somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবা ছেলের এক রা…

৩১ শে অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রত্নার বিয়ে হয়েছে আজ চার দিন। নতুন বাড়ি, নতুন ঘর, নতুন শ্বশুরবাড়ি, নতুন বর। ৭ই নভেম্বর ১৯৯৫। দিনটি ঝকঝকে সুন্দর। হালকা শরতের ছোঁয়া। সবকিছু ঝলমলে। নতুন জায়গায় এসে রত্না বেশ খুশি। আবার কেন জানি একটু হাঁপিয়ে উঠছে মাঝে মাঝে। কারণ সে জানে না। তবে কেমন জানি তার নতুন বরটিকে বেশি শান্ত আর বেশি চুপচাপ মনে হচ্ছে। নতুন নতুন শাড়ি পরে, গয়না পরে, হাত ভর্তি সোনার চুরি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে সারা বাড়িময়। নতুন বউ পেয়ে সবাই খুশি। বড্ড খুশি। রত্নারও ভালো লাগছে সবকিছু । শুধু খটকা একটা জায়গায়, বরটি যেন কেমন! খুব বেশি শান্ত। সুশ্রী চেহারার মাঝারি ধরণের তিরিশ ঊর্ধ হয়নি এখনো। মায়া ভরা মুখশ্রী। ভীষণ ভীষণ শান্ত এবং চুপচাপ। মাঝে মধ্যে দুই একটা কথা হয়তোবা বলে।
আজ সন্ধ্যায় বরের কলিগরা এসেছেন বাসায় নতুন বউ দেখবে বলে। আদিব ছুটি নিয়েছে সাত দিনের। নতুন বিয়ে তো! তবে হানিমুনে যাবার কোন প্ল্যান সে করেনি এখনো। হয়তোবা করবে। তখন হয়তোবা আবারো ছুটির দরখাস্ত করবে তার বসের কাছে। তার বস মহাশয় খুবই আন্তরিক। তার খুব খেয়াল রাখে। আদিবের বাবা কোনো না কোনো ভাবে তার বসকে খুব খুশি করে দিয়েছে। আর সেজন্যই বোধহয় সেই বসও আদিবের উপর খুব খুশি। উনিও আসতে চেয়েছিলেন আজ সন্ধ্যায়। কিন্তু আদিবের সমবয়সী তিন কলিগ এসে হাজির। কিন্তু তিন বন্ধু আসছে বলে রত্না খেয়াল করে দেখলো আবিদুর ও তার বাবা খুবই বিরক্ত। মোটেই খুশী না।
রত্না তাদের সাথে দেখা করল। কথা হলো, গল্প হলো। অনেক অনেক দিন পর রত্নার যেন মনে হলো সে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। এই চারদিন কি তাহলে চুপ থাকতে থাকতে এক বন্দি দশায় পড়েছিল রত্না?
আজ অতিথিদের সাথে গল্প শেষে ওর মনে হচ্ছে যেন কত কতদিন সে কথা বলে না। ও যেন এক বন্দিশালায় বন্দি। কিন্তু বাড়িতে তো সকলেই আছেন। সকলেই মিশুক। মিশছে কথা বলছে। উপরের তলায় থাকেন শ্বশুর শাশুড়ি। তার উপরতলায় থাকে তার ননাস। স্বামীসহ সাত বছরের একটি কন্যা সন্তান নিয়ে। সবাই খুবই মিশুক। কিন্তু রত্নার কিসের এত নিঃসঙ্গতা? ছেলেটি কথা বলে না তাই। কিন্তু কেন কথা বলে না? কেন ছেলেটি এত চুপচাপ? যদিও বা ছেলেটি দু’ একটা শব্দ উচ্চারণ করে, কিন্তু খুব নিচু স্বরে। অস্বাভাবিক রকমের শান্ত, নম্র এবং অসম্ভব রকমের ভালো। একটু ভাবুক ভাবুক ভাবও আছে। নিজে নিজে কি যেন ভাবে সারাক্ষণ সিলিং এর দিকে তাকিয়ে। দু হাতের আঙ্গুল ধ্যানের ভঙ্গিতে উপরের দিকে রেখে সে তাকিয়ে থাকে সিলিং এর দিকে মাথাটা বালিশে রেখে । সারাক্ষণ। রত্নাকে কেউ যেন মনে করিয়ে দেয় এক ধ্যান মগ্ন ঋষি বা একজন অত্যন্ত ভাবুক সাইন্টিস্ট। হতে পারে সাক্ষাৎ আইনস্টাইন। বর যদি আইনস্টাইন হয়েই থাকে তাহলে তো তার থেকে গর্বের আর কিছুই হতে পারে না। স্বামী যেন এইমাত্র একটা সূত্র আবিষ্কার করে ফেলবে।
আজ খেয়াল করে দেখল রত্না তাদের দ্বিতীয় তলায় থাকার আয়োজন করা হলেও এই চারদিন আগেও ছেলেটির থাকার আস্তানা ছিল তার বাবা-মায়ের সাথে অপরতলায়। তার কাপড়-চোপড় সব ওখানেই রয়ে গেছে ওয়ারড্রোবে। রত্না কাপড় চোপড়গুলো আনতে গেলে বরকে সাথে নিয়েই গেল। কারণ বাড়ির সবকিছু তো এখনো চেনা হয়ে ওঠেনি। খুব নরম কন্ঠে আবিদ দেখিয়ে দিল ওয়ারড্রোবটা কোথায়? রত্না খুলে দেখে জিজ্ঞেস করে বলল, কোনগুলো তোমার কাপড়। আবিদুর বলল, সে জানে না। সে বলল, এখানে যত কাপড় আছে সবই তার এবং তার বাবার। অর্থাৎ তার বাবার এবং তার কাপড় জামা অধোবাস মানে আন্ডারওয়ার সবকিছু এক জায়গাতেই থাকে। তখন রত্না বেশ একটু অবাক হয়েই বললো,’তুমি চেনো না কোনগুলো তোমার কাপড়? আমি কোনগুলো নিব তাহলে?’
আমতা আমতা করে খুব মাথা নিচু করে নিচু স্বরে আবিদুর বলল, না সে চিনে না। তাহলে এখানকার কাপড় চোপড় অধোবাসগুলো যা সে ব্যবহার করে সেগুলো তারও আবার তার বাবারও। মানে আবিদুর তাহলে জানে না তার বাবার টা কোনটা আর সে কোনটা ব্যবহার করছে এবং সেটা আদৌ তার বাবার কি না।
রত্নার বেশ খটকা লাগে। শুধু একটা কথাই মনে হয়, অধোবাস যদি তার বাবার আর তার একই হয়, তাহলে কয়েকদিন পর তো তার বাবা বলবে যে বউও তাদের দুজনের। ছেলের বউকেও নিজের বউ মনে করতে কোন অসুবিধা হবে না। রত্না ভেবে দেখলো চারদিন আগে সেই বাসর রাতের দরজার ওপাশে আবিদুরের বাবা মানে তার শ্বশুরমশাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার পুত্রবধুকে এক দৃষ্টিতে একভাবে দেখছিল। অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল বলে ব্যাপারটা রত্নার চোখে পড়েছিল। রত্না ভাবছিল তার শ্বশুর ওভাবে দরজার কোনা বরাবর পাশের ঘরটিতে দাঁড়িয়েই বা আছেন কেন আর তার দিকে এভাবে তাকিয়েই বা আছেন কেন! কি দেখছেন তিনি? রত্নাকে দেখছেন? আর কেন এই সময় তার ছেলের কোন পাত্তা নাই? ছেলের তো আগমনের কোন নমুনাই দেখা যাচ্ছে না। বাড়িতে মহিলা আছে তিজন। আবিদুরের মা, বোন আর একটু খলবলে টাইপের চঞ্চলা প্রকৃতির, স্বামী পরিত্যক্তা খালাতো বোন। মেয়েটি আবিদুরের সমবয়সীই হবে। রত্না ভাবলো এই তিনজন মিলে আবিদুরকে শল্যা দিচ্ছে কিনা যে, কিভাবে আজ বাসর করতে হবে। তাই আসতে তার এতো দেরী হচ্ছে।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর আবিদুরের ঘরে প্রবেশের পথের দিকে তাকাতেই রত্না দেখল আবিদুরের পরনের চুরিদারের কারণেই দেখা যাচ্ছে তার ধণুকের মতো বাঁকা আকৃতির পা। অনেকটা রিকেটস্ রোগীদের যেমন হয়। সেই পা ফেলে ফেলে আবিদ ঘরে প্রবেশ করছে। আবিদুর আসার পর পরই শ্বশুর প্রস্থান গ্রহণ করলেন।
লাজুক আবিদ তারও অনেকদিন পর রত্নাকে বলেছিল যে, জন্মের সময় তার পা দুটো উল্টো ছিল।
জ্বীনদের পা উল্টো থাকে – শুনেছিল রত্না।
এ ছেলে জ্বীনে ধরা না তো? নাকি স্বয়ং জ্বীন?
ফেরেশতাও হতে পারে, কে জানে ! এমন অমায়িক, নির্মল চিত্তের অধিকারী, বোকার মত সরল যে, কে জানে ফেরেশতা কিনা ।

বিয়ে বাড়ির তত্ত্ব

শ্বশুর যার খালু

লিজার্ড প্রফেসর ২of২
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:২৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×