১) গাঁজা তৈরির আগে যে কাঠের তক্তায় গাঁজা কাটা হয় তার নাম হচ্ছে 'প্রেমতক্তি'৷ যে ছুরি বা কাটনি দিয়ে গাঁজা কাটা হয় তার নাম 'রতনকাটারি'৷ সাধারণত তিনবার গাঁজা কাটা হয় মিহি করার জন্য৷
২) গাঁজার কল্কেকে গাঁজাখোরেরা আদর করে ডাকে 'বাঁশি'৷
৩) কাঁটা শেষ হলে বাঁশিতে গাঁজা ভরা হয়। ভরার পূর্বে 'টিকলি' ঠিকমত আছে কিনা দেখে নেয়া হয়, টিকলি হচ্ছে তিন/চারকোণা ইটের টুকরো যা বাঁশির নিচের দিকে ঢুকানো থাকে যাতে করে গাঁজা বা আগুন বাঁশির নিচ দিয়ে পড়ে না যায়।
৪) সবশেষে বাঁশির নিচের অংশ একটুকরো কাপড় দিয়ে জড়ানো হয় যাকে বলে শাফি বা জামিয়ার। বাংলাদেশে শাফি হিসেবে ভেজা কাপড়ের চল থাকলেও আমাদের দেশে শুকনো কাপড়ই ব্যবহৃত হয়।
৫) আগুন জ্বালানোর জন্য নারকেলের ছোঁবড়া বলের মত বানিয়ে আগুনে পোড়ানো হয় এবং গাঁজার উপর রাখা হয়।
৬) টান দিতে হয় বাঁশির নিচের দিকে শাফির অংশে৷ দুহাতের চেটোয় ধরে শাফিতে মুখস্পর্শ না করে বাঁশি টানতে হয়।
৭) গাঁজার কল্কের সম্মান ও ইজ্জত আছে৷ এতে পদস্পর্শ করানো নিষেধ; পা লেগে গেলে নমো করতে হয়৷ সাধুসন্যাসীরা দম নেয়ার আগে কল্কে কপালে ছুঁয়ে নেন৷
৮) আসরে বাঁশি সবসময় হাতের ডানদিক থেকে অর্থ্যাৎ এন্টিক্লকওয়াইজ ঘুরানো হয়।
৯) গাঁজা গাছের স্ত্রী-পুরুষ আছে এবং দুই গাছেই ফুল বা মঞ্জরি হয়। কিন্তু শুধু স্ত্রী গাছ থেকেই গাঁজা, ভাং বা চরস পাওয়া যায়৷ পুরুষ গাছের কোনো মাদক ক্ষমতা নাই।
১০) স্ত্রীপুষ্পকে ৪৮ ঘণ্টা রৌদ্রে শুকালে ফুলগুলো জমাট বেধে যায়। এই জমাটফুলই 'গাঁজা' নামে বিক্রয় হয়।
১১) স্ত্রী উদ্ভিদের ভূ-উপরিস্থ অংশ শুকিয়ে বা কাঁচা অবস্থায় পিষে কিংবা জলের সাথে মিশিয়ে সরবত বানিয়ে পান করা হয়, একে 'ভাং' বলে।
১২) গাঁজা গাছের আঠা থেকে হয় চরস, এই আঠার জন্য অনেকে গোটা গাছই কেটে ফেলে। গাঁজার গুঁড়া আঠার সাথে মিশিয়েও চরস তৈরি করা হয়ে থাকে।
১৩) গাঁজা গাছের পাতা শুকিয়ে সিদ্ধি তৈরি করা হয়। অনেকে সিদ্ধি মুখে পুরে চিবিয়ে নেশা করে।
১৪) গাঁজার স্ত্রীপুষ্পের নির্যাস থেকে হাসিস তৈরি করা হয়। হাসিস হলো গাঁজার বস৷
১৫) গাঁজাগাছই একমাত্র গাছ যেটা মর্ত্য থেকে স্বর্গে গিয়েছিল৷ শিব স্বর্গে থাকলেও তার মনে সুখ ছিল না৷ পরে হেকিমের পরামর্শে তাকে পৃথিবীর গাঁজা খাওয়ানো হয়৷ শিব গাঁজা খেয়ে তৃপ্ত হন এবং আনন্দময় চিত্তে গাঁজা গাছ নিয়ে স্বর্গে চলে যান৷
১৬) পঞ্চম খ্রিস্টপূর্বাব্দে, গ্রিক দার্শনিক হেরোডোটাস তাঁর লেখায় স্কাইথিয়ানদের গাঁজা টানার কথা উল্লেখ করেছেন৷ গাঁজার দুনিয়া বিষয়ে প্রথম লেখেন চিনা সম্রাট শেন্ নুং৷
১৭) বিখ্যাত গাঁজা সেলিব্রিটিদের মধ্যে পিথাগোরাস, ভিক্টর হুগো, স্তেফান মালার্মে, শার্ল বোদলেয়ার ও প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির নাম উল্লেখযোগ্য৷
১৮) বাংলার শিক্ষাবিদ প্যারীচরণ সরকার (১৮২৩-১৮৭৫) এতই গাঁজার ভক্ত ছিলেন যে দৈনিক গাঁজা ছাড়া তাঁর চলতই না। বিশিষ্ট নাট্যকার ও নাট্য পরিচালক গিরিশ চন্দ্র ঘোষ গাঁজায় আসক্ত ছিলেন। তিনি গাঁজার মহিমায় মুগ্ধ হয়ে রচনা করেছেন, ‘সুখদা ধ্যানদা গাঁজা গাঁজৈব পরমা গতি...।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:০৪