somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাফিউর রহমান ফারাবী
ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাংলাদেশের প্রান্ত হতে আপনাকে হাজার সালাম! ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার পিতা মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক

আরজ আলী মাতুব্বরের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আমার কিছু প্রশ্ন ;)

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আরজ আলী মাতুব্বর উনার সত্যের সন্ধানে নামক একটি বইতে প্রশ্ন করেছেন যে, - আমরা জানি আল্লাহ সুবহানাতায়ালা হচ্ছেন আর রাহমানু/اَرَّحْماَنُ অর্থ্যাৎ পরম দয়ালু, এখন আরজ আলী মাতুব্বরের প্রশ্ন হচ্ছে একটি সাপ যখন তার খাদ্য হিসাবে একটি ব্যাঙ কে গিলে খাচ্ছে, তখন সাপের কাছে হয়ত আল্লাহ সুবহানাতায়ালা দয়ালু, কিন্তু ব্যাঙ এর কাছে তো ঐ সময় আল্লাহ সুবহানাতায়ালা দয়ালু নন। তাইলে এই দয়ালু/আর রাহমানু/اَرَّحْماَنُ এই নাম টা কি আল্লাহ সুবহানাতায়ালার সত্ত্বার সাথে মানায় ?

আসলে আরজ আলী মাতুব্বর আল্লাহ সুবহানাতায়ালার সবগুলি নাম পড়েন নি, যার কারণে উনি এই অবান্তর প্রশ্নটি করেছেন। আল্লাহ সুবহানাতায়ালার ৯৯ টি নাম রয়েছে। এই ৯৯ টি নামের মাঝে আল্লাহ সুবহানাতায়ালার অনেক গুলি বিপরীত গুনবাচক নামও রয়েছে। যেমন আল্লাহ সুবহানাতায়ালার একটি নাম হলো আদদাররু/اَصَّرُّ মানে হল ক্ষয় ক্ষতি যার ইঙ্গিতে হয়ে থাকে, আবার আরেকটি নামে আলমুনতাকিমু/الْمُنْتَقِمُ যার বাংলা অর্থ হচ্ছে উনি প্রতিশোধ পরায়ন। আবার আল্লাহ সুবহানাতায়ালার আরেকটি নাম হচ্ছে আল মুযিল্লু/اَلْمُزِلُّ যার অর্থ হচ্ছে অপমানকারী। আবার আল্লাহ সুবহানাতায়ালার আরেকটি নাম হচ্ছে আলমুমিতু/اَلْمُمِيْتُ মানে হল মৃত্য দানকারী অর্থ্যাৎ সুখ সম্মান মর্যাদা কল্যান যেমন আল্লাহ সুবহানাতায়ালাই দেন, আবার বিপদ, আপদ দুঃখ, কষ্ট অকল্যান আল্লাহ সুবহানাতায়ালাই দেন। আল্লাহ সুবহানাতায়ালার এই ৯৯ টি নামের বাংলা অর্থ পড়লেই ব্যাপারটা বুঝে আসবে। কেউ যদি আল্লাহ সুবহানাতায়ালা খালি দয়ালু ভাবে তাইলে সে ভুল করবে। কারন আল্লাহ সুবহানাতায়ালা উনার ৯৯টি নামের মাধ্যমেই আমাদের কে উনার বিপরীত ধর্মী সিফাত সম্পর্কে ধারনা দিয়ে দিছেন।
আল্লাহ সুবহানাতায়ালা একাধারে আলো ও অন্ধকার, হেদায়াত ও গোমরাহি উভয়টির সৃষ্টি কর্তা। একারণে ইসলামী শরীয়ত মতে বলা হয় যে, শয়তান স্বপ্নে নিজেকে যে কোন আকৃতি ধারন করে নিজেকে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা বলে পরিচয় দিয়ে যে কাঊকে ধোকা দিতে পারবে। কিন্তু শয়তানের পক্ষে কখনই স্বপ্নে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আকৃতি ধারন করে বা অন্য কোন আকৃতি ধারন করে নিজেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে পরিচয় দিতে পারবেনা। কারন রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন শুধুমাত্র হেদায়াতের প্রতীক কিন্তু আল্লাহ সুবহানাতায়ালা একাধারে আলো ও অন্ধকার, হেদায়াত ও গোমরাহি, সম্মান ও অসম্মান, কল্যান ও অকল্যান উভয়টির প্রতীক। যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে তায়েফের ময়দানে কষ্টের সম্মুখীন আল্লাহ সুবহানাতায়ালাই করেছেন আবার মেরাজ রজনীতে ফেরেশতাদের চেয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে অনেক অনেক বেশি সম্মান আল্লাহই দিয়েছেন।

তাই আল্লাহ সুবহানাতায়ালার নামের গুনের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই এক প্রাণি, আরেক প্রাণি কে খাচ্ছে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নাই।
আরজ আলী মাতুব্বর উনার সত্যের সন্ধান বইতে আরেকটি প্রশ্ন করেছেন যে এই যে দুনিয়ার জীবনে মানুষ জন এত দুঃখ কষ্টে আছে কই আল্লাহ সুবহানাতায়ালা তো অসহায় মানুষদের কে বাচ্চাচ্ছেন না। এইখানে আমাদের একটা ব্যাপার বুঝতে হবে যে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা হচ্ছেন একটা আজালী সত্ত্বা। এই দুনিয়ার জীবন টা আল্লাহ সুবহানাতায়ালা উপায় উপকরনের উপর নির্ভর করে তৈরী করেছেন। এই দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা কখনই সরাসরী হস্তক্ষেপ করবেন না। এই দুনিয়ার জীবনে অনেক নবী রাসূলকে কাফের রা হত্যা করেছিল। আদম আলাইহিসসাল্লাম আর সুলায়মান আলইহিস সাল্লাম ছাড়া আর সকল নবী রাসূলকেই কাফেররা শারিরীক ভাবে আঘাত করেছিল। আমরা জানি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিরাজ হয়েছিল বোরাকের পিঠে চড়ে আলোর গতির চেয়েও দ্রুত গতিতে। কিন্তু দুনিয়ার জীবনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার সময় অনেক কষ্ট করে লুকিয়ে কাফেরদের চোখে ধূলা দিয়ে উটের পিঠে চড়ে, কিছুটা পায়ে হেটে ১০ দিনের মত সময় লাগিয়ে মদীনায় পৌছেছিলেন। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা কিন্তু চাইলেই পারতেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে কোন কষ্ট ছাড়াই কয়েক মুহূর্তের মাঝেই মক্কা থেকে মদীনায় পৌছিয়ে দিতে। কিন্তু আমি আগেই বলেছি এই দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা প্রত্যেকটা কাজই স্বাভাবিক ভাবে করবেন। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা যদি দুনিয়ার জীবনে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতেন তাইলে এই দুনিয়ার জীবনটাই আখিরাতে পরিনত হয়ে যেত।
আরজ আলী মাতুব্বরের প্রশ্নগুলি পড়লে বুঝা যায় আরজ আলী মাতুব্বর না আল্লাহ সুবহানাতায়ালার ৯৯ টি নামের সিফাত সম্পর্কে জানতেন না আল্লাহ সুবহানাতায়ালার আজালী সত্ত্বা সম্পর্কে কিছু জানতেন। খুব অবাক লাগে যখন দেখি এই মূর্খ আরজ আলী মাতুব্বরকেই বাংলাদেশের নাস্তিকরা অন্ধের মত অনুসরন করে। বাংলাদেশের নাস্তিকরা যে একটা আবাল এটা আমি সেই দিনেই বুঝছি যখন তাদের কে অন্ধের মত আরজ আলী মাতুব্বর কে অনুসরন করতে দেখছি। এদের জন্য আমার আফসোস ছাড়া আর কিছু নাই।

আরজ আলী মাতুব্বর মোসলমানদের কোরবানী প্রথা কে কটাক্ষ করেছে। আরজ আলী মাতুব্বর বুঝাতে চেয়েছেন প্রতি বছর এত এত পশু কোরবানী দিলে কৃষি কাজের জন্য প্রয়োজনীয় পশুর অভাব পড়বে। আচ্ছা মোসলমানরা তো আর প্রতিদিন কোরবানী দেয় না, বছরে একবার দেয়। আর কোরবানীর মাংস তো মোসলমানরা ডাস্টবিনে ফেলে দেয় না, এগুলি তারা খায় বা বাড়তি মাংস গরীব লোকদের কে দিয়ে দেয়। দেখা যায় কোরবানীর পর প্রায় ২ মাস কসাইখানায় আর তেমন একটা পশু জবাই হয় না। ফলে পশুর সংখ্যার মাঝে ঠিকই একটা ভারসাম্য থাকে। মাছ, শাকসব্জির উপর চাপ কম পড়ে। সেটাই তো একদিক দিয়ে ভালো। তাছাড়া ট্রাক্টর আবিস্কারের পূর্বে মোসলমানরা যে এত গরু কোরবানী দিল কই ইতিহাসে তো কখনো কোথায় লেখা নেই যে জমি চাষ করতে গরুর অভাব পড়েছে। আর কোরবানী না করলে এত পশুকে বসায় বসায় কি খাওয়ানো সম্ভব ? ভারতে বর্তমানে মানুষের চেয়ে গোখাদ্য বেশি লাগে। হিন্দুরা তো আবার গরু খায় না। আর তাছাড়া কোরবানী ছাড়াইতো প্রতিদিন অন্য ধর্মের লোকেরা হাজার হাজার পশু জবাই করছে কই তখন তো আরজ আলী মাতুব্বরের কোন সমস্যা হয় না ? হিন্দুরাও তো বিভিন্ন পূজায় পশু বলি দেয়, তখন কি পশুর সংখ্যা কমে না? আরজ আলী মাতুব্বরদের কাছে খালি মোসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করলেই দোষ হয়।

সত্যের সন্ধানে নামক বইতে আরজ আলীর প্রশ্ন শুনে এখন আমার খালি হাসি পায়। আরজ আলী মাতুব্বরের এত হাস্যকর প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য ক্বওমী মাদ্রাসার হেদায়াতুন নাহু ক্লাসের ছাত্রই যথেষ্ট।

ইসলামী আক্বীদা সংশোধনের জন্য আরো পড়তে পারেন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বহু বিবাহ প্রসঙ্গে ইসলাম বিদ্বেষীদের সমালোচনার জবাব
আল্লাহ সুবহানাতায়ালার অস্তিত্ত্বের একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমান


পুরুষ জাতির বহু বিবাহ প্রথাকে ইসলামী শরীয়াহ আসলে কতটুকু সমর্থন করে
বনী কুরায়জা গোত্রের সকল পুরুষ ইহুদি হত্যা করা প্রসঙ্গে একটি পর্যালোচনা
ইসলামি শরীয়াহ কি কখনই দাস দাসী প্রথাকে সমর্থন করেছিল
স্টালিনের নৃশংসতার স্বীকার এক বাঙ্গালী বিপ্লবী
মাওসেতুং এর সময় চীনা মুসলমানদের দূর্দশতার কথা শুনুন
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৫৩
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×