somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাবড়া জমিদার বাড়ী - (বাংলার জমিদার বাড়ী - পর্ব ১৯)

১৫ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মাস তিনেক আগে দিনাজপুর ভ্রমণের আগে একটু খোঁজাখুঁজি করে প্রথম এই জমিদার বাড়ীটির নাম জানতে পারি, হাবড়া জমিদার বাড়ী। ‘হাবড়া’ নামটি শুনলেই মনে পরে বেনাপোল পেড়িয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় ত্রিশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই এসে যায় যে লোকালয় তার নাম ‘হাবড়া’। অনেকে আবার ‘হাওড়া’ ভেবে ভূল করেন না যেন। যাই হোক, দিনাজপুরে ‘হাবড়া জমিদার বাড়ী’ শুনে একটু খটকা ছিল মনে, অবাকও হলাম। যাই হোক, দিনাজপুর পৌঁছে পার্বতীপুর-ফুলবাড়ী রোড ধরে গিয়ে অনেক কষ্টে খুঁজে পেলাম কাঙ্ক্ষিত সেই জমিদার বাড়ী। কিন্তু পেয়ে আনন্দিত হলাম না, হতে হল বেজায়।







মূলত এটা রাণী রাশমনি’র কাচারি বাড়ী নামেই পরিচিত। কলকাতার সেই হাবড়ার সাথে এই হাবড়ার কোন মিল আছে কি না, জানি না। তবে দিনাজপুরের হাবড়া কিন্তু প্রাচীনতম জনপদ। মন্টোগোমারি মার্টিনের ইস্টার্ন ইন্ডিয়া (প্রকাশকাল, লন্ডন ১৮৩৬) গ্রন্থের বিবরণ, কবি জামাল উদ্দিনের প্রেমরত্ন কাব্য (১২৩০ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত) সর্বোপরি পুরনো দলিল দস্তাবেজে হাবড়া থানার পরিচয় মেলে। আছে তার মানে আজ থেকে দুইশত বছরের বেশী সময় আগেও হাবড়া ছিল উন্নত জনপদের একটি। দিনাজপুরের সমৃদ্ধ ইতিহাসের মত হাবড়ার ইতিহাসও সমৃদ্ধ ছিল নিঃসন্দেহে। ধারনা করা হয়, ১২২১ বঙ্গাব্দের দিকে অর্ধ বঙ্গেশ্বরী নামে খ্যাত রাণী রাশমনি এখানে বিশাল জমিদারী’র পত্তন করেন। রাণী রাশমনি এবং তার জমিদারী নিয়ে আরও বেশ কিছু তথ্য হাতে পাব আগামীতে, সময়ের অভাবে সেগুলো যোগাড় করতে পারছি না। ইচ্ছে আছে, ভবিষ্যতে যদি কখনো এই জমিদার বাড়ী সিরিজটি বই আকারে প্রকাশিত হয়, তবে সেগুলো সংযুক্ত করার। তবে, আমার ধারণা, রাণী রাশমনি’র পূর্বপুরুষ কোন না কোন ভাবে পশ্চিমবঙ্গের হাবড়ার সাথে সম্পর্কিত ছিলেন। হয়ত সেখান থেকে এসে এখানে ব্যবসা করে জাঁকিয়ে বসেন, এবং অন্যান্য জমিদারদের মত দিনাজপুরের এই অঞ্চলে জমিদারী প্রতিষ্ঠিত করেন।









এই জমিদার বাড়ী কাচারি বাড়ী নামে পরিচিত বিধায়, আরেকটি সম্ভাবনা থেকে যায় যে, হয়ত জমিদারী এখানে পত্তন হয় নাই, পাশের কোন এলাকায় ছিল মূল জমিদার বংশ, তাদের কোন একজন রাণী রাশমনি এখানে এসে কাচারি স্থাপন করেন। দিনাজপুরের রাজবাড়ী’র কল্যাণে অনেকেরই সেই সময় ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়েছিল, আর সেখান থেকে তারা চারিদিকে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে জমিদারী স্থাপন করেছিলেন। এই রাণী রাশমনি হয়ত তাদেরই একজন।







যাই হোক এখন আর মূল কাচারী ঘরটি নেই। কিছুদিন আগেও প্রাচীর সিমানা ছিল, বছর কয়েক হল সব ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে সেখানে টিনের ছাউনি আর ইটের দেয়াল দিয়ে টানা গুদামঘর তৈরি হয়েছে। বাইরের দিকে থাকা ফটক ভেঙ্গে ফেলে সেখানে নতুন ফটক উঠেছে একটি, তার ভেতরের সীমানায় একটি স্কুল আছে। রাস্তার পাশে পুকুর, অপর পারে ঘাট। ঘাটের পেছনে রয়েছে একটি মন্দির, স্থানীয়দের কাছে তা রাঁধা-গোবিন্দ মন্দির নামে পরিচিত। আর তার সম্মুকে ঘাট এর সামনে রয়েছে একটি রাশবেদী এবং ছোট্ট একটি শিব মন্দির। মূল মন্দিরেরও পেছনে রয়েছে জমিদারদের শশ্মান, সেখানে দেখলাম দুটি স্মৃতি ফলক। নানান ধ্বংসস্তুপ আর জঞ্জালের আড়ালে ঢেকে গেছে। ঘাটের ডানদিকে অদূরেই রয়েছে আরেকটি মন্দির, দুর্গা মন্দির। পুকুরের অপর পাশে রাস্তার ওপারে মূল কাচারি বাড়ির লাগোয়া ছিল বাগান, কর্মচারীদের আবাস, কবরেজ খানা সহ আরও নানান কুঠি। আজ সেগুলোর প্রায় কোনটাই নেই। এখানে জমিদার বাড়ী ছিল কি না, সেটা গবেষণা সাপেক্ষ হলেও রাণী রাশমনি’র কাচারী বাড়ি নিয়ে অকাট্য প্রামাণ্য বহু দলিল রয়েছে।









জমিদার বাড়ি নিয়ে ধারাবাহিক লেখা শুরু করার পর এই বিষয় নিয়ে অল্পবিস্তর ঘাঁটাঘাঁটি করে দুঃখ হয়, কিভাবে অবহেলায় এসব নিদর্শন হারিয়ে যাচ্ছে। উন্নতবিশ্বে যে সকল স্থাপনা হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষিত হয়, আমাদের দেশে সেইসকল স্থাপনা পড়ে থাকে অবহেলায়, ক্ষয়ে যায় অস্থি-মজ্জা সকল, ঘুণে ধরে বিচূর্ণ হয় ইতিহাসের পাতা। অপূর্ব সকল স্থাপনা আর নির্মাণশৈলী নিয়ে আমাদের বাংলাদেশের আনাচে কানাচেতে পড়ে আছে অসংখ্য জমিদার বাড়ি, রাজবাড়ীসহ আরও কত স্থাপনা। আর এই সব স্থাপনার কিছু কথা এই বোকা মানুষটার ছেঁড়া খাতায় লিখে রাখার প্রয়াস হল এই “বাংলার জমিদার বাড়ী” সিরিজ।






ছবির এই দুজন ভদ্রলোকের কল্যানে এত তথ্য আর ছবিগুলো নিতে পেরেছি। তাদের প্রতি রইবে কৃতজ্ঞতা।



===========================================================

"বাংলার জমিদার বাড়ী" সিরিজের আগের পোস্টগুলোঃ

"বাংলার জমিদার বাড়ী" - পর্ব ১ (বালিয়াটি জমিদার বাড়ি)
"বাংলার জমিদার বাড়ী" - পর্ব ২ (পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি)
"বাংলার জমিদার বাড়ী" - পর্ব ৩ (মহেড়া জমিদার বাড়ি)
"বাংলার জমিদার বাড়ী" - পর্ব ৪ (লাখুটিয়া জমিদার বাড়ি)
"বাংলার জমিদার বাড়ী" - পর্ব ৫ (দুবলহাটি জমিদার বাড়ি)
"বাংলার জমিদার বাড়ী" - পর্ব৬ (ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর রাজবাড়ি)
"বাংলার জমিদার বাড়ী" - পর্ব ৭ (তেওতা জমিদার বাড়ী)
দালাল বাজার জমিদার বাড়ী - ("বাংলার জমিদার বাড়ী" - পর্ব ৮ )
দত্তপাড়া জমিদার বাড়ীর খোঁজে - ("বাংলার জমিদার বাড়ী" - পর্ব ৯ )
ভৌতিক সন্ধ্যায় কামানখোলা জমিদার বাড়ী প্রাঙ্গনে - ("বাংলার জমিদার বাড়ী" - পর্ব ১০ )
কালের সাক্ষী - শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ী (বাংলার জমিদার বাড়ী - পর্ব ১১)
খুঁজে পেলাম 'ইসহাক জমিদার বাড়ী' - ('বাংলার জমিদার বাড়ী' - পর্ব ১২)
বলিয়াদি জমিদার বাড়ী - চারশত বছরের ইতিহাস ("বাংলার জমিদার বাড়ী" - পর্ব ১৩)
ভুলে যাওয়ার পথে কাশিমপুর জমিদার বাড়ী - ("বাংলার জমিদার বাড়ী" - পর্ব ১৪)
করটিয়া জমিদার বাড়ী (টাঙ্গাইল) ("বাংলার জমিদার বাড়ী" - পর্ব ১৫)
কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ির খোঁজে (বাংলার জমিদার বাড়ি - পর্ব ১৬)
মুরাপাড়া জমিদার বাড়ীর আঙ্গিনায় (বাংলার জমিদার বাড়ি - পর্ব ১৭)
"ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ী" যেখানে যেতে যেতে রাত হয়ে যায় ;) (বাংলার জমিদার বাড়ী - পর্ব ১৮)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৯
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×