somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"শেষ স্থিতি"-সাইকো থ্রিলার

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হালকা সবুজ রংয়ের প্রিয় টিয়া পাখিটার দিকে তাকিয়ে আছে তূর্য।চোখ ঝাপসা হয়ে আছে।গাল বেয়ে নেমে গলা আর আকাশি রংয়ের শার্টের কলারটা ভিজিয়ে ফেলেছে চোখের নোনতা পানি।
অস্বস্থিকর একটা জীবনযাপন করছে সে।নিজের জীবনের জন্য অপার ঘৃণা অতি যত্নে লালন করছে বুকের গভীরে।প্রত্যেক মানুষের জীবন সুখ আর ভালবাসার সুতোয় গাথে তার বাবা-মা।তূর্যর জীবনে ওর বাবা-মাই চরম অভিশাপ।তূর্য ওর বোধশক্তি অর্জনের পর থেকে কখনও বাবা-মার ভালবাসা উপভোগ করতে পারে নি।সব সময়ই ঝগড়া,নো আন্ডারস্টেন্ডিং।টাকা পয়সার কোনোও অভাব নেই ওদের। তূর্য পরিবারে থেকেও একা,ছোট থেকেই।বাবা-মার ঝগড়া-বিবাদ,ক্যাঁচাল,মারামারি ওর জীবনটা বিষিয়ে তুলেছে।
বাবা-মা প্রেম করেই বিয়ে করেছিল।পালিয়ে।।

আজ তূর্যর রেজাল্ট দিয়েছে।এবার এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিয়েছে ও।
Golden A plus ।কলেজে রেজাল্ট পেয়ে দ্রুত ছুটে আসে বাড়িতে,এবার হয়ত বাবা মা একটু ভালোবাসবেন।
বাড়িতে ঢুকেই শুনতে পায় ঝগড়া আর জিনিসপত্র ভাঙ্গার শব্দ।বাবার হুংকার আর মায়ের কর্কশ কণ্ঠ।আজও ড্রাগ নিয়েছে মা।
ওদিকে আর পা বাড়ায় না ও।চুপচাপ উঠে যায় উপরের তলায়,নিজের ঘরে।
ঘরে ঢুকেই দেখে ছোট ভাই তায়িফ ওর বিছানায় বসে কাঁদছে।এতক্ষণ নীরব পাথরের মত থেকেও এখন আর পারে না।ছোট ভাইয়ের চোখের অশ্রু ওকে ফুপিয়ে তোলে।
মাত্র ক্লাস ফোরে পড়ে তায়িফ।তূর্য ওকে খুব ভালোবাসে।

তূর্যর চোখ লাল হয়ে আছে,এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পাখিটার দিকে।বিকেল গরিয়ে পরেছে।একটু পরেই সন্ধ্যা নামবে।
তূর্য ওর প্রিয় পাখির খাঁচাটার দিকে এগিয়ে যায়।খাঁচার দরজা খুলে পাখিটাকে হাতে নেয়,হাত বুলাতে থাকে।গত বছর জন্মদিনে উপহার পাওয়া এই পাখিটা ওর খুব প্রিয়। পাখিটার গলাটা একটু শক্ত হাতে ধরে তূর্য।তারপর গলাটা এক টানে ছিড়ে ফেলে...

সন্ধ্যা নেমেছে।তূর্য দোকান থেকে ফিরছে।হাতে একটি গোলাপ,তায়িফের জন্য একটি ডেইরি মিল্ক চকলেট আর একটি কলম।
বাড়ি ফিরে তূর্য তায়িফকে ওর রুমে ডেকে নেয়।বিছানার শেষ কোণাটায় বসে ওরা।তূর্য ডেইরি মিল্কটা তায়িফের দিকে বাড়িয়ে দিল।তায়িফ বলল,থ্যাংক ইউ ভাইয়া।তারপর খুব মনযোগ দিয়ে খেতে শুরু করল।
তূর্য ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।কি সুন্দর লাগছে ওর ভাইটাকে।তূর্য ডান হাতটা পিছন নিয়ে গেল।বাম হাতে শক্ত করে চেপে ধরল তায়িফকে।তায়িফ নড়তে চেষ্টা করছে,আর বলছে,কি করছ ভাইয়া?ব্যাথা লাগছে,ছেড়ে দাও।
তূর্য নির্বিকার।ডান হাতে তুলে নেওয়া ছুরিটা এবার খুব যত্নে তায়িফের গলায় চালিয়ে দেয় তূর্য।অস্ফুট বিকট এক গোঙ্গানির আওয়াজ হয়।তারপর ফুস ফুস করে রক্ত বেরোতে থাকে তায়িফের গলা থেকে।তায়িফের দেহটা এখন নিথর।দু হাতে আদরের ছোট ভাইকে ধরে কাঁদছে তূর্য।ওর রক্তে লাল হয়ে যাওয়া চেহারাটা খুব মনযোগ দিয়ে দেখছে তূর্য।খুব ধীরে তূর্যর মুখ থেকে একটি কথা বের হল,
আই লাভ ইউ তায়িফ।।

তূর্যর আকাশী রংয়ের শার্টের উপরের দিকটা রক্তে লাল হয়ে আছে।গীটারটা নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে এসেছে ও।বেরোনোর সময় বাবা-মা দেখেনি।দারোয়ান আংকেল অবশ্যি তূর্যকে কি কি যেন বলছিল,আর হা করে তাকিয়ে ছিল।তূর্য সে কথাগুলো শুনতে পায় নি,ওর কান যেন অবশ হয়ে গেছে।
ও হেঁটে চলেছে।রাত প্রায় আটটা বাজে।হাতে গোলাপ ফুল আর একটি কলম।তূর্য হেঁটে চলেছে লীনার বাসার দিকে।লীনা তূর্যের ভালবাসা,আর একমাত্র বন্ধুও।

লীনাদের দোতলা বাসার নিচে দাড়ায় ও।ঠিক লীনার রুমের নিচে।তারপর গীটার বাজাতে শুরু করে।লীনার প্রিয় একটি গান।লীনা বারান্দায় এসে দাড়ায়।ও ভালবাসার মানুষকে দেখে খুশি হয়,সাথে যথেষ্ট অবাকও হয়।
তূর্য এমন পাগলামি প্রায়ই করে।লীনাদের বাসার নিচে দাড়িয়ে গীটার বাজায়,কিন্তু এত রাতে!
লীনা হাত উচিয়ে তূর্যকে বলে থাম।তূর্য ইশারায় নিচে আসতে বলে।
লীনা আবার অনেকটা ফিসফিসিয়া বলে,তুমি এখন এসেছ কেন?আমি কিকরে নিচে যাব এখন?
তূর্য উত্তরে নিচে আসার ইশারা করে আবার।
'উফফ,তুমি না...' বলতে বলতে ভেতরে ঢুকে গেল লীনা।তূর্য অপেক্ষা করতে লাগল,ও জানে লীনা আসবে।
একটু পর লীনা আসে।দেয়ালের কোণাটায় তূর্যর হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।বলে,এত রাতে এখানে কি করছ?
তূর্য বলে,তুমি আমাকে ভালবাস?
-গাধা,এটা জিজ্ঞেস করতে এসেছ?
-হুম।
-তুমি আসলেই পাগল।তুমি জানো না,তোমাকে ভালবাসি কিনা।
তূর্য আকশ্মাত জরিয়ে ধরে লীনাকে।লীনা হঠাত্‍ হকচকিয়ে যায়।তবে লীনাও জরিয়ে ধরে তূর্যকে।লীনার কোমল স্পর্শে তূর্যর শরীরে শিহরন জাগে,উত্তাপ ছড়িয়ে যায় সারা শরীরে।
লীনা এতক্ষণে খেয়াল করে তূর্যর শার্টটা ভেজা।
-কি হয়েছে তোমার তূর্য?তোমার শার্টটা ভেজা কেন?
-কিছু না,এমনিতেই।
লীনাকে জরিয়ে ধরে থাকে তূর্য।
লীনা প্রচুর অবাক হয় আজকে।চির চেনা তূর্যকেই আজ তার অচেনা লাগছে।হঠাত্‍ তার পেটে খুব সুক্ষ্ম ব্যাথ্যা অনুভব করে লীনা।তূর্য ছুরিকাঘাত করে ওকে।লীনা সরে যাবার চেষ্টা করে,কিন্তু তূর্য ওকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে থাকে।আর খুব আস্তে আস্তে বলে,আই লাভ ইউ লীনা।আই লাভ ইউ।
লীনার শরীর ধীরে ধীরে নেতিয়ে পরে।।

গোলাপটা লীনার পাশে ফেলে রেখে রাস্তায় বেড়িয়ে পরে তূর্য।কলমটা এবার সে নিজের পকেটে রাখে।কে জানে কোন স্থিতির দিকে এগিয়ে যায় ও।।।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:২৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×