somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Never Underestimate Anybody: জীবন থেকে নেয়া একগুচ্ছ প্রেরণার গল্প (আত্মবিশ্বাসের গল্প - গল্প ০৪)

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সিরিজের সব লেখা: Never Underestimate Anybody: জীবন থেকে নেয়া একগুচ্ছ প্রেরণার গল্প

বিকেল চারটার দিকে শিবলি ফোন করে বলল অফিস শেষে সরাসরি তার বাসায় চলে আসতে। শিবলি আমার কলেজ ফ্রেন্ড, এখনও যে কয়েকজন স্কুল-কলেজের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ আছে, শিবলি তার মধ্যে অন্যতম। ওর বাসার ছাদে পাটি বিছিয়ে গল্প করতে আমার দারুন লাগে। শিবলি’র বাসা পুরাতন ঢাকার একটু ভেতরের দিকে, পুরাতন আমলের একটি বাড়ী। ছাদের চারিদিকে পাঁচ ফিট উচু দেয়াল দেয়া আছে, পাটি পেতে সন্ধ্যার পর ছাদে শুয়ে শুয়ে আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে থাকলে ভীষণ ভালো লাগে। অফিস থেকে বেড়িয়ে তাই বাসায় না যেয়ে পুরাতন ঢাকার দিকে রওনা হলাম।

শিবলি বাসাতেই ছিল, আমি যেতেই আমাকে নিয়ে ছাদে চলে গেল। ও জানে ওদের ছাদটা আমার খুব পছন্দের। ছাদে যেতে এই অবেলায় ও বিরিয়ানি নিয়ে এলো। ওদের বাসায় এলে প্রায়ই এই সুখাদ্যটি ভাগ্যে জোটে, শিবলি’র আম্মা, আণ্টি বিরিয়ানি খুব ভালো রাঁধেন। বিরিয়ানি মাত্র মুখে দিয়েছি, শিবলি বলল, “দোস্ত কাল জাপান চলে যাচ্ছি...”

আমার মুখের খাবার গিলতে গিয়ে গলায় আটকে রেখে কোনমতে বললাম, ‘মানে... শেষ পর্যন্ত হল?...’

‘হ্যা রে দোস্ত...’।

শিবলি পুরাতন ঢাকার স্থানীয় পরিবারের ছেলে, যে পরিবারের আদি পেশা ব্যাবসা। কিন্তু শিবলি ছোটবেলা থেকে পড়ালেখায় খুব আগ্রহী ছিল। কিন্তু কষ্টের ব্যাপার ছিল সে তেমন মেধাবী ছিল না, টেনেটুনে গনিতে পাশ করতো। কিন্তু কথায় বলে না, ঘষতে থাকলে মরচে পরা লোহায় ধারালো ছুরী হয়। তেমনি নিরলস চেষ্টা করে করে শিবলি ছুঁয়েছে তার স্বপ্নকে।
‘শেষ পর্যন্ত তোর স্বপ্ন ধরা দিল?’

‘হ্যাঁ...’ বলে জড়িয়ে ধরলো আমাকে। সন্ধ্যার শেষ আলোয় তার চোখের কোনায় ভেজা ভেজা প্রতিফলন দেখলাম মনে হল।

শিবলি মেট্রিক পরীক্ষায় নর্মাল ফার্স্ট ডিভিশন পায়, কোন ভালো কলেজে চান্স পায় নাই। তারপরও সে দমে নাই। লেগে ছিলো বইয়ের সাথে আঠার মত। বয়সের সাথে সাথে ম্যাচুরিটি আসতে থাকার সময়টায় তার মেধা খুলতে থাকে বোধহয়। ইন্টারমিডিয়েটে আশাতীত রেজাল্ট করে। কিন্তু ঝামেলা শুরু করে তার পরিবার। পড়ালেখা করে কি হবে? সেই ছাপোষা কেরানী আর নয়তো মাস্টার! বাসার সবাই চাপ দেয়া শুরু করে ব্যাবসায় জড়াতে, বাবার সাথে পারিবারিক ব্যাবসার হাল ধরতে। এই নিয়ে শুরু হয় বাক-বিতণ্ডতা। পরিবারের শত বাঁধা ডিঙ্গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় বসে শিবলি। কিন্তু বিধিবাম, কোথাও চান্স পায় না।

‘নে চা নে ...’ শিবলি নিচে গিয়ে চা নিয়ে এলো এক ফাঁকে।

‘বাসার সবাই কি বলে?’

‘কি আর বলবে, সবাই মহা খুশী’

‘তোদের ব্যাবসার কি খবর?’

‘ব্যাবসা বন্ধ, দোকান বোধহয় বেঁচে দিবে।’

প্রথমবার কোথাও চান্স না পেয়ে যেন আরও রোখ চেপে গেল শিবলির। সারাদিন ছাদের উপরের ছোট্টো চিলেকোঠায় পড়ায় মত্ত। কি খারাপ সময় পার করেছে ছেলেটা! বাসার সবার টিপ্পনী, বন্ধুদের বাঁকা হাসি, বাসা থেকে সব ধরণের হাত খরচ বন্ধ। দুইটা টিউশনি সাথে কোচিং সেন্টারে টিচিং। এই করে করে ২য় বার চেষ্টায় ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া থেকে আজ এতদূর। আজ তার আয়ে সেই সংসার চলছে, আর দেবে গেছে সেই ব্যাবসা।

‘তোর মনে আছে মিতু নামের একটা মেয়ে পড়তো আমাদের সাথে...” শিবলি কথা বলার সময় তার মুখ কেমন ঝলমল করে উঠলো।

‘কোন মিতু? যার প্রেমে তুই হাবুডুবু খেয়েছিলি?’

‘আমি কারো প্রেমে হাবুডুবু খাই নাই। ফাও কথা বলবি না...’ কপট রাগ দেখিয়ে মুখ গম্ভীর করে ফেলল শিবলি।

‘আরে বাবু দেখি মাইন্ড খাইছে..., আচ্ছা সরি, তুই হাবুডুবু খাস নাই, গড়াগড়ি করেছিস...’ বলতেই শিবলি আমার দিকে তেড়ে আসলো।

কিছুটা আত্মরক্ষা করে শিবলিকে ঠাণ্ডা করে জানতে পারলাম, তার সহপাঠীণী মিতুও ওর সাথে বাংলাদেশ থেকে মনোবুশূ বৃত্তি পেয়ে পিএইচডি করতে জাপান যাচ্ছে। এই সেই মেয়ে যার জন্য ব্যাকুল ছিল শিবলির তরুণ মন, কিন্তু কখনো প্রকাশতো দূরের কথা, নিজের হৃদস্পন্দন থেকেও যেন লুকিয়ে রাখতে চাইতো। স্বপ্ন পূরণের অদম্য নেশায় মত্ত ছিল বইয়ের পাতায়। সহপাঠীরা তাকে দেখলে সমস্বরে বলে উঠতো, ‘আসলাম আর গেলাম, কিছুই দেখলাম না, কিছুই বুঝলাম না’। যেই দলে শিবলির প্রিয়মুখ মিতুও থাকতো।

এরপর সবকিছু ঘটেছে ছককাটা পথে। অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে একটি আন্তর্জাতিক রিসার্চ অর্গানাইজেশনে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে জয়েন করে। এমফিল করতে যায় ডেনমার্ক উইথ ফুল স্কলারশিপ। এমফিল শেষে দেশে ফিরে আগের প্রতিষ্ঠানেই জয়েন করে গত তিন বছর চেষ্টা করে গেছে ভালো একটি স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচডি করতে। আজ শেষে এসে মনোবুশু বৃত্তি পেয়ে পিএইচডি করতে যাচ্ছে জাপান। শিবলির দিকে তাকিয়ে মনে মনে একটি কথাই বললাম, ‘নিজের ভেতর আত্মবিশ্বাস থাকলে আর পরিশ্রমের সাথে লেগে থাকলে মানুষ স্বপ্ন ছোবেই’।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:১২
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×