলর সাহেবের পিটানোর যে ভিডিও দেখলাম তাতে কোন স্থানেই কোন সামরিক বাহিনী বা পুলিশ কেনো দেখা গেলো না। ভিডিওতে দেখা প্রত্যেকটি স্থানই তো টাংগাইলের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল,এখানে কেনো কোন পুলিশ, আর্মি থাকবে না, আশ্চর্য!

আসলে আমরা কিন্তু সবাই জানি, আমরা আসলে কতটা অসহায় এবং কতটা অসচেতন! আর তাই যখন মূর্খের মত "মুই কি হনুরে" টাইপ অসচেতনা দেখি তখন মাঝে মাঝে মনে হয়, করোনা ঠেকাতে আমাদের দেশে লকডাউন না, ১৪৪ ধারা বোধ হয় ভালো হত।

যদিও জনগনের অসচেতনতা ছাড়াও সাধারণ জনগনের নিরুপায়তা, অভাব, পেটের ক্ষুধা এবং আমাদের প্রশাসনের অতীত বেশ কিছু ভুল সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপ বেশ দায়ী এই মহামারীর সংকটময় অবস্থার জন্য। এখনো বেশ কিছু গোছানো পদক্ষেপ আমাদের প্রশাসন, আমাদের সরকার নিয়ে সেটা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করলে আশা করি এই মহামারী শীঘ্রই লাঘব হবে।

আমরা জানি এবং বুঝি, ঘর থেকে এসময় যে কোন প্রয়োজনেই হোক, বের হওয়াটা সকলের জন্যই ঝুঁকির কারণ। বর্তমানে বাংলাদেশ চতুর্থ স্তরে আছে যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ সময়।

সোস্যাল মিডিয়ায় দেখলাম ব্যাংকের ভিতর বাহিরে অগণিত মানুষের ঢল। ধরে নিলাম, দোষ সরকার ব্যবস্থার.. সিস্টেমের। তাই বলে কি আপনিও আগুনে ঝাপ দিবেন! দেন, ভুলে যাইয়েন না, এতে কিন্তু আপনি আপনার পরিবারকেও সামিল করছেন। কি করতে হবে এব্যাপারে কারো কাছ থেকে জ্ঞান নেওয়ার প্রয়োজন নেই। নিজের ভালো পাগলেও বুঝে। আপনি ভালো করে ভেবে দেখুন, কিভাবে এই জন সমাগম থেকে নিজেকে এড়িয়ে চলবেন, কি ভাবে চললে আপনার পরিবার ও আপনি সুরক্ষিত থাকবেন, এবং সেটাই করুন দয়া করে।

ঘরের বাহিরে কিছু কাজ আছে যা কিছু মানুষের জন্য করতে বের হওয়াটা নিতান্তই জরুরি। রিক্সাচালক বা দৈনিক আয়ে যার সংসার তাকেও হয়ত বের হতেই হবে পেটের দায়ে এবং এটাই স্বাভাবিক। তবে সেটা যতটুকু সম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করে এরপর বের হওয়াটা নেহাৎই জরুরি।

কিন্তু এছাড়া যাদের কিছুটা সামর্থ্য আছে, প্রতিদিন যারা আমরা বাজারে বের হচ্ছি, একবার নাপা, একবার প্যারাসিটামল এর জন্য ফার্মেসিতে যাচ্ছি তারা কি প্রয়োজনীয় কিছু প্রাথমিক ওষুধ বা প্রেস্ক্রিপশন অনুযায়ী মাসোয়ারি ওষুধ গুলো একেবারে কিনে এনে রাখতে পারিনা। আমরা অনেকেই কি কিছু পরিমাণ বাজার একবারে ১০-১৫-২০ দিনের জন্য করে নিতে পারিনা, বারবার কেনো বের হতে হচ্ছে গণভাবে?!!
না হয় কিছুদিন সবজি না খাই, টাটকা মাছ না খাই..। আলু, ডিম, ডাল ভাত খাই.. বিশ্বাস করুন এতে আপনার ক্ষতি হবে না কিন্তু টাটকা সবজি খেতে গিয়ে করোনা যে আপনার ও আপনার প্রিয়জনকে খেয়ে ফেলতে পারে সেটা মোটামুটি ধরে রাখতে পারেন।

আমরা যদি এখনো সচেতন না হই আমাদের লাশ খাওয়ার জন্য কুকুর বিড়াল শকুন এসব কিছুও হয়ত পর্যাপ্ত হবেনা, পচে গলে পড়ে থাকতে হবে।
আল্লাহ মাফ করুক, এমন মৃত্যু যেন কারো না হয়!

তাই ভাই, সব সমালোচনা বাদ দিয়ে এখন সচেতনতা বোধ নিজের মধ্যে আনাটা বেশি জরুরি। নিজে বুঝে হোক.. আর লাঠি পেটা করেই হোক, এই মহামারীর দমন এখন কমাতেই হবে। জেনে রাখুন, গত দুদিন আগে ফিলিপাইনে লকডাউনের সময় একজন ব্যক্তিকে ওই দেশের প্রশাসন গুলি করে মেরে ফেলেছে,ভাবুন তো একবার!

আমার ক্ষুদ্র চিন্তামতে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে সচেতনতা বৃদ্ধি আর মানুষকে ঘরে রাখার জন্য যা যা করা প্রয়োজন, হোক সেটা সরকারের মাথায় হাত বুলানো কোন মহৎ উদ্যোগ বা ১৪৪ ধারার প্রয়োগ, সেটাও না হলে নিজ নিজ এলাকায় নিজেদের উদ্যোগ.. যেকোন মাধ্যমেই হোক.. একটাই কথা.. করোনাভাইরাস এর মহামারী বাড়তে দেওয়া যাবেনা।

আমার প্যাচালে বকলে বকেন, সাধুবাদ দিলে দেন। কেবল ভাই, ঘরে থাকুন, খুবই একান্ত প্রয়োজনে কেবল বের হোন, যে প্রয়োজনে বের না হলেই চলবে না সেক্ষেত্রে যতটুকু সম্ভব নির্দেশনা মেনে সচেতনতা মেনে বের হোন।

মনে রাখবেন, পুরো হাত পা মুখ ঢেকেও যেখানে উন্নত দেশ গুলোর মানুষ মরে যাচ্ছে, সেখানে কেবল নাম কা উয়াস্তে মাস্ক আর মোজা পড়ে বাহাদুরি করে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো, কেবল নিজের না পুরো পরিবার, প্রিয়জন..পুরো জাতি ধংস করার জন্য যথেষ্ট।

আল্লাহ তুমি ক্ষমাশীল, রক্ষাকারী। আমাদের তুমি হেদায়েত দাও, আমাদের রক্ষা করো, ক্ষমা করো।
আমিন।









ছবিঃ সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৩৯
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×