১ ডিসেম্বার। আজ থেকে ৪৮ বছর পূর্বে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পেয়েছিলাম একটি স্বাধীন দেশ, লাল সবুজের এই পতাকা। পাকিস্তানিদের দমন-পীড়ন থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম আজীবনের জন্য। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হয়ে গেলেও আমাদের কমেনি পাকিস্তানিদের প্রতি বিদ্বেষ-ঘৃণা। তখনকার পাক বাহিনী ও পাকিস্তানি -যারা আমাদের নির্যাতন করেছিল তারা সবাই ইন্তেকাল ফরমালেও ইন্তেকাল ফরমেরেনি আমাদের ঘৃণা বিদ্বেষের।
আজও আমরা পাকিস্তানিদের দেখলে গালি দিই, তাদের গুষ্ঠি উদ্ধার করি। এটা যদি হয় ৪৮ বছর পূর্বের কোনও পাকিস্তানিকে তাহলে সেটি যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু দেশটির তরুণ প্রজন্মকে, যুবকদেরকে, যারা তখন ছিল না, যুদ্ধের কাহিনী তারা শুনেছে মাত্র, কেন তাদের বাপ দাদাদের কৃতকর্মের জন্য আমরা তাদের কপালে ঘৃণা ছুড়ে দিই? এটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ভুলটা তারা করেনি। করেছে তাদের পূর্ব পুরুষরা। সেই পুরনো শত্রুতা জিইয়ে রেখে তাদের এভাবে ঘৃণা করা, গালিগালাজ করা আদৌ ঠিক নয়। এই স্বাভাবটা কিন্তু জাহেলিয়াতের বর্বর মানুষের ছিল।
আমাদের দেশটা খুব অদ্ভুত। এখানে কাবলু সেট পরিধান করলে রাজাকার হয়ে যায় মানুষ। শহীদ আফ্রিদিকে ভাল লাগলে দশ বছরের বাচ্চাকেও দেয়া হয় রাজাকারের লকব।
পাকিস্তান উন্নত হল না অউন্নত হল। তারা কোথায় কি করল না করল, আমরা সারাদিন সেটা নিয়ে বসে থাকি। কথায় কথায় বলি আমরা তাদের চেয়ে উন্নত। কখনও ভেবে দেখেছি কি? তারা আমাদের নিয়ে বসে আছে কিনা। তাদের মুখে কি কথায় কথায় বাংলাদেশের কথা উচ্চরণ হয় কিনা। অবশ্য ইমরান খান অনেক বার বলেছে বাংলাদেশ তার বন্ধু। পাকিস্তানের চেয়ে আমরা উন্নত না অউন্নত সারাদিন এটা না মেপে দুর্নীতি বাদ দিয়ে আমাদের আরও উন্নতি করে যাওয়া উচিৎ। এমন মাপামাপি বিদ্বেষের নামন্তর।
যারা আমাদের পূর্ব পুরুষদের রক্ত চুষেছে, আমাদের বাপ দাদাকে নির্যাতন করেছে, আমাদের মা বোনদেন ইজ্জত হরণ করেছে, আমাদের হক্ব থেকে বঞ্চিত করেছে, আমাদের টাকা দিয়ে আমাদের অউন্নত রেখে নিজেরা উন্নতি সাধন করেছে, ঘৃণা বিদ্বেষ হোক তাদের জন্য। ৪৮ বছর আগের সেই পাকিস্তানির জন্য। যদিও তারা সবাই মৃত, মাটি হয়ে গেছে তারা, তাদের আমরা যতোই উচ্চ আওয়াজে গালি দিই তারা শুনবে না, জানবে না।
আমরা শুধু ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে পারি। আমাদের স্বাধীনতা ধরে রাখতে দৃঢ় প্রত্যায় ব্যক্ত করতে পারি। দুর্নীতি থেকে হাত গুটিয়ে নিয়ে নিজের ছোট্ট এই রাষ্টটাকে উন্নত করতে পারি, সুন্দর করে সাজাতে পারি।