আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে সরকার কি কারো উত্তরাধিকার? কারো পৈতৃক সম্পত্তি? কারো বংশানুবাদ? সরকার কি বিত্ত- বৈভবের উৎপাদক কোন লাভজনক প্রতিষ্ঠান? নাকি কারো নিজের প্রতিষ্ঠিত দাতব্য প্রতিষ্ঠান- যা তার খেয়ালে পরিচালিত হবে? সরকার কি কারো কষ্ট- ঘামে চালিত টাকা কামানোর মেশিন? সরকার কি টাকা কামায়? আমার কম জ্ঞানের ক্ষুদ্র বোধে যে টুকু বুঝি সে মতে, " সরকার মানে, জনগনের আশা আকাঙ্খা পরিচালিত করার সমষ্টিগত প্রতিষ্ঠানিক অবয়বের নাম সরকার। যার কর্মে-ধর্মে- মর্মে শুধুই জনগন। তাদের চাওয়া পাওয়া ইচ্ছা অনিচ্ছা, সুখ সাচ্ছ্বন্দ্য, সমৃদ্ধ কল্যাণের সুশৃঙ্খল যাপিত জীবন নিশ্চিতের লক্ষ্যে তা পরিচালিত হয়। সরকার কোন লাভজনক বা অলাভজনক দাত্য প্রতিষ্ঠানও নয়। সরকার কোন টাকা কামানো বা বিত্ত- বৈভব অর্জনের মেশিনও নয়। এটি কারো বংশানুবাদের উত্তরাধিকার না। কারো বাপ- দাদার সম্পত্তিও নয়। জনগন জনগন এবং জনগনই সরকারে শেষ কথা। তাদের অতীত বর্তমান আগামের ধারক এবং তা পরিচালনের প্রক্রিয়ায়ই এটি পরিচালিত হয়। জনগনের টাকা দিয়েই তার ব্যয় নির্বাহ হয়। জনগনই সরকারের টাকার উৎস- যোগানদাতা।
কিন্তু কিছুদিন যাবত সরকার প্রধান বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচার ও অন্যায় অনৈতিকতা বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে- হামেশাই বলে বেড়ান, " আমাদের ভর্তুকির টাকায় খেয়ে পড়ে, থেকে আরাম আয়শের জীবন ধারন করে আমাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন বরদাশত করা হবে না। প্রয়োজনে ভর্তুকি বন্ধ করে দেয়া হবে। যপ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সব আন্দোলন দমন করতে না পারবে, তাদেরকে সরকারের বরাদ্দ টাকা বন্ধ করে দেয়া হবে। তাহলে কি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পরিচালন ব্যয় নির্বাহের টাকা সরকার কিংবা সরকার প্রধানের নিজস্ব টাকা? এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, " জ্বী না, সরকারের টাকা বলে কিছু নেই। সরকারও চলে জনগনের টাকায়। যেহেতু পাবলিক ও সর্বজন বিশ্ববিদ্যালয় জনগনের টাকায় চলে, সেজন্য এর শিক্ষক- কর্মচারী ও ছাত্রদের দায়িত্ব জনগনের স্বার্থে কাজ করা। যদি পাবলিক প্রতিষ্ঠানে কোন অনিয়ম হয়, তাকে মেনে নেওয়া নয় বরং এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। যদি পাবলিকের টাকায় চলা সরকার অন্যায় অনিয়ম করে, তবে তাকে রুখে দেওয়া পাবলিকের কর্তব্য। ছাত্র- শিক্ষকদের দাতিত্ব আরও বেশী। আপনার দম্ভোক্তিপূর্ণ এরকম ফ্যাসিবাদি কথার প্রতিবাদ করাও আমাদেরই দায়িত্ব। জেনে রাখেন, বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চার জায়গা। অনুগত বাহিনী তৈরির জায়গা নয়। আর জ্ঞানের পূর্বশর্ত প্রশ্ন করা। "
আসুন, অন্যায় অনিয়ম অবিচার স্বেচ্ছাচারকে প্রশ্নহীন মেনে বা মানিয়ে না নিই। জাবি, ঢাবি, রাবি, জবি, বুয়েট, রুয়েট, খুবি, কুবিসহ সব সব বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অনিয়ম, দখলদারিত্ব, অত্যাচার নির্যাতন, হরিলুট নির্যাতনের রাম- রাজত্বের বিরুদ্ধে সবার বিবেকের শানিত ইচ্ছাগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করি। অন্যায্য হুমকি, রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে- আমাদের ভাই বোন, সন্তান- সন্ততিদের নৈতিক দাবীর পক্ষ্যে সোচ্চার হয়ে তাদের পাশে দাঁড়াই। আমাদের অতীত ছিল ক্ষত- বিক্ষত। বর্তমান অন্যায় অত্যাচার লুট খুন আর মজলুমের আহাজারিতে আরও বেশী বিপর্যস্ত। আমাদের ভবিষ্যত আমাদেরই গড়ার অপেক্ষায়........!!!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৩১