ভাষা বিভ্রাট নিয়ে লেখা আগের অংশটি এখানে।
সব দেশে গিয়েই মনের ভাব বুঝাতে নিয়ে কমবেশি ঝামেলায় পড়া লাগছে। এরকমই একটি অভিজ্ঞতা আজ শেয়ার করছি।
কোরিয়াতে আমরা গিয়েছিলাম বাংলাদেশের জন্য সিমেন্ট ক্লিংকার আনতে। কোরিয়ান যেই পোর্টটিতে গিয়েছিলাম ওখানকার শ্রমিকরা অনেক স্মার্ট। কনভেয়ার বেল্ট দিয়ে খুব দ্রুত লোডিং করে আর জাহাজের ইনক্লাইনেশন ( কোন এক দিকে কাত হওয়া) ওরা নিজেরাই ঠিক করে ফেলে। ফলে লোডিং নিয়ে ডিউটি অফিসার বা চীফ অফিসারের ও এত বেশি টেনশন থাকে না। সবার ধান্ধা শুধু পোর্ট থেকে বের হওয়া, ঘুরাঘুরি করা আর শপিং করা। আর আমার মত কয়েকজনের ধান্ধা নেটে সার্ফ করা। ১ এম বি পি এস এর ফ্রী ইন্টারনেট সুবিধা।
এর মধ্যে একদিন আবিস্কার করলাম আমাদের শিপে যারা কাজ করতে আসে তারা প্রত্যেকে একটা করে সাইকেল নিয়ে আসে আর শিপ থেকে একটু দূরেই একটা চিপায় ওগুলা রাখে। বলে রাখা ভালো আমাদের জাহাজেও পোর্টে গিয়ে চলার মত দুইটা পুরাতন সাইকেল ছিল কিন্তু একটার ব্রেক পুরা নষ্ট আরেকটার টায়ার ফাটা। তাই ওগুলা কেউ চালাইতো না। মাথায় ভূত ঢুকলো কিভাবে ওদের একটা সাইকেল নেয়া যায়। অন্তঃত এতে নেট টার্মিনালে যেতে আসতে ৩০ মিনিট সেভ হবে। মানে ৩০ মিনিট বেশি কথা বলা যাবে। তাছাড়া আরেকটা ভূত যেটা সবচেয়ে কমন এবং আমি জানি তা সবারই হয় তা হল অন্যের সাইকেল দেখলেই তা চালানোর জন্য পা কুটুর মুটুর করবে।
যাহোক একজন সাইকেল অলাকে দেখলাম এবং সেইমত তারে ভাঁজ দেয়ার চিন্তা করলাম। ও হচ্ছে কার্গো ফোরম্যান (জাহাজের লোডিং গ্যাং এর লিডার)।
ওর কাছে গিয়ে ওর মত ইংরেজিতেই বললামঃ "ইউর সাইকেল ভেরি গুস (গুড রে গুস বলে)।" ও মনে হয় আমার মনের ভাব বুঝতে পেরেই বলল, "নট গুস। নট গুস।" তারপর আমাকে সাইকেলের এদিকে স্টিকার ছিড়া। ঐদিকে হ্যান্ডেলের রাবার গ্রিপ নাই এগুলা দেখাইতেছে। আমি বললাম "নো প্রবলেমো।
এসে ঐ ফোরম্যানকে বললাম, “মাই ফ্রেন্ড, আই এম টেকিং ইউর গুস সাইকেল। আই উইল বি কাম ব্যাক বাই নাইন।”
সেও হাত তুলে বলল, “ওকে। ওকে।”
বাহ মজা তো। এত কথা সব সে বুঝে গেল। যাক। এবার আর আমাকে পায় কে?? ডিউটি অফিসার (থার্ড অফিসার) আমাকে দেখে বলতেছে, “বলে নিচ্ছ তো?” সগর্বে বললাম যে, “না বলে কি আর নেয়া যায় স্যার।”
তারপর শিপ থেকে নেমেই ভুম। ওখানে গিয়ে ধুমায়া নেট ইউজ শুরু করলাম। এর মধ্যে দেখতে দেখতে সময় চলে গেল।
ঘড়িতে তাকিয়ে ৯ টা বাজতে আর ১৫ মিনিট। কথা রাখতে হবে। বুঝুক শালা। বাঙালি কথা দিয়ে কথা রাখে।
আমি তো পুরা হতভম্ব। বলে কি?“হ্যাঁ স্যার ওরে তো পুরা বলেই নিলাম।”
“কি ভাষায় বলছ। মনে হয় কিছুই বুঝে নাই। গিয়ে কথা বল। তুমি যাওয়ার পরে পুরা শিপ মাথায় তুলছে। সাইকেলের খোজে।”
অ্যাঁ কয় কি। যেই জোরে মাথা নাড়ল আর কিছুই বুঝে নাই। এটা কিভাবে হয়।
গিয়ে দেখি শিপ অফিসে লোডিকেটরে (স্টাবিলিটি হিসাব করার বিশেষ কম্পিউটার।) কার্ড খেলছে। এই কম্পিউটারে চীফ অফিসার সাধারনত কাউকে হাত দিতে দেন না। বুঝলাম তারে চুপচাপ রাখতে কম্পিউটারে গেম খুলতে দেয়া হইছে। আমরা যেভাবে বাচ্চাদের কান্না থামাই আর কি।
আমি যদি সত্যি বুঝতাম যে ব্যাটা আমার কথা বুঝে নাই তাইলে জীবনেও তোর সাইকেলে হাত দিতাম না।
(চলবে..................)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




