somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের জন্য সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা কেমন হতে পারে?

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমেরিকার ২০২০ নির্বাচনের আগে ‘আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পদ্ধতি’ শিরোনামে একটা ব্লগপোস্ট লিখেছিলাম - আমেরিকার নির্বাচন পদ্ধতি - প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট। কিছুদিন আগে এটা আবার রিপোস্টও করেছিলাম - আমেরিকার নির্বাচন পদ্ধতি - প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট, ৩০ অক্টোবর ২০২৪। বহুল আলোচিত এ নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে আগে কোনো ধারণা ছিল না বলে অনলাইন পোর্টাল ও উইকিপিডিয়াতে এ সম্পর্কে স্টাডি করি। এটা খুবই জটিল প্রক্রিয়া। পড়তে যেয়ে আমার মাথা হ্যাং হবার উপক্রম হয়েছিল। পরে ভাবলাম, তাহলে আরেকটু কষ্ট করে একটা পোস্টই লিখে ফেলি। কয়েকজন অবশ্য স্বীকার করেছিলেন, ওটা সত্যিই একটা জটিল প্রক্রিয়া এবং আমেরিকায় বাস করেও এ সম্পর্কে জানা ছিল না বলে তাদের কিছুটা লজ্জা ও আক্ষেপও অবশ্য ছিল :)

তো, এবার আমি বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে লিখতে যাচ্ছি। আমরা সবাই জানি এ নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে, তাহলে লিখতে যাচ্ছি কেন নতুন করে? কারণ হলো, বর্তমান সংবিধান বাতিল হতে যাচ্ছে, কিংবা নতুন করে লেখা হচ্ছে বলে আমরা শুনতে পাচ্ছি আমাদের সংগ্রামী ছাত্রদের কাছ থেকে। সেখানে নির্বাচন ব্যবস্থারও পরিবর্তন হচ্ছে কিনা সে সম্পর্কে আমরা কিছু না জানলেও ব্যাপারটা উঠে আসছে ডাঃ শফিকুর রহমান ভাইয়ের বিভিন্ন বক্তৃতা ও আলোচনা থেকে। গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখ বিকেলে খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ কলেজ ময়দানে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা আগামীতে একটি আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্বের জাতীয় নির্বাচন চাই। নির্বাচনে যারা যত বেশি ভোট পাবে তাদের মধ্য থেকে ততসংখ্যক প্রতিনিধি সংসদে যাবে। কোনো দল যদি এক শতাংশ ভোট পায় তাদেরও প্রতিনিধিত্ব থাকবে। কোনো এক দলের হাতে দেশ পরিচালিত হতে পারে না।’ (দৈনিক জনকণ্ঠ, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪। লিংক : Click This Link)

ডাঃ শফিক ভাই-ই যে প্রথম এ প্রস্তাবনার অবতারণা করলেন ব্যাপারটা তা না। এ নিয়ে আগেও আলোচনা হয়েছিল। যদ্দূর মনে পড়ে, ০৫ আগস্টের পর ড: আলী রিয়াজ ভাইও সংবিধান সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে এরকম সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন পদ্ধতির কথা বলছিলেন।

আচ্ছা, সামনে এগোবার আগে বলে নিই, আপানাদের মধ্যে যাদের এ বিষয়টির উপর আগ্রহ আছে, তারা নীচের লিংকগুলো আগে পড়ে নিতে পারেন। কিংবা, আমার এ পোস্টটি পড়ার পরও ঐ পোস্টগুলো পড়ে অধীত জ্ঞানকে সুগভীর করে নিতে পারেন। কারণ, এ সম্পর্কে আমার জ্ঞান খুবই সীমিত, এ পোস্টে প্রচুর ভুল থাকাও অসম্ভব নয়।

১। সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা কী, রিয়াজ হোসেন, দৈনিক দেশ রূপান্তর, প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩১ এএম আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩১ এএম। লিংক : https://www.deshrupantor.com/544986

২। Proportional representation in Bangladesh, Siamul Huq Rabbany, ঢাকা ট্রিবিউন, Publish : 09 Oct 2024, 06:16 AM, Update : 09 Oct 2024, 06:16 AM। লিংক : Click This Link

৩। Proportional representation, উইকিপিডিয়া, লিংক : Click This Link

বিষয়টি নতুন নয়, আগেও এদেশে আলোচিত হয়েছে

বলছিলাম, শফিক ভাই-ই যে এ বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আনলেন, ব্যাপারটা তা না। ১ নম্বর লিংক থেকে জানা যায়, ‘দেশে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তনের আলোচনা নতুন নয়। চার দশক আগে এ ব্যবস্থার পক্ষে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) ফেরদৌস আহমেদ কোরেশি। নব্বইয়ের দশকে তিনি এর পক্ষে প্রচারপত্র বিলি করেন। কয়েকটি বামপন্থি দলও তখন এ ব্যবস্থার পক্ষে নিজেদের মত দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্মতি না থাকায় তা আর আলোর মুখ দেখেনি।’

‘তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সারা দেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জনআকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়। দেশের শাসনতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক সংস্কার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে গুরুত্ব পাচ্ছে জাতীয় সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা।’

‘গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমার শুরু থেকেই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার পক্ষে অবস্থান রয়েছে। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি অনেক বেশি গণতান্ত্রিক ও প্রতিনিধিত্বমূলক।’

‘তবে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির যে জনসমর্থন আছে, সেটা ভাঙার জন্য সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থা কৌশল হিসেবে নিয়েছে একটি পক্ষ। আমাদের যে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব রয়েছে, সেখানে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে স্পষ্ট বলা আছে। অন্য আরও অনেক দলের সঙ্গে কথা বলেই এ সংস্কার প্রস্তাব আনা হয়েছে। আমাদের প্রস্তাব অনুযায়ী সংসদ নির্বাচন হলে সব দলেরই প্রতিনিধিত্ব থাকবে। আনুপাতিক পদ্ধতির আর প্রয়োজন হবে না।’

‘রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি বিশিষ্টজনের অনেকেই সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থা চালুর পক্ষে। তারা বলছেন, পদ্ধতিটি ভালো বলেই অনেক দেশ তা গ্রহণ করেছে। তবে বাংলাদেশে চালু হওয়ার আগে আলোচনা ও বিশ্লেষণ দরকার। রাজনৈতিক দলগুলোরও মতৈক্য দরকার। ভোটারদেরও এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে।’

‘শিক্ষাবিদ ও রাষ্ট্রচিন্তক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিশ্বের ১৭৫টি দেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার গঠিত হয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরেকটি পদ্ধতি হলো সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি। শতাধিক দেশে এ পদ্ধতি রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে নব্বই দশকের প্রথম দিকে বামপন্থিরা এর পক্ষে প্রচার শুরু করে। পরে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ অনেক দল এটির পক্ষে মত দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ পদ্ধতি চালু করা যায়নি। অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘আমি মনে করি, অবশ্যই দলভিত্তিক আনুপাতিক পদ্ধতিতে সরকার গঠনের বিষয়ে আরও বেশি কথা বলা দরকার। অনেকে দলভিত্তিক শব্দটা উচ্চারণ করে না। তার কারণ অনেক বিদেশি শক্তি চায় না এখানে দল গড়ে উঠুক।’

‘গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থা চালু হলে নির্বাচন প্রক্রিয়ার কিছুটা উন্নতি হবে। কারণ এ পদ্ধতিতে ভোটের আয়োজন হলে অঞ্চলভিত্তিক সংসদ সদস্য মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা, টাকার খেলা ও সন্ত্রাসের গুরুত্ব থাকবে না। আগেই দল থেকে তালিকা প্রকাশ করবে। দলগুলো যত শতাংশ ভোট পাবে সে অনুযায়ী আসন পাবে। তিনি বলেন, সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থা চালুর বিষয়টি গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। বিভিন্ন পর্যায়ে এটার পক্ষে সম্মতিও তৈরি হচ্ছে। বড় দলগুলো এখন পরিষ্কারভাবে অবস্থান নেয়নি। এটা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো যদি জনমত তৈরি করতে পারে, তাহলে আংশিকভাবে হলেও এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন হবে।’

‘অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন বলেছে, নিজে থেকে তারা এ পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রস্তাব দেবে না। তাদের মতে, এ পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন। সংবিধান সংস্কার কমিশন চাইলে বিষয়টি প্রস্তাবের সঙ্গে যোগ করবে তারা।’

‘কমিশনের সদস্য ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তাব করতে পারে। এটি মাঠে কতটা কার্যকর হবে, সেটা সরকার দেখবে। তবে এ পদ্ধতি চালু করতে হলে সংবিধানে পরিবর্তন আনতে হবে। এখানে সংবিধান কমিটির বিষয় আছে। নির্বাচন সংস্কার কমিটির বিষয় আছে।’

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির ক্যাটাগরি কতটি বা রূপরেখা কেমন?

উইকিপিডিয়াতে অনেক ক্যাটাগরির সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির উল্লেখ আছে, এমনকি লিংক ২-এ-ও। তবে, ১ নম্বর লিংকটা পড়েই আমার অ্যাসিমিলেশন ভালো হয়েছে। ওখান থেকেই প্রধান অংশগুলো শেয়ার করছি।

‘বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রধানত দুটি ব্যবস্থা বিদ্যমান। প্রথমত, একটি নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীদের মধ্যে যিনি সর্বোচ্চ ভোট পাবেন তিনি নির্বাচিত হবেন। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’। এ পদ্ধতি বাংলাদেশে চালু রয়েছে। অন্যটি সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা বা প্রপোরশনাল রিপ্রেজেনটেশন (পিআর) পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে একটি দল যে পরিমাণ ভোট পাবে, সেই অনুপাতে সংসদে দলটির প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণ হবে। অনেক দেশে এ দুটি পদ্ধতির সমন্বিত ব্যবস্থাও চালু রয়েছে।’

‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা পৃথিবীর শতাধিক দেশে চালু আছে। অর্গানাইজেশন অব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশনভুক্ত (ওইসিডি) ৩৬টি দেশের মধ্যে ২৫টি, অর্থাৎ প্রায় ৭০ শতাংশ দেশই আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা অনুসরণ করে। এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা ও নেপালে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু আছে। অবশ্য সব দেশ একই পদ্ধতি অনুসরণ করে না। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা তিন ধরনের। এর মধ্যে একটি হচ্ছে দলভিত্তিক, আরেকটি হচ্ছে ব্যক্তিভিত্তিক। আর অন্যটি হচ্ছে মিশ্র পদ্ধতি। দলভিত্তিক ব্যবস্থায় কোনো দলীয় প্রার্থী নির্বাচন করেন না। নির্বাচন করে দল। সেখানে ভোটাররা দলীয় প্রতীকে ভোট দিয়ে থাকেন। ভোটের হার অনুযায়ী দলগুলো সংসদে তাদের প্রতিনিধি নির্ধারণ করে। আবার ব্যক্তিভিত্তিক নির্বাচনে দলগুলো আগেই তাদের মনোনীত প্রতিনিধিদের নাম প্রকাশ করে। তারপর আঞ্চলিক ও জাতীয়ভিত্তিক ভোটের হার অনুযায়ী দলগুলো তাদের প্রতিনিধি নিশ্চিত করে। নেদারল্যান্ডসে দলভিত্তিক ও স্পেনে ব্যক্তিভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা রয়েছে। এ দুই পদ্ধতি বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই রয়েছে। তবে পদ্ধতিগত ভিন্নতা আছে। আবার অনেক দেশে ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট এবং সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব দুই ব্যবস্থার সংমিশ্রণও আছে। যেমন এশিয়ার নেপাল। দেশটিতে নিম্নকক্ষের মোট আসন ২৭৫টি। এর মধ্যে ১৬৫ আসনে বাংলাদেশের মতো যে প্রার্থী বেশি ভোট পাবেন, তিনিই বিজয়ী হন। আর ১১০ আসনে আনুপাতিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। উচ্চকক্ষের মোট ৫৯টি আসনের পাঁচটি সংরক্ষণ করে বাকি ৫৪টিতেও আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন করা হয়।’

বাংলাদেশে সংখ্যাপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব’র মডেল কেমন হতে পারে?

একটা বিষয় হয়ত লক্ষ করেছেন, আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থায় সবার ভোটই কিন্তু কাজে লাগে না। যিনি বিজয়ী হোন, তাকে দেয়া ভোটগুলোই শুধু কাজে লাগছে, পরাজিত প্রার্থীকে দেয়া ভোট বিফলে যাচ্ছে।

সংখ্যানুপাতিক হারে প্রতিনিধি নির্বাচনে সবার ভোটই কাজে লাগবে, সামান্য কিছু ব্যতিক্রম হয়ত ঘটতে পারে। ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ ব্যবস্থার সবচাইতে খারাপ দিক হলো, ভোটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়া সত্ত্বেও কোনো দল সংসদে আসনশূন্য হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, ধরুন, ৩০০টা আসনের প্রত্যেকটিতেই দল ‘ক’-এর প্রার্থীগণ ৫০% ভোট পেলেন, খ-এর প্রার্থীগণ ৪৫% ভোট পেলেন; সামগ্রিকভাবে পরাজিত দলের ৪৫% সমর্থন থাকলেও সংসদে কোনো প্রতিনিধি নাই, যা বিরাট এক বিস্ময় ও নির্বাচনী ব্যবস্থার দুর্বলতাকে তুলে ধরে। সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থায় এরকম হবে না, সংসদেও সমানুপাতিক সাংসদ থাকবেন।

আমি এ বিষয়ে কোনো বিশেষজ্ঞ নই। সামান্য স্টাডির পর আমার কাছে যা মনে হয়েছে, আমাদের দেশের জন্য একটা মিশ্র পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা ভালো হতে পারে। উদ্দেশ্য হলো :

ক। যাতে কারো ভোটই বিফলে না যায়, অর্থাৎ, প্রতিটা ভোটই গনণাযোগ্য এবং প্রতিটা ভোটই কাউকে না কাউকে নির্বাচিত করবে।

খ। যে-দল যত বেশি ভোট পাবে, সে-দল তত বেশি আসন পাবে। ফলে, সংসদে সব দলেরই প্রতিনিধিত্ব থাকবে, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া।

সাংসদের সংখ্যা কত হবে?

ক। বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতিতে ৩০০জন সাংসদ নির্বাচিত হয়। এর সাথে যোগ হবে অতিরিক্ত ৫০জন সাংসদ, যারা প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে নির্বাচিত হবেন। এ সংখ্যাটা ৫০ না হয়ে ১০০ বা অন্য যে-কোনো সংখ্যা হতে পারে, যা রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে স্থির করবে।

খ। কিংবা, বর্তমানে পপুলার ভোটে নির্বাচিত সাংসদদের সংখ্যার অনুপাতে ৫০ জন মহিলা সাংসদ নির্বাচিত হোন। এটা বিলুপ্ত করে এই ৫০জনকে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে নির্বাচন করা যেতে পারে।

গ। কিংবা, ৫০জন সাংসদকে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে নির্বাচন করার পর যে-সংখ্যা দাঁড়াবে, তার অনুপাতে ৫০জন মহিলা সাংসদ নির্বাচন করে মোট সাংসদের সংখ্যা ৪০০ করা যেতে পারে।

তাহলে মিশ্র পদ্ধতিটা কীরূপ হবে, আবার দেখুন।

ক। বর্তমান পদ্ধতি অনুযায়ী : ৩০০ জন।
খ। প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে : ৫০ বা ১০০জন। (বা অথোরিটি বা দলগুলো যে-সংখ্যায় একমত হবে)।
গ। উপরের পদ্ধতিতে প্রাপ্ত আসন-সংখ্যার অনুপাতে ৫০জন বা ৩০জন মহিলা সাংসদ নির্বাচন।

সংখ্যার অনুপাতে ভোট হলে জনমনে দারুণ উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হবে, মানুষ ভোটকেন্দ্রে উপচে পড়বেন, প্রচুর ভোট পড়বে বলে ধারণা করছি।

অনুপাত নির্ণয়ে কিছু সমস্যা দেখা দিবে। কোনো কোনো নামসর্বস্ব দল খুবই নগণ্যসংখ্যক ভোট পেতে পারে, যাদের মধ্য থেকে সাংসদ নির্বাচন যৌক্তিক নাও হতে পারে। এজন্য, অনুপাত নির্ণয়ের জন্য একটা সর্বনিম্ন শতকরা হার বেঁধে দিতে হবে নির্বাচনের আগেই।

পরিসংখ্যান - বর্তমান পদ্ধতিতে প্রাপ্ত আসন ও সংখ্যানুপাতে প্রাপ্য আসনের সংখ্যা

২০২৪ সালের ৪ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন দ্বারা প্রকাশিত চূড়ান্ত তথ্য অনুযায়ী, ভোটারের সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৭৪১ জন, নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৯ জন এবং হিজড়া ভোটার ৮৪৯ জন। ফজল ভাই অলরেডি ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করে দিয়েছেন (০২ জানুয়ারিতে টিভি খবর অনুযায়ী)। ধরে নিই, আগামী নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা হবে ১৩ কোটি। সংখ্যানুপাতে ৫০জন সাংসদ নির্বাচন করা হলে প্রতি সাংসদের জন্য ২৬,০০,০০০ জন ভোটার থাকবেন।

১৯৯১ নির্বাচন (৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন)
বিএনপি : প্রাপ্ত ভোট ৩০.৮১%, আসন-১৪০। সংখ্যানুপাতে আসন প্রাপ্য : ৯২
আওয়ামী লীগ : প্রাপ্ত ভোট ৩০.০৮%, আসন ৮৮। সংখ্যানুপাতে প্রাপ্য : ৯১
জামায়াতে ইসলামী : প্রাপ্ত ভোট ১২.১৩%, আসন ১৮। সংখ্যানুপাতে প্রাপ্য : ৩৬
জাতীয় পার্টি : প্রাপ্ত ভোট ১১.৯২%, আসন ৩৫। সংখ্যানুপাতে প্রাপ্য : ৩৫

১৯৯৬ নির্বাচন (৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন)
আওয়ামী লীগ : প্রাপ্ত ভোট ৩৭.৪৪%, আসন ১৪৬। সংখ্যানুপাতে প্রাপ্য : ১১২
বিএনপি : প্রাপ্ত ভোট ৩৩.৬১%, আসন-১১৬। সংখ্যানুপাতে আসন প্রাপ্য : ১০০
জাতীয় পার্টি প্রাপ্ত : ভোট ১৬.৪%, আসন ৩২। সংখ্যানুপাতে প্রাপ্য : ৪৯
জামায়াতে ইসলামী : প্রাপ্ত ভোট ৮.১৬%, আসন ৩। সংখ্যানুপাতে প্রাপ্য : ২৪

২০০১ নির্বাচন (৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন)
বিএনপি : প্রাপ্ত ভোট ৪০.৯৭%, আসন-১৯৩। সংখ্যানুপাতে আসন প্রাপ্য : ১২২
আওয়ামী লীগ : প্রাপ্ত ভোট ৪০.১৩%, আসন ৬২। সংখ্যানুপাতে প্রাপ্য : ১২০
জামায়াতে ইসলামী : প্রাপ্ত ভোট ৪.২৮%, আসন ১৭। সংখ্যানুপাতে প্রাপ্য : ১২
জাতীয় পার্টি : প্রাপ্ত ভোট ১.১২%, আসন ৪। সংখ্যানুপাতে প্রাপ্য : ৩

২০০৮ নির্বাচন (৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন)
আওয়ামী লীগ : প্রাপ্ত ভোট ৪৮.০৪%, আসন ২৩০। সংখ্যানুপাতে প্রাপ্য : ১৪৪
বিএনপি প্রাপ্ত : ভোট ৩২.৫%, আসন-৩০। সংখ্যানুপাতে আসন প্রাপ্য : ৯৭
জামায়াতে ইসলামী : প্রাপ্ত ভোট ৪.৭%, আসন ২। সংখ্যানুপাতে প্রাপ্য : ১৪
জাতীয় পার্টি : প্রাপ্ত ভোট ০.২৫%, আসন ১। সংখ্যানুপাতে প্রাপ্য : ১-

উপরের ৪টি নির্বাচনে ২০০১ ছাড়া বাকি ৩টিতেই জামায়াতে ইসলামী প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে কম সংখ্যক আসন পেয়েছে। এজন্যই তারা সংখ্যার অনুপাতে আসন সংখ্যা চায় বলে ধারণা করা যায়। কিন্তু ব্যাপারটা এমন না যে, সংখ্যার অনুপাতে প্রতিনিধি নির্বাচন করলে শফিক ভাইয়ের দল সংখ্যাগরিষ্ঠা পেয়ে যাবে।

আবার দেখুন ২০০৮-এর নির্বাচন। আওয়ামী লীগ প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে অনেক বেশি আসন লাভ করেছে, অন্যদিকে বিএনপি প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে আসন পেয়েছে অনেক কম। দুটির মধ্যে একটা সমন্বয় বা ভারসাম্য সৃষ্টির জন্য মিশ্র পদ্ধতির প্রচলন করা যেতে পারে।

নামসর্বস্ব দলগুলো যাতে অযৌক্তিকভাবে কোনো আসনের অধিকারী না হয়ে পড়ে সেজন্য জামানত বায়েজাপ্ত করার মতো একটা শর্ত জুড়ে দিতে হবে, যেমন, সাংসদ নির্বাচিত হবার জন্য দলকে ন্যূনতম ১% ভোট পেতে হবে। এই ন্যূনতম সংখ্যাটা সকল দলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে হওয়া বাঞ্ছনীয়।

শুধু সংখ্যার অনুপাতেই যদি প্রতিনিধি নির্বাচিত হয় - ব্যাপক গবেষণার দরকার

শুধু সংখ্যার অনুপাতেই যদি প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়, তাহলে হুট করে সেই পদ্ধতি অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয় হবে না। তার জন্য ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন পড়বে, যাতে অন্তর্ভুক্ত থাকা প্রয়োজন :

ক। আসনসংখ্যা কত হবে? ৩০০, নাকি অন্যকিছু? ৪৬০টি উপজেলা থেকে ৪৬০টি, ৬৪টি জেলাশহর থেকে থানা কিংবা বর্তমান সংসদীয় আসনসংখ্যা (এটা আমার জানা নেই) নেয়া যেতে পারে। সব মিলিয়ে আসনসংখ্যা ৫০০ হতে পারে।

খ। দলভিত্তিক হবে, নাকি ব্যক্তি-ভিত্তিক হবে? অর্থাৎ, ব্যালট পেপারে কি দলের প্রতীক থাকবে, নাকি প্রার্থীদের নাম থাকবে, সেটা আগেই নির্ধারণ করে নিতে হবে।

গ। একটি আসনের জন্য কোনো দলকে ন্যূনতম কত ভোট পেতে হবে, তারও একটা সংখ্যা, কিংবা সার্বজনীন ফর্মুলা প্রণয়ন করতে হবে।


তবে, বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতি বাদ দিয়ে নতুন একটা নির্বাচন পদ্ধতি গ্রহণ করার আগে ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন পড়বে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। বর্তমান ব্যবস্থার নেগেটিভ সাইডগুলো কী কী, নতুন পদ্ধতিতে সেগুলো দূর করা সম্ভব হবে কিনা, নাকি নতুন পদ্ধতি জটিল হবে, মানুষ বুঝতে পারবে না, প্রকৃত জনমতের প্রতিফলন ঘটবে না, এসবের চুলচেরা ও চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ করতে হবে (যে কাজ করতে যেয়ে রাগে-ক্ষোভে মাথার চুল ছিঁড়তে হয়, তার নাম চুলছেঁড়া। আমার শব্দ :) )

যুগান্তকারী পদ্ধতিই কি যুগান্ত সৃষ্টি করতে পারবে?

আমরা যে-পদ্ধতিই গ্রহণ করি না কেন, জনগণ ভোটকেন্দ্রে যেয়ে নিরাপদে নিজের ভোট দিতে পারলো কিনা, এরকম একটা অবাধ ও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা না গেলে পৃথিবীর শুদ্ধতম নির্বাচন পদ্ধতি দিয়েও আমাদের কোনো কাজ হবে না; আগের রাতে ভোট হয়ে গেলে, ত্রাস সৃষ্টি করে ভোটারগণকে বাসা থেকে বেরোতে বাধা দিলে, সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা না গেলে যে-কোনো নির্বাচনই ব্যর্থ ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হিসাবে ইতিহাসে কালিমালিপ্ত থাকবে, যেমন ২০১৩, ২০১৮, ২০২৪-এর নির্বাচন (কেউ কেউ ২০০৮-এর নির্বাচনের কথাও বলেন)।

যে-কোনো ভুল সাদরে ও ধন্যবাদের সাথে গৃহীত হবে।

খলিল মাহ্‌মুদ
০৩ জানুয়ারি ২০২৫
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ২:১৩
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিয়ে দেখতে দিন কে বাঘ কে বিড়াল?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬



সব দলের অংশগ্রহণে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিন। কোন দলকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে কি করেনি সেইটাও জাতিকে দেখতে দিন। পিআর পদ্ধতির জাতীয় সংসদের উচ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×