somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

হাওড়া ব্রিজ দর্শন এবং .....

১৪ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাওড়া ব্রিজ দর্শন এবং .....

১৯৮০ সনে আমি আর বন্ধু দেবনাথ ইন্ডিয়া যাই। পরিবারের বয়জেষ্ঠদের ছাড়া একক ভাবে প্রথমবার আমার ইন্ডিয়া ভ্রমণ। দেবনাথ আগেও একাধিকবার গিয়েছে- ওর কাকার কোলকাতার দক্ষিনেশ্বর বাড়িতে। দেবনাথ ওর কাকাদের বাড়িতে উঠলেও আমি হোটেলে উঠেছি- তবে প্রথমদিন খাওয়া দাওয়া ঐ কাকার বাড়িতেই করেছি। প্রথম দুইদিন দেবনাথের কাজীনদের সাথে দক্ষিনেশ্বর মন্দির, ফোর্ট উইলিয়াম, আলীপুর চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ঘুরে দেখে পরদিন একাকী হাওড়া ব্রিজ দেখে বের হই।


১৮৫৭, সিপাহী বিদ্রোহ দমন করে ব্রিটিশরা জাঁকিয়ে বসল ভারতের মাটিতে। ব্রিটিশ শাসনের রাজধানী ছিল কলকাতা। এই দেশের নানান সম্পদ বিদেশে রপ্তানি হতে শুরু করে। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ল এবং পণ্য সামগ্রীর বিনিময়কে সহজ করার জন্য ১৮৬০ সালে তৈরি হল হাওড়া স্টেশন। কিন্তু রাজধানীর সাথে কীভাবে যোগাযোগ হবে? বাণিজ্য বাড়ার সাথে সাথে শুধুমাত্র জলপথে কেবল জিনিসপত্র ও যাত্রীর আনাগোনা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই হাওড়া ও কলকাতাকে সংযোগকারী একটি সেতু নির্মাণের চিন্তাভাবনা করা হল। ১৮৭১ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক পাস হল “The Howrah bridge Act” এবং কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টকে এই সেতুটি নির্মাণের তদারকি করার দায়িত্ব দেওয়া হল।

এরপর বিখ্যাত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার স্যার ব্র্যাড ফোর্ড লেসলির সাথে হুগলী বক্ষে একটি ভাসমান ব্রিজ তৈরি করার চুক্তি হল। তবে সেতুটি নির্মাণকালে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও ১৮৭৪ সালে ব্রিজটির পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়। এই ব্রিজটি তৈরি করতে খরচ হয়েছিল প্রায় ২২ লক্ষ টাকা। ব্রিজটির বিভিন্ন অংশ ইংল্যান্ড থেকে আমদানি করে এখানে সংযোগ করা হয়। ব্রিজটি ছিল ১৫২৮ ফুট লম্বা, ৬২ ফুট চওড়া। নদীর জলতল থেকে ব্রিজটির উচ্চতা খুব বেশি না হওয়ায় জাহাজ বা স্টিমার যাতায়াত করলে ব্রিজটি মাঝখান থেকে খুলে দেওয়া হত। তার জন্য বেশ কিছুক্ষণ ব্রিজের ট্র্যাফিক বন্ধ থাকত। এছাড়াও ব্রিজটির বহন ক্ষমতা খুব সীমিত ছিল এবং এটি বানানো হয়েছিল স্বল্পমেয়াদী চিন্তাভাবনা করে।

পরিকল্পনার পর্যায় থেকেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সহ অন্যান্য নানান বাধা পার করে অবশেষে ১৯৩৭ সালে রেন্ডল পামার অ্যান্ড ট্রেটন কোম্পানির চিফ ড্রাফটসম্যান মি: ওয়ালটন-এর ডিজাইন অনুযায়ী শুরু হয় হাওড়া ব্রিজ নির্মাণের কাজ। ব্রিজ নির্মাণের তত্ত্বাবধানে ছিল ক্লিভল্যান্ড ব্রিজ অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। সহযোগী ছিল ব্রেথওয়েট বার্ন অ্যান্ড জেসপ কনস্ট্রাকশন কোম্পানি।
কিন্তু আবারও বাধা। ১৯৩৯ সালে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ফলে যে ব্রিজটি তৈরীর জন্য প্রয়োজন ছিল ২৬০০০ টন স্টিল, তার মাত্র ৩০০০ টন স্টিল দেওয়ার পরেই ইংল্যান্ড থেকে বন্ধ হয়ে যায় স্টিলের supply। কিন্তু ব্রিজটি তো অত্যন্ত জরুরি। তাই তখন ভারতের টাটা স্টিল কোম্পানি প্রস্তুত করে বাকি ২৩ হাজার টন হাইটেনশন স্টিল এবং প্রায় ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি হয় ২৩১৩ ফুট দৈর্ঘ্য, ৭১ ফুট প্রস্থ ও ২৬৯ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন হাওড়া ব্রিজ। এই ব্রিজের আরো একটি আশ্চর্যজনক বিষয় এই বৃহৎ ব্রিজটি তৈরি করতে কোন নাট বল্টু ব্যবহৃত হয়নি। অবশেষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাপানিজদের সম্ভাব্য আক্রমণের ভয়ে অনাড়ম্বরভাবেই শুধুমাত্র একটি ট্রাম চালিয়ে উদ্বোধন করা হয় এই বিখ্যাত হাওড়া ব্রিজের।
আমি সেই হাওড়া ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে! সাথে আছে আমার প্রিয় Yashica 35mm Camera....একা একা অনেক ছবি তুলেছি। উল্লেখ্য যে, আমার সাথে জাপানী ক্যামেরা দেখে- দেবনাথের কাজীন পরিবারের সবাই অবাক! কারণ, ইন্ডিয়াতে তখন বিদেশী ক্যামেরাসহ অনেক বিলাশ দ্রব্যই সাধারণ মধ্যবিত্ব পরিবারের কল্পনাতীত!


তখনও সেলফির চল ছিলনা।
হাওড়া ব্রিজের সাথে নিজের কিছু স্মৃতিচিহ্ন রাখতে একজন যুবক বয়সী পথচারীকে অনুরোধ করলাম- কয়েকটা ছবি তুলে দিতে। যুবক আমাকে জিজ্ঞেস করলেন- "দাদা আপনি কি জয়বাংলা থেকে এসেচেন?"

আমি হ্যা বললাম। যুবক আবার জিজ্ঞেস করলেন,- "কোতায় উটেচেনগো দাদা?" আমি বললাম- প্রিন্সেপ স্ট্রিট, গুলশান লজ।
এবার যুবকের মুখে প্রসস্থ হাসি- "বলেন কি দাদা, আমিওতো ওইদিকেই থাকি......"!

ইয়াং স্মার্ট পথচারী খুশী হয়ে রাজী হলেন ছবি তুলে দিতে। ছবি তোলার প্রাথমিক নিয়ম শিখিয়ে দিয়ে নিজে পোজ দিয়ে দাঁড়িয়েছি। ক্যামেরা ম্যান আমার তিন চারটি ছবি তুলে একটা খাম্বার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়াতে বলে- "দাদা, ওই পজিশনে আপনার ছবি খুব ভাল লাগবেগো...."-

আমি খাম্বার সাথে হেলান দিয়ে বাংলা সিনেমার হিরোর মতো দাঁড়িয়ে আছি.... ক্যামেরাম্যান আমাকে "স্মাইল প্লিজ, একটু ঘুরে দাঁড়ান...."- আমি ঘুরে দাঁড়াতেই সদ্য নিযুক্ত ক্যামেরাম্যান আমার ক্যামেরা নিয়ে ভোঁদৌড়!

আমি চেয়ে চেয়ে দেখলাম- তুমি চলে গেলে..... আমার বলার কিছু ছিলো না.....

(হাওড়া ব্রিজের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও ছবি গুগল থেকে নিয়েছি)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৯
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=একটি ডায়াটের গল্প, যেভাবে ওজন কমিয়েছিলাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮


১৬ ডিসেম্বরের খাবার ছিল। উপরের চায়ের ছবিতে ফেসবুকের দুই গ্রুপে দুটো পুরস্কার পেয়েছি প্রতিযোগিতায় আলহামদুলিল্লাহ।

মোবাইলে পোস্ট, ভুল ত্রুটি থাকিতে পারে, মার্জনীয় দৃষ্টিতে রাখবেন।

জব করি বাংলাদেশ ব্যাংকে। সারাদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

'আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান'

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৯



১। মার্টিন লুথার কিং ১৯৬৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
আমাদের মহাত্মা গান্ধীর কর্মকান্ড লুথার খুবই পছন্দ করতেন। ১৯৫৫ সালে লুথার বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ফিলোসোফি ডিগ্রি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতের কি করণীয় ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৭


গত মে মাসে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ফটোকার্ডে দেখানো হয়েছিল ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের তালিকা। তখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও এখন পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে। গত ১১... ...বাকিটুকু পড়ুন

খাম্বার পরবর্তী অধ‍্যায় ,নাকি ১০% বদল হবে‼️অমি খোয়াব ভবনে ঘুমিয়ে , হাওয়া ভবনের আতঙ্কে আতঙ্কিত॥

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৮



খালেদা জিয়ার অসুস্থতার নাটক ছিল তারেক জিয়ার দেশে ফেরার রাজনৈতিক ট্রাম্পকার্ড। কথায় আছে,' দুষ্টু লোকের মিষ্টি ভাষা '। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দূর্নীতিবাজ ও মাফিয়া গডফাদার তারেক রহমানের দেশে ফেরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদার ১টি প্ল্যান ছিলো, মহা-ডাকাতের ১টি প্ল্যান আছে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:২৩



২০১৪ সালের ভোটের আগে খালাদা বলেছিলো যে, তার কাছে ১টা প্ল্যান আছে, যা ১ বছরের মাঝে বেকার সমস্যা ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করে দিবে। তিনি প্ল্যানটি প্রকাশ করেননি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×