somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জেগে উঠুন আরেকবারঃ বিজয়ের মাসে বাংলাদেশের মাটিতে ভারতীয় মুভি প্রদর্শন শুরু

২৬ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মূললেখাঃ নূর নবী দুলাল।
প্রথম প্রকাশ এবং গুরূত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়াদি জানতে এখানে যান।
ধীরে ধীরে আমরা সব হারাতে বসেছি। বন্ধুত্বের আগ্রাসনে আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, জাতীয়তাবাদ ঘিলে খাওয়ার সব রকম প্রস্তুতি সরকার সম্পন্ন করছে অতি সুকৌশলে। আমরা ম্যাঙ্গো জনগণ নির্বাক হয়ে সব দেখে যাচ্ছি। বাঙালী এখন মেরুদন্ডহীন দু'পায়ী একটা জাতিতে পরিণত হয়েছে। আমাদের অহংকারের ধ্বজভঙ্গ লিঙ্গটা ষান্ডার তেলেও এখন উত্থিত হয় না। আমাদের বিজয়ের গর্ব, ভাষার চেতনা, স্বাধীনতার অনির্বাণ স্বপ্ন, অধিকার আদায়ের তেজোদীপ্ত শ্লোগান, তারুণ্যের স্ফুলিঙ্গ, কবিতার নকসীতে বোনা ভালবাসার চাদর, প্রবাহমান নদীর পলির উর্বরতা, শাহ্‌ আবদুল করিম'র সুন্দর দিন কাঁটানোর পুঁথি, লালনের মানবতাবাদ, হাসনরাজার প্রেমাত্নবোধ, সূর্যসেন-প্রীতিলতার বিদ্রোহ, নজরুলের লেটোদল, রবীন্দ্রনাথের বিরহ, আব্বাস উদ্দিনের ভাটিয়ালী, অসংখ্য মরমী সাধকের জারী-সারি সব কিছু দিয়ে নতুন এক ঠাকুরমার ঝুলি রচনা করার আয়োজন চলছে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার কর্তৃক।

যে মাসটিতে বাঙালী শত বঞ্চনার মধ্য থেকেও স্বগর্বে মাথা উচিয়ে পুরো বিশ্বকে জানান দেয় একটি অহংকারী ইতিহাস সমৃদ্ধ জাতি হিসাবে, সে মাসেই আমাদের সরকার ভারতকে বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসাবে ভারতের চলচ্চিত্রের বাজারকে উন্মুক্ত করে দিচ্ছে।

দেশীয় চলচ্চিত্রের স্বার্থ রক্ষায় স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শন নিষিদ্ধ করার দীর্ঘদিন পর শেখ হাসিনার সরকার ভারতীয় চলচ্চিত্রের বাংলাদেশে অবাধ প্রবেশের নির্লজ্জ্বকর অনুমোদনকে আমি দেখছি বাংলাদেশকে ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য বানানোর কৌশল হিসাবে। আমার এই ভাবনাটি অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হলেও এটি ভাবতে আমি বিন্দুমাত্র সংকোচবোধ অনুভব করছিনা। কেন করছিনা সেটি কি বিশ্লেষনের প্রয়োজন আছে? ২০১০ সালে জানুয়ারী থেকেই সরকার ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানী ও প্রদর্শনের উপর সকল প্রকার নিষেধাজ্ঞা তুলে দিলেও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সকল মহলের তীব্র বিরোধীতার মুখে এক প্রকার বাধ্য হয়েই সিদ্ধান্তটি স্থগিত করে। কিন্তু হঠাৎ এই বিজয়ের মাসে কেন ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়ার এত তোড়জোড় শুরু হল? সরকার নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হিসাবে জোর গলায় দাবী করলেও কাদের স্বার্থে দেশের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে আমাদের এই অহংকারের মাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবোধ লালনকারী অগনিত সাংস্কতিমনা মানুষের মনে আঘাত দিয়ে ভারতীয় চলচ্চিত্র মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোন প্রভুকে খুশী করার জন্য আমাদের গৌরব অর্জনের এই মাসকে সরকার কালিমায় লেপে দেওয়ার মত দৃষ্টান্ত দেখাতে পারে? যদিও আমি এবং আমার জানামতে সকল দেশপ্রেমিক বাঙালী কোন মাসেই বা কোন সময়েই ভারতীয় চলচ্চিত্রের আমদানী ও অবাধ প্রদর্শন কোনভাবেই সমর্থন করেন না।

স্যাটেলাইটের কল্যানে ইতিমধ্যে আমাদের প্রজন্ম ভারতীয় সাংস্কৃতি আগ্রাসনের শিকার। আমাদের জনগণকে ভারত অবাধে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তাদের সাংস্কৃতি গিলাচ্ছেন। অথচ অতীতের সব সরকারসহ বর্তমান সরকার আমাদের স্যাটেলাইট টিভিকে ভারতের আকাশে ডানা মেলতে দেওয়ার বিন্দুমাত্র প্রচেষ্টা চালিয়েছে বলে আমার মনে হয়না। কিন্তু কেন? আমরা যদি ওদের স্যাটেলাইট টিভি অবাধে দেখতে পারি, ওরা কেন দেখবেনা বা দেখতে পারবেনা? বিষয়টা এমন নয় যে, ভারতীয় বাংলাভাষাবাসিরা আমাদের স্যাটেলাইট টিভি দেখতে ইচ্ছুক নয়। তারা আমাদের স্যাটেললাইট টিভি দেখার জন্য প্রচন্ড আগ্রহী। কিন্তু তাদের সরকারের স্বদিচ্ছা ও আমাদের সরকারের কুটনৈতিক আগ্রহ বা ব্যর্থতার কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছেনা। কথাটি আমার মন গড়া কোন কথা নয়। এটি পশ্চিম বাংলার অধিকাংশ মানুষের মনের কথা। কিন্তু তারা এও বুঝে দেশের মঙ্গলের জন্য তাদের সরকার যা করে সেটা মেনে নেওয়াটা আবশ্যক। পশ্চিমবাংলার মানুষজন বাংলাদেশের স্যাটেলাইট টিভি না দেখতে পারার পিছনে আমাদের সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতিকে দায়ী করেন। পাহাড়সম বাণিজ্য বৈসম্যের পাশাপাশি এই সাংস্কৃতিক বৈসম্য কেন? কেন আমরা সেটা মেনে নেব? ওদের এই হীন ও অবন্ধুসুলভ আচরণের জবাব সরকার না দিতে পারুক, আমরা সাধারণ জনগণ কেন দিতে পারছিনা? আমরা কি এতই মেরুদন্ডহীন জাতি হয়ে গেছি? আমার ভাবতেও অবাক লাগে- এই আমরা নাকি ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করে আমাদের দাবী আদায় করেছিলাম। এই আমরাই নাকি একটি স্বসস্ত্র বাহিনীর মোকাবেলা করে মাত্র নয় মাসে বিশ্বের বুকে একটি নতুন মানচিত্রের জন্ম দিয়েছিলাম।

ভারতীয় আকাশ সাংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে আমরা যখন মুক্তির উপায় নিয়ে ভাবছি, সেখানে সরকার কিভাবে ভারতীয় চলচ্চিত্রের বাজার তৈরী করে দেওয়ার আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নিতে পারে? গতবছরের জানুয়ারীতে সরকারে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানী ও প্রদর্শনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশীয় চলচ্চিত্রের পরিচালক-প্রযোজক, শিল্পী-কলাকুশলী ও দর্শক প্রবল আপত্তি জানান এবং আন্দোলন গড়ে তোলেন। চলচ্চিত্রশিল্পী, কলাকুশলী, নির্মাতা ও দর্শকদের এই আপত্তির মুখে সরকার ভারতীয় ছবি আমদানির ওপর পুনরায় বিধিনিষেধ আরোপ করে। ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানী ও প্রদর্শনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালীন সময়ে তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক দেয় অনাপত্তিপত্রের মাধ্যমেই প্রথম দফায় তিনটি ভারতীয় বাংলা ছবি আমদানি করা হয়। পরবর্তীতে ছবি তিনটি চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাওয়ার পর এখন এগুলো মুক্তি দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আগেই ঋণপত্র খোলার অজুহাত দেখিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে আরো ৯টি ভারতীয় হিন্দি চলচ্চিত্র আমদানির। তথ্য মন্ত্রনালয়ের অনাপত্তি পত্র পাওয়ার যোগ্য বলিউডের সুপারহিট ছবিগুলোর মধ্যে আছে দিলওয়ালা দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে, কুছ কুছ হোতা হ্যায়, কাভি খুশি কাভি গম, কাভি আল বিদা না কেহনা, মাই নেম ইজ খান, ওম শান্তি ওম, থ্রি ইডিয়টস ও দাবাং। শিগগিরই এসব ছবির প্রিন্ট বাংলাদেশে আসছে বলে বাংলানিউজ২৪.কম সুত্রে জানা গেছে।

একই সংবাদসুত্র থেকে জানা যায়-

সকল যুক্তি-আপত্তি তুচ্ছ করে চলতি বছরের জুলাইতে আইনের ফাঁক দিয়ে দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে প্রদর্শনের জন্য আমদানি করা হয় তিনটি ভারতীয় ছবি। ‘জোর’, ‘সংগ্রাম’ ও ‘বদলা’ নামের এ তিনটি ভারতীয় বাংলা ছবি বেশ কয়েকদিন আগে পেয়েছে সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ডিসেম্বর থেকেই শুরু হচ্ছে একে একে ছবি তিনটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি । ছবিগুলো মুক্তি দেওয়ার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়ে গেছে। আমদানীকারক ও এজেন্টরা ভারতীয় ছবিগুলো মুক্তি দেওয়ার জন্য প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের সঙ্গে এখন শেষ মুহূর্তের কথাবার্তা বলছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও যশোরের অভিজাত কয়েকটি সিনেমা হলে আগামী ২৩ ডিসেম্বর ভারতীয় বাংলা ছবি ‘জোর’ মুক্তি দেওয়ার জন্য বুকিং দেওয়াও হয়ে গেছে।

এদিকে ফেব্রুয়ারী থেকে আমদানীকৃত নয়টি হিন্দি চলচ্চিত্র পর্যায়ক্রমে প্রদর্শনের জন্য সেন্সরবোর্ড থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যেখানে দেশের সকল চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট মহল ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানী ও প্রদর্শনীর বিরোধীতা করছে, সেখানে সরকার কার স্বার্থ রক্ষা করার জন্য আমাদের সাংস্কৃতিকে ধ্বংস করে ভারতীয় সাংস্কৃতির পৃষ্টপোষকতার এজেন্সী নিয়েছেন? সরকারের এই সিদ্ধান্তটি কি কোন অশুভ কর্মের ইঙ্গিত বহন করেনা? বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে ধ্বংস ও আমাদের সাংস্কৃতিকে আগ্রাসনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশে কি কোন সাংস্কৃতিক জোট নেই। সম্মিলিত সাংস্কুতিক জোট নামের সেই প্রতিবাদী সংগঠনটি কি সরকারের তল্পিবাহক হিসাবে ভারতীয় সাংস্কৃতি বিকাশের এদেশীয় এজেন্ট হিসাবে নিয়োগ হয়ে গেছে? এই প্রতিবাদী সংগঠনটির ঐতিহ্য কি গণভবনের ড্রয়িং রুমে চা-নাস্তার সাথে এর নেতারা গলধকরণ করে ফেলেছেন?

বাংলানিউজ২৪.কম-এ প্রকাশিত দেশের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কয়েকজন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানী প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়ামুলক বক্তব্যগুলো এক নজর দেখি-

চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদঃ

‘বাংলাদেশের ছবির প্রযোজকরা বলেছেন, ভারতীয় ছবি এদেশে এলে বাংলাদেশের ছবির বারোটা বেজে যাবে। প্রতিযোগিতায় আমরা টিকতে পারব না। আইন করে আমাদের প্রতিযোগিতার বাইরে রাখতে হবে। স্বয়ং বঙ্গবন্ধুও আমাদের প্রটেকশন দিয়েছেন ইত্যাদি। সারভাইভাল অফ দি ফিটেস্ট বলে যে কথাটি আছে আমাদের দেশের চিত্র নির্মাতারা সেটা জানেন না। এই দেশের আইন হলো আনফিটকে সারভাইভ করার সুযোগ দেওয়া। এরচেয়ে হাস্যকর কিছু হতে পারে বলে আমি মনে করি না।’

নায়করাজ রাজ্জাকঃ

‘ভারতীয় হিন্দি চলচ্চিত্র আমাদের দেশে আসা মানে, আমাদের নিজস্ব যে সংস্কৃতি আছে, সেটুকুও শেষ হয়ে যাওয়া।’

চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম

‘পাকিস্তানে ভারতীয় ছবি প্রদর্শনের ফলে সে দেশের চলচ্চিত্রশিল্প রুগ্ন হয়ে গেছে। বাংলাদেশে ভারতীয় ছবি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হলে এ দেশের চলচ্চিত্রের অবস্থা হবে আরো করুণ। আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পের অস্তিত্ব হবে হুমকির সম্মুখিন।’

নায়ক আলমগীর

‘এদেশে বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ভিত্তিপ্রস্তর গড়ে এফডিসি নির্মাণ করেছিলেন, সেটাও আর থাকবে না।’

চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম

‘দুই দেশের মধ্যে একটা বিনিময়চুক্তি হতে পারে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে আমাদের দেশ থেকে তারা বাংলা ছবি নেবে, তবেই আমরা তাদের দেশ থেকে বাংলা ছবি আনতে পারি। হয়তো সেখানে বছরে কয়েকটি হিন্দি ভালো ছবি আসতে পারে। দুই দেশের মধ্যে চলচ্চিত্র বিনিময়ে অবশ্যই ভারসাম্য থাকতে হবে।’


উপরোল্লিখিত চলচ্চিত্রবোদ্ধারা আজীবন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে করে গেছেন সমৃদ্ধ। দিয়েছেন অফুরন্ত। তাদের নির্মান করে দেওয়া পথ ধরে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প হাঁটিহাঁটি-পাপা করে পাড়ি দিয়েছে অনেক পথ। সেই পথ ধরে আমাদের চলচ্চিত্র এখন বিশ্বমানের চলচ্চিত্র নির্মানের দোরগোড়ায়। আমাদের চলচ্চিত্রগুলো এখন বিদেশে বেশ প্রসংসিত হচ্ছে। দু'একটি পুরুস্কারও হাতিয়ে নিচ্ছে। এখানেই ভারতের হিংসা। এই উপমহাদেশের একমাত্র দেশ ভারত তার চলচ্চিত্র শিল্পকে বিনোদনের মাধ্যম হিসাবে বিশ্ব চলচ্চিত্র আসনে শক্ত একটি জায়গা করে নিয়েছে এবং এ শিল্পটির মাধ্যমে তারা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করছে। উপমহাদেশে ভারতের এই একক বাজার আধিপত্যে কোনভাবেই দ্বিতীয় কোন দেশকে নুন্যতম ভাগ দিতে রাজী নয়। ভারত ভাল করেই জানে একক বাজার তৈরীতে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কোন বিকল্প নেই। সেই মনোবৃত্তি থেকেই বাংলাদেশে স্যাটেলাইট আগ্রাসন ছিল প্রথম ধাপ। এটিতে তারা সফল। দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে তাদের চলচ্চিত্রকে আমাদের বাজারে অবাধ ও এককভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। ভারতের বাজার সম্প্রসারনের এদেশীয় এজেন্ট হিসাবে বর্তমান সরকারকে তারা ব্যবহার করছে। আর নির্লজ্জ্বভাবে আওয়ামীলীগ ভারতের স্বার্থ রক্ষার জন্য দেশের স্বার্থকে একের পর এক জলাঞ্জলী দিয়ে দেশকে ভারতে একটি অঙ্গরাজ্যে পরিণত করছে।

এই চক্রান্তে আমাদের করণীয়ঃ
যখনই এদেশের বিরুদ্ধে দেশীয় অনুচরদের মাধ্যমে বিদেশী শক্তির চক্রান্ত হয়েছে অদম্যচিত্তে এগিয়ে এসেছে তরুণ প্রজন্ম। দেশাত্মবোধের তারুণ্যের স্ফুলিঙ্গের লেলিহান শিখায় জ্বালিয়ে দিয়েছে সকল চক্রান্তের জাল। আজও সে সময় এসেছে। হেলাল হাফিজের সেই বিখ্যাত কবিতা-

'এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়'

এর আগুন ছড়িয়ে দিয়ে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। ভারতের এই সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের পরিকল্পনাকে নস্যাত করার জন্য সকলের কন্ঠ ও মুষ্টিবদ্ধ হাতকে এক করতে হবে। পৃথিবীর সকল জাতি ও দেশকে বুঝিয়ে দিতে হবে আমরা মেরুদন্ডহীন নয়। জাতি হিসাবে আছে আমাদের একক সত্ত্বা। ভারতের কাছে আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ আশাকরি। আমরা সংস্কৃতি আগ্রাসন নয়, সাংস্কৃতি বিনিময় চাই। এ প্রেক্ষিতে আমার কিছু প্রস্তাবনাঃ

১. ভারতের সাথে যৌথ বিনিয়োগে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোই শুধু উভয় দেশে একসাথে প্রদর্শণ করা যেতে পারে। এটির জন্য দুই দেশের উচু পর্যায়ের একটি সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে বৎসরে কমপক্ষে পাঁচটি চলচ্চিত্র নির্মান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

২. ভাল চলচ্চিত্রগুলোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটি চলচ্চিত্র ভারতে এবং ভারতের একটি বাংলাদেশে প্রদর্শণ করা যেতে পারে। তবে সেই সংখ্যা বৎসরে কোনভাবেই পাঁচটির উর্দ্ধে নয়। এটি একটি উভয় দেশের সাংস্কৃতিক চুক্তির আওতায় হতে পারে।

৩. উভয় দেশে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ের চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের চলচ্চিত্রগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে সমানুপাতিক হারে ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শণ করা যেতে পারে।

৪. স্যাটেলাইট চ্যানেলের ক্ষেত্রে দুই দেশে অভিন্ন আইন হতে হবে। স্যাটেলাইট চ্যানেল প্রচারের ক্ষেত্রে ভারতের ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাঁধাগুলো দুর করে দুই দেশের দর্শকদের জন্য উভয় দেশের চ্যানেলগুলোকে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। অন্যথায় ভারতের সবগুলো চ্যানেল ক্যাবল অপারেটরদের বর্জন করতে বাধ্য করা হোক।

আসুন, ভারতের এই সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। পাড়ায় পাড়ায় আমরা তরুণ প্রজন্ম ক্যাবল অপারেটরদের সবগুলো ভারতের চ্যানেল বর্জন করার জন্য উৎসাহিত করি। নিজেরা বর্জন করি। ক্যাবল অপারেটরদের আন্দোলনে একাত্ম করে নেই। প্রয়োজনে তাদেরকে ভারতীয় চ্যানেল প্রচারে বিরত রাখতে বাধ্য করাই। কোনভাবেই ভারতীয় চলচ্চিত্রের অবাধ প্রবেশকে আমরা মেনে নেব না। যেভাবে আমরা মেহেরজানকে বর্জন করেছিলাম, প্রতিহত করেছিলাম। ঠিক সেভাবেই ভারতীয় চলচ্চিত্রকে সিনেমা হলে প্রদর্শন করতে দেবনা। এদেশ আমাদের। যেকোন ধরনের আগ্রাসনে আমাদেরকেই রুখে দাঁড়াতে হবে। তারুণ্যের জয় হবেই হবে

এক্ষেত্রে আমরা যা করতে পারিঃ (এগুলো আমার ব্যক্তিগত চিন্তা)
১. চলচ্চিত্র সমিতির বর্তমান হোমরা চোমরা যারা আছে তারা নিশ্চই এইটা নিয়ে একটা কর্মসূচির চিন্তা করতেছে- তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে হবে। াদের জানাইতে হবে যে, সাধারণ মানুষ ও তাদের সাথে আছে।

২. যাদের এইসব হোমরা-চোমরা পর্যন্ত পৌঁছোবার মত লিঙ্ক আহে তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে তাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে এ ব্যাপারটা জানান। আর জেনে নিন তারা সাংগঠনিকভাবে কী ধরণে কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে!?

৩. এক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরে প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে-

*বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে চলচ্চিত্র সংসদ গুলো রয়েছে তাদেরকে একত্রিত করা হোক!
*এই ব্লগেই অনেকে আছেন আমি জানি যারা নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ এর সাথে জড়িত- তারা নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করুন!
*এর পর আলাদা আলাদা ভাবে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবাদ জানানো হোক সশরিরে! সেই প্রতিবাদের ছবি শেয়ার হোক ফেসবুকে!! শতে শতে, হাজারে হাজারে...
*এরপর তাদের পক্ষ থেকে একাত্মতা জানানো হোক দেশী প্রযোজক-পরিচালকদের সাথে!
৪. এর পর একটা বড়সর শো ডাউনের ব্যবস্থা করা হোক! প্রথমত একটা মানব-বন্ধনের আয়োজন করা হোক! তারপরেই নেয়া হোক ঘেরাও কর্মসূচি! যেই যেই প্রেক্ষাগৃহে হিন্দি ছবি প্রদর্শন হবে- সেখানেই ঘেরাও দেয়া হোক!

এতে দুটো লাভ! এক হচ্ছে- হল মালিকদেরকে পাব্লিক সেন্টিমেন্ট জানিয়ে দেয়া যাবে- তাতে করে তারা পিছুহটার চিন্তা করবে! আর ২য়ত, যেই একদল হিজড়া হিন্দি ছবি দেখতে আসবে- তারাও গ্যাঞ্জামের ভয়ে হলমুখো হবে না! আর যেহেতু সারাদেশে খুব বেশি হলে হিন্দি ছবি মুক্তি পাচ্ছে না- সেহেতু এই জাতীয় ঘেরাও কর্মসূচি সফল করা খুব কঠিন কোনো কাজ হবে না!
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×