somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ত্রিকাল

১৯ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একজন রমণী, কিংবা নারী- বিকেলের নরম রোদ পেছনে ফেলে শান্ত সৌম্য পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। একটা ছোট্ট ছেলে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। তার মা যখন হাঁটতো, ঠিক এমন করেই হাঁটতো।

ছেলেটা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখেছে- রমণী হেঁটে যাচ্ছেন। তার শাড়ির আঁচল একপাশে ঝুলে পড়ে বাতাসে উড়ছে। শৈশবে মায়ের হাত ধরে গুঁটি গুঁটি পায়ে হাঁটতে হাঁটতে আঁচলের ঝাঁপটায় তার মুখ ঢেকে যেত। দু’হাত পাখার মতো দু’দিকে ছড়িয়ে দিয়ে আঁচল ভেদ করে মুখের হাঁ আর নাক দিয়ে শুউশ্‌শ্‌ শব্দে সে বাতাস টানতো। তার খুব ভালো লাগতো। মা মারা গেছে সেই কবে; মায়ের ঘ্রাণও সে ভুলে গেছে। কখনো-বা হঠাৎ হঠাৎ কোথাও থেকে মায়ের একদঙ্গল ঘ্রাণ দমকা হাওয়ার মতো ভেসে এসে যখন ওর মুখ ভিজিয়ে দেয়- মা মা বলে সে করুণ আর্তস্বরে গুমরে কেঁদে ওঠে; ওর বুক ফেটে যেতে চায়, আর মনে হয় পাঁজরগুলো যেন ভেঙে যাচ্ছে।



একটু পরই সন্ধ্যা। ছিমছাম চারপাশ মাধুরীমাখা আলো-আঁধারীতে ছাওয়া। এমন সময়ে অকারণে মন চঞ্চল হয়ে ওঠে, ঢেউ ওঠে হৃদয়ে; মন কত কী যে ভাবে, কত কী যে চায়, মন নিজেই জানে না সে-সব।

ক্যানভাসের মতো সুচারু রাস্তা ধরে কবিতা বুনে যাচ্ছে কে এক স্নিগ্ধ অনামিকা। একটু পেছনে হাঁটছিল এক মন-চঞ্চল, স্বপ্নখোর, দিশাগ্রস্ত তরুণ।

সে এক তরুণী। খোঁপায় গুঁজেছে ফুল। কী সুন্দর ঢঙে ছন্দের মতো খুব ধীরে মাটিতে চরণ ফেলে, মিষ্টিমধুর তালে দুলে দুলে সে হেঁটে যাচ্ছে! বাতাসে মৌ মৌ করছে ফুলের ঘ্রাণ। বেলিফুল। হাসনাহেনা। রজনিগন্ধা। আরো নাম-জানা বা না-জানা হাজারো ফুলের ঘ্রাণে টগবগে ছেলেটা মাতাল হয়ে যাচ্ছে। বয়সটাই এমন। মেয়েদের খুব ভালো লাগে। খুব সহজেই মেয়েদের চোখে চোখ পড়ে যায়। প্রতিটা চোখেই কত শত কথা লুকানো! কত কথা যেন বলতে চায় চোখগুলো!

তরুণী হেঁটে যাচ্ছে। একটা লতানো কবিতার মতো সে দুলে দুলে হাঁটছে, সিনেমার স্লো-মোশন সিকোয়েন্সের মতো অতীব ধীর লয়ে, খুব ধীরে কদম ফেলে ফেলে। সে ডানে তাকায়, বামে তাকায়। মাঝে মাঝে আকাশে তাকায়। আকাশে মেঘ নেই। কী দেখে সে আকাশে? হায়, একবার যদি পেছন ফিরে তাকাতো! খুব দেখতে ইচ্ছে করছে মেয়েটার মুখ। দেখতে ইচ্ছে করছে অনন্ত মাধুর্যে ভরা সেই মুখে একটুকরো হাসির বিভা। একটু দ্রুত হাঁটে ছেলেটা। আরেকটু পা বাড়ালেই বামে ঘাড় ঘুরিয়ে সে মেয়েটার মুখ দেখতে পাবে। একটা দুরন্ত তৃষ্ণা জেগে ওঠে মেয়েটার মুখ দেখার জন্য।

মেয়েটা হাঁটছে; হাঁটছে মেয়েটা।
মেয়েটা ধীর পায়ে হাঁটছে; হাঁটছে ধীর লয়ে।
একটা স্নিগ্ধ কবিতার মতো গন্ধ ছড়িয়ে হাঁটছে।
হাঁটার ঢঙটিতেই এক অপরূপ শিল্প ফুটে উঠেছে।
ছেলেটা জানে না, বুঝতে পারে না- মেয়েরা কীভাবে এত সুন্দর করে হাঁটে। একপলক মেয়েটার মুখ দেখার জন্য সে অস্থির হয়ে উঠলো।

কিন্তু হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে মেয়েটা হারিয়ে গেল। হায়, দেখা হলো না কবিতার মতো স্নিগ্ধ মুখখানি! আক্ষেপ আর বেদনায় তার মন ভরে উঠলো। যতদূর গেল, যতদিন গেল- অনেক অনেকদিন ধরে তার মনে জেগে থাকলো মধুর ছন্দে হেঁটে যাওয়া একটি অপরূপা কবিতার ছায়া, এবং তারপরও মেয়েটার হেঁটে-যাওয়া ছায়াটি তার মন থেকে কোনোদিন মুছে গেল না।


সন্ধ্যার কিছু আগে। একটা বেতের চেয়ারে হেলান দিয়ে সামনের রাস্তায় গভীর মগ্নভাবে তাকিয়ে আছেন তিনি। গোধূলির অপূর্ব সৌন্দর্যে তার মন আকুল হয়ে উঠছে। এ সময়ে ধীর পায়ে হালকা নীলরঙা শাড়ি পরে যে মেয়েটিকে হেঁটে যেতে দেখলেন, তার মনে হতে থাকলো- এটি কিছুদিন আগে অকালে মরে যাওয়া তার মেয়েটিই যেন।

২৬ মে ২০১৯


সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:২৫
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×