
গতকাল আন্তর্জাতিক মিডিয়ার বেশীরভাগ নিউজ হেডলাইন ছিলো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাড়িতে এফবিআই'র তল্লাশী..... জানিনা ক্ষমতাচ্যুতির দুই বছর পর গাধা মার্কা খানাতালাশি করে হাতী মার্কার কি আলামত খুঁজে বের করবে.....
ওরা খুঁজে পাক কিম্বা না পাক তা নিয়ে আমার মতো ম্যাংগো পিপলের কোনো কৌতূহল নাই। তবে ট্রাম্পের নোংরামির বিষয়গুলো মনে পরছে.... সেই সংগে ট্রাম্পের স্বভাব সহোদর বৃটিশ বরিস জনসনের কথা। এই দুইজনের গুরুজীর কথা কথা বলা যাবে না.... তাই বলেতো শিষ্যের কথা বলতে মানা নাই।
একযুগ আগেও ব্যাক্তির ব্যাক্তিত্ব মাপা হত মাপা কথার বিচারে। যে যত গুছিয়ে কম কথা বলে, তার প্রতিই শ্রদ্ধা থাকত। বাচালদের জন্য নয়। এখন যে যত বাচাল, যত ব্যাক্তিত্বহীন তাঁকে ঘিরে হইচই। যাঁর যত অশ্লীল জোকারগিরি, যত বড় বেফাঁস কথা, তাঁর জন্য তত হাততালি(অবশ্য এই হাততালি দেওয়া ভাঁড়গুলো সবাই সুবিধাবাদী)।
শুধু বংগদেশে যে আর এ রোগ নেই, এটাই স্বস্তি। সব দেশ সমান। এখনকার বিশ্বে যত উল্টোপাল্টা কথা বলা যায়, তত বেশি জনপ্রিয়তা।
আমেরিকা-ব্রিটেন, যে দুটো দেশ অধিকাংশ বিশ্ববাসীর কাছে উন্নয়নের মাপকাঠি, সেখানে এই রোগ আরও প্রকট। আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্পের পর বৃটিশ বরিস জনসন। এঁরা এক এক জন যা কথা বলতেন, বলেন শুনলে মনে হবে- এ সব কথা বলা যায়?
এই যে ট্রাম্পকে আসন ছেড়ে চলে যেতে হল, জনসনকেও- এটা একরকম শিক্ষা। যাক, দেশে গনতন্ত্র থাকলে একদিন না একদিন বাচালদের সরিয়ে দেবেই জনগণ। দেরি হলেও সরে যেতে হবে।
ট্রাম্প ও জনসনের এক একটা বাক্য শ্লীল-অশ্লীলের পাহাড় পেরিয়ে যেত। এক একটা বাক্য হয়ে যেত অজ্ঞানতার কিংবা অভদ্রতার ফলক। এক একটা বাক্য, বড় বড় কথা এবং নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ানো- কী এসে যায় তাতে? যত অভদ্রতা দেখাবেন, ততই পদলেহনকারীদের কাছে জনপ্রিয়তা বাড়বে। বিপরীত লিংগ ঘটিত কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে থাকলেও কিস্যু এসে যায় না। যত বিতর্কে জড়াবেন, তত তালিয়াবাজদের চোখে নায়ক। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জনতাও বুঝতে পারবে.....
আমেরিকান প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কিছু বাণী যা বিভিন্ন সময় পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিলঃ-
(১) "সব মহিলাই আমার সঙ্গে ফ্লার্ট করতে চায়। সব বুঝে কিংবা না বুঝে। এটা একেবারে প্রত্যাশিত ব্যাপার"।
(২) "ইভাঙ্কা যদি আমার মেয়ে না হতো, ওর সঙ্গে ডেট করতাম আমি"।
(৩) "ইটস ফ্রিজিং অ্যান্ড স্নোয়িং ইন নিউ ইয়র্ক- উই নিড গ্লোবাল ওয়ার্মিং"।
(৪) "আমার সৌন্দর্য হল, আমি খুবই বড় লোক। আমি আমার পুরো সম্পত্তির জন্য গর্বিত। ৮৭৩৭, ৫৪০, ০০০ ডলার। আমি একটা দারুণ কাজ করেছি"।
(৫) "কালোদের সঙ্গে আমার দারুণ সম্পর্ক"।
(৬) "আরিয়ানা হাফিংটন ভিতরে ও বাইরে অত্যন্ত কুৎসিত। আমি ভালো করে বুঝতে পারি, কেন ওর স্বামী ওকে ছেড়ে গিয়েছে। ভদ্রলোক ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন"।
(৭) "আই উইল বি দ্য গ্রেটেস্ট জবস প্রেসিডেন্ট দ্যাট গড এভার ক্রিয়েটেড"।
(৮) "যখন মেক্সিকো আমাদের দেশে লোক পাঠায়, তারা হয় রেপিস্ট হয়। কিংবা ড্রাগ আনে বা ক্রাইম আনে।
(৯) আমার প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে ফারাক হল, আমি অনেক সৎ। আর আমার সব নারীরা সুন্দরী"।
(১০) "হার্টের মধ্যে কিডনির একটা বিশেষ জায়গা রয়েছে"!
সদ্য প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কথার শ্রীও কী কম! শোনা যাক বিভিন্ন সময় যা পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিলঃ-
(১) "মালয়েশিয়ায় মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় বিয়ে করার জন্য ছেলে খুঁজতে"।
(২) "হিলারি ক্লিন্টনকে একেবারে মানসিক হাসপাতালের নার্সের মতো দেখতে। মোটা ঠোঁট, ডাই করা চুল"।
(৩) "লিবিয়ার এই শহরে যুদ্ধ হচ্ছে তো কী, এখানে ইনভেস্টররা এলে সব মৃতদেহ সরাবে। দারুণ একটা বিলাসবহুল রিসর্ট হতে পারে এখানে"।
(৪) "মেয়েদের বোরখা পরা মুখ একেবারে লেটারবক্সের মতো। আমার কেন্দ্রে কেউ বোরখা পরে এলে বলব, ওটা সরান। তা হলে ঠিকঠাক কথা বলব। বোরখা পরা দেখলে ব্যাঙ্ক ডাকাতদের কথা মনে হয়"।
(৫) "বাশার আল আসাদ। হুররে, আই সে। ব্র্যাভো- কিপ গোইং"।
(৬) "টোরি পার্টিতে ভোট দিলে আপনার স্ত্রীর স্তন বিশাল হবে আর আপনার বিএমডব্লিউ এমথ্রি গাড়ি হবে"।
(৭) "লন্ডন হল আথেন্স ও রোমের পর ইউরোপের সবচেয়ে প্রভাবশালী শহর"।
(৮) "নেপোলিয়ান, হিটলার সমেত আরও অনেক নামীরা একই কাজ করতে গিয়ে ট্র্যাজেডির শিকার হয়েছে। একই জিনিস ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন করতে চায় অন্য ভাবে"।
(৯) "একেবারে জোকারের মতো দেখতে হলে কী হবে, পুতিন হল নৃশংস আর অঙ্ক কষে চলা এক একনায়ক"।
(১০) "আমার মতো যোগ্য এখন ক’জন আছে আমাদের রাজনীতিতে"?
আরও কত মিল দু’জনের। দু’জনের নামেই জড়িয়ে নারী ও অর্থ সংক্রান্ত কেলেঙ্কারি। দু’জনের চুলের স্টাইলটাই অন্য রকম, কেমন বোকা বোকা, বলদা বলদা। ইংরেজরা জনসনের মধ্যে খুঁজে পেতেন ট্রাম্পকে। আমেরিকানরাও খুঁজে পান ট্রাম্পের মধ্যে জনসনকে!
বরিস জনসন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন শুনে উদ্ভাসিত ট্রাম্প বলেছিলেন, "ইংল্যান্ডের লোকেরা ওকে বলে, ব্রিটেনের ট্রাম্প। ভালো, ভালো। ওখানে আমাকে পছন্দ করে লোকে। এ রকমই লোক চেয়ে এসেছে"!
অন্য দেশ আসা মানুষের স্রোত দেখে আমেরিকা এবং ব্রিটেনের সাধারণ মানুষের একটা ক্ষোভ রয়েছে। সেই ক্ষোভগুলো উস্কে দিয়েছেন দু’জনেই। ট্রাম্প মেক্সিকানদের আক্রমণ করেছেন প্রবল ভাবে। জনসন বলেছেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে না বেরোলে তুরস্ক হয়ে সিরিয়ান শরণার্থীরা চলে আসবেন ব্রিটেনে। ট্রাম্প বানিয়েছেন মেক্সিকোর সীমান্তে দেওয়াল। জনসন চেয়েছেন ২৮ দেশ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে রাখতে।
বড় বড় কথা, অর্থ কেলেঙ্কারি, বেফাঁস মন্তব্য, নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ানো- এ সব দেখিয়েও আপনি গনতন্ত্রহীন দেশে টিকে গেলেও গনতান্ত্রিক দেশে বেশীদিন টিকতে পারবেননা। সব বদলে যাচ্ছে। কিছু করার নেই। এটাই এখনকার পৃথিবী। ভালো দিক হল, পৃথিবী বুঝতে পারছে তাঁদের ছলচাতুরী।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



