
১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসন পাকিস্তানকে বর্বর স্বৈরশাসনের জাঁতাকলে আবদ্ধ করে। বর্তমান সময়ের মতো সে সময়ও নাগরিক অধিকার, বাক-স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল। স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের শাসন ব্যবস্থাকে ব্যঙ্গ করে কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান রচনা করেছিলেন 'ক্রীতদাসের হাসি' উপন্যাস। উপন্যাসের মূল চরিত্র তাতারী।
দুনিয়ার সব স্বৈরশাসক গণতান্ত্রিক চেতনাকে ভয় পায়। দেশের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক চেতনাকে দমন করার জন্যই জাড়ি করে 'সামরিক শাসন' কিম্বা গনতন্ত্রের ছদ্মাবরণে 'পুলিশী সরকার' ব্যবস্থা। আউব খানের সামরিক শাসন লেখকের প্রতিবাদ স্তব্ধ করতে পারেনি। রূপকের মধ্য দিয়ে তীব্র হয়ে উঠেছে এই প্রতিবাদ। প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন শওকত ওসমানের ‘ক্রীতদাসের হাসি’র তাতারী। খলিফা হারুনর রশীদ এর 'নির্দেশে হাসার চেয়ে মৃত্যুকে শ্রেয়' মনে করেছে তাতারী। ক্ষমতার দুর্লঙ্ঘ প্রভাব মানুষকে দুর্বিনীত করে তোলে। হারুনর রশীদ ক্ষমতাসীন, তিনি খেলাফত পেয়েছেন। তিনি সরল স্বীকারোক্তি করেছেন জল্লাদ মশরুরের কাছে- “মশরুর খেলাফত তো পাওনি, বুঝবে না রাজত্বের লোভ কত। এই লোভের আগুনের কাছে হাবিয়া দোজখ সামাদানের ঝিলিক মাত্র। বিবেক, ক্ষমতা, মনুষ্যত্ব- সব পুড়ে যায় সেই আগুনে।“
এদশে সামরিক শাসন, ছদ্ম-সামরিক শাসন বার বার এসেছে। এখন চলছে- উত্তর কোরিয়ার মতো কঠোর গণতন্ত্র! উত্তর কোরিয়ান স্টাইলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নির্বাচন। তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা তাদের সততা পাশ কাটিয়ে আত্মার মৃত্যু উপভোগ করেছেন, অনেকেই হয়েছেন স্বৈর শাসকের দোসর। বর্তমান স্বৈরশাসক সর্বময় আগ্রাসী ক্ষমতা ভোগ করেও আরও ক্ষমতা চায়, চায়- Absolute Power!
হাবশি গোলাম তাতারী খলিফার স্ত্রী বেগম জুবায়দার বাঁদির প্রেমে মগ্ন। নিজের নৈঃসঙ্গ্যের হাহাকার আড়াল করে বেগম মেহেরজান ও তাতারীর ভালোবাসার পথ সুগম করে দেন। নিত্যকার রাতের সফরে তাতারী ও মেহেরজানের প্রাণখোলা হাসির শব্দ তাকে উতলা করে তোলে। তিনি শুনতে পান- ‘আবার সেই উতরোল হাসি ওঠে এই জীর্ণ গৃহের মধ্যে। জান্নাত তো দূরে নয়। বুকের কপাট খুললে যে হাওয়া বেরোয়, তারই স্নিগ্ধতা আর শীতলতা দিয়েই বেহেশত তৈরি। ভালোবাসার হাসি থামতে জানে না।‘
ক্রীতদাস থেকে নব্য গোলাম, তোমার অট্টহাসিতে ভেংগে পরবে তোমার প্রাসাদের প্রতিটি ইট-পাথর। মজলুমের চোখের পানিতে ভেসে যাবে তোমার সিংহাসন। আমাদের প্রতিবাদ থামবেনা- যতক্ষণে, যতদিনে এদেশের নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের মুখে হাসি ফোঁটাতে পারবো। কবি সুকান্তের বোধন কবিতার দুটি লাইন উধৃত করে বলতে চাই-
“আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই-
স্বজনহারানো শ্মশানে তোদের
চিতা আমি তুলবই।“
((২০২২ সালে ফেসবুক পোস্ট)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



