somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমুদ্র জীবনের গল্প (ভাষা বিভ্রাট)

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মনের ভাব প্রকাশের জন্য ভাষা। আর ইংরেজি ভাষা জানলে আপনি পুরা দুনিয়া ভেজে খাইতে পারবেন এটা পুরা ভুল। বিশ্বের উন্নত দেশে এরা ইংরেজি ভাষার চর্চাই মনে হয় করে না। কিছু বললে হা করে তাকায়া থাকে। :-/
ছোট বেলায় চারুকলা বইয়ে সম্ভবত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের একটি গল্প পড়েছিলাম। উনি ইউরোপের রাস্তায় রাস্তায় “পল্লেভু আংলে। পল্লেভু আংলে” বলে ঘুরছিলেন। বিভিন্ন দেশে গেলে এই সমস্যা আমাদেরও হয়। উনি তো তাও ছবি একে খাওয়ার অর্ডার দিতে পেরেছিলেন।

আমার আকাআকির যে হাত। কোরিয়ার রেস্টুরেন্টে যাইয়া গরু অর্ডার করলে নির্ঘাত আস্ত কুকুর ভাইজা নিয়া আসবে। :((:((
রাশিয়ার গল্প বলি। আমরা ওখানে গিয়েছি মেটকোক লোড করতে। এটা এমন এক ধরনের কয়লা যা পারমাণবিক চুল্লিতে তাপ উৎপাদনে ব্যাবহার করে। লোডিংয়ে মোটামুটি ৭ দিন লাগবে। আমার ডিউটি ৬ অন ৬ অফ। দুপুর ১২ টায় ডিউটি শেষ করেই বেরিয়ে পড়লাম রাশিয়া ভ্রমনে। আবার সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে ব্যাক করা লাগবে। মোটামুটি সব ঘুরে ফিরে ৫ টা নাগাদ পোর্ট গেটে আসলাম। যেই গেট দিয়ে বের হয়ছি সেই গেটে। কিন্তু দারোয়ান ঢুকতে দিবে না। কোনভাবেই না। /:)আর শালা ইংরেজি ও বুঝে না। কি এক বিপদে পড়লাম। গেট থেকে আমার জাহাজ দেখা যাচ্ছে। :((তারে বুঝানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছি। কোন লাভই হচ্ছে না। আর ও কি বলতেছে আমিও বুঝতেছি না। X((পুরাই এলিয়েন ল্যাঙ্গুয়েজ। এরপর দেখি এক টুকরা কাগজে কি সব হাবিজাবি লিখে আমার হাতে দিয়ে উল্টা রাস্তা দেখায়া দিতেছে। মেজাজ তখন পুরাই বিলা। ডিউটির টাইম হয়া যায় আর তুমি মশকরা কর। কাগজে চোর পুলিশ বাবু খেলা শুরু করছ? X(

এর মধ্যে গেটের অপর পাশ থেকে এক রাশিয়ান মেয়ে আসলো। গেটম্যান আমাকে দেখায়া কি কি জানি বলল। পরিস্কার উচ্চারনে সে সুন্দর করে হাই বলল। তারপর জিজ্ঞেস করে জানলাম সে ইংরেজি জানে আর গেটম্যান আমাকে বলতে চাইছে যে এই গেট দিয়া খালি বের হয়া যায় ঢুকা যায় না। তোমার জাহাজ দেখা গেলেও লাভ নাই। রুল ইজ রুল। :-*কাগজের চোর পুলিশের ইতিহাস হইল এতে পোর্ট এর অন্য গেটের ঠিকানা লেখা আছে। রাস্তায় জনগণরে দেখাইলে তারা গেট দেখায়া দিবে। নিজেরে খুব অশিক্ষিত মনে হইল। :|কিন্তু মেয়েটা খুব ভাল ছিল। ও বলল ওকে, “নো প্রবলেম। আই উইল গো উইদ ইউ।”
তারপর আর কি। পুরা দুনিয়া ঘুরে পোর্টের অন্য গেট এ পৌঁছাইলাম। অবশ্য এর সাথে কথা বলতে বলতে সময় টা খারাপ যায় নাই। B-) যাওয়ার সময় মেয়েটাকে দুই টাকার একটা নোট দিয়েছিলাম সুভিনিউওর হিসেবে। সাঙ্ঘাতিক খুশি হয়েছিল। সবচে সুন্দর ব্যাঙ্ক নোট বলে কথা। (এটা পরে জানছি।) বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে চাইলো:)। জাহাজে ফিরতে ফিরতে তখন ৮ টা। কোন রকম ডিনার করে ডিউটি তে আসলাম।

এরকম ঝামেলায় প্রায় ই পড়তে হয়। জাহাজে যেই লেবাররা কাজ করে তাদের সাথে ভাব বিনিময় করতেও অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। ধরুন কোন একজন একমনে ক্রেন চালাচ্ছে আর কার্গো লোড করছে। লোড করতে করতে দেখা গেল জাহাজ একদিকে কাত করে ফেলছে। তাকে অন্য দিকে কার্গো দেয়ার কথা বুঝাইতে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। শেষমেষ দুই হাত দু পাশে তুলে এক দিকে কাত হয়ে বুঝানো লাগে “we are listed to starboard(জাহাজের ডান), Go back to port (জাহাজের বাম).”

বাইরের দেশে গেলে আমাদের সবারই কমন সম্বোধন হল “মাই ফ্রেন্ড”। এই সেন্সে বিশ্বে সম্ভবত মেরিনারদেরই সবচে বেশি ফ্রেন্ড। যে ইংরেজি জানে না সেও মাই ফ্রেন্ডের মানে বুঝে। কিন্তু এইটুকুই। এরপর ইংরেজিতে যাই বলি সব ওদের কানের উপর দিয়া যায়। একবার কার্গো লোডিং এর সময় একটা খুব দরকারি জিনিস বুঝানোর প্রয়োজন হল এক চায়নিজ মাই ফ্রেন্ডকে। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে বুঝালাম। নাহ। বুঝেই না। ইশারা ইঙ্গিত সব ফেইল। সে তার ভাষায় ভুং চুং কি সব বলতেছে। বুঝেই না। X((শেষমেশ বিরক্তির শেষ সীমায় যাইয়া রেগেমেগে খাঁটি বাংলায় বললাম, “হারামি একটু বুঝলেই তো হয় বুঝস না ক্যান??”X(X(( তারপর পুরা জিনিসটা আবার বাংলায় বললাম। আমার ভাব তখন এমন যে তুমি চায়না ছাড়বা আর আমিও বাংলা ছাড়মু। ভাই, বিশ্বাস করেন আর নাই করেন এবার সে ঠিক ই ব্যাপার টা বুঝল আর সেইমত কাজ করল। আমি এত টাস্কি একসাথে জীবনেও খাই নাই। পুরা পেট ভইরা গেছে। :|:-*:|:-*
(চলবে...............)

অন্য লেখা গুলোর লিঙ্কঃ
সমুদ্র জীবনের গল্প (কেউ আমাদের বুঝে না!!)
সমুদ্র জীবনের গল্প (মোবাইল কথন)
সমুদ্র জীবনের গল্প
সমুদ্রবাড়ি (ছবিব্লগ)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:৪১
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×