somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাওলো কোয়েলহো এর এলেভেন মিনিটস. (ধারাবাহিক)

৩০ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৮

মারিয়া পরের দিন ট্রাভেল এজেন্সীতে গিয়ে যাওয়ার টিকিটটা বদলে নিল-বদলানোর কারণে যদিও প্যারিসে প্লেন বদলাতে হবে,কিন্ত আপত্তি ছিল না তার।একটা ব্রিজের কাছ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে আইসক্রিম কিনলো-বেশ শীতের আভাসটা ছিল যদিও,তবে ওটা তার শেষ বারের মত জেনেভা দেখে নেয়ার আনন্দ।সব কিছুই নতুন যেন আবার তার চোখে-বার,রেস্তোরা,মিউজিয়ামটা দেখতে যাওয়া হয়নি তার,চেনার চারপাশটাই থেকে যায়,অচেনা।
ভেবেছিল ভেসে যাবে ব্রাজিলে ফিরে যাওয়ার আনন্দে,খুঁজে পায়নি আনন্দটা কোথাও।ভেবেছিল হয়তো কষ্ট হবে ছেড়ে যেতে তার কদিনের সংসারের শহরটা,হাত বাড়িয়ে যে তাকে আপন করেছে,কিন্ত ছিল না সে অনুভুতিটাও।শুধু ক ফোটা চোখের জলে এগিয়ে যাওয়া আর কিছু নেই-কিছুটা সহানুভুতি নিজের জন্যে,যখন সবকিছু ভেসে আসছিল তার দিকে,বদলে দেওয়া স্রোতের গতি,হয়তো বা ভুল একটা সিদ্ধান্ত।

অবশ্য এটুকু বিশ্বাস তার,ভুল করেনি সে।রালফের বলা গীর্জাটাতে পৌছালো যখন,চারপাশটা বেশ নির্জন,লোকজন নেই,প্রায় চলে গেছে সবাই।নিস্তব্ধতায় ঘুরে ঘুরে দেখছিল,কারুকাজ করা জানালাটা,ক্রসের উপরে ছিটকে পড়া আলোর চমক।থমকে দাঁড়িয়ে ভাবছিল মারিয়া,ক্রসটা তো অত্যাচারের প্রতীক নয়,যেখানে আটকে আছে একটা রক্তাক্ত শরীর-সেটা পূর্নজন্মের এক ইতিহাস,যন্ত্রনা,অত্যাচারের ইতিহাসটা কবে যেন হারিয়ে গেছে সেখানে।বৃষ্টি আর বজ্রপাতের ফাঁকে চাবুকের আঘাতটা মনে পড়লো মারিয়ার,ওটাও তো ছিল একই সুরে।আবার অবাক হলো নিজের চিন্তাধারায়, “এ কি বলছি আমি”?

খুশী হলো যে অন্য কোন অত্যাচারিত সাধু সন্নাসীদের চেহারা সাজানো নেই দেখে-এখানে তো মানুষ আসে খুঁজে নিতে তাদের অজানা শান্তনা,এত কান্না বাড়িয়ে লাভ কি?যীশুর প্রতিকৃতির সামনে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করলো,প্রার্থনা করলো মারিয়া আবার কুমারী মেরীর প্রতিকৃতির সামনেও,বদলাবে না মন,চলে যাচ্ছে সে।ভালবাসার ফাঁদে পড়তে চায় না আর,যা খুব সহজেই বদলে দিতে পারে মেয়েদের মন।আলতো একটা ছোঁয়ার হাত তার কাঁধে জিজ্ঞেস করলো, “কেমন আছ,তুমি”?
“মন্দ না,”আবেগের কোন জোয়ার ছিল না তার কথায়।
“আমিও ভালই আছি,চল কফি খাব একসাথে”।
গীর্জা ছাড়িয়ে হাতে হাতে দুজন প্রেমিক হেঁটে গেল,গীর্জার লোকজনের মাঝেই চুমু খেল,
হয়তো ঐ লোকজনের কাছে সেটা একটা নোংরামি,একটা কলঙ্কের ছবি।অবজ্ঞার হাসি তাদের চোখেমুখে,তবে ঐ মানুষদের মনটা ভরা ঈর্ষায়-ঘৃনায় না।
একটা কফির দোকানে দুজনে বসলো,কিন্ত সেটা তো আর যে কোন একটা দিন না বিশেষ একটা সময়,ভালবাসার দুটো মন আজ একসাথে।দুজনার অযথার গল্প-ফরাসী ভাষা,গীর্জার জানালার সৌন্দর্য,সিগারেট খাওয়ার শারীরিক ক্ষতি-যদিও দুজনেই সিগারেট খেত,ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছেও ছিল না তাদের,শুধু কথায় কঠায় কথা সাজানো কথা।

মারিয়া কফির দামটা দিল,কোন আপত্তি করলো না রালফ।দুজনে হেঁটে গেল প্রদর্শনীতে, নতুন আলোয় পৃথিবীটা দেখা তার।ধনীদের মনে হচ্ছিল আরও ধনী,কোটিপতির মনে হচ্ছিল গরীব,আলোচনার বিষয়বস্তগুলো ছিল তার চিন্তাধারার বাইরে।ভাবে ভঙ্গীতে মনে হলো মারিয়ার সবাই বেশ পচ্ছন্দ করেছে তাকে,একগাদা প্রশ্ন সবার,ফুটবল,কার্নিভাল,ব্রাজিলের গানবাজনা।কথাবার্তায় সবাই চরম ভদ্র,নম্র।
লোকজন চলে যাওয়ার পর রালফ বললো রাতে ক্লাবে যাবে,তার সাথে দেখা করতে।মারিয়া জানালো,কাজ করছে না ছূটি তার,আমন্ত্রন জানালো,সময় থাকলে তারা একসাথে রাতের খাবারে যেতে পারে।
রালফ বললো,বাড়ি গিয়ে যাবে ফ্রেঞ্চ রেস্তোরায়,যেটা মারিয়া দেখেছে ট্যাক্সি থেকে বেশ কবার।

মারিয়ার মনে হলো লাইব্রেরীয়ান বন্ধুর কাছ থেকে একটা বিদায় নেয়া দরকার।যাওয়ার
সময় বেশ কিছুটা সময় আটকে গেল কুর্দ জাতির বিক্ষোভ যাত্রায়-কিছু হৈ চৈ এর পর গাড়ী ঘোড়া যাতায়াত শুরু হলো সহজ ভাবে।অবশ্য খুব একটা যায় আসে না,সে তো নিজেই নিজের মনিব,তাড়াহুড়া করার তেমন দরকারও নেই।লাইব্রেরীতে পৌঁছে দেখে প্রায় বন্ধ হওয়ার সময়।

“দেখ আমার তেমন কোন মেয়ে বন্ধু নেই,যাদের সাথে এই ব্যাক্তিগত কথাগুলো বলা যায়”,
লাইব্রেরীয়ান বললো,মারিয়াকে।
কোন মেয়ে বন্ধু নেই?একই শহরে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিল যে মানুষটা,নানান ধরণের মানুষের সাথে দেখা আলাপ যার,তবুও কোন কথা বলার বন্ধু নেই?মনে হলো মারিয়ার খুঁজে পেয়েছে তারই মত একজন,হয়তো বা সবার জীবনটাই ঐ রকম,সবাই হ্য়তো লুকিয়ে রাখে অনুভুতিটা।
“ভাবছিলাম,ভগাঙ্কুর নিয়ে আমার পড়াশোনা...”।
আর কোন কিছু ভাবার বিষয় পায়নি,তার লাইব্রীয়ান বন্ধু!
“যদিও আমার স্বামীর সাথে যৌনসঙ্গমের সময়গুলো ছিল আনন্দের,তবু খুঁজে পাইনি,কোনদিন সেই চরম রমণসুখ।জানিনা,ওটাই কি স্বাভাবিক”?
“তুমি কি মনে কর কুর্দদের বিক্ষোভটা কি স্বাভাবিক?মেয়েরা যখন পালায় তাদের প্রেমের রাজকুমারের কাছ থেকে,ওটা কি স্বাভাবিক?খামার কেনার স্বপ্ন দেখে ভালবাসা একপাশে সরিয়ে,ওটা কি স্বাভাবিক?নারী-পুরুষ কেন বিক্রি করে তাদের সময় যা ফিরে পাবে না আর?তবুও সবকিছুই ঘটে-আমরা কি বিশ্বাস করি না করি,তাতে কিছুই যায় আসে না জীবন চলে নিজের সুরে।আমাদের চারপাশে যা ঘটে আমরা ভাবি সেটাই স্বাভাবিক,কিন্ত প্রকৃতির চোখে,বিধাতার ভাষায় সেটা মানসিক বিকার।আমরা সাজিয়ে নেই নিজের নরক-যেখানে ঘর সাজিয়ে বাস করি চরম যন্ত্রনায়”।

মারিয়া নামটা জানতে চাইলো,সামনে দাঁড়ানো বন্ধুর,এতদিন নামটাও জানা হয়নি।
লাইব্রেরীয়ান বললো,তার নাম ‘হাইডি’।হাইডির তিরিশ বছরের বিবাহিত জীবন-না,কখনও পায়নি এর মাঝে রমণের চরমসুখ,কোনদিন প্রশ্নটাও জাগেনি,তার মনে?
“আমি জানি না,ঐ বইগুলো পড়া আমার ঠিক হয়েছে,কি না!হয়তো না জানাটাই ছিল ভাল,অন্ধতাটাই ছিল ভাল।কাটিয়ে দিলাম বিশ্বাসের সুখে সংসার,স্বামী,তিন সন্তান,
লেকের ধারের বাড়ী,সরকারী চাকরী,এটাতো যে কোন মেয়ের স্বপ্ন।তুমি,আর এই বইগুলো বদলে দিল আমার চিন্তাধারা।জানিনা হয়তো সবাই বদলে যায়,এ ভাবে”?
“আমি নিশ্চিত ভাবে বদলে পারি,ওটাই ঘটে”।মহিলার সামনে দাঁড়িয়ে মারিয়ার মনে হলো
উত্তরটা ছিল যথাযথ।
“তুমি কি আমাকে বিস্তারিত সবকিছু বলতে বলছ”?
মাথা নাড়লো মারিয়া।
“হয়তো এত কিছু বোঝার বয়স হয়নি তোমার,তবুও আমার জীবনের কিছু গল্প শোন।এ জন্যেই ভুলগুলো যেন তুমি না কর,নিজের জীবনে।
সারা জীবনে আমার স্বামীর জানা ছিল না,ভগাঙ্কুরের অস্তিত্ব?হয়তো,সে ধরে নিয়েছিল মেয়েদের রমণসুখ যোনীদ্বারে।আমি তার সন্তষ্টির জন্যে,যৌনসুখের ভান করেছি কতবার।
হ্যা,সুখ যে একেবারেই পাইনি,তা নয়,তবে সেটা অন্য ধরনের সুখ।ঘর্ষন,যোনীদ্বারে ঘর্ষনের সুখ,আর কিছু না।বুঝতে পারছ,আমি কি বলছি”।
“জানি,তুমি কি বলতে চাচ্ছ”?
“এখন কারণগুলো আমার জানা,টেবিলের বইটার সুবাদে”।
“শুধু তাই না,ভগাঙ্কুর আর জি স্পট জড়ানো কতগুলো স্নায়ু দিয়ে,যা মেয়েদের রমণ সুখের
জন্যে খুবই প্রয়োজনীয়।কিন্ত পুরুষদের ধারণা,যোনীভেদ তাদের বীরত্বটাই মেয়েদের যৌনসুখের
উৎস।তুমি কি জান জি স্পট কি”?
“হ্যা,দু একদিন আগেই ওটা নিয়ে কথা বলেছি আমরা।ওটা অনেকটা দালানের দোতালার,
পেছনের দরজাটা”, নিরীহ,সরলমনা এক মেয়ের মত উত্তর দিল মারিয়া।
“হ্যা,হ্যা সেটার কথাই বলছি”,লাইব্রেরীয়ান বেশ উচ্ছাসের সাথেই বললো।
“কটা পুরুষের জানা আছে সেটা।কেউ জানে না!ঠিক ইটালিয়ানদের ভগাঙ্কুর আবিষ্কারের মত,ওটা বিংশ শতাব্দীর আবিষ্কার।খুব শীঘ্রীই সবাই জেনে যাবে,পুরুষেরা তখন অবজ্ঞা করতে পারবে না,আর!তুমি জান,কি বিপ্লবের সময় আমাদের এই জীবনটায়”।

মারিয়া ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো,হাইডি বুঝলো তার যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।প্রতিটা মেয়ের অধিকার আছে সুখ খুঁজে নেয়া,হাইডি যা পায়নি,আগামীর মেয়েরা যেন খুঁজে পায় সেই অজানা সুখের রাজ্যটা,নতুন সব আবিষ্কারে।
“ডাক্তার ফ্রয়েডের বিশ্বাস না করার কারণটা,সে তো আর মেয়েমানুষ ছিল না,তার অনুভুতি,যৌন সুখ তো লিঙ্গের নির্গমে,তার বিশ্বাসের উৎস সেটাই।মেয়েদের জানা দরকার তাদের শরীরের ইতিবৃত্ত,আনন্দের উৎস,ভগাঙ্কুর,জি স্পট।অনেক মেয়েই তার বিবাহিত জীবনে কোন দিন খুঁজে পায় না,যৌন সুখ।তাই আমার উপদেশ যদি যৌন সুখ পেতে অসুবিধা হয়,অবস্থান বদলে নিবে,শুতে বলবে তোমার প্রেমিককে নীচে আর তুমি উপরে,তোমার ভগাঙ্কুর জোরে জোরে ধাক্কা মারবে প্রেমিকের শরীরে,খুঁজে পাবে চরম আনন্দ।যে রমণসুখ তোমার প্রাপ্য”।

মারিয়ার তেমন একটা আগ্রহ ছিল না,ঐ আলাপ আলোচনায়।এটুকু বুঝতে পারলো সে একা নয়,হতাশায়!কোন যৌন সমস্যা নেই তার জীবনে,ওটা তার সাথের পুরুষদের বোঝার ক্ষমতার অভাবে!ইচ্ছা হচ্ছিল লাইব্রেরীয়ানকে জড়িয়ে চুমু খেতে,তার মনের একটা বিরাট বোঝা নেমে গেছে।কি চমৎকার এই দিনটা!হাইডিও যেন হেসে একই সম্মতি জানালো।
“পুরুষেরা অনেকেই হয়তো জানে না,মেয়েদের লিঙ্গেরও দৃঢ়তা আছে!ভগাঙ্কুরের দৃঢ়তা আছে”।
মারিয়া কিছুটা সাহস করেই প্রশ্নটা করলো,
“ আচ্ছা আমার একটা প্রশ্ন আছে তোমার জন্যে,তুমি কি পরকীয়া প্রেম করেছ কখনও”?


০০০০০

অবাক হয়ে গেল লাইব্রেরীয়ান,তার চোখ মুখ দিয়ে আগুনের ছটা বেরুচ্ছিল যেন,লাল হয়ে গেছে মুখটা,লজ্জায় না রাগে বোঝা সম্ভব নয়।প্রশ্নটা এড়িয়ে সে বললো,“ভগাঙ্কুরের দৃঢ়তার কথায় আসি,তুমি কি জান যে ভগাঙ্কুর দৃঢ় হয়”?
“জানি,আমার সেই ছোটবেলা থেকেই জানা এটা”।
কিছুটা হতাশ হলো হাইডি,তবু থেমে থাকলো না,“হ্যা,যা বলছিলাম ভগাঙ্কুরটা ধরে নাড়াচাড়া করলে নাকি পাওয়া যায় চরম যৌনসুখ।মনে রেখ!অনেক পুরুষ ভগাঙ্কুরের মাথাটা ধরে নাড়াচাড়া করে,তাতে মেয়েদের আনন্দ হয়না,শুধু যন্ত্রনাই বাড়ে,তুমি কি বল?তাই তোমার প্রথম বা দ্বিতীয় বারের পর উপরে উঠবে,কখন কি করতে হবে সেটার ছন্দ খুঁজে নিও।যে বইটা আমি পড়ছিলাম সেখানে এগুলো নিয়ে অনেক আলোচনা করা হয়েছে”।
“তুমি কি তোমার স্বামীর সাথে কোনদিন আলোচনা করেছিলে”?
হাইডি আবার কিছুটা এড়িয়ে উত্তর দিল তাদের সময় তো সবকিছু এত খোলামেলা ছিল না।
“শোন,তোমার ভগাঙ্কুরকে মনে করবে ঘড়ির কাঁটা,তোমার সঙ্গীকে বলবে ঘড়ির কাঁটা এগারটা আর একটার মধ্যে ঘোরাফেরা করাতে,বুঝলে”।
মারিয়া বুঝতে পারলো কি বলছে হাইডি,তবে সেটা সম্পূর্ন সত্যি না,যদিও বইটা খুব একটা ভুলও বলেনি।
ঘড়ির কথা বলায় মারিয়া বললো,কাজ শেষ হয়ে গেছে,তাই সে ফিরে যাচ্ছে।লাইব্রেরীয়ান যেন শোনেনি কথাগুলো, “বইটা নিবে”?
“না,আমি এখন খুবই ব্যাস্ত”।
“অন্য কোন বই নিবে”?
“না,না,আমি দেশে ফিরে যাচ্ছি।শুধু তোমাকে ধন্যবাদ জানাতে এসেছি,তুমি সবসময় আমাকে যথাযথ মর্যাদা দিয়েছ।ভব্যিষতে দেখা হবে কিনা জানিনা,তবে আশা করি দেখা হবে আবার”।

হাইডি অপেক্ষা করলো মেয়েটার চলে যাওয়ার জন্যে,তারপর বেশ শব্দ করে সামনের ডেক্সে একটা ঘুষি মারলো।কেন যে সে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিল অনুভুতিগুলো দম বন্ধ করে আটকে রেখে,হয়তো সবকিছু সাথে নিয়ে তাকে যেতে হবে পরপারে।মেয়েটা যখন পরকীয়া প্রেম সমন্ধে জিজ্ঞাসা করলো,কেন সে উত্তর দিল না।এখন জানে সে যোনীতে খুঁজে পাওয়া যায় না রমণ সুখ।
“কিছু যায় আসে না,পৃথিবীটা তো শুধু যৌনসঙ্গম নয়,সেখানে লুকোনো আছে আরও অনেক
সুখের পালা”।মনে মনে বললো হাইডি।

তবে ওটাও ঠিক না,যদিও সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বস্ত না যৌন্তা,তবে প্রয়োজনীয় অবশ্যই,আনন্দ সুখই তো খোঁজে মানুষ সারাজীবন।চার পাশে সাজানো হাজার হাজার বই ভালবাসার গল্প নিয়ে।
সেই একই কথাঃএকজনের দেখা একজনের সাথে,প্রেমে পড়ে দুজন,তারপর হারিয়ে যায় হঠাৎ অজানায়,দেখা হয় আবার।মনটা খুঁজে নেয় মনের আলো,আসে অজানা শহরের গল্প,অপেক্ষার যন্ত্রনা,কিন্ত কোন সময় বলে না কেউ, ‘কেন খুঁজে নাও নি মেয়েদের শরীরের কথা’?কেন যে বইগুলোতে বলে না শরীরের কথা,শরীর যেন একটা নোংরামির দেশ।হয়তো পুরুষদের জানার উৎসাহ নেই,তারা যেন সেই আদিম যুগের গুহার মানুষ,মানব জাতির রক্ষায় ব্যাস্ত।
আর মেয়েদের কথা?তার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতায়,বিয়ের প্রথেম দিকটায় রমনসুখের চরম খুঁজে
থাকায় মনটা উদগ্রীব থাকে,তারপর সেটা হারিয়ে যায় মনটা ভাবে খুঁজে পাইনি সেটা শারীরিক অক্ষমতার কারণে।একটা মিথ্যা সাজিয়ে নেয় মানুষ মনে-স্বামীর দৈহিক অত্যাচারের কারণে দেহযোগে একসময় উৎসাহ হারিয়ে ফেলে।

ব্যাস্ত রাখে নিজেকে সংসারের নানান কাজে,রান্নাবান্না,ছেলেমেয়েদের নিয়ে ব্যাস্ত থেকে,
এমন কি স্বামীর পরকীয়া প্রেমটাও সহ্য করে নেয়,ভালবাসাও খুঁজে নেয়,নাই বা থাকলো যৌনসুখ।ঐ ব্রাজিলিয়ান মেয়েটার সাথে আরও কিছুটা মনখুলে কথা বললে খুব একটা খারাপ হতো না,মেয়েটা যদিও তার মেয়ের বয়সী,তবে বেশ খোলামনা।অন্য দেশ থেকে আসা একটা মেয়ে কাজকরে ফিরে যাচ্ছে,বিয়ে করবে,স্বামীর সাথে রমণ সুখের ভান করবে,ছেলেমেয়ে সংসার নিয়ে ভুলে যাবে ভগাঙ্কুর,জি স্পটের কথা।মাঝে মাঝে মনে করবে পেছনে ফেলে আসা কোন পুরুষের গল্প,রং সাজিয়ে চেহারাটা ঠিক রাখবে।চেহারা-কেন যে সবাই এত ব্যাস্ত চেহারাটা ঠিক রাখার জন্যে,যেখানে শরীর হারায় সুখ।

এ জন্যেই সে উত্তর দেয়নি প্রশ্নটার, “তুমি কি পরকীয়া প্রেম করেছ,কোনদিন”।
ওগুলো গল্প তো মানুষ সাথে নিয়ে যায় পরপারে।তার স্বামী ছিল তার জীবনের একমাত্র পুরুষ,যদিও যৌনসঙ্গম এখন তার জীবনে শুধু একটা ইতিহাস।একজন খুব ভাল বন্ধু ছিল,হাসিখুশী,অনেক কষ্ট করেছে সংসারের জন্য,কিন্ত হাসিটা হারায় নি।এত ভাল ছিল মানুষটা-আজও কষ্টে ভরে যাওয়া হাইডির মনটা যখন কামনায় খুঁজে নিয়েছিল আরেকটা শরীর।
০০০০০০

বেশ মনে পড়ে তার ঘটনাটা,ওটা তো ভুলে যাওয়ার না-ছোট্ট পাহাড়ী শহর,ডাভোস থেকে আসার সময়,হিমেল ধ্বসের কারণে হঠাৎ ট্রেন যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেল।কটা পত্রপত্রিকা কিনে,বাড়ীতে টেলিফোন করে ট্রেন ষ্টেশনে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন কিছু করার ছিল না,হাইডির।
তার পাশে বসেছিল একজন,কাঁধে ব্যাগ,আর স্লিপিং ব্যাগ।কাঁচাপাকা চুল,রোদপোড়া তামাটে চেহারা,ট্রেনে দেরী হওয়া নিয়ে কোন উদ্ধেগ ছিল না যেন।হাইডি একটা ম্যাগাজিন খুলে পড়া আরম্ভ করবে,লোকটা উঠে এসে সাথে গল্প করার জন্যে বসে পড়লো।
বললো,সে একজন লেখক,পাহাড়ী এলাকার নির্জনতা সাহায্য করে তার লেখার মগ্নতা।ট্রেনটা না আসার জন্যে তার সমস্ত পরিকল্পনা তছনছ হয়ে গেছে,প্লেনটাও হয়তো মিস করবে সে।জেনেভায় অপেক্ষা করতে হবে তাকে,হাইডির যদি অসুবিধা না হয়,তাকে সাহায্য করতে একটা হোটেল খুঁজে নিতে।

ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না হাইডি,এই অসহায়তার মাঝে লোকটার চিন্তাধারাটা.
লোকটার কথাবার্তা ভাবভঙ্গী এমন ছিল,তারা যেন অনেক পুরোনো বন্ধু।হাইডিকে বললো,ভ্রমনের গল্প,লেখাগুলোর কথা,এমন কি তার জীবনের মেয়েদের গল্প,ভালবাসার,নানান সর্ম্পকের কথা।মাঝে মাঝে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছিল,বেশী কথা বলার কারণে,অনুরোধও করলো হাইডিকে কিছু বলার জন্যে।কিন্ত কিই বা বলতে পারে হাইডি,এটুকু ছাড়া, “খুব সাধারণ একজন আমি,বলার মত আমার জীবনে বলার তেমন কিছুই নেই”।



০০০০০০০


সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১২:২৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×