কাল লাবিবের মুসলমানি
আজ রাত ১০ টার দিকে লাবিব ওর আম্মুর সাথে হসপিটালে ভর্তি হলো। কাল সকাল ৬টা থেকে লাবিবের খাবারদাবার বন্ধ, তবে পানি পান করতে পারবে সকাল ৮টা পর্যন্ত। সকাল ৯টায় তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হবে। লাবিবকে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করিয়ে এ অপারেশনটা করা হবে
লাবিব খুব হাসতে হাসতে হসপিটালে গেলো। ও জানে না মুসলমানি কী জিনিস। জিজ্ঞাসা করলে যথারীতি বোকার মতো হেসে বলে, আমি জান্নি নাহ্
রোজ সন্ধ্যায় চায়ের তৃষ্ণা তুঙ্গে উঠতেই এককাপ চা এনে টেবিলে ল্যাপটপের সামনে রাখে অহনা। হসপিটালে যাবার আগে ঘরদোর গুছোতে বেশ তাড়াহুড়ো ছিল বলে আজ চা জোটে নি। হসপিটাল থেকে ফেরার পথে ড্রাইভারকে বলি, সামনের রেস্টুরেন্টে গাড়ি থামান।
আমি এককাপ কফি খেলাম। বাসায় পাইলট আর ঐশী, ওদের দুজনের জন্য দুটি, প্লাস আমার জন্য একটি- মোট তিনটি চকবার নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। ড্রাইভার সাহেব বললেন, স্যার, হসপিটালে যাবো?
নাহ্, বাসায় চলেন।
কিন্তু মুহূর্তেই বলি, আচ্ছা, হসপিটালেই চলুন।
অহনার অনেক প্রিয় চকবার। বাসায় খুব ঘন ঘনই আনা হয় চকবার আর আইসক্রিম। আইসক্রিম খুব একটা তাকে খেতে দেখি না, কিন্তু চকবার সে খুব মজা করে খায়।
তিন-চারদিন আগের কথা। বিকেলে ৫টা চকবার নিয়ে ঘরে ঢুকলাম। পাইলট-ঐশী দুজনের জন্য দুটো দেয়ার পর 'হাতে' থাকে তিনটা- লাবিব, আমি আর অহনার। লাবিব সচরাচর চকবার নষ্টই করে থাকে, ওর জন্য হলো চকোলেট, জ্যুস, ইত্যাদি। তো, অহনা আর আমি দুজনে দুটো নিলাম। আমি তাড়াহুড়ো করে খেয়ে ফেলে দেখি অহনা আমার আগেই ওরটা শেষ করে ফেলেছে। আমি লাবিবেরটাও অহনার হাতে দিই। সে খেতে খেতে বলে- চকবার আমার খুব প্রিয়। আমি আগে দিনভরই চকবার খেতাম....। কথাটা বলেই মনে হয় সে লজ্জা পেলো। কারণ, দিনভর চকবার খাবার মতো সচ্ছলতা আমাদের কোনোদিনই ছিল না, এখন যদিও আগের চেয়ে অবস্থাটা একটু ভালো। লজ্জা ঢাকবার জন্য সাথে সাথেই সে বললো, মনে নেই, আগে তুমি অনেকগুলো করে চকবার আনতে, আর আমি ফ্রিজে রেখে দিতাম... যখন ইচ্ছে হতো খেতাম! কিন্তু লজ্জা পুরোপুরি গেলোই না। কারণ, অনেকগুলো করে চকবার আনবার সামর্থ আমার আজও হয় নি।
পলিথিনে মোড়ানো তিনটা চকবারের প্যাকেট হাতে নিয়ে হরহর করে কেবিনের সামনে গিয়ে দরজায় ধাক্কা দিই.... দরজা বন্ধ। স্বভাবমতো আমি ক্রমাগত নক করতে থাকি, অহনা তখনই বুঝতে পারে আর দরজা খুলে দিয়ে অবাক হয়ে যায় আমাকে দেখে। আমার তো আরেকবার হসপিটালে আসার কথা না।
এই তোমার চকবার... বলতেই লাবিব ছুটে এসে আমার হাত থেকে প্যাকেট তুলে নিয়ে খেলতে বসে যায় (ও চকবার খায় খুব কম, খেলে বেশি
আবার চকবার ক্যান? বিমুগ্ধ ভর্ৎসনার স্বর অহনার।
আমি বলি, খেয়ে বেশি হলে ফ্রিজে রেখে দাও। পাশের রুমে ফ্রিজ আছে। বলেই দ্রুত চলে আসি।
তুমি একটা খাইয়া যাও...
না, না। তোমার জন্য। তুমি খাও...
কী যে পাগল একটা! অহনার গলার স্বর আমার পিঠের উপর এসে আছাড় খায়। আমি গাড়িতে উঠে বসি।
লাবিব ওর আম্মুর সাথে হসপিটালে। ঐশী পড়াশুনা করে খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়েছে। পরশু থেকে ওদের পরীক্ষা শুরু। আর পাইলট তার মায়ের অনুপস্থিতিতে স্বাধীন বিহঙ্গের মতো রাতবিরাতে তার এক সিনিয়র ভাইয়ার বাসায় চলে গেছে, সেখানে সে গিটার সাধনায় মগ্ন
আজ লাবিবের কিছু ছবি দিলাম এখানে।
শিশু লাবিব, ২-১ মাস বয়স
লাবিব বসতে শিখেছে
লাবিব কেবল বসতে শিখেছে
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি। ঐশী লাবিবকে কোলে নিয়ে পোজ দিচ্ছে
লাবিব ধীর কদমে হাঁটছে
কক্সবাজারে লাবিব। প্রেমের উন্মেষ। ফিঁয়াসে তার খালাতো বোন
কুমিল্লার শালবন বৌদ্ধবিহারে লাবিব
আমি বাসায় ফিরলে লাবিব উদোম গায়ে, খালি পায়ে দৌড়ে আসে আমার কাছে
লাবিবের চুল কাটা হচ্ছে
ঐশী ও পাইলটের মাঝখানে লাবিব
হসপিটালে যাবার আগে লাবিব
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ৩:০৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



