"আমি কে?"
মাত্র কয়েক দিন আগে লিখে ছিলাম- কে আমি? আজ লিখছি- 'আমি কে? দুটোর মধ্যে পার্থক্য দুস্তর। কে আমি হচ্ছে- আমার আমিত্ববোধ। আর 'আমি কে' হচ্ছে- পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এবং জগৎ সংসারে আমার কি অবদান। আমার অবস্থান।
আসলে আমি কেউ নই, নীতিজ্ঞান হীন, অস্তিত্বহীন এক রক্ত মাংসের কাঠামো! যতক্ষণ 'আমি' শব্দটা নিজের মধ্যে থেকে মুছে না ফেলা যায় ততক্ষণ 'আমি' শব্দটা একটা সত্তার ধ্বংসের বীজ বপন করতেই থাকবে। অতএব, প্রশ্নটা করা উচিত ছিল- "আমরা কে?"
আমরা নিজেদের পরিচয় দিতে গেলে সারা দিন লেগে যাবে, তবুও সম্পূর্ণভাবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে যেতে পারবো না। আর এই আমাদের মধ্যে থেকে আমরা আমাদের নিজস্ব পরিচয় বহন করলেও এত ভীড়ের মাঝে অন্যরকম হয়ে উঠতে হলে নিজেদের ভাবনা এবং বোধের পরিবর্তন আনতেই হবে। জীবনে যশ খ্যাতি প্রাপ্তি বড় কথা নয়। বড় কথা- অনুকুল এবং প্রতিকুল পরিস্থিতিতে নিজেদের সঠিক অবস্থান কে বজায় রাখা। আর সেরকমই কিছু একটা আজ আবার করলাম। অতীতেও করেছি, ভবিষ্যতেও করবো।
কারণ, আমি এই সমাজের প্রতিকী বুদ্ধিজীবি দেখতে দেখতে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছি। যারা নীতির বুলি আওড়ে যায়, অথচ নিজেরা উদাহরণ হয়ে উঠতে পারেনা। যারা ট্রাফিকে দুধের শিশুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাকে সাহায্যের হাত না বাড়িয়ে তাকে নিয়ে কবিতা লিখে তুমুল ঝড় তোলেন, যারা হোটেলের লাউঞ্জে ড্যান্স করে ডিনার সেরে ফিরবেন অথচ উদ্বৃত্ত পয়সায় সারা জীবনে একজন ক্ষুধার্তকেও এক বেলা ভাত খাওয়ান না, যারা অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে নিজেরা ম্যান কাইন্ড কোম্পানির সাহায্য নিয়ে STD রোগ থেকে দূরে থেকে ফার্স্ট ডিসেম্বরে বিশ্ব এইডস দিবস পালনে বড় বড় লেকচার মারে, যারা রাস্তা ঘাটে ভীড় দেখে অতিমারীর প্রকোপের কথা ভেবে চিন্তিত অথচ ব্যবস্থা শিথিল হওয়ার পশ্চাদের আসল দিকটিকে নিয়ে জোরালো আওয়াজ তুলতে চান না তাদের বুদ্ধিজীবী হিসেবে মেনে নিতে আমার ঘৃণা হয়। এমন উদাহরণ দিতে গেলে লেখা দীর্ঘ হয়ে যাবে। আসলে এনারা আলোর পৃথিবীর লোক, এনারা উঁচু ডায়াসে একটা সংরক্ষিত আসনের প্রত্যাশী। এনারা আর যাই করুন না কেন নিজের জামার কলারে দাগ লাগাতে দেন না। ভুলে যান যে উনার জামার ভেতরের দিকে কোনদিনও আলো পৌঁছায় না, সেদিকটা চিরায়ত অন্ধকারময়। যেখানে অন্ধকার সেখানে না পৌঁছাতে পারলে আপনি জানবেন কী করে যে অন্ধকার কে দূর করতে কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
আসুন সাহেব, আসুন বিবি গাড়ি থেকে নেমে রাস্তায় আসুন, হাঁটুন দুই কিলোমিটার, কথা দিচ্ছি দুই কিলোমিটারে জীবনের সব ধ্যান ধারণা আপনার পাল্টে যাবে। লিঙ্গুইসটিক বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতি চার কিলোমিটারে যেমন ভাষার মধ্যে পরিবর্তন ঘটে ঠিক তেমন ভাবেই প্রতি দুই কিলোমিটারে আপনি সমাজের একটা সম্যক চিত্র কিভাবে পাল্টে যাচ্ছে সেটা বুঝে যাবেন। ফালতু স্ট্যাটাস বাজি করে ব্লগে, ফেসবুকে সময় নষ্ট করবেন না। ওগুলো আমাদের মত দুই পয়সার ভাট মার্কা বাঁচাল লোকজনদের করতে দিন, কারণ আমাদের সময় আমাদের কাছে মূল্যবান নয়, সমাজেরও কোনো কাজে আসবো না। আমরা হলাম সেই প্রজাতির লোকজন যারা আছে আর নেই এর মধ্যবর্তী স্থানে নিজেদের অস্তিত্ব নিরুপণ করতে করতে একটা ছয় সাত দশকের জীবন কাটিয়ে দেয়। কিন্তু আপনাদের কাছে আপনাদের সময় বেশ মূল্যবান, আপনারা সমাজের মূল্যবান মনি মাণিক্য, কর্ণধার, আর সমাজের আমাদের মত সহজ সাধারণ মানুষেরাই আপনাদের এই স্থানে পৌঁছে দিয়েছে। তাই আপনারা আপনাদের সময়ের সঠিক ব্যবহার করুন এবং সেটা সঠিক ভাবে করুন। নৈতিকতা, মানবতা, সহানুভূতিশীল, সর্বপরি দৃঢ় চেতা হয়েই করুন। উদাহরণ হয়ে দেখান, সমস্যা তুলে ধরার দায়িত্ব যদি নিয়েই থাকেন তবে আপনার দৃষ্টির প্রতিফলন সার্বিকভাবে হোক, নচেত সেটা অনেক খেলো হয়ে যাবে। সমস্যা দেখানোর সাথে সাথে সমস্যা নিবারণের কাজে এগিয়ে আসুন।
নচেত সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব স্ট্যাটাস আমার কাছে ইয়ে মার্কা স্ট্যাটাস হয়ে ওঠে I আর তখনই আমি ঐসব বুদ্ধিজীবিদের সিম্বলিক স্ট্যাটাস কে নস্যাৎ করে দিতেও পিছপা হইনা ,কারণ যে কথা শুধু কিছু শব্দের সমষ্টিগত রূপ হয়েই থেকে যায় সেই কথা ভিত্তিহীন না হলেও সেই কথা মূল্যহীনI মূল্যহীন কথার সাথে সহমত হয়ে বুদ্ধিজীবিদের সাহচর্য লাভ করে ওই চুম্বকীয় তত্ত্ব অনুযায়ী নিজেকে বুদ্ধিজীবীদের ব্লক হিসেবে গড়ে তুলতে আমি ঘৃণা বোধ করিI এর চেয়ে বরং আমি সমাজের সেইসব কান্ডজ্ঞানহীন মানুষের দলেই সামিল থাকবো- যারা আমার মতো সাধারণ মানুষ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



