somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"দুটো বন্দুকের গুলি আর পৃথিবীর বদলে দেয়া ইতিহাস"

২৯ শে মে, ২০২০ রাত ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একজন বৃটিশ সৈনিক। নাম হেনরি টেনডি। ১৯১৪ সালের অক্টোবরে তিনি Ypres এর যুদ্ধে প্রথম অংশগ্রহণ করেন। এরপরে ১৯১৬ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানের বিরুদ্ধে বেটল অব স্যুমে অংশ নিয়ে পায়ে গুলির আঘাতে আহত হন। কিছুদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কালীন সময়ে পুনরায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ঠিক এই সময়ে তাকে নবম ব্যাটিলিয়ানের অধীনে যুদ্ধে অংশ নিতে ফ্রান্স বর্ডারে পাঠানো হয়। এই ফ্রান্স বর্ডারের একটি গ্রামের নাম হলো মারকয়িং।

এখানে, জার্মানদের সাথে বৃটিশদের তুমুল যু্দ্ধের পর পুরো মারকয়িং বৃটিশ সেনার দখলে আসে। বিজয়ের একেবারে শেষ মুহুর্তে বৃটিশ সৈন্য হেনরি টেনডি দেখেন-তার বন্দুকের নল থেকে মাত্র আট ফুট দূরত্বে একজন জার্মান সোলজার যখম হয়ে কোনো রকমে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

হেনরি টেনডি কড়া নির্দেশ দেন- হাত উঁচু করে সারেণ্ডার করার জন্য। পালাতে গেলেই জীবন শেষ। নির্দেশ মেনে ভীত জার্মান সৈন্য হাতের অস্ত্র ফেলে দিয়ে হাত ওপরে ওঠান। এবার মুখোমুখি দুজন। হেনরি টেনডির বন্দুক তাক করে আছে জার্মান সেনার বুক । চোখ দিয়ে আগুনের গোলা বের হচ্ছে তার। ট্রিগার টিপলেই জীবন শেষ।

ঠিক এমন সময়- হেনরি টেনডির ১৯১৬ সালের স্যুমে যুদ্ধের কথা মনে পড়ে । আহত অবস্থায় তাকেও গুলি করে শত্রুপক্ষ মেরে ফেলতে পারতো। দ্বিধা দেখা দিলো হেনরি টেনডির মনে। ট্রিগার টানবে কি টানবে না। আহত অবস্থায় কাতরানো নিজের জীবনের সাথে এই জার্মান সেনার জীবন দেখে হেনরি টেনডির মনে কেমন যেন একটা মায়া দেখা দেয়। বিজয় যখন এসেছে- তখন খামোখা বেঁচে যাওয়া , হাত উপরে উঁচু করে রাখা, অস্ত্রহীন সেনার জীবন নিয়ে আর লাভ কি। তার আর বন্দুকের ট্রিগার টানা হয়না। আহত জার্মান সেনা জীবন নিয়ে পালিয়ে বাঁচে।

কিনতু হেনরি টেনডি ঠিক সে সময় জানেন না- শুধু জীবন না। পৃথিবীর ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তনে কি নিদারুণ ভুলটা তিনি করলেন। এই জার্মান সেনার জীবন বাঁচানো নিয়ে হেনরি টেনডির আফসোস জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাকে বিদীর্ণ করে। কারণ- ১৯১৮ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর বন্দুকের ট্রিগার না টেনে যার জীবন বাঁচিয়েছিলেন- তিনি আর কেউ নন। তিনি হলে ২য় বিশ্বযুদ্ধের জার্মানির সমরাধিনায়ক দ্য ফুয়েরার, দ্য হিটলার।

এই ঘটনার ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও ১৯৩৮ সালে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী Neville Chamberlain যখন ২য় বিশ্বযুদ্ধ কোনো রকমে এড়িয়ে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে জার্মান সফর করেন এবং হিটলারের সাথে দেখা করেন। তখন হিটলার নিজেই এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে একটি ছবি দেখিয়ে বলেন- That’s the man who nearly shot me.”

এবার ইতিহাসের একটু পেছনে ফিরি। Serbian-nationalist terroris গ্রুপের এক সদস্যের গুলিতে নিহত হন অস্ট্রিয়ার ফ্রান্জ ফার্ডিনান্ড। ফলে সূচনা হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের । ইতিহাসের কি অদ্ভুত ঘটনা। বন্দুকের এক গুলি বের হওয়ায় শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। আর বন্দুকের এক গুলি বের না হওয়ায় শুরু হয় ২য় বিশ্বযুদ্ধ। আর এখন কোনো বন্দুক, গুলি বিহীন মাত্র এক গ্রাম করোনা ভাইরাসের সাথে চলছে পুরো পৃথিবীর বেঁচে থাকার ৩য় বিশ্বযুদ্ধ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০২০ রাত ৯:১১
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×