somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প- মিথ্যাবাদি ময়না পাখি

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বুঝলেন স্যার। আজকে আমার মনটা অত্যধিক খারাপ।আর মন যখন খারাপ থাকে তখন আর ভালো চা বানাবার পারিনা।
তা, তোমার মন এতো খারাপ কেন?

কারণ স্যার আমার ময়না পাখির মনটা খুব খারাপ- ময়না পাখীর মা'য়ের বড় অসুখ।কথাগুলো বলেই শুভ আমার জন্য চা বানাতে লাগলো ।

শুভ'র সাথে আমার পরিচয় নতুন অফিসে জয়েন করার পর। বিকেল বেলা, আমি হাঁটতে হাঁটতে নির্জনের এই চাদোকানে এসে বসি। আর সুযোগ পেলেই শুভ তার ময়না পাখির নানান গল্প শুরু করে।

আপনি কি জানেন, স্যার? বড় হলে পাখীদেরও অনেক দূরে চলে যেতে হয়।
আমি বললাম, তাতো জানিনা। হয়তোবা ।

কথা কিন্তু সইত্য স্যার। ঘটনা হলো- ময়না পাখি ওর মায়ের সাথে শেষরাইতে বাসায় বসে আছে। মা পাখি ময়না পাখীকে কয়, বাছা কাল অনেক দূরে চলে যাবি। আজ রাইতটা একটু ভালো করে ঘুমা।
ময়না পাখি, তখন মা'কে বলে, মা তুমি ঘুমাও। আমারতো ঘুম আসেনা।
বুঝলেন স্যার, ময়না পাখিটা এখানে একটা কঠিন মিথ্যা কথা বললো।
আমি বললাম , কি মিথ্যা কথা বললো? তোমার ময়না পাখি।

আরে, ময়না পাখিটারও খুব ঘুম আসছিলো। কিন্তু ঘুমিয়ে গেলে মা'য়ের মুখ আর দেখতে পাবেনা বলেইতো মা'রে মিথ্যা বললো ।

আচ্ছা স্যার, পাখীরা যখন মিথ্যা কথা কয়, তখন কি ওদেরও অনেক গুনাহ হয়। আমার ময়না পাখিটা না খুব ঘন ঘন মিথ্যা কথা বলে।

আমি চা খেয়ে নিজের বাসার দিকে হাঁটা শুরু করি। আর মনে মনে ভাবি। ছেলেটা আসলেই একটু পাগলা স্বভাবের।শুভ'র কি আসলেই কি কোনো ময়না পাখি আছে?

অনেকদিন কাজের ব্যস্ততায় আর শুভ'র চায়ের দোকানে যাওয়া হয়নি।
কিছুদিন পর ওর দোকানে হাজির হলাম।

শুভ সুন্দর করে চা চিনি-দুধ নাড়ছে।
ভালা আছেন, স্যার?
হুম ভালো, তোমার খবর কি?
আমি স্যার ভালাই আছি। তবে ময়না পাখি'র একটা কথা মনে পড়ে মনটা খুব খারাপ লাগছে।
তাহলেতো তুমি আর ভালো চা বানাতে পারবানা।

শুভ আমার কথা শুনে চোরা হাসি হাসে।

কি কথা বললো তোমার ময়না পাখি?

ময়না পাখি মা'কে ছেড়ে যেদিন চলে আসবে স্যার, সেদিনের কথা। পাখিটা অনেকদূর চলে এসেছে। তারপর হঠাৎ কি মনে করে, আবার ঘরে ফিরলো। মা, বললো - কী রে বেটা, আবার ফিরে এলি যে? বড় হয়েছিস দূরেতো যেতেই হবে।
ময়না পাখি তার মা'কে বলে- ভুল কইরা একটা জিনিস ফালাই গেছিলাম জিনিসটা নিতে আসলাম।
কিছু বুঝলেন স্যার। ময়না পাখিটা মায়ের সাথে আবারো কঠিন একটা মিথ্যা কথা বললো ।

আমি বললাম, এখানে আবার কি মিথ্যা বললো তোমার ময়না পাখি?
আসলে স্যার ময়না পাখিটা তার মাকে দেখার জন্য আরেকবার ঘরে গেলো। কিছু ফেলে আসা ছিলো পাখিটার বাহানা মাত্র।

তা তুমি কিভাবে জানলে এসব?
বললাম না স্যার।ময়না পাখিটাতোই এসব কথা আমাকে বললো।

আমি চা'র শেষচুমুক দিয়ে বললাম-শুভ ফার্স্ট ক্লাস চা বানিয়েছো।

এভাবে মাঝে মাঝে আমি শুভ'র চায়ের দোকানে যাই। শুভ মনের সুখে ময়না পাখির গল্প করে। বেশীর ভাগই তার দুখের গল্প।

এরপর আরেকদিন শুভ'র চায়ের দোকানে গিয়ে দেখি শুভ নাই।
অন্য একটা লোক কাজ করছে। জিগ্গাসা করলাম শুভ কোথায়।

বললো, শুভতো চাকরি ছেড়ে দিয়েছে।
হুট করেই চাকুরি ছেড়ে দিলো। কোথায় আছে বলতে পারেন?

ওর মা খুবই অসুস্থ। মা'কে গ্রাম থেকে নিয়ে এসে এখানের সরকারি হসপিটালে ভর্তি করেছে। আমার কাছ থেকে ৫০০ টাকা ধার চাইলো। আমার নিজের পুঁজিই ৫০০ টাকা নাই। ওরে দিমু কেমনে? তাই ১০০ টাকা দিয়াই বিদায় করলাম।

আমি দোকানের মালিকের কাছে থেকে ঠিকানা নিয়ে সরকারী হসপিটালে আসি। দেখি একটা ভাঙাচোড়া বেডের ওপর একজন জীর্ণ শীর্ণ মহিলা শুয়ে আছেন। আর শুভ মহিলার পায়ের কাছে বসা।

শুভ'র মা বলছে- আর কতদিন তুই এভাবে বসে থাকবি মায়ের কাছে?
রুজি রোজগার করতে হবেনা, এভাবে বসে থাকলে চলবে?

শুভ বলে- মা'গো কোনো চিন্তা করোনাতো। আমারতো মালিকের কাছে মেলা টাকা জমা আছে। মেলা ছুটিও জমা আছে। মালিকের কাছ থেকে জমা টাকা ওঠামো আর আরামসে খরচ করুম। চিন্তা কি?

শুভ"র মা বলেন- এইদিকে আয়, আমার কাছে আয়। শুভ মায়ের পা'য়ের কাছে থেকে মা'য়ের মাথার কাছে গিয়ে বসে। শুভ'র মা শুভ'র মাথায় হাত রেখে বলেন- ময়নারে তুই বড় কঠিন মিথ্যা কথা বলিস।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:১৯
৩৪টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×