somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য : লকডাউন ও আমার ডাক্তারগিরি

০২ রা জুন, ২০২০ রাত ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভজহরিদা বলল, "তোকে আমায় একটু হেল্প করতে হবে রে।"
আমি বললাম, "বলো বলো।"
ভজহরিদা বলল, "তুই আমার সঙ্গে একটু আমার কাকুর বাড়ি যাবি। ব্যাস তাহলেই হবে।"
আমি ভয়ের গন্ধ পেলাম। এত সহজ-সরল ব্যাপারটা নয় বলেই মনে হল।
বললাম, "তোমার সেই বদরাগী কাকু?"
ভজহরিদা বলল, "একটু উপকার করে দে মাইরি। কাকু তো হাঁটুর জন্য হাঁটাচলা করতে পারে না ভাল করে। বাতিকগ্রস্ত লোক। বলছে এক্ষুনি একবার ডাক্তারকে কল দিতে। ওর চেক আপ দরকার। দিব্যি ভাল আছে! এখন এই লকডাউনের বাজারে কোন ডাক্তার যাবে বলত ফালতু ফালতু? তুই যাবি ডাক্তার সেজে।"
আমি বললাম, "ওরে বাবা ডাক্তার সেজে! আমি মরে গেলেও পারব না। তোমার কাকা আবার রিটায়ার্ড এক্সাইজ ইনস্পেক্টর। যা গল্প শুনেছি বুঝতেই পারছি হেব্বি খিঁচা লোক।"
ভজহরিদা বলল, "ওই চুল্লুওয়ালাদের পেছনে দৌড়ে দৌড়েই তো কাকুর হাঁটু দুটো গেছে। তুই না গেলে আমি ফেঁসে যাব মাইরি। কাকিমাকে কথা দিয়েছি। একটা স্টেথিসকোপ জোগাড় করে রেখেছি। তুই শুধু যাবি, গম্ভীর হয়ে পরীক্ষা করবি ব্যাস হয়ে যাবে। আরে আমি তো থাকব তোর সাথে, তোর চিন্তা কী? আর একদম বেশি বকবি না, বাকিটা আমি সামলে দেব।"
.
জীবনে এই প্রথম ডাক্তার হিসেবে কারুর বাড়ি গেলাম।
কাকু একটি বিছানায় পা ছড়িয়ে বসে আছেন। আমাকে বিছানার পাশে একটা চেয়ারে বসতে দেওয়া হল।
কাকুর গলাটা খানিকটা অমরীশ পুরী টাইপ।
বললেন, "আপনি কি ফিজিসিয়ান?"
আমি খুব গম্ভীর হয়ে শুধু হুঁ বলে স্টেথিসকোপটা কাকুর বুকে বসালাম। অভ্যেস নেই প্লাস ওইরকম তেড়িয়া লোক! উত্তেজনায় ভয়ে স্টেথিসকোপের উল্টোদিকটা বুকে লাগিয়ে পরীক্ষা করতে লাগলাম।
কাকু অবাক হয়ে বললেন, "এই প্রথম আমি কাউকে এইভাবে উল্টো করে স্টেথিসকোপ বসাতে দেখলাম!"
খেয়েছে! আমি তাড়াতাড়ি ম্যানেজ দেওয়ার জন্য বললাম, "আজকাল এভাবেই দেখা হচ্ছে।"
কাকু বাজখাঁই গলায় বললেন, "কেন?"
আমি ভয় পেয়ে গিয়ে বললাম, "জার্মানের এক বিখ্যাত ডাক্তার বলেছেন এভাবেই পরীক্ষা করে উচিত।"
কাকুর প্রশ্ন, "ডাক্তারের কী নাম?"
সেরেছে কোন নামটা বলি এখন! জার্মান ফুটবল প্লেয়ারদের নামগুলো কী যেন? বেকেনবাউয়ার...না না বাবা বুঝে যাবে। কিন্তু ভয়ে কোনও নামই যে মনে পড়ছে না।
ভজহরিদা পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, কাকুর চোখ এড়িয়ে খোঁচা দিল আমার পিঠে। আমি খোঁচা খাওয়া বাঘের মতো বললাম, "ডক্টর জোয়াকিম ক্লিন্সম্যান।"
কাকু একটু থতমত খেয়ে গেলেন নামের ওজনে।
.
আমি পরীক্ষা শেষ করে বললাম, "সব ঠিকই আছে। শুধু পালস্ একটু স্লো মানে ভয়ের কিছু নয় জাস্ট স্ট্যামিনাটা একটু কম।"
কাকু বললেন, "প্রেশারটা একটু দেখে দিন।"
আমি নিশ্চিন্ত হেসে বললাম, "প্রেশারের যন্ত্র আনা হয়নি। প্রেশার আপনার ঠিকই আছে।"
এরপর যা ঘটল তার জন্য আমি বা ভজহরিদা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না।
কাকু কাকিমাকে বললেন, "একটু প্রেশার মাপার যন্ত্রটা বের করে দাও তো।"
সর্বনাশ! এখন কী হবে? আমি তো প্রেশার মাপতেই জানি না।
ভজহরিদাকেও দেখতে পাচ্ছি না। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। ধরতেই ভজহরিদা বলল, "তুই বল এই ফোনটা হাসপাতাল থেকে এসেছে। এমার্জেন্সি কল তাই যেতে হবে।"
আমি বললাম, "সে কী! তাই নাকি! বলেন কী! হ্যাঁ হ্যাঁ এক্ষুনি যাচ্ছি। এক্ষুনি দুটো না না দুটো নয় তিনটে ইঞ্জেকশন দিয়ে দিন। হ্যাঁ নামগুলো বলছি..."
.
বলে আমি উঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম। ভজহরিদা ওদিক থেকে বলল, "হুঁ ভাল হচ্ছে। এইবার বিড়বিড় করে তিনটে ইংরেজি নাম বলে ফোন কেটে দে।"
কী যে বলা যায়! করোনার ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ছাড়া আর কোনও ওষুধের নাম মনেই পড়ছে না! উফফ মিডিয়ার কী প্রভাব! বুড়ো আবার কান খাড়া করে আছে। বললাম, "হাইড্রক্সিক্লোরো-কুইন, হাইড্রক্সিক্লোরো-কিং, হাইড্রক্সিক্লোরো-সারভেন্ট এই তিনটে ইঞ্জেকশন এক্ষুনি দিয়ে দিন।"
ফোন কেটে দিয়ে আমি কাকুর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম, যা জড়িয়ে বলেছি কিছুই বুঝতে পারেননি।
.
একটু গলা ঝেড়ে বললাম, "এক্ষুনি চলে যেতে হবে। হঠাৎ করে একজন পেশেন্টের অবস্থা ক্রিটিক্যাল হয়ে গেছে।"
কাকু বললেন, "কিন্তু আমার স্ট্যামিনা বাড়ানোর জন্য একটা ওষুধ লিখে দিয়ে যান।"
আমি গলা যতটা সম্ভব ভারী করে বললাম, "সে প্রেসক্রিপশন না হয় করে দিচ্ছি। একটা কাগজ লাগবে।"
অমনি একটা ডায়েরির ছেঁড়া পাতা চলে এল।
এইসময় ভজহরিদা উদয় হয়ে বলল, "ডাক্তারবাবু প্রেশার দেখা হয়ে গেছে?"
আমি করুণ চোখে বললাম, "না মিস্টার ভটচাজ আমার একজন পেশেন্টের যায় যায় অবস্থা, খাবি খাচ্ছে, তিনটে ইঞ্জেকশন দিতে বললাম, আরও তিনটে বলে দিতে হত। এক্ষুনি চলে যেতে হবে।"
ভজহরিদা তাড়া লাগাল, "তাহলে আর বসে আছেন কেন? চলুন চলুন আপনাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিই।"
কাকু দাবড়ে বলল, "তুই থাম তো ভজু। উনি আগে আমার ওষুধটা লিখে দিন।"
আমি খসখস করে লিখে দিয়ে কাকুর হাতে কাগজটা দিয়ে বললাম, "আসি তাহলে।"
কাকু কাকিমাকে বললেন, "ওনার ফিসটা দিয়ে দাও।"
তারপর ডায়েরির পাতাটা আমাকে দেখিয়ে বললেন, "এটা কি ভিটামিন?"
আমি বললাম, "হ্যাঁ।"
কাকু আমার সামনে কাগজটা মেলে ধরে বললেন, "বাপন নাম মেডিসিনটার? Bapon?"
সর্বনাশ হয়েছে! এক খেয়ালে আমি নিজের নাম লিখে দিয়েছি। কিন্তু এখন তো ভুলটা স্বীকার করা যাবে না। একদিকে মঙ্গল যে কাকু জানে না আমার ডাক নাম বাপন।
আমি খুব গম্ভীর হয়ে ঘাড় নেড়ে বললাম, "হ্যাঁ বি মানে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। আর এ মানে ভিটামিন এ।"
কাকু বললেন, " আর 'পি' 'ও' 'এন' ?"
ভজহরিদা আবার খোঁচা দিল। কেন যে খোঁচা দেয়!
বললাম, "নতুন তিনটে ভিটামিন আবিষ্কার হয়েছে আপনি জানেন না বোধহয়। ভিটামিন পি , ভিটামিন ও আর ভিটামিন এন ।"
কাকুর চোখ কপালে উঠে গেল। বললেন, "তাই নাকি? খবরের কাগজ নিয়মিত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ি কিন্তু এই ভিটামিনগুলোর বিষয়ে কিছু পড়িনি তো!"
আমি ব্যঙ্গাত্মক হেসে বললাম, "কাগজের কথা আর বলবেন না। আসল খবরই সব চেপে দেয়! এই যে..."
ভজহরিদা আর কিছু বলতে দিল না আমায় টেনে বাইরে বের করে নিয়ে এলো।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০২০ রাত ১২:৪৯
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×