somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : এক প্যাংলার আত্মকথা

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার শ্বশুরবাড়িতে একটা কিম্ভুতকিমাকার আজিব টাইপের প্রথা ছিল। বিয়ের দিন বরকে গাড়ি থেকে নামার পর না হাঁটিয়ে পিঁড়িতে চড়িয়ে বসার জায়গায় নিয়ে যাওয়া হত।
আমার শ্বশুরমশাই সব কাজ বেশ গুছিয়ে করেন। যেহেতু বরের বসার জায়গা দোতলায় হয়েছিল, গাড়ি থেকে অনেকখানি দূরত্ব। তাই তিনি আগে থেকেই পাড়ার ক্লাবের চারজন ওয়েটলিফটারকে বুক করে রেখেছিলেন। দুপুরে তাদের এলাহি খাওয়ানো হয়েছিল। মাঝে মাঝেই তারা নাকি পুশ-আপ টুশ-আপ মানে ওই ডন-বৈঠক করে নিচ্ছিল। সন্ধ্যেবেলায় আমি যখন পৌঁছলাম, চার পালোয়ান আমাকে নিতে এল। আমার তখন ক্যাডাভেরাস পরিস্থিতি, মানে ধুতি 'এই খুলে গেল এই খুলে গেল' অবস্থা। তো পৌঁছানো মাত্রই চার পালোয়ান এসে আমায় তুলতে গিয়ে হতবাক হয়ে গেল। এতো কম ওজন! ছিঃ এই রোগাপটকাকে বওয়ার জন্য তাদের ডাকা হয়েছে! দৌড়ে আমায় নিয়ে দোতলায় বর আসনে বসিয়ে দিয়েই ওরা শ্বশুর মশাইকে বলেছিল, "এত বড় অপমান আমাদের চারজন দেহশ্রীকে না করলেই পারতেন। এমন চিমসে ডিগডিগে একজনকে বওয়ার জন্য আমাদের ডাকতে হল? আর বলিহারি মশাই, কোটি কোটি মানুষের মধ্যে জামাই করার জন্য হেলদি কাউকে পেলেন না? ।"
.
আরও ছোটবেলার ঘটনা। আমাদের পাড়ার একজন কাকু দারিদ্র‍্য-টারিদ্র‍্যের ওপর একটা ডকুমেন্টারি ফিল্ম করছিল। একদিন আমার হাতে একটা বাটি ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল, তুই শুধু ক্যামেরার সামনে বলবি, 'একটু ভাতের ফেন দিন মা... কতদিন খাইনি...'
পরে বলেছিলেন, তোকে দারুণ মানিয়েছে। তোর চেহারার মধ্যে একটা 'অনাহার-অনাহার' ব্যাপার আছে। গায়ে দু পোঁচ আলকাতরা মেরে দিলে তোকে অনায়াসে মোজাম্বিক বা উগান্ডার অপুষ্ট বালক বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে।
.
আমার চেহারা দেখে সবচেয়ে খুশি হয়েছিলেন শাশুড়ি। মেয়েকে বলেছিলেন, "ওরে তুই খুব ভাগ্যবতী। এমন শুঁটকো বর পাওয়া কত ভাগ্যের কথা তুই জানিস? কোনও মেয়ে অমন শুঁটকো হাড়জিরজিরে ছেলের দিকে ঘুরেও তাকাবে না। ও শুধু তোরই থাকবে। তুই খুব সুখী হবি।"
কথাটা বউই আমাকে পরে বলেছিল। আমিও শ্বশুরবাড়ি গেলে খুব অল্প খেতাম( অল্পই খাই) আর শাশুড়ি জোরাজুরি করলেই বলতাম, "ভেবে দেখুন, বেশি যদি খাই আর শুঁটকো থাকব না কিন্তু। তখন আবার আপনার মেয়েই সমস্যায় পড়ে যাবে।"
শাশুড়ি ভেবলে যেতেন আর বউ মুখ টিপে হাসত।
শাশুড়িকে আমি যাই বলে থাকি, আসল সত্যিটা অবিশ্যি হল আমি যতই খাই, ওজন বাড়ে না।
আমাদের পাড়ার তিলুকাকু চাকরি থেকে অবসর নিয়ে একটা দোকান করলেন। এসটিডি বুথ অবধি ঠিক ছিল কিন্তু তার সঙ্গে তিনি আবার একটা ওজন নেওয়ার যন্ত্রও বসিয়ে দিলেন। যন্ত্রে উঠে এক টাকার কয়েন ফেললেই ডিসপ্লে বোর্ডে ওজন ভেসে ওঠে। সর্বনাশ হল সেখানেই। তিলুকাকু ওত পেতে বসে থাকতেন। চেনা কেউ দোকানের পাশ দিয়ে গেলেই আর রেহাই নেই, একবার ওজন নিতে হতই। আমিও যখন দোকানের পাশ দিয়ে যেতাম তিলুকাকু হাঁকতেন, "ওজনটা নিয়ে যা।"
প্রথম প্রথম খুচরো নেই বলে পালাতাম। কিন্তু তারপরে তিনি খুচরোও রাখা শুরু করলেন। আর পালানোর কোনও উপায়ই থাকত না।
ওজন যন্ত্রে উঠলেই, আমি ঘামতে শুরু করি, আমার নিজেকে দ্রৌপদী মনে হয়। এই বস্ত্রহরণ শুরু হল। যেই ডিসপ্লেতে ক-টি দুর্বল সংখ্যা ভেসে উঠবে, অমনি প্রতিবার, তিলুকাকু চোখ কপালে তুলে বলবেন, "এ কী! এত কম! দুটো পা'ই মেশিনে রেখেছিস তো! হ্যাঁ ঠিকই তো আছে দেখছি। কিরে? কোনও খারাপ রোগ-টোগ বাধিয়ে বসিসনি তো?"
এই 'খারাপ রোগ-টোগ' কথাটা এমন কেটে কেটে বলেন, এই সেদিন যেমন, দোকানে উপস্থিত এক সুগঠনা রূপবতী, যিনি ওজন নেবেন বলে দাঁড়িয়ে আছেন, ভয় পেয়ে আমার থেকে ছিটকে দূরে সরে গিয়ে নাকে রুমাল চাপা দিলেন। 'খারাপ রোগ-টোগ' ছোঁয়াচেই হয় যে!
আমি বিষণ্ণচিত্তে দোকানের বাইরে পা ফেলি...
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫৩
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×