কিছুদিন পর পর মালিক-শ্রমিকরা মিলে ধর্মঘট দিয়ে দেশটাকে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করে যায়। জিম্মি করে রাখে পুরো দেশটাকে। জনগণের টাকায় খায়, জনগণের টাকায় চলে, আবার তারাই জনগণের উপর পোদ্দারি করে। পান থেকে চুন খসার আগেই ধর্মঘট দিয়ে বসে থাকে। জনগণকে তারা খেলার পুতুল পেয়েছে, চাইলে খেললাম না চাইলে ফেলে রাখলাম। জনগণের ঠেকা আরকি।
যখন তখন দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষ মারছে তাতে তাদের কোন দোষ নেই। তাদের প্রতিরোধ করার সড়ক আইনও কি তাদের মন মত হতে হবে নাকি?
ঘরে চাল নেই, চুলো নেই, কিন্তু রাজপথে তারা আন্দোলন করে, জনগণকে জিম্মি করে দাবী আদায় করে। গণতান্ত্রিকপন্থায় নিজেদের অধিকার আদায় করে নেয়। কিন্তু তা কতটুকু বৈধ এবং কতটুকু অনৈতিক তা বুঝার জন্য সৃষ্টিকর্তা কি তাদের চিন্তাশক্তি দেয়নি? যত অপরাধ সব কি জনগণের? আশ্চর্য।
ছোটবেলা থেকে একটা ব্যাপার বারবার দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। তাই বলে কি এর কোন সমাধান নেই? সমাধান হবে না?
মানছি, দেশটা গরিব। চাইলেই ব্যবস্থা নিতে পারে না।
কিন্তু বিদেশি ঋণ নিয়েই তো কত আজেবাজে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়, পরিবহন খাতে সাহস করে সুনজর দিলেই তো এ সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
দেশের পরিবহন সমস্যার মূল কারণ হলো ব্যক্তিমালিকানাধীন পরিবহন ব্যবস্থা। ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যবসার কারণে তাদের স্বাধীনতা রয়েছে। তারা চাইলেই অঘটন-দুর্ঘটন ঘটাতে পারে। দুষ্টুচক্রের হাতে দেশ আজ জিম্মি।
যাকে তাকে লাইসেন্স দিয়ে দেয়া অন্যতম প্রধান সমস্যা। বাঙালির অনেক কিছু পাওয়ার অধিকার থাকা উচিৎ নয়। অধিকার কি তা এ জাতি জানেই না। কিভাবে নিজেদের অধিকার সংরক্ষণ করতে হয়, ব্যবহার করতে হয় তাও জানে না। নিজেদের নষ্টামির জন্য দেশটাকে জাহান্নাম বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।
সরকারের যা করা দরকারঃ
এদের শায়েস্তা করতে হলে সরকারকে শায়েস্তা খান'কে কবর থেকে তুলে আনতে হবে না। শুধু প্রয়োজন একটুখানি সদিচ্ছা আর কঠোর মনোভাব।
১. পরিবহন সেক্টর হবে পুরোপুরি সরকারি। এতে ভোগান্তি কমবে, নিয়ন্ত্রণ থাকবে। বাড়বে কর্ম সংস্থান। জনগণের অর্থ সরাসরি সরকারি কোষাগারে যাবে। সব জায়গায়, সব রুটে, সব জেলায় সরকারি বিআরটিসি বাসের সংখ্যা বাড়াতে পারে। যা সরাসরি সরকারিভাবে পরিচালিত হবে। ভাড়ার টাকা সরকার নিবে, সার্ভিস দিবে। জনগণ ভাড়া দিতে প্রস্তুত, সরকার দিবে সার্ভিস। যা সব জেলা, উপজেলা শহরের মধ্যে নির্দিষ্ট সময়ে চলাচল করবে।
২. ঢাকা - চট্টগ্রাম সিটিতে বা সব ব্যস্ত সিটি কর্পোরেশন এরিয়াতে অভ্যন্তরীণভাবে চক্রাকারে চালানোর জন্য প্রয়োজন অনুসারে নির্দিষ্ট সংখ্যক বিআরটিসি বাস নামিয়ে দিয়ে ফিটনেসবিহীন কোম্পানির বাসগুলা তুলে দিতে পারে। ফলে কমবে যানজট, দুর্ঘটনা।
৩. যেসব কোম্পানি নিজেদের ফায়দা লুটানোর জন্য কিছুদিন পর পর ধর্মঘট দিয়ে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে পারে। আজীবনের জন্য তাদের লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করে তাদের নামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়ে বসিয়ে দিতে পারে। নিজের স্বার্থে রাষ্ট্রকে জিম্মি করা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল।
৪. যে কোম্পানি ধর্মঘট দিবে, আর যে মানবে তাদের লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করে সাথে সাথে সেই রুটে সরকারি পরিবহন নামিয়ে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে শিক্ষা দিতে পারে।
হয়তো যা ভাবছি তা ভুল, এ দেশে এসব সম্ভব নাঃ
এদেশ গরিব, এদেশের এতো টাকা নেই। এ দেশে নুন আনতে পান্তা পুরায়।
অথচ এদেশে সরকারিভাবে প্রত্যেক সরকারি কর্মকর্তার বেতন ডাবল করে দেয়া হয়, এদেশে সরকারি টাকায় সরকারি কর্মকর্তাদের বিলাসবহুল গাড়ী দেয়া হয়। তাদের বউ বাচ্চা পালনের জন্য মাসে মাসে ভাতা দেয়া হয়। টেলিফোন বিল দেয়া হয়। এন্ড্রোয়েড হ্যান্ডসেট দেয়া হয়। বিদেশ ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়। বছরে কয়েক দফায় তাদের উৎসব ভাতা - বোনাস দেয়া হয়। তাদের প্রটোকল বা নিরাপত্তার জন্য পুরো দেশে প্রায় কয়েকহাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়। আরো হাজারো প্রকল্পে হাজারো তরীকায় অর্থ অপচয় হয়। কিন্তু তবুও এদেশ গরিব। এদেশে এই বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
এদেশ গরিব থাকবে না তো আমেরিকা গরিব থাকবে?
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৫২