এই ছবিটার গুরুত্ব অপরিসীম।
কেন জানেন, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের খোলনলচে বদলের ব্লু প্রিন্ট রচনার দায় তাদের কাধে। এই ছবিতে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি আর স্বাধীনতাকামীদের এক করে ফেলা হয়েছে। এর মাধ্যমে আবারো প্রমান হলো, ইতিহাস সব সময় বিজয়ীদের হাতে বিজিতদের কাপুরুত্ব, গ্লানী লেখা হয়। আর তাই, ইতিহাস সব সময় সময়ের পাঠ ধারণ করেনা। বাংলাদেশের চরিত্র বদলের এই যে অনমনীয় জেদ, বেপরোয়া মনোভাব এখন যারা দেখাচ্ছে, তাদের হাতে কিন্তু কোনো ম্যান্ডেট নেই। বাহাত্তরের সংবিধান প্রনয়নকারীদের হাতেও ছিলোনা। তখন যেমন গায়ের জোরে,সব কিছু হয়েছিলো, এখনো ঠিক তাই হচ্ছে। আরোপিত কিছু, কিম্বা জনগনের সম্মতিহীন কোন কিছুই দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই হয়না। ভারতীয় দালাল দুর্নীতিবাজ একনায়ক হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে জ্ঞাতি গুষ্টি সমেত প্রভু দেশে পালিয়ে গিয়ে সেটার প্রমান দিয়েছে। আর এখন,গায়ের জোরে, রাষ্ট্র সংস্কারের নামে অনেক কিছু করা হচ্ছে, যেগুলো যারা করছে তাদের কোনো ম্যান্ডেন্ট নেই।
ভুলে গেলে চলবেনা, জুলাই আন্দোলন হয়েছিলো দেশের সকল সাংবিধানিক সংস্থা ধ্বংস করে জবর দখল করে পনের বছর একটা রাষ্ট্রকে হাসিনা তার এজমালি সম্পত্তি বানিয়ে রেখেছিল বলে। দেশটাকে ভারতের হাতে তুলে দিয়ে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ধ্বংসের ষোলকলা পূর্ণ করার পর কতৃত্ববাদী হাসিনার হাত থেকে দেশের মানুষকে মুক্তি এবং স্বৈরচারী লুটেরা হাসিনাকে পরাজিত করাই ছিলো সেটার মূল লক্ষ্য। জুলাই কোনো বিপ্লব ছিলোনা। দেশের চরিত্র বদলে দেবার কোনো আগাম মেনিফেস্টোও তখন কেউ প্রকাশ্যে ঘোষনা করেনি। সুতরাং রাষ্ট্র সংস্কারের নামে এখন যেসব বৈপ্লবিক চিন্তাধারা দেশের মানুষকে জোর করে গেলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, সেটা জনগন মানবে কিনা,সেটা ভবিষ্যৎ ই বলবে।
জুলাই আন্দোলনকে সমর্থন করি। কিন্তু আন্দোলনকারীদের যা খুশী তাই করার সুযোগ নাই। তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই- একাত্তর মানে মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে, আমাদের জাতীয় জীবনে একটা ল্যান্ডমার্ক। একটা আত্মপরিচয়ের ভিত্তিমূল। অন্যদিকে ৩৬ জুলাই হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং আমাদের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। তবে, একাত্তর তথা মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করে জুলাই আন্দোলনকে মহিয়ান করার যেকোন চেষ্টাকে নিন্দা করি। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকে জনযুদ্ধ হিসেবে নতুন আখ্যা দেয়ার এই যে হীনচেষ্টা সেটারও প্রতিবাদ জানাই।
(বিশিষ্ট সাংবাদিক মুজতবা খন্দকার সাহেবের লেখা একটি নিবন্ধ থেকে সংকলিত)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৬:৪৩