ভবিষ্যতে, হয়ত-বা অল্পকালের মধ্যেই, করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হবে, কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে তা খুব সহজলভ্য হবে না, এর দাম হবে অনেক বেশি। পৃথিবীর সব দেশের সরকারের পক্ষে গণহারে বিনামূল্যে এত মূল্যবান ভ্যাক্সিন সরবরাহ করা হয়ত সম্ভব হবে না। আবিষ্কারের প্রথম দিকে ধনী-গরীব নির্বিশেষে সব মানুষই এই প্রতিষেধক পাবে; কিন্তু দিন গড়ানোর সাথে সাথে বাজেটে টান পড়তে থাকবে, প্রতিষেধকের সরবরাহ হ্রাস পেতে থাকবে; তাতে কিছু গরীব মানুষ প্রতিষেধক পেলেও বেশির ভাগই পাবে না। কিছু মানুষ সরাসরি প্রতিষেধক পাবে (কারা পাবে বুঝে নিন); সচ্ছল ব্যক্তিরা টাকা দিয়ে প্রতিষেধক কিনবে।
করোনার বৈশিষ্ট্য দেখে মনে হচ্ছে, অতি শীঘ্রই পৃথিবী থেকে এর সমূলে বিনাশ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। আর যদি একেবারে করোনার বিনাশ সম্ভব হয়ও, তাতে সময় লাগবে অনেক বছর। আমেরিকার Harvard T.H. Chan School of Public Health এর একদল গবেষক বলেছেন, শীঘ্রই ভ্যাক্সিন আবিষ্কৃত না হলে আমেরিকাকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। আমেরিকা এরকম কোনো আশঙ্কা প্রকাশ করলে তা বাকি পৃথিবীর জন্যও যে প্রযোজ্য হতে পারে তা বলাই বাহুল্য।
এই অনেক বছরে যা যা হতে পারে তা হলো, মানুষের শরীর করোনার সাথে অ্যাডজাস্টেড হয়ে যাবে, বা মানুষের শরীর করোনা-প্রুফ হয়ে উঠবে, কিংবা বলা যায়, করোনার বিরুদ্ধে মানুষের শরীরে ইমিয়্যুন সিস্টেম গড়ে উঠবে, যদিও এর সম্ভাবনা ততটা জোরালো নয়। কারণ, মানুষের শরীর ম্যালেরিয়ার সাথে অ্যাডজাস্টেড হতে পারে নাই। অন্যদিকে, জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে পড়বে - এটা জেনেশুনেই যে, করোনায় তারা আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে, বা মারা যাবেই। কাজেই যা হতে পারে তা হলো, মানুষের করোনায় আক্রান্ত হওয়াটা হয়ে যাবে একটা অভ্যাসের মতো, বা একটা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনার মতো, যেমন, আমাদের জ্বর-সর্দি-কাশি হয়, চিকিৎসা নিই বা না নিই, একসময় সেগুলো সেরে যায়, কেউ কেউ মারা যায়। (ডেঙ্গুর উদাহরণও দেয়া যায়) করোনার ক্ষেত্রেও তাই ঘটতে থাকবে। ১০০জন আক্রান্ত হলে ৫-১০-১৫-২০% মানুষ মারা যাবে, বাকিরা বেঁচে উঠবে, কেউ জ্বরাগ্রস্ত, পঙ্গুও হতে পারে, যদিও এরকম কোনো উদাহরণ এখনো দেখা যায় নি। এভাবেই জীবন ও জীবিকা চলতে থাকবে, তার মধ্য থেকে পৃথিবী একদিন করোনামুক্ত হয়ে ঝলমলে সুন্দর হাসি হেসে উঠবে।
একসময় গুঁটিবসন্ত ছিল আমাদের দেশে, এখন সেটা উধাও। কলেরার প্রকোপ ছিল, এখন সেই প্রকোপ নেই। করোনা হলো পৃথিবী গ্রাসকারী মহামারী। সমগ্র পৃথিবী এখানে জড়িত বলে এর প্রতিষেধক আবিষ্কার খুব দ্রুতই হবে এমনটা আশা করা যায়। (একজিস্টিং অনেক ওষুধ, যেমন অ্যাভিগান, ইত্যাদি নিয়ে জাপান, আমেরিকা ইতিমধ্যে অনেক গবেষণা করেছে)। কিন্তু যত দ্রুতই হোক না কেন, তার ফল ভোগ করার ক্ষেত্রে যা ঘটতে পারে, তা উপরেই বললাম।
আমার মতো ঘরকুনো লোকও এখন আর ঘরের ভেতর মন আটকে রাখতে পারছে না, অথচ আমি নিজেই একদিন ভাবতাম, একটা ল্যাপটপ আর ইন্টারনেট ফ্যাসিলিটি থাকলে ক্ষুদ্র এক কুঠরির ভেতর আমৃত্যু কাটিয়ে দিতে পারব। এখন মনে হচ্ছে, সব ভাবনাই ভুল ছিল। নিজেকে এখন আল্লাহর কাছে ভবিষ্যতের হাতে ছেড়ে দিলাম, পুরো পরিবারসহ।
১৭ এপ্রিল ২০২০