somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু প্রকল্পে ফিরে আসে নাই - দিল্লি অনেক দূরে!

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগে দুর্নীত তদন্ত বিচার, শেষে বিশ্বব্যাংক সন্তুষ্ট হলে তবে ফেরা-ফিরিঃ

ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের হেড অফিস গত ২০ সেপ্টেম্বর দিন শেষে অর্থাৎ বাংলাদেশ সময় ২১ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক এক প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করেছে।
অনেকেই জানেন গত তিনদিন ধরে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভি ওয়াশিংটনে আছেন, এব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কথা বলার জন্য তিনি সেখানে আছেন। নিগোশিয়েট করছেন, এখনও দেশে ফেরেননি। বিশ্বব্যাংকের সাথে গত ২০ সেপ্টেম্বর তাঁর আলাপের পর ঐ বিবৃতি তৈরি ও প্রকাশিত হওয়ার কয়েকঘন্টা আগেই অর্থমন্ত্রী মাল মুহিত ঐ রাতের আমাদের স্থানীয় খবরে ‘বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফিরে আসছে’, ‘বিবৃতি আসছে’ ইত্যাদি বলে প্রথম খবরটা চাউর করেছেন, আমরা দেখেছি। পরেরদিন ২১ তারিখে প্রিন্ট মিডিয়া, সারাদিনের খবর আর শেষ রাতের টকশোগুলোর প্রধান আলোচ্য বিষয় হলো, ‘বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফিরে আসছে”। এনটিভিতে দেখা গেল, আমরা জানলাম আওয়ামি লীগের যুগ্ম-সম্পাদক হানিফ ও তোফায়েল আহমেদ ব্যাপারটাকে ‘ভুল বুঝাবুঝি’ হিশাবে দেখছেন। বিশ্বব্যাংকের সাথে একটা ‘ভুল বুঝাবুঝি’ হয়েছিল সেটা কেটে গিয়েছে - এভাবে। কিন্তু এইসব গৌণ প্রসঙ্গ । কঠিন সত্য হলো, বিশ্বব্যাংক আসলে এখনও পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফিরে আসে নাই। তবে তদন্ত অনুসন্ধান তার ফলাফল, বিচার ও শাস্তির কি হচ্ছে তা দেখার পর সন্তোষজনক মনে হলে তারপরেই কেবল বিশ্বব্যাংক ফিরে আসতে পারে। অথচ ২১ তারিখ থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের সব মিডিয়ার রিপোর্টিং (রাতের টকশোগুলো সহ) মারাত্মক গলদপুর্ণ, আধা সত্য ধরণের কথাবার্তা বলা হচ্ছে; যেমন, ‘বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফিরে আসছে’– এটা আধা সত্য কথা। পুরা সত্য হলো, আমরা বড়জোর বলতে পারি, বিশ্বব্যাংক শর্ত সাপেক্ষে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফিরে আসতেও পারে। এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে মাত্র। কিন্তু কী সে শর্ত?
গত সপ্তাহ ধরেই মিডিয়ায় খবর ছিল যে বিশ্বব্যাংকের দেয়া চার শর্তের সর্বশেষটা হলো, উপদেষ্টা মশিউর রহমানের ছুটিতে যাওয়া না যাওয়া - এটাই নাকি বাধা। ছুটি নিয়েছেন নাকি নেননি - এসব বলে বিস্তর নাটক হতে দেখেছিলাম আমরা। বলা হয়েছিল এটাই নাকি সর্বশেষ বা চতুর্থ শর্ত – অথচ কথাটা একেবারেই মিথ্যা। তবে বিশ্বব্যাংকের আসল শর্তের সংখ্যা অবশ্যই চার, এই কথাটাই শুধু সঠিক। মিডিয়াগুলো আসল চার শর্তের কেবল প্রথম শর্ত নিয়েই কথা বলছে। কিন্তু প্রথম শর্তকেই তারা নিজেরা আবার চার অংশ বানিয়ে সেটাকেই চার শর্ত বলে বুঝেছে, আমাদেরও বুঝিয়েছে। মশিউর রহমানের ছুটি প্রসঙ্গ বিশ্বব্যাঙ্কের শর্তের চতুর্থ শর্ত নয় বরং প্রথম শর্তের চতুর্থ ভাগ। অর্থাৎ প্রথম শর্তে একা মশিউর রহমান সেখানে একমাত্র প্রসঙ্গ নয়। পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্মকর্তাদের মধ্যে যারা দুর্নীতির সাথে সম্পর্কিত বলে প্রাথমিকভাবে বিশ্বব্যাংকের কাছে মনে হচ্ছে তাদের সবাইকে ছুটিতে পাঠিয়ে দিয়ে এরপর তদন্ত অনুসন্ধান পুরা করতে হবে। [(১)এই দুর্নীতিচক্রে যেসব সরকারি কর্মকর্তা (all public officials) জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে তাদেরকে তদন্ত পুর্ণ না হওয়া পর্যন্ত সরকারি চাকুরি থেকে ছুটিতে পাঠাতে হবে।] এটাই হলো বিশ্বব্যাংকের চার শর্তের প্রথম শর্ত। এই প্রথম শর্ত পুরণের ক্ষেত্রে, একটা অপুরণীয় অংশ ছিল, মশিউর রহমানের ছুটিতে যেতে না চাওয়া। এটা একটা বাধা। তবে এই ক্ষেত্রে মশিউর রহমান মিডিয়ায় স্বশরীরে হাজির হয়ে যা কিছুই দাবি করুন না কেন কার্যত তিনি ছুটিতে চলে গেছেন। তিনি যে ছুটিতে চলে গেছেন এটা "বিশ্বব্যাংক বুঝতে পেরেছে" বলে ঐ বিবৃতিতে জানিয়েছে। এতে প্রথম শর্ত পুরাটাই পুরণ হয়েছে। এখনও তিনটা আসল শর্ত বাকি। বাকি তিন শর্ত পুরণ সাপেক্ষে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফিরে আসতে পারে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে মাত্র। এটাই সর্বশেষ খবর। পুরা সত্য।
পদ্মা সেতু খবর হওয়ার পর থেকে এপর্যন্ত গত দশ মাসে নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য আমরা পাইনি। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের দিক থেকে বললে, আমরা কোন তথ্যই পাইনি বললে চলে। তবে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছিল আমাদের সরকার চাইলে সব তথ্য, সব চিঠি চালাচালি জনগণের কাছে প্রকাশ্য করতে পারে। আর সরকারের দিক থেকে কোন চিঠি বা পত্র চালাচালির তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। আমরা যা পেয়েছি তা হলো বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে সরকারের রাজনৈতিক অভিযোগ আর বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ তদন্ত করবার কোন উদ্যোগ না নিয়ে কোন অনুসন্ধানে না গিয়ে শুধু কোন দুর্নীতি হয়নি বলে প্রচার। সারকথা হচ্ছে পুরা বিষয়টিকে নিরপেক্ষ ভাবে বিচার করবার জন্য দরকারী কোন তথ্য আমরা কোন পক্ষের কাছ থেকেই পাই নি। আমরা কেউ আলাদা করে নিজে নিরপেক্ষভাবে ঘটনা বিচার করতে পারি তার কোন সুযোগ ছিল না। এমনকি মিডিয়ায় যে চার শর্তের কথা এপর্যন্ত আলোচনা হয়েছে তা সরকার বা বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে আমরা জানিনি। বলা যায় এটা মিডিয়ার নিজের অনুমান বা নিজস্ব সুত্র। বলা বাহুল্য এই অনুমান বা ‘নিজস্ব সুত্র’ যে সঠিক ছিল না, আংশিক মাত্র - তা বিশ্বব্যাংকের গতকালের বিবৃতি থেকে আমরা নিশ্চিত হতে পারছি।
এই দিক থেকে বিচারে ২১ সেপ্টেম্বরের বিশ্বব্যাংকের এক পাতার বিবৃতি প্রথম নির্ভরযোগ্য তথ্য এবং বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ অবস্থান সহ এই বিবৃতিটা পুরা ঘটনার একটা সার সংক্ষেপ। (আগ্রহীরা দেখতে পারেন, Click This Link )
কিন্তু তা সত্ত্বেও, ২১ তারিখে সারাদিনের সব প্রিন্ট ও টিভি মিডিয়া রিপোর্ট, এমনকি রাজনৈতিক নেতা, ‘উন্নয়ন’ পেশাজীবিদের আধা সত্য বক্তব্য ইত্যাদি শুনে একথা মনে করার কারণ আছে যে কেউই বিশ্বব্যাংকের মূল বিবৃতিটা মনোযোগ দিয়ে পড়েননি। কোন কারণে তাদের পড়া হয়নি হয়ত, আর হয়ত তারা শুধু মিডিয়া রিপোর্টই পড়েছেন। আগেই বলেছি এই বিবৃতিটা পদ্মা সেতু ঘটনা বিরোধের সার-সংক্ষেপ এবং প্রথম নির্ভরযোগ্য তথ্য। ফলে পদ্মা সেতু ইস্যু নিরপেক্ষেভাবে বুঝবার জন্য এই বিবৃতি খুবই গুরুত্বপুর্ণ একটা ডকুমেন্ট। এই বিবেচনায় বিশ্বব্যাংকের বিবৃতির লিঙ্ক উপরে দিয়েছি আর সেই সাথে এর গুরুত্বপুর্ণ অংশের বাংলা অনুবাদও এখানে দেওয়া হোল । অনুবাদে কোন ভুল হয়েছে বলে কারও মনে হলে মুল ইংরাজিটা দেখবার পরামর্শ রাখছি। আর অনুবাদের দায় একান্তই আমার নিজের।

চার শর্তঃ
বিশ্বব্যাংকের আসল চার শর্ত কি ছিল তা এই বিবৃতিতে পুরাটাই দেয়া আছে এভাবেঃ (১)এই দুর্নীতিচক্রে যেসব সরকারি কর্মকর্তা (all public officials) জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে তাদেরকে তদন্ত পুর্ণ না হওয়া পর্যন্ত সরকারি চাকুরি থেকে ছুটিতে পাঠাতে হবে। (২) খতিয়ে তদন্ত করার কাজ ঠিকমত করার জন্য বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের অধীনে একটা বিশেষ অনুসন্ধান ও আইনী পদক্ষেপ নেবার টিম নিয়োগ দিতে হবে। (৩) তদন্ত অনুসন্ধানে প্রাপ্ত সব তথ্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত এক বাইরের প্যানেলের কাছে পরিপুর্ণভাবে সবকিছু দেখার সুযোগ উন্মুক্ত করে দিতে সরকারকে রাজি হতে হবে যাতে তাঁরা তদন্ত অনুসন্ধানের অগ্রগতি, পর্যাপ্ততা ও ন্যায্যতা সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক ও সহযোগী বিনিয়োগকারিদের দিক নির্দেশনা মূলক পরামর্শ (give guidance) দিতে পারে। (৪) বাস্তবায়ন কাজের এক নতুন আয়োজন-নিয়ম তৈরি করতে সরকারকে রাজি হতে হবে যেন বিশ্বব্যাংক ও সহযোগী বিনিয়োগকারিরা প্রজেক্টের ক্রয়সংক্রান্ত প্রক্রিয়াকে আরও বেশি নিজেদের নজরদারিতে আনতে পারে।
তবে বিশ্বব্যাংক এটাকে ‘শর্ত’ বলেনি; এই ভাষায় বলতে চায়নি। বলেছে বিশ্বব্যাংকের হাতে চিহ্নিত এবং সরকারকে নিতে হবে এমন ‘ধারাবাহিক সুনিদির্ষ্ট পদক্ষেপ’; মুল ইংরাজিতে “Bank had identified a series of clear measures to be implemented by the Government”। এই “ধারাবাহিক সুনিদির্ষ্ট পদক্ষেপ” কথাগুলোই পুরা বিতর্কের মুল বিষয়। কেমন মুল বিষয়?
বলা হয়েছে কি ধরণের পদক্ষেপ নিতে হবে বিশ্বব্যাংকের কাছে তা আইডেনটিফাইড বা চিহ্নিত। তার মানে এটা কি কেবল বিশ্বব্যাংকের একান্ত নিজস্ব ধারণা? না মোটেই না। দুটো কারণে।
প্রথম কারণ, এটা বিশ্বব্যাংকের হাতে চিহ্নিত – সন্দেহ নাই। বিবৃতি পরিস্কার করে আমাদের সেটাই জানাচ্ছে। কিন্তু বিবৃতি একই সাথে সাথে বলছে, “এই প্রজেক্টের সাথে বিশ্বব্যাংককে সংশ্লিষ্ট রাখতে হলে সরকারকে ‘ধারাবাহিক সুনিদির্ষ্ট পদক্ষেপগুলো’ বাস্তবায়ন করতে হবে”। ইংরাজিতে, “ for the Bank to remain engaged with the project”। অর্থাৎ সরকার যদি বিশ্বব্যাংককে এই প্রজেক্টে সংযুক্ত থাকুক চায় তবে বিশ্বব্যাংকের হাতে চিহ্নিত ‘ধারাবাহিক সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলো’ সরকারের নিজেরই হাতে চিহ্নিত মনে করে বাস্তবায়ন করতে হবে”। তবু আমাদের অনেকের মনে হতে পারে এই ব্যাখ্যাও যথেষ্ট নয় বা স্পষ্ট নয়। তাদের জন্য আরেকটি উদ্ধৃতি দেই। সেটাই দ্বিতীয় কারণ।
গওহর রিজভি ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক হেড কোয়ার্টারে গিয়ে ঠিক কী বলছেন, কী বলে নিগোশিয়েট করছেন – এনিয়ে আমাদের কৌতুহলের সীমা নাই – এটাই স্বাভাবিক। আর অনেকের ধারণা এই বিষয়টা হয়ত কোনদিনই জানা যাবে না। একমাত্র স্থানীয় এনটিভি নিউজ ঢাকা থেকে সংবাদদাতা জহিরুল আলমকে পাঠিয়েছে – বাড়তি কিছু জানা যাবে – এক্সক্লুসিভ, এই আশায়। কিন্তু জহিরুল আলমের রিপোর্টে হতাশ হয়েছি। যেসব মুল কথা এই বিবৃতি থেকেই জানা যাচ্ছে তা জহিরুল আলমের রিপোর্টে দেখিনি। যেমন বিশ্বব্যাংকের বিবৃতি বলছে, “The Government agreed to a series of measures as a pre-requisite for any renewed implementation”– বাংলায় অর্থটা হলো এরকমঃ বাংলাদেশ সরকার রাজি হয়েছে যে [নবায়ন করার আগ্রহে] প্রজেক্ট বাস্তবায়ন কাজের নিয়ম পদ্ধতি বানানোর ক্ষেত্রে ধারাবাহিক কিছু সুনিদির্ষ্ট [সরকারি] পদক্ষেপ নেয়া একটা আগাম করণীয় কাজ। [নবায়ন করা আগ্রহে] শব্দগুলো আমি ঢুকিয়েছি এজন্য যে বিবৃতিতে ইংরাজী এই বাক্যের আগের বাক্যটা হলো এরকমঃ “বাংলাদেশ সরকার বিশ্বব্যাংককে পদ্মা বহুমুখী ব্রিজ প্রকল্পে বিনিয়োগ বিষয়টা আবার বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করেছে”। গত কয়েক মাসে অর্থমন্ত্রী মাল মুহিত বিশ্বব্যাংককে আবার বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে কি না এনিয়ে একবার হ্যাঁ আরেকবার না বলে ধোঁয়াশার মধ্যে রেখেছিলেন আমাদের। এখন এই বিবৃতি থেকে এটা পরিস্কার যে সরকার আবার বিবেচনার অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছে শুধু তাই নয়, এখন বিশ্বব্যাংকের চিহ্নিত ‘ধারাবাহিক সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলো’ও [series of measures] আগাম করণীয় কাজ [ as a pre-requisite] হিসাবে মেনে নিতে আমাদের সরকার রাজি হয়েছে। তার মানে গওহর রিজভি ওয়াশিংটনে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এই আগাম কাজটি করতে রাজি হয়েছেন। ফলে বিশ্বব্যাংকের হাতে চিহ্নিত ‘ধারাবাহিকসুনির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলো’ আর কেবল বিশ্বব্যাংকের নয়, সরকারের হাতেও চিহ্নিত এবং করণীয় হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাংকের বিবৃতি কোন লিগাল ডকুমেন্ট নয় -এটা আমরা বুঝতে পারি। তবু বিশ্বব্যাংকের সাথে গওহরের আলোচনার বিবরণী বা মিনিটস এবং সেই সাথে এর এগ্রিড পয়েন্টস এর যে লিখিত ডকুমেন্ট আছে সেই ডকুমেন্টের প্রতিফলন বিবৃতিতে আছে এটা বুঝে নেওয়া যায়।
এতক্ষণ উপরে যে আলোচনা করলাম তাতে কি ‘বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফিরে আসছে” একথা বলা যায়? স্পষ্টতই না। মিডিয়া রিপোর্টে এটাকেই কি ফোকাস মানা যায়? স্বভাবতই না। বরং যেটা ঘটেছে তা হলো, বিশ্বব্যাংকের চিহ্নিত চার ‘ধারাবাহিক সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলো’ [আমাদের ভাষায় চার শর্ত] বিশ্বব্যাংককে প্রকল্পে ফেরাতে গেলে আগেই বাংলাদেশ সরকারের আগাম করণীয় কাজ বলে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। আর এই শর্তগুলো পুরণের পরই বিশ্বব্যাংক প্রকল্পে ফিরতে পারে। এছাড়া মনে রাখা দরকার, এই চার শর্ত মানে আমাদের মিডিয়ার দৌলতে আধা সত্য ধারণা, কেবল কর্মকর্তাদের ছুটিতে পাঠানো নয়। কর্মকর্তাদের ছুটিতে পাঠানো চার শর্তের প্রথম শর্ত কেবল।

“বিশেষ অনুসন্ধান ও আইনী পদক্ষেপ নেবার টিম”
তাহলে বাকি তিন শর্ত কী কী? দ্বিতীয় শর্ত হলো, দুর্নীতি দমন কমিশনের অধীনে একটা “বিশেষ অনুসন্ধান ও আইনী পদক্ষেপ নেবার টিম” [special inquiry and prosecution team ] নিয়োগ দিতে হবে। এখানে প্রসিকিউশন শব্দটা সবচেয়ে তাতপর্যপুর্ণ। অর্থাৎ এটা ঠিক কোন ‘ইনকোয়ারি কমিশন’ নয় যে তদন্ত অনুসন্ধান করে সরকারের কাছে একটা রিপোর্ট দিবে তারপর একটা পজ দিয়ে সব গায়েব। এনিয়ে কোন আইনী ব্যবস্থা নেয়া, আদালতে মামলা করা, অভিযোগ আনা হবে কি হবে না - সেটা সরকারের মর্জিতে ঠিক হবে - তা একেবারেই নয়। বরং এটা একই সাথে নিজেই প্রসিকিউশন টিম – মানে আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের, বিচার শেষ করে তবেই এর কাজটা শেষ হবে।
এছাড়া আরও কথা আছে। এর আগে পদ্মা সেতু বিশ্বব্যাংকের সাথে বিরোধের ইস্যু হয়ে প্রকাশ্য হবার ও তা অমীমাংসিত বিরোধ হবার পর -বিশ্বব্যাংকের সহায়তা প্রত্যাহার বা ঋণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবার ঘটনাটা ঘটেছিল। দুর্নীতি দমন কমিশনের অধীনে একটা “বিশেষ অনুসন্ধান ও আইনী পদক্ষেপ নেবার টিম” কি পদ্ধতিতে বা নিয়মে বানানো যায় তা নিয়ে টার্মস কন্ডিশন, পদ্ধতি ইত্যাদি গড়তে গিয়েই সব আলোচনা ভেঙ্গে যায়। বিরোধ অমীমাংসিত থেকে যায়। আর ঐ বিরোধকে অমীমাংসার জায়গায় ঠেলে দেবার জন্য দুদকের কোন কর্মচারি নয়, দুদকের উকিল আনিসুল হক - প্রধানমন্ত্রীকে ভাল সার্ভিস দিয়েছিলেন। তিনি অজুহাত তুলেছিলেন – দুদকের আইনে দুদক নিজে এমনই ‘স্বাধীন’ যে নিজের তদন্ত অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় তদন্তের নামে কি করছেন, কি পেলেন, স্বচ্ছ রাখার জন্য আর কি করা যায়, কিভাবে ত্রুটি এড়ানো যায় ইত্যাদি বিষয় দুদুক কারও সাথে শেয়ার করে না, কাউকে দেখতে দেন না – এটা নাকি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন। এককথায় বললে, সার্বভৌমত্বের বকোয়াজির আড়ালে স্বচ্ছ তদন্ত অনুসন্ধানে না গিয়ে বরং দুর্নীতিবাজকে ক্লিন সার্টিফিকেট দেবার একটা ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন আনিসুল হক, এবং দুদুক। বিপরীতে সে সময় বিশ্বব্যাংক যেটা চেয়েছিল তাই এখনকার তৃতীয় শর্ত।
তৃতীয় শর্ত বলছে, দুদুকের “তদন্ত অনুসন্ধানে প্রাপ্ত সব তথ্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত এক বাইরের প্যানেলের কাছে পরিপুর্ণভাবে সবকিছু দেখার সুযোগ উন্মুক্ত করে দিতে সরকার রাজি হবে যাতে তাঁরা তদন্ত অনুসন্ধানের অগ্রগতি, পর্যাপ্ততা ও ন্যায্যতা সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক ও সহযোগী বিনিয়োগকারিদের নির্দেশনামূলক পরামর্শ (give guidance) দিতে পারে”। আনিসুল হক সে সময় দুদুকের সাংবাদিক সম্মেলনে দুটো আপত্তি তুলেছিলেন। (এক) বলেছিলেন, “বিশ্বব্যাংক দুদকের অনুসন্ধান টিমের সঙ্গে তাদের একটি প্যানেল গঠনের প্রস্তাব দেয়। যে প্যানেল দুদকের অনুসন্ধানে যুক্ত থেকে তদন্ত পর্যবেক্ষণ করবে। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের সময় বিশ্বব্যাংকের প্যানেলের সদস্যরাও উপস্থিত থাকবেন। তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী এর কোনো সুযোগ নেই।’ [ প্রথমআলো ০২ জুলাই ২০১২]

আনিসুল হকের আপত্তি আমাদের অনেকের কাছে আপতিক দৃষ্টিতে বেশ গা-গরম দেশপ্রেমিক বক্তব্য মনে হতে পারে। কিন্তু দুদকের সাংবাদিক সম্মেলনের পরেরদিন অর্থমন্ত্রী মাল মুহিত ০২ জুলাই ২০১২ সংসদে ৩০০বিধিতে যে লম্বা বিবৃতিটা পড়েছিলেন পরেরদিন ০৩ জুলাই ২০১২ হুবহু তার পুরাটাই দৈনিকগুলোতে ছাপা হয়েছিল। সেটা পাঠ করলে দেখা যাবে আনিসুল হকের আপত্তির উল্টাটাই তিনি বলছেন। মাল মুহিত বলেছিলেন, “আইনানুগভাবে দুর্নীতি দমন কমিশন অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে দায়বদ্ধ নয় এবং তাদের নিজস্ব টীমকে কোন বিদেশি প্যানেলের তত্ত্বাবধানে তারা রাখতে পারেনা। তবে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়নে যেসব কাজ বা ক্রয়ের চুক্তি হয় সেগুলো সবসময়ই তাদের সম্মতি নিয়েই সম্পাদন করা হয়। তাই দুর্নীতি দমন কমিশন এই সব বিষয়ে যখন তদন্ত করে তখন এইসব বিষয়ে সব তথ্য উন্নয়ন সহযোগীদের দিতে পারে এবং তাদের পরামর্শ বা নির্দেশ বিবেচনা করতে পারে। বোঝা যাচ্ছে মুহিত বিবৃতি ড্রাফট করার সময় জানতেন না যে আগের দিন আনিসুল হক জনগণকে কিভাবে বোকা বানিয়েছিলেন। এর সোজা মানে হলো, আনিসুল হক বাঙালি জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমের সুড়সুড়ি দিয়ে দুর্নীতি অনুসন্ধানের কাজটা আড়াল করতে চাইছিলেন; যেন এটা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব বনাম বিশ্বব্যাংকের ইস্যু। যাতে সার্বভৌমত্বের সুড়সুড়ি দিয়ে দুদককে উল্টা দুর্নীতি ঢাকতে ব্যবহার করা যায়। আনিসুলহক সত্যিই ‘সফল’ ক্রিমিনাল উকিল!
আনিসুল হক দ্বিতীয় যে আপত্তিটা তোলেন সেটা আরও অভিনব। বিশ্বব্যাংকের দিক থেকে কোন অনিয়ম তদন্ত অনুসন্ধান করে দেখার আলাদা বিভাগ আছে যেটা হেড কোয়ার্টারে একজন ভাইস প্রেসিডেন্টের অধীনে ইন্টিগ্রিটি বা সততা বিভাগ। মুহিত এর বাংলা করেছেন শুদ্ধাচার বিভাগ। বিশ্বব্যাংকের সাংগঠনিক কাঠামোতে [অরগানোগ্রামে] এটা ২০০১ সাল থেকে চালু হয়। এটা কোন কান্ট্রি অফিসের অধীনে নয়, স্বভাবতই রাখা হয়নি। এটা সরাসরি হেডঅফিসের পরিচালনা বোর্ডের অধীনে এবং সমান্তরাল। গত জুন মাসে বাংলাদেশের সাথে নিগোশিয়েশনের সময় এই ইন্টিগ্রিটি বিভাগকে দিয়েই দুদকের তদন্ত অনুসন্ধান কাজের উপর বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে তদারকি, কাজ বুঝে নেয়া, গাইড করা ইত্যাদির পদ্ধতিগত উপায় নিয়ে কথাবার্তা চলছিল। ইন্টিগ্রিটি বিভাগের ওভারসাইট বা তদারকিকে আনিসুল হক বিশ্বব্যাংকের ‘এডভাইসরি কমিটি’ ভেবেছেন বা কখনও ‘বেতনভুক কর্মচারি’ বলে বুঝিয়েছেন। আনিসুল হক ২ জুলাইয়ের ঐ সাংবাদিক সম্মেলনে এবার অরগানোগ্রাম না বুঝার ভান করে আপত্তি তুললেন যে বিশ্বব্যাংকের কেন্দ্রের ইন্টিগ্রিটি বিভাগ বা এক্সটারনাল প্যানেলকে নয় কেবল কান্ট্রি অফিসকে তিনি তদন্ত অনুসন্ধানের ফলাফল জানাবেন। বলেছিলেন, “আমাদের আইনে আছে যেটা তদন্ত বের হয়ে আসবে সেটা আমরা জানাতে বাধ্য। কিন্তু অ্যাডভাইজরি কমিটিকে নয়। কিন্তু তারা বলল, না, ওয়ার্ল্ডব্যাংকে কিছু জানাতে হবেনা। সেটার জন্য বেতন ভুক্ত কর্মচারী বিশ্বব্যাংকের থাকবে তাদের জানাতে। আমরা বলেছিলাম ব্যাংককে জানাব। ব্যাংক তাদের প্যানেলকে জানাক। সেটাই হচ্ছে আইনসম্মত, বিধিসম্মত। তখন তারা বললেন যে না আমাদের জানাতে হবেনা”। তিনি জানতেন তদন্ত অনুসন্ধান, রিপোর্ট একমাত্র সততা বিভাগের কাজ ও রিপোর্ট এর সম্পত্তি যা কান্ট্রি অফিসকে তারা দেখতে দিতেও পারে না। ঐ রিপোর্ট হেড কোয়ার্টারে একজন ভাইস প্রেসিডেন্টের অধীনে থাকা ইন্টিগ্রিটি বা সততা বিভাগের হাতে প্রক্রিয়াগত কাজ শেষ হবার পরই কান্ট্রি অফিস এ বিষয়ে হেড কোয়ার্টার থেকে করণীয় নির্দেশ পাবে মাত্র। তাই কান্ট্রি অফিসকেই কেবল আনিসুল হক রিপোর্ট দিবেন বলে এক "অবুঝ আবদার" তিনি তুললেন। “আইনসম্মত, বিধিসম্মত” ইত্যাদি কথা তুলে তিনি এক্সটারনাল প্যানেলের সাথে কোন কাজ করতেই অস্বীকার করেছিলেন। অথচ এবার তৃতীয় শর্তের মধ্যে সেই এক্সটারনাল প্যানেলের সাথেই তদন্ত কাজ, গাইডেন্স সবই মেনে নেয়া হয়েছে। তবুও আবার এই ২১ সেপ্টেম্বর তারিখে ৭১ টিভির সাথে এক টকশোতে সেই পুরানো আবদার, খোঁড়া আপত্তিগুলো আনিসুল হককে তুলতে দেখা গেছে। এটা দেখে তার কথা শুনে এটা মনে করার কারণ আছে যে হয় তিনিও এই প্রেস বিবৃতি মনযোগ দিয়ে পড়েননি অথবা এও হতে পারে সরকারি নতুন ব্রিফিং নিয়েই পুরানা খোঁড়া আপত্তিটাই আবার তুলছেন অথবা পুরানা ব্রিফিং এর উপর দাড়িয়েই কিছুনা বুঝে ষ্টাডি না করে পুরানা খোঁড়া আপত্তিটাই আবার তুলছেন। এদিকগুলো এখনও অপরিষ্কার।
সমঝোতা অনুযায়ী এখন বিশ্বব্যাংকের পরবর্তী প্রথম পদক্ষেপ হবে সরকার বা মন্ত্রণালয়ের আগে দুদকের সাথে বসে তদন্ত অনুসন্ধানের টার্মস কন্ডিশন, কর্মপদ্ধতি ঠিক করা। খুব সম্ভবত একটা এগ্রিমেন্ট বা এমওইউ সই করা। এরপর সেই চুক্তি বা বুঝাবুঝির (আন্ডারষ্টান্ডিং) দলিলের উপর ভিত্তি করে তদন্ত অনুসন্ধান ও প্রসিকিউশন টিম গঠন করা। আবার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এক এক্সটারনাল এক্সপার্ট টিমের তদারকিতে দুদকের এই অনুসন্ধান টিম তদন্ত অনুসন্ধান কাজের অগ্রগতি, পর্যাপ্ততা ও ন্যায্যতা নিয়ে নিয়মিত কথা বলবে, গাইডেন্স নিবে। এককথায় বললে, যাই ঘটেছে আগে --পুরানো সেসস ঘটনার এক তদন্ত অনুসন্ধান শেষে একটা ক্লিন রিপোর্ট অথবা দুর্নীতির রিপোর্ট এবং রিপোর্ট অনুযায়ী প্রসিকিউশন অর্থাৎ বিচার ও শাস্তি –এভাবেই ফয়সালা হতে হবে। পুরানো বিষয়ের সমাপ্তি টানতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা এই কাজগুলোর “সন্তোষজনক বাস্তবায়ন হওয়ার পর”, আমি আবার বলছি, এগুলো হবার পরই কেবল -- বিশ্বব্যাংক নতুন করে পদ্মা বহুমুখী ব্রিজের কাজে জড়িত হবে। এই কথাটা কোন অনুমান নয়। বিশ্বব্যাংকের বিবৃতিতে একথাই লেখা আছে। নিচে সেকথা তুলে দিলামঃ
“বিশ্বব্যাংক রাজি হয়েছে যে সরকার যেসব “সিদ্ধান্ত-পদক্ষেপ” নিতে একমত হলো সেইসবের সন্তোষজনক বাস্তবায়ন হওয়ার পর এবং বিশ্বব্যাংকের গভর্নিং বডির সহায়তা নিয়ে বিশ্বব্যাংক নতুন করে পদ্মা বহুমুখী ব্রিজের কাজে জড়িত হবে”।
এর মানে হলো, ‘বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফিরে আসছে’ – এই ধারণা একেবারেই মিথ্যা। ওপরে যে চার শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে তার বাস্তবায়নের পর কী দাঁড়ায় আমরা দেখব। মানে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত , বিচার ও আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়ার সন্তোষজনক সমাপ্তি বা পুরানা খাতা ক্লোজ হবার পরই বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু প্রকল্পে টাকা ঢালতে ফিরে আসবে। এর আগে নয়।
বিশ তারিখ থেকে মিডিয়া, টকশো, আলোচক সবাই এইদিকটা সম্পর্কে সম্পুর্ণ বেখবর দেখা গেল। সকলেই ধরে নিয়েছেন, ‘বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফিরে আসছে’। অথচ The Bank has agreed that, upon satisfactory implementation of the agreed measures by the Government, and with the support of the Bank's governing bodies, the Bank will engage anew in the Padma Multipurpose Bridge --- এই একটা বাক্যই বিশ্বব্যাংকের পুরা বিবৃতির মুলকথা। এই বাক্যের upon satisfactory implementation of the agreed measures by the Government এটাই ষ্টেটমেন্টের ফোকাস বক্তব্য। আর আগেই বলেছি agreed measures, মানে বিশ্বব্যাংকের চিহ্নিত ‘ধারাবাহিক সুনিদির্ষ্ট পদক্ষেপগুলো’ [series of measures] আগাম করণীয় কাজ [ as a pre-requisite] হিসাবে মেনে নিতে আমাদের সরকার রাজি হয়েছে।
ওদিকে এমনকি বিএনপির সেক্রেটারির প্রতিক্রিয়ায় দেখা যাচ্ছে মির্জা আলমগীরও আধা সত্য মিডিয়া রিপোর্ট পড়ে ধরে নিয়েছেন ‘বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফিরে আসছে’। তিনি দাবি করছেন, কাদের জন্য দেরি হলো তদন্ত করে তাদের শাস্তি দেবার।
অনেক মিডিয়া অতি উৎসাহে আরও এক ধাপ এগিয়ে জামিরুল রেজা চৌধুরির কাছে ছুটেছেন, জানতে চাইছেন আবার টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করতে কতদিন লাগবে। অথচ কেউ একবারও চিন্তা করেন নাই দ্বিতীয় ও তৃতীয় শর্ত পুরণ সবচেয়ে শক্ত ও জটিল জায়গা। প্রধানমন্ত্রী কি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোন এক এক্সটারনাল এক্সপার্ট টিমের তত্ত্বাবধানে কাজ করার জন্য দুদুকের অধীনে a special inquiry and prosecution team গঠন করবেন? সরকারের দিক থেকে আমরা এখনও কিছু শুনিনি। তবে বিশ্বব্যাংকের এই বিবৃতি বলছে, "সরকার রাজি হয়েছে" - মানে গওহর রিজভি সরকার পক্ষ থেকে সম্মত্তি জানিয়েছে। কিন্তু এই অনুসন্ধান ও প্রসিকিঊশন ক্ষমতাসম্পন্ন টিম দুর্নীতির তদন্ত করতেই সরকার গঠন করবে। কোন দুর্নীতি? এই বিবৃতিতে প্রথম প্যারার শুরুতেই বিশ্বব্যাংক উল্লেখ করে রেখেছে, “বিশ্বব্যাংকের তদন্ত শাখা ব্রিজ নির্মাণে অর্থায়নের সাথে সম্পর্কিত দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ (credible evidence) এর আগে বাংলাদেশ সরকারের সাথে শেয়ার করেছিল ...... এই প্রজেক্টের সাথে বিশ্বব্যাংককে সংশ্লিষ্ট রাখতে হলে সরকারকে বাস্তবায়ন করতে হবে এমন কতগুলো ধারাবাহিক সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ বিশ্বব্যাংক যা চিহ্নিত করে দিয়েছিল, যেগুলো পুরণ করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছিল"। অর্থাৎ সরকারকে দেয়া বিশ্বব্যাংকের “দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ (credible evidence)”–তদন্ত ও ও প্রসিকিউশন করতে হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় এখনও দেখতে পাচ্ছি, শুনছি – তিনি বলে চলেছেন, কোন টাকা না দিয়েই বিশ্বব্যাংক মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ করছে, ফলে কোন দুর্নীতি এখানে হয় নাই। অথচ আমরা পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি, গওহর রিজভির ওয়াশিংটন সফর সত্ত্বেও - বিশ্বব্যাংকের অবস্থান আর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে এক বিশাল ফারাক থেকেই গিয়েছে। এপর্যন্ত আমরা কেবল এতটুকুই দেখছি যে, আবুল হোসেনের পদত্যাগ, মশিউর রহমানে ছুটি ইত্যাদিতে অর্থাৎ প্রথম শর্তের ক্ষেত্রে তারা উভয়ে একমত। কিন্তু অন্যান্য শর্ত সম্পর্কে আমরা বেখবর থেকেছি।

কি হতে পারে?
এই পরিস্থিতিতে একটা তদন্ত টিম যদিও বা হয় সেটা কি প্রসিকিউশন পর্যন্ত যেতে পারবে? প্রসিকিউশন মানে আইনের আওতায় আনা, প্রক্রিয়া শুরু করা। শুধু কোন তদন্ত রিপোর্ট শুনে চুপ থাকা নয়; এরপরের আইনী একশন। কারণ তদন্তে যদি কার না কার নাম বের হয়ে আসে তখন কি হবে? তদন্ত ও প্রসিকিউশন টিম গঠন হয়ে গেলে সে তদন্ত শেষে প্রসিকিউশন একশনে যেতে বাধ্য। এসব পার হয়ে তাদের নামে মামলা দায়ের, বিচার শাস্তি – সত্যিই এখনও অকল্পনীয় সন্দেহ নাই।
আর এসব কিছু যদি ভালয় ভালয় পার হওয়া যায় তারপরেই আসতে পারে বিশ্বব্যাংকের পদ্মা সেতুতে নতুন করে বিনিয়োগে এগিয়ে আসা। দিল্লী আসলেই অনেক দুর!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৪২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×