সেদিন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ কলার ছিলকায় পা পিছলে পড়ে গেলাম। আমি তারস্বরে চিৎকার করছি, হঠাৎ দেখি হাসান কালবৈশাখী ভাই এসে উপস্থিত। তিনি বেশ উত্তেজিত। আমি আশার আলো দেখলাম। কিন্তু তিনি আমাকে ওঠার সুযোগ না দিয়ে বলতে থাকলেন, "হঠাৎ করে এই খটখটে রাস্তায় পা পিছলে পড়ে গিয়ে আপনি কী প্রমাণ করতে চাইছেন? এতে কিছুই প্রমাণ হয় না। দুই একটা সিসিটিভি ফুটেজ থাকতে পারে। তাতে মেলোড্রামাটিক মিউজিক দিয়ে অনেকেই হয়তো ঘটনায় রঙ চড়াতে পারে। কিন্তু এতে করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে না।" আমি তখন কোমড় ব্যথায় কোঁকাচ্ছি। সেই সময় ট্রাক্টরে চড়ে এলেন চাঁদ্গাজী ভাই। আমি বললাম, "আমাকে একটু হাত ধরে উঠাবেন?"। চাঁদ্গাজী নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন আমার দিকে। তারপর জিজ্ঞাসা বললেন, "ত্রিশ বছর বয়স হওয়ার পরেও যাহারা রাস্তায় ঠিকমত চলাফেরা করতে পারে না, উহাদের রাস্তায় গার্বেজের মত পড়ে থাকাই উচিত।" বলে তিনি ট্রাক্টর চালিয়ে চলে গেলেন। ইতিমধ্যে সেখানে এসে উপস্থিত নূর মোহাম্মদ নূরু ভাই। তিনি আমাকে দেখে বেশ উৎসাহিত হলেন। "আরে, আপনি এখানে পড়ে আছেন? আজকের এই দিনে একশ বছর আগে মাদাগাস্কারের সম্রাট মিজটার নিম্ফো কলার ছিকলায় পা পিছলে পড়ে যাওয়া মানুষদের জন্যে বিশেষ ডাকটিকিটের ব্যবস্থা করেন। আপনাকে এই বিশেষ দিবস উপলক্ষ্যে জানাই ফুলেল শুভেচ্ছা"। এই বলে তিনি ফুল আনতে চলে গেলেন।
এর মাঝে কাজী ফাতেমা ছবি চলে এসেছেন। তিনি এসে আমার ছবি তুললেন। কলার ছিকলার ছবি তুললেন। ডাস্টবিনের ছবি তুললেন। ফুলের ছবি তুললেন। তারপর "ইনশাল্লাহ,আল্লাহ আপনাকে দ্রুত আরোগ্য করে দেবে" বলে চলে গেলেন। ইতিমধ্যে এসে উপস্থিত হয়েছেন আরেক ফটোবিশারদ রাজীব নুর। তিনি বললেন "আপনি পড়ে গেছেন, উঠেও দাঁড়াবেন এতে চিন্তার কিছু নেই। তবে আপনাকে ওঠাতে পারছি না বলে দুঃখিত। আমি এখন ঢাকার প্রতিটি রাস্তায় যেতে হবে। গিয়ে দেখতে হবে কোন কোন জায়গায় কে কে পড়ে আছে। তাদের সবাইকে ভালোমন্দ দুই-একটানা অন্তত ৯২০০০টা কথা তো বলতেই হবে"।
তিনিও চলে গেলেন। ব্লগার অজ্ঞ বালক এসব দেখে বেশ বিমোহিত। তিনি উঁকিঝুঁকি মেরে দেখতে লাগলেন রক্ত লেগে আছে না কি। রক্ত নেই দেখে তিনি অত্যন্ত হতাশ হলেন। বললেন, "বললেন, আমি এইটা আগেই প্রেডিক্ট করছিলাম যে আপনের কোন রক্ত বাইর হইবো না। যাউজ্ঞা শুভকামনা আপনার লিগা"।
মনিরা সুলতানা এই অবস্থা দেখে বেশ আবেগাপ্লুত। তার অতীতের কথা মনে পড়ে গেলো। আবৃত্তি করতে লাগলেন, "এইসব পড়ন্ত উণমানুষ দেখতে গিয়ে মনে পড়ে যায় ছোটবেলার শিউলি কুড়োবার সেই বাউলা দিনগুলির কথা, যখন রঙধনুর মেহেদি লাগাতাম কমলার খোসায় করে"। আমার অবস্থা ততক্ষণে খুবই করুণ। ভাবছি এ কেমন জায়গা রে বাবা! আমাকে উদ্ধার করার কি কেউ নেই? সেই সময় নাচতে নাচতে চলে এলেন শায়মা! সে তো আমাকে দেখে খুবই উদ্বিগ্ন! "ভাইয়ামনি, তোমার কী হয়েছে! খেলতে খেলতে দুষ্টুমী করতে গিয়ে পড়ে গিয়েছো বুঝি!" বলে জিভ কাটলেন। আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে এই বুড়ো বয়সে খেলতে খেলতে পড়ে যাওয়ার অবস্থা আমার নেই। আমার যা ঘটেছে সেটা একটা দুর্ঘটনা। কিন্তু ততক্ষণে তিনি স্কুলবাসে করে ক্লাস নিতে চলে গেছেন। কী আর করা আমি অবশেষে নিজের চেষ্টায় অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়াতে সক্ষম হলাম। কিন্তু সেই মুহূর্তে এসে উপস্থিত কাল্পনিক ভালোবাসা। সে আমাকে নীতিমালার কীসব ভুজুং ভাজুং বুঝিয়ে গ্রেফতার করে নিয়ে গেলো।
আসি তবে ভাই ও বোনেরা! ছাড়া পেলে আবার দেখা হবে!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৫৫