একজন সাধারণ পাঠক হলেও দেশী-বিদেশী আমার প্রিয় লেখক সাহিত্যিকদের তালিকা বেশ দীর্ঘ! বনফুল, যার আসল নাম- বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায়। শখের বশে তিনি কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও কবি। পেশায় চিকিৎসক ছিলেন।
বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায় যখন আই এস সি পড়তেন তখনকার কথা। একদিন বিজ্ঞান পড়ার ক্লাসে এলেন বাংলার অধ্যাপক চারুচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। অফ পিরীয়ড। এসেই বললেন- 'রচনা লেখো'।
ছাত্রদের প্রশ্ন, ‘কি লিখব স্যার? ’
স্যার বললেন, “গরুর রচনা লেখো”।
শুনেই সবার মাথায় হাত। স্যার বলছেন কী? সেই ছেলে বেলায় নিচের ক্লাসে যে গরুর রচনা লিখেছিলাম এখন উঁচু ক্লাসে, বুড়ো বয়সে গরু রচনা লিখতে হবে! কেউ কেউ মুখ টিপে হাসতেও লাগলো।
হাসলো না শুধু একটি ছাত্র। সে বললো, “স্যার, রচনা মানে গদ্য হতে হবে এমন মানে আছে কি?
স্যার বললেন, “সেরকম তো কথা নেই।”
খানিক বাদে ছাত্রটি গরুর রচনা লিখে স্যারের কাছে দিলো। ক্লাসে বসে বাকিরা তখনও ভাবছে স্যার বুঝি তাদের সাথে ঠাট্টা তামাশা করছেন। স্যার লেখাটা নিরবে পড়ে বললেন, “শোনো শোনো, কী লিখেছে তোমাদের বন্ধু...”
“মানুষ তোমায় বেজায় খাটায়
টানায় তোমায় লাঙ্গল গাড়ি,
একটু যদি দোষ করেছ
অমনি পড়ে লাঠির বাড়ি।
আপন জিনিস বলতে তোমার
নেই কিছু এই বিশ্বেতে,
তোমার বাঁটের দুধটুকু তা-ও
বাছুর তোমার পায়না খেতে।
মানুষ তোমার মাংস খাবে,
অস্থি দেবে জমির সারে,
চামড়া দিয়ে পরবে জুতো বারণ কে তায় করতে পারে?
তোমার পরেই এই অত্যাচার হে মর্তের কল্পতরু।
কারণ ? নহ সিংহ কি বাঘ,
কারন তুমি নেহাৎ গরু। ”
স্যার ছাত্রটির মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন, “অনেক বড় হও বাবা।”
বড় হয়েও ছিল সেই ছেলেটা ডাক্তার হয়েছিল- হয়েছিলেন বড়ো সাহিত্যিকও।
বাংলা ছোটগল্পের প্রানপুরুষ ‘ডা: বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায়’ ওরফে ‘বনফুল’।
বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ ‘গরুর রচনা'গুলোর মধ্যে আজও অবস্থান করছে এই রচনাটি....
(কয়েক বছর আগে এই ঘটনা ফেসবুকে পড়ে লিখেছিলাম)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



