মানুষ সামাজিক জীব, মানুষ দলবদ্ধ হয়ে বাস করতে পছন্দ করে, অনেকগুলো মানবিক উদ্দেশ্য সামনে নিয়ে মানুষ সমাজবদ্ধ হয়েছে........ ইত্যাদি লেখা আমরা ছোটবেলা থেকে পড়ে আসছি। বিশেষ করে সমাজ বিজ্ঞানে এসব নিয়ে বেশি পড়েছিলাম।
দার্শনিকরাও এসব মতবাদ কম জানেন না। টমাস হবস, জন লক, জ্যাঁ জ্যাক রুশো ছিলেন সামাজিক চুক্তি মতবাদের প্রবক্তা।.......... কিন্তু লাভটা কি হলো?
[The Greek Fighting Style]
কিন্তু এতো এতো পড়ার পরেও মানুষ সামাজিক হতে পারেনি। সামাজিক হতে গিয়ে নিজেরা নিজেদের মত করে আলাদা আলাদা সমাজ, গ্রুপ, ধর্ম, গোত্র, বংশে ভাগ হয়ে গিয়েছে। একটা ধর্মের ভিতরেও আরো কয়েকটা গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। এসব নিয়ে মারামারি, হানাহানি, কাটাকাটি সহ হাজাররকম ফেৎনা- ফাসাদে জড়িয়ে পড়েছে। তারপর যখন সাম্রাজ্যবাদী চিন্তা শুরু হলো, সে তো অন্যরকম ভয়ানক কাহিনী। তাকেও মানুষ ধর্মকেন্দ্রিক সাম্রাজ্যবাদী নীতিতে জড়িয়ে ফেলেছে। ‘আমার ধর্ম শ্রেষ্ঠ’, বলে অন্যধর্মের শান্তিপ্রিয় মানুষদের উপর বীরদর্পে আক্রমণ করেছে। হাজার হাজার গ্রাম, জনপদ, এমনকি অনেকগুলি রাষ্ট্র ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। কোটি কোটি মানুষকে ধর্মের নামে ঘাড় থেকে মাথা নামিয়ে দেয়া হয়েছে, আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে, তাদের সন্তানদের পিতৃহারা করা হয়েছে, মাতৃহারা করা হয়েছে, বাস্তুহারা করা হয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণে বাধ্য করা হয়েছে, যে বয়সে বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার কথা ছিলো সে বয়সে তাদের ভিক্ষাবৃত্তিতে করতে বাধ্য করা হয়েছে। নারীদের যৌনদাসী হতে বাধ্য করা হয়েছে, পুরুষদের বাধ্য করা হয়েছে গোলামীতে।
পৃথিবীতে কোন ধর্ম কোন ধর্মের চেয়ে কম ছিলো না এসবে। ইহুদি, খৃষ্টান, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধসহ সব ধর্মই নিজেদের ‘শ্রেষ্ঠ মতবাদ’ জোরপূর্বক চাপিয়ে দিয়েছে। কেউ না মানলে তার জন্য ‘শ্রেষ্ঠ অমানবিক শাস্তি’ তো ছিলই। একসময় রাজাকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা ছিলো, যাকে একনায়ক বা স্বৈরশাসন বলে বর্তমানে জানতে পারি। সেসময়ের অবস্থাও একেবারেই নাজেহাল ছিলো। রাজা নিজের ধর্মকে অন্যের উপর চাপাতে অলসতা করতেন না। না মানলে প্রজাদের উপর খাজনার হার বেড়ে যেত।
এরকম হাজারো কাহিনী প্রাচীন যুগ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত ছিলো এক রকম। আধুনিক যুগে এসে তা আরো আধুনিকভাবে প্রয়োগ হয়েছে। প্রাচীন যুগে ‘তীর, তলোয়ার, বর্শা, পাথর, আগুন’ এসব ছিলো প্রধান হাতিয়ার। কিন্তু আধুনিক যুগে এসে তা একেবারেই পরিবর্তন হয়ে পারমাণবিক অস্ত্রে রূপ লাভ করেছে। আগে এক তীর দিয়ে একজনের প্রাণ যেত, কিন্তু এখন একটা বোমা দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে শেষ করে দেয়া যায়। মানুষ আধুনিক হয়েছে। গোত্র, রাজ্য, সাম্রাজ্য থেকে রাষ্ট্রে রূপ লাভ করেছে। পাশাপাশি ফেৎনা-ফাসাদও আধুনিক হয়েছে। ঘোড়ার পিঠ থেকে সৈনিকরা চলে গেছে বিমানে, তীরের বদলে বুলেট, পাথরের বদলে বোমা। বাহ, কেয়া বাত।
হাজার বছর পরেও শিশুরা পড়বে ‘মানুষ মানবিক উদ্দেশ্য সামনে রেখে সমাজবদ্ধ হয়েছে’। বাহ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৩৩