somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ nnএক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

শপ লিফটিং………

১৫ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শপ লিফটিং………

কেস স্টাডি-১,
নিজের চোখে দেখাঃ- ধানমন্ডি এলাকার একটা বিখ্যাত ডিপার্টমেন্ট স্টোরে ক্রেতাদের ভীড় লেগেই থাকে। স্টোরের স্টাফদের মাঝখানে একজন বয়স্কা মহিলাকে নিয়ে জটলা এবং নিন্দা সূচক মন্তব্য……ঘটনাঃ ভদ্রমহিলা প্রায় ১৪ হাজার টাকার শপিং করেছেন। যার পেমেন্ট দিয়েছেন ডেবিট কার্ড দিয়ে। কিন্তু নিরাপত্তা কর্মীরা সিসিটিভিতে দেখতে পেয়েছে- তিনি দুটো লিপিস্টিক তার ব্যাগে ঢুকিয়েছেন, যার দাম দেননি। নিরাপত্তা কর্মীরা বিষয়টা ফ্লোর সুপারভাইজারের নজরে দেন। ক্রেতা মহিলা- এখানকার নিয়মিত কাস্টমার এবং প্রতিবেশী। ফ্লোর সুপারভাইজার ম্যানেজারকে জানালে তিনি ভদ্র মহিলাকে একপাশে ডেকে খুব বিনয়ের সাথে বললেন-“ম্যাম, ভুল করে আপনি দুটো লিপস্টিক ব্যাগে নিয়েছেন- যার পেমেন্ট করা হয়নি……”। মহিলা প্রথমে প্রতিবাদ করলেও পরে স্বীকার করে স্যরি বলে পেমেন্ট করে চলে যান……
ডিপার্টমেন্ট স্টোরের শাখা ম্যানেজার মহিলাকে চেনেন- জানেন। মাসে অর্ধলক্ষাধিক টাকার শপিং করেন এখান থেকেই। অনেক সময় ফোন করে প্রয়োজনীয় পণ্যের নাম বললেই স্টাফদের মাধ্যমে তাঁর বাসায় পণ্য পৌঁছে দিয়ে টাকা নিয়ে আসে।

কেস স্টাডি-২,
ডরিস পেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিজাত পরিবারের সন্তান হিসেবে জন্ম থেকেই সেলিব্রেটি। চুরি করতে শুরু করেছিলেন ২০ বছর বয়সে। তারপর এ বিদ্যাচর্চায় কেটে গেছে সাড়ে ছয় দশকেরও বেশি সময়। কিন্তু একটুও বিচ্যুত হননি তার এই নেশা কিংবা পেশা থেকে। তিনি অত্যন্ত চতুর রত্নচোর। বারবার গহনা বা রত্ন চুরির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। ১৯৫২ সালে প্রথম তাকে নিয়ে হইচই শুরু হয়। ১৯৭০-এর দশকে বাণিজ্য সংস্থা জুয়েলার্স সিকিউরিটি অ্যালায়েন্স ডরিসের বিষয়ে বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ করে। তাকে ঘিরে তৈরি হতে থাকে নাগরিক কিংবদন্তি। তার চুরির কথা প্রচারিত হয়েছে বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী গণমাধ্যমেও।

২০১৩ সালে ডরিসকে নিয়ে নির্মাণ করা হয় একটি তথ্যচিত্রও। ‘দ্য লাইফ অ্যান্ড ক্রাইমস অফ ডরিস পেন’ নামের সেই ছবিটি যথেষ্ট প্রশংসা পেয়েছিল সমালোচক-দর্শকদের। গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে ডরিস কিন্তু বেজায় সাবলীল। তথ্যচিত্রেই তিনি জানিয়েছেন, কোনোদিনই তিনি ‘চুরি করতে’ বের হননি। কিন্তু কোথা থেকে কী যে হয়ে যায়!

৮৬ বছরের ডরিস ভন মাউরের এক বিপণিতে শপ লিফটিংয়ের অভিযোগে ধরা পড়েন। সারা জীবন গণ্ডার মেরেছেন, ভাণ্ডার লুটেছেন। কিন্তু জীবন সায়াহ্নে এক সামান্য ছিঁচকে শপ লিফটিং! নিজের কাজের জন্য সারা জীবন লজ্জাহীন থাকা ডরিস কি এ বিষয়ে লজ্জা পাচ্ছেন? তার উত্তর ‘না’।

কেস স্টাডি-৩,
লিন্ডসে লোহান হতে পারতেন বিশ্বের শীর্ষ অভিনেত্রী ও সঙ্গীতশিল্পী। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত ও বিতর্কিত জীবনযাপনের কারণে দুনিয়াজোড়া পরিচিতি পেয়েছেন হলিউডের প্রবলেম সেলিব্রিটি হিসেবে। একটার পর একটা বিপদ তার লেগেই আছে লিন্ডসে লোহানের। অ্যালকোহল আসক্তির জন্য ১৩ দিন হাজতবাসের পর আদালতের নির্দেশে বেশ কিছুদিন রিহ্যাবে কাটিয়েছেন লোহান। কয়েক বছর আগে লিন্ডসে লোহানকে আড়াই হাজার ডলার মূল্যের নেকলেস চুরির সাজার অংশ হিসেবে অ্যান্টি শপ-লিফটিং থেরাপি সেশনে প্রতি সপ্তাহে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করেন। ওয়ার্ল্ড শোবিজে যখন লোহানের এগিয়ে যাওয়ার সময়, তখনই হলিউডের এই প্রবলেম চাইল্ডের খামখেয়ালীপনা মাথা চাড়া দেয়।

লিন্ডসে লোহান মাত্র তিন বছর বয়সে মডেলিংয়ের মাধ্যমে মিডিয়ায় পা রেখে নিজের প্রতিভার ঝলক দেখান। ছোট থেকেই মেরিলিন মনরো হওয়ার স্বপ্ন দেখে আসছেন। অল্প বয়সেই ফোর্ড, সিকে-এর মতো কম্পানির মডেল হয়েছেন। দশ বছর বয়সে `অ্যানাদার ওয়ার্ল্ড` নামের একটি সোপ অপেরায় অভিনয় করেন। আরেকটু বড় হলে সঙ্গীত আর অভিনয়ে অর্জন করেন বেশ সুনাম।

এছাড়াও বিভিন্ন সময় সংবাদের শিরোনাম হয়েছে- অমুক সেলিব্রেটি/ ধন্যাঢ্য ব্যক্তিত্ব সুপারশপ থেকে বক্স চকলেট কিম্বা একটা লিপস্টিক চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন। দোকানের সবাই তো বেশ অবাক। কারণ, যে বা যারা চকলেট/লিপিস্টিক চুরি করেছেন সে বা তারা সমাজে খুবই বিত্তশালী ব্যক্তিত্ব- তার সামান্য চকলেট বা লিপিস্টিক চুরি করার দরকার কী? পরে ‘ভুলেই এমন হয়ে গেছে, আন্তরিকভাবে দুঃখিত’ বলে কোন ভাবে বিব্রত অবস্থা থেকে জড়িমানা দিয়ে রেহাই পেলেও দাঁগ কিন্তু থেকেই গেলো!

উপরের তিনটি ঘটনায় চুরির সাথে সম্পর্কিত একটি মানসিক রোগ যার নাম ‘ক্লিপটোম্যানিয়া’। আর এই ধরনের চুরিকে ইংরেজীতে বলে- শপ লিফটিং এবং সোজা বাংলায় ‘হাত সাফাই’। শপ লিফটিং বা ক্লিপটোম্যানিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে তার ব্যক্তিগত বা আর্থিক সম্পর্ক নেই। কিন্তু চুরি করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে না! একজন চোর আর্থিক অভাব মেটাতে বা লাভবান হতে চুরির মত অপরাধ করে। আবার সাধারণ জীবনে বেখেয়ালে কারও ছোটখাটো জিনিস অন্যের হস্তগত হতে পারে। কিন্তু ক্লিপটোম্যানিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি কোন বাহ্যিক উদ্দেশ্য নিয়ে নয়- আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়েই চৌর্যবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ে।

অনেকের মতে, ক্লিপটোম্যানিয়া ওসিডি বা অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজিজেরই একটি অংশ – অর্থাৎ ব্যক্তি সচেতন ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার অবচেতন মনের অনাকাঙ্ক্ষিত ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দেয়। এক্ষেত্রে চুরি করার পরে ব্যক্তি প্রচণ্ড মানসিক চাপ থেকে সাময়িকভাবে রেহাই পায়। সাধারণভাবে ক্লিপটোম্যানিয়া অন্যান্য মানসিক সমস্যা- মনমেজাজের ভারসাম্যহীনতা, হতাশা,দুশ্চিন্তা, মাদকাসক্তি, খাদ্যগ্রহণঘটিত মানসিক রোগ যেমন- বুলিমিয়া নার্ভোসার সাথে সম্পর্কিত থাকে।

ক্লিপটোম্যানিয়ার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও প্রচলিত তত্ত্ব অনুসারে- মস্তিষ্কের একটি নিউরোট্রান্সমিটার সেরাটোনিনের কম নিঃসরণই এ আচরণের জন্য দায়ী। কারণ সেরাটোনিনই আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। হতাশা, দীর্ঘদিন ধরে বয়ে বেড়ানো মানসিক চাপ ও সমস্যা, ব্যক্তিগত সমস্যার পারিপার্শ্বিকতায় এ রোগ হতে পারে। এ রোগের সাথে বংশগত মানসিক রোগের যোগসূত্রও থাকতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে বয়ঃসন্ধিকালে ও তরুণ বয়সেই এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এছাড়া নারীদের মধ্যে এ রোগে আক্রান্তের হার বেশি। এর কারণ হতে পারে- নারীদের মাঝেই বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে হতাশা ও অবদমিত আবেগজনিত সমস্যায় আক্রান্তের হার তুলনামূলক বেশি হয়।

ক্লিপটোম্যানিয়ার সাথে অন্য একটি মানসিক রোগ পাইরোম্যানিয়ার যোগসূত্র রয়েছে [ সম্ভবত এ রোগেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার মার্ক ভারমিউলেন আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট একাডেমির ভবনে]

ক্লিপটোম্যানিয়াকে একটি মানসিক রোগ হিসেবে বিবেচনা করেই এর চিকিৎসা করা প্রয়োজন। যে কোন মানসিক সমস্যাই প্রাথমিক ভাবে নিরাময় করা না হলে তা ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করে। আর এই রোগ চেপে রাখলে যেমন যত্রতত্র অপদস্ত হওয়া ও সামাজিক মর্যাদাহানির ঘটনা যেমন ঘটবে তেমনি তীব্র অপরাধবোধ,গভীর হতাশা ক্রমেই ব্যক্তির মানসিক ভারসাম্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। বিভিন্ন সাইকোথেরাপি- সি,বি, টি (কনজিনিটিভ বিহাভিয়ার থেরাপি) এবং ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে এ রোগের সুচিকিৎসা সম্ভব।

কৃতজ্ঞতাঃ কেস স্টাডি-২,৩ এবং ক্লিপ্টোম্যানিয়া সম্পর্কে সকল তথ্যসুত্র মনোচিকিৎসক ও কথাশিল্পী ডা. মোহিত কামালের ভিন্ন রকম উপন্যাস 'মন' থেকে নিয়েছি। সূত্র ঠিক রেখে নিজের মতো পরিমার্জিত।




সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ১১:১৮
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্মে পন্ডিত হতে কতক্ষণ লাগে, ফাইন্যান্সে পন্ডিত হতে কতক্ষণ লাগে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৫ শে মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৭



আপনি জীবনেও "নামাজের গুরুত্ব" নিয়ে কোন পোষ্ট লেখেননি; ২/১টা কবিতা লিখেছেন, ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে লিখেছেন, শেখ হাসিনার রাতের ভোট নিয়ে লিখেছেন, জেনারেল জিয়ার খালকাটা নিয়ে লিখেছেন। আজকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রহস্যের পাখি

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৫ শে মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০৬


ঢলের নদীতে ভাঙো তুফানের ঢেউ
ঢেউয়ের তুফানে গাঁথো নদীর কুসুম।
রাতের নিগণ্ঠে বেঁধে দিকচক্রবাল
আঁধারের গর্ভে খোঁজো রাতের কুটুম।

তারপর আঁকি
স্বপ্ন নয়, বৃক্ষ নয়, রহস্যের পাখি।
সরল শরীরে ধরে আগুনের দ্রোহ
কী আশ্চর্য ফুটিয়েছ সম্ভেদ মোহ!


কদম্ব... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই রমজানে ব্লগিং আরো বিরক্তিকর হবে.....

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ২৬ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ২:২৩



দুইটা রোজা শেষ। আমার বেশিরভাগ পোস্ট স্মৃতিচারণ মূলক। যারা আমাকে চেনে তারা অনেকেই পোষ্ট পড়তে চায়না। নিক দেখেই বুঝে ফেলে পোষ্টে কি লেখা আছে। রোজা নিয়ে বিশাল স্মৃতিচারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখন দায়িত্ব স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে মার্চ, ২০২৩ সকাল ১১:৩৫



জাতির জনক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলতে বললেন। অত:পর বিভিন্ন ঘর থেকে হানাদারের উপর হামলা হলো। অবশেষে দিশেহারা হানাদার আত্মসমর্পন করলো।অবশেষে আমরা স্বাধীন হলাম। অবশেষে আমরা স্বাধীনভাবে দূর্নীতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

রামাদান ডায়েরিঃ ঢাকায় প্রথম রোজার স্মৃতি

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৬ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ২:১৮

রোজার সময়টা আমাদের বাসার পরিবেশ সব সময় আলাদা হত । রান্না বান্নার দিক থেকে একটা আলাদা আবহাওয়া তৈরি হয়ে যেত আপনা আপনি । রমজানে আমাদের বাসাতেই সব সময় ইফতার তৈরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×