ছোটোবেলা থেকে ফটিক ভাবতো ইতিহাসে রাজা-রাণীদের নামের পর ১, ২, ৩, ৪ থাকে কেন?
যেমন রাজা জেমস ১, রাজা জেমস ২, বা রাণী প্রথম এলিজাবেথ, দ্বিতীয় এলিজাবেথ বা প্রথম চন্দ্রগুপ্ত, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত- ইত্যাদি।
ফরাসি বিপ্লবের সময় একটা নাম ফটিকের খুব মনে দাগ কেটেছিলো- ষোড়শ লুই! মানে এর আগে আরও পনেরোজন ছিলো যার নাম ‘লুই’ ছিলো। তখন ফটিক ভাবতো, যদি এতগুলো লুই ইতিমধ্যেই জন্মলাভ করে গিয়ে থাকে, তাহলে লুই- এর বাবা-মা লুই অন্য কোনো নাম রাখছে না কেন? আর এই ষোড়শ লুই- এর ছেলে হলেও আবার তার নাম রাখা হবে সপ্তদশ লুই! এ কেমন সিস্টেম?
ছোটোবেলায় পরীক্ষায় প্রশ্ন এসেছিলো- তোমার নাম, তোমার বাবার নাম, আর পিতামহের নাম লেখো। এবার পরীক্ষার টেনশনে ফটিক নিজের নাম আর বাপের নাম ভুলেই গেছিলো, কিন্তু দাদুর নাম তার মনে ছিলো। ধরা যাক দাদুর নাম দোলগোবিন্দ। তো ফটিক বাবার নামের জায়গায় "দোলগোবিন্দ- ২", আর নিজের নামের জায়গায় লিখেছিল "দোলগোবিন্দ- ৩"। এমনকি এই সিস্টেমটা ফটিকের এত ভালো লেগে গেছিলো, যে ফটিক নিজের নাম ব্যবহার করাই ছেড়েই দিয়েছিলো। পরীক্ষায় রেজাল্ট বেরোবার দিন স্যার বললেন- "ফটিক তুই একটা অপদার্থ!"
ফটিক বলল - স্যার, আমি ফটিক না, এখন থেকে আমার নাম "দোলগোবিন্দ- ৩"।
কেউ বাড়িতে ফোন করে হয়তো বললো বাবাকে ডেকে দিতে, ফটিক বলতো- "দোলগোবিন্দ- ২ এখন শৌচাগারে আছে, পরে ফোন করুন।"
ছোটোবেলায় ফটিক এক সমবয়সী মেয়ের সাথে 'ঘর-ঘর, বৌ-বৌ' খেলছিল, তারা বর-বউ হয়েছিলো। ফটিক বললো- "এবার আমাদের ছেলে হবে, আর ওর নাম হবে- দোলগোবিন্দ- ৪ বা দোলগোবিন্দ রিটার্নস"। এটা শুনে ফটিকের সাথে যে মেয়েটি ঘর ঘর খেলছিলো সে বলেছিলো- "এমন ব্যাঙের নাম যদি আমার ছেলের রাখা হয়, আমি খেলবোই না!"- বলে মেয়েটি চলে গিয়েছিলো।
একবার ফটিক স্বপ্ন দেখেছিল যে তার বিয়ে হয়েছে, আর বিয়ের পর তাদের দুটো ছেলে হয়েছে, আর তাদের নাম রেখেছে যথাক্রমে ‘দোলগোবিন্দ- ৪’ আর ‘দোলগোবিন্দ- ৫’। তারপর কোথা থেকে তার একজন অবৈধ স্ত্রী এসে দাবী করছে যে ফটিকের সাথে তার নাকি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক আছে এবং তাদের দুজনের নাকি একটি গোপন সন্তানও আছে, যার কথা ফটিক তার স্ত্রীর কাছে লুকিয়ে গেছে। এবার ফটিকের অবৈধ স্ত্রী দাবী করছে যে তাদের এই সন্তানকেও এখন স্বীকৃতি দিতে হবে এবং এ যেহেতু ফটিকের সেজ ছেলে তাই এর নাম রাখা হয়েছে "দোলগোবিন্দ ৪.৫(চার দশমিক পাঁচ)"। তারপর এই নাম রাখা নিয়ে ফটিকের সব কটি ছেলের মধ্যে লড়াই শুরু হয়ে গেছে। ফটিক স্বপ্নের মধ্যেই চেঁচিয়ে উঠে -"উফ দোলগোবিন্দের দল তোমরা একটু শান্ত হও, চুপ করো!’
সেইদিন ফটিকের বাবা গায়ে এক বালতি পানি ঢেলে তার ঘুম ভাঙায়, আর মারতে মারতে বলে যাচ্ছে - বদমাশ ছেলে, ফের যদি কোনোদিন দাদুর নাম ব্যবহার করে মস্করা করেছো, তো তোমার বাপের নাম ভুলিয়ে দেবো। মনে থাকবে?'
ফটিক বললো - হ্যাঁ মনে থাকবে, মিঃ দোলগোবিন্দ-২।
তারপর তার বাবা ওখানেই আরও দু ঘা দিয়ে দেয়।
এই ঘটনার পর থেকে ফটিক আর কখনো তার পিতামহের নাম ব্যবহার করেনি বরং ফের নিজের নাম ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছিলো।
(বিভিন্ন সময় প্রসংগত বলেছি- আমি গোপাল ভাঁড় সিরিয়ালের ভক্ত.... গোপাল ভাঁড় সিরিজ দেখে এই রম্যরচনা লিখে ফেসবুক ফান গ্রুপে পোষ্ট দিয়েছিলাম কয়েক বছর আগে... আজ একটা উপলক্ষে সেই পোস্ট ব্লগে শেয়ার করলাম)