somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাল্যবন্ধু

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাল্যবন্ধু
লিখেছেন, কামরুন নাহার

স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছি। ভালো রেজাল্ট করায় বাবা শহরের কলেজে ভর্তি করে দিলেন। গ্রামের আঁকা বাঁকা খানিক রাস্তা পায়ে হেঁটে বাসে চড়তে হয়। সঙ্গি ছিল না। একাই যেতাম। কিছুদিন ভালোই ছিল সবকিছু। হঠাৎ মনে হলো কেউ আমাকে ফলো করছে। কিন্তু কাউকে দেখতে পারছি না। বুঝতে পারছিনা লোকটি কে হতে পারে। বিষয়টা বেশ অসস্থিকর। মনে নানান প্রশ্ন নিয়েই প্রতিদিন কলেজে আসা যাওয়া করছি।

একদিন গাছের আড়ালে একটি ছায়া আবিস্কার করলাম। এগিয়ে গেলাম ছায়ার দিকে। যেয়ে দেখি ১১/১২ বছর বয়সের একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে বাচ্চাটি নিচের দিকে মুখ করে আছে। আমি বললাম, তুমি আমাকে ফলো করো?
কিছু বলে না। একটু ধমকের সুরে বললাম, কি হলো উওর দাওনা কেনো?
মাথা নিচু করেই বললো,
-হুম।
-কেনো?
কথা বলে না। আবার বললাম,
-কি হলো উওর দেও।
এবার সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে বাচ্চাটি বললো,
আপনাকে আমার খুব ভালো লাগে তাই প্রতিদিন দেখি।
বলেই সোজা চলে গেলো।

আর্কষিক এমন কথা শুনে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে রইলাম। এর পর থেকে আর লুকিয়ে না রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে থাকতে শুরু করলো বাচ্চাটি। আমারও কেনো জানি একটা কৌতুহল কাজ করত। খুব মায়াবি দেখতে। যে কারোর ভাল লাগবে প্রথম দেখায়। আমি ও মনের অজান্তেই যেনো ওর উপস্থিতি টের পাওয়া শুরু করলাম।

কয়েক দিন পর একটা ঘুঘু পাখির বাচ্চা নিয়ে রাস্তায় সামনে এসে বললো, এটা আপনার জন্য এনেছি। নিবেন?

আমি তো দেখে অবাক। এতো সুন্দর একটা পাখির বাচ্চা। হাতে তুলে নিলাম। ওর মুখে তখন উজ্জ্বল হাসির রেখা ফুটে উঠল। আমি বললাম, একটা কেনো? এর সাথিরা কই?
-ওটা তো উড়ে গেছে, ধরতে পারিনি।
-তাহলে তো এটাও ছেরে দিতে হবে।
-কেনো?
-ওর সাথী ছাড়া কষ্ট হবে না? তুমি বরং যেখান থেকে এনেছো সেখানেই রেখে আসো।
দেখলাম মনটা খারাপ হয়ে গেছে।
আমি বললাম, আচ্ছা ধর তোমার প্রিয়জনকে যদি তোমার কাছথেকে নিয়ে যায় তখন তোমার কষ্ট হবে না?
-হ্যা হবে তো। অনেক কষ্ট হবে।
-তাহলে এই পাখিটাও সাথী ছাড়া কষ্ট পাবে। এবার বুঝেছো?
হু। সে মাথা নাড়ল। আমি এখনি রেখে আসবো বাসায়।
আচ্ছা তুমি লেখা পড়া করো না?
হ্যা, সে আবার মাথা নেড়ে উত্তর দিল।

-কোন ক্লাসে

আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি।
-ওহ, আচ্ছা। বেশ ভাল।
-নাম কি তোমার?
-রাফি।
এর পর থেকে প্রায় প্রতিদিন কথা বলতে বলতে বাসস্টেন পযন্ত যাওয়া হতো। কতো গল্প, সারা দিন স্কুলে বন্ধুদের সাথে কি কি হয়েছে। কোথায় কোন খেলার প্রতিযোগিতা আছে। বাবা নতুন শার্ট-প্যান্ট কিনে দিছে। হাজারও গল্প। এভাবেই দেখতে দেখতে আমার কলেজ জীবনের ইতি হলো। আমার মনের ঘরে বাল্যবন্ধুর একটি বসত গড়ে উঠেছে। আমি তা ভালো করেই বুঝতে পারি।


পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করলাম। প্রত্যাশা এবার ভার্সিটির। ভার্সিটিতে পড়ার জন্য ঢাকা চলে আসলাম। আসার আগে রাফিকে জানালাম, আমি ঢাকা পড়ালেখা করতে যাবো। রাফি খুব মন খারাপ করলো। খুব কাঁদল। আসার আগের দিন সে আমাদের বাড়িতে এলো আমার সঙ্গে দেখা করতে। বয়সে ছোট থাকায় আমাদের বাসায় কেউ কিছু মনে করতো না। যে কোন সময় আমাদের বাসায় আসতে পারতো।
আমার জন্য একটা গিফট নিয়ে এসেছে রাফি। একবারও আমার দিকে চোখ তুলে তাকায়নি।

আমি বললাম, রাফি আমি চাই তুমি ভালো রেজাল্ট করে ঢাকা এসে কলেজে ভর্তি হবে। তখন আবারও আমাদের দেখা হবে। ও শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। আমি কি বলবো কোন কথা খুজে পাচ্ছিলাম না। চুপচাপ কিছুক্ষন বসে থেকে বললো,
আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। মরে যাবো।


বাচ্চাটির এমন অদ্ভুত কথা শুনে আমি থ হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম ওর মুখের দিকে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বললাম, তুমি পাগল হয়েছো? আমি আর তুমি কতো প্রার্থক্য? এই কথা জানলে তোমার বাবা-মা খুব রাগ করবে। আমি তোমাকে খুব পছন্দ করি। তুমি খুব ভালো। তুমি আমার ভালো বন্ধু। আমি আর কিছুই তোমাকে নিয়ে ভাবি না।

ও অসহায়ের মতো তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে। আমি চোখের পানি আড়াল করতে সরে গেলাম। হাতে করে আনা প্যাকেটটা রেখে চলে গেলো রাফি। পরের দিন ভোরের গাড়িতে চলে আসলাম ঢাকা। পিছনে ফেলে আসলাম একটি শিশু, কিশোরী বয়সের হাজারো স্মৃতিরমালা। আপনজন খেলার সাথীদের চিরচেনা পরিবেশ। সবার মাঝে রেখে এলাম আমার অমুল্য বাল্যপ্রেম।আমার ভালবাসা যা কোনদিন তাকে বলা হবে না। আমিও ভালবেসেছি তাকে।

গল্পটি কেমন হল জানালে খুশি হব। খুশি হবেন একজন লেখিকা। অনুপ্রেরণাও পাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৩৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×