somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কল্পদ্রুম
জ্ঞানিরা বলেন মানুষ জন্মমাত্রই মানুষ নয়,তাকে যোগ্যতা অর্জন করে তবেই মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে হয়।যোগ্যতা আছে কি না জানি না,হয়তো নিতান্তই মূর্খ এক বাঙ্গাল বলেই নিজেকে নির্দ্বিধায় মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফেলি।

বিক্ষোভের মানসিকতা—কালো আমেরিকান বনাম ভেজাল বাঙ্গালির বিক্ষোভে ভদ্রতা জ্ঞান

০৪ ঠা জুন, ২০২০ দুপুর ১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কে বেশি যুক্তিবাদী — একজন না কি একদল মানুষ? ক্ষোভ কিভাবে তৈরি হয়?একজনের ক্ষোভ কিভাবে হাজার জনে ছড়ায়? একদল মানুষ কি করে সহিংস দাঙ্গাবাজ হয়ে ওঠে? অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেগে ওঠা আফ্রিকান আমেরিকান বিক্ষোভকারীরা কেন নিজেরাই অন্যায় করছে? তারা আসলে কি চায়, কেন চায়? যা চায় তা পেলে কি করবে? তাদের বিক্ষোভ কি কেবলই সাদা কালোর বৈষম্যের বিক্ষোভ? তাহলে একদল সাদা তাদের সাথে কি করে? প্রশাসন ও মিডিয়াই তাদের লুট করতে উৎসাহ দিয়েছে? আমাদের এসব নিয়ে ভাবা কি দরকার, কেন দরকার? বঞ্চিত বাঙ্গালি কি বঞ্চিত আমেরিকানদের চেয়ে বেশি সভ্য?

প্রশ্নের ফিরিস্তি লিখেছি নিজের জন্যে। যাতে পরে ভুলে না যাই। 'দাঙ্গাবাজ' শব্দটা 'বিক্ষোভকারী' শব্দের থেকে অনেক বেশি দাঙ্গা প্রিয়। কিন্তু এই লেখাতে বিক্ষোভকারী এবং দাঙ্গাবাজ সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করা হবে।



দাঙ্গাবাজ বা বিক্ষোভকারী (rioters)

কোন কথা নেই বার্তা নেই। হুট করে একদল লোক দোকানের মালপত্র লুট করে নিয়ে চলে গেল। বা মসজিদ ভেঙ্গে ফেলল। বা প্রতিমার মাথা ভেঙ্গে দিলো। এসব মানুষ হলো দাঙ্গাবাজ।

দাঙ্গাবাজ বা বিক্ষোভকারী হলো একদল মানুষ যারা একই ধরণের আবেগ দিয়ে পরিচালিত হয়, সহজে উত্তেজিত হয় এবং বেশিরভাগ সময়েই যারা সহিংস এবং আইন ভঙ্গকারি। [Chaplin(1985), Rosenthal(1994)]

যেমন ধর্মীয় দাঙ্গাকারী। রাজনৈতিক দাঙ্গাকারী। এরা নির্দিষ্ট ধর্মীয় বা রাজনৈতিক আদর্শের দ্বারা পরিচালিত হয়। এদের আদর্শের বিপরীতে কোন মত বা আদর্শ প্রকাশ পেলে তারা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এবং গায়ের শক্তি দিয়ে দমন করার চেষ্টা করে। দেশের আইন আদালত তার বিবেচ্য বিষয় নয়।

বিক্ষোভ বা বিক্ষোভকারী দল দুই রকম। [Staub & Rosenthal(1994)]

একটা অধিকার আদায় করার জন্য (conserving mob)। যেমন দেশে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের জন্য করা বিক্ষোভ। ত্রাণের জন্য বিক্ষোভ।

অন্যটি প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তন আনার বিক্ষোভ (reforming mob)। যেমন আমেরিকায় চলমান কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের বিক্ষোভ। আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার বিপক্ষে আয়োজিত বিক্ষোভ।

বিক্ষোভ বা দাঙ্গা কিভাবে তৈরি হয়

বিক্ষোভ কর্মসূচী কখনো রাতারাতি তৈরি হয় না। একদিনে শ খানেক মানুষ হাজার খানেক মানুষকে ধর্মের নামে মেরে ফেলে না। আমেরিকার চলমান বিক্ষোভ মিনিয়াপলিস থেকে শুরু হয়েছিলো। এরপর ৩৪ টা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এখন তা আমেরিকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে।

এক দুই জন মানুষ থেকে একটি বিশাল বিক্ষুব্ধ জনতা তৈরি হওয়া অনেকটা চিনির পানিতে মিছরির দানা জমা হওয়ার মত ব্যাপার। শুরুটা হয় একটি দিক পরিবর্তনকারী ঘটনা দিয়ে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মানুষ জমা হতে থাকে। তারা শুরুতে নিজেদের ভিতরে এটা নিয়ে আলোচনা করে। আলোচনা থেকে অনেক গুজব বা কনসপিরেসি থিওরি তৈরি হয়। এইগুলো মানুষ থেকে আরো নতুন মানুষে ছড়ায়। গুজব কিভাবে ছড়ায় এটা নিয়ে পূর্বের একটি লেখার লিংক দিলাম

পুরো ঘটনা এবং সে সম্পর্কে কনস্পিরেসি থিওরি কিংবা গুজব নিয়ে মানুষ যত বেশি নিজেদের ভিতর কথা বলে তত উত্তেজিত হতে থাকে। আলোচনার বিষয়বস্তুগুলো অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক (internal stimulation) হিসেবে কাজ করে। এর সাথে যুক্ত হয় বাইরের উদ্দীপনা (external stimulation)। যেমন ট্রাম্পের মত নেতাদের উস্কানি। মিডিয়ার উস্কানিমূলক প্রচারণা।

মানুষের উত্তেজনা একসময় ক্ষোভে পরিণত হয়। ক্ষুব্ধ মানুষেরা নিজের বুদ্ধি বিবেচনাকে বাদ দিয়ে একটা দল হিসেবে কাজ করা শুরু করে। Le Bon যেটাকে বলেছেন Crowd mind। এখন এই ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অল্প কথায় ব্যাখ্যা করা যাক।

মানুষ প্রাকৃতিকভাবে বিবেকবান এবং বুদ্ধিমান প্রাণী। সহ ব্লগার আপনার সাথে দূর্ব্যবহার করেছে। আপনার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হলো। এর মানে এই নয় আপনি তাকে খুঁজে নিয়ে তার মাথায় একটা বাড়ি দিবেন। কিংবা তার ঘর বাড়িতে আগুন দেবেন। কি করেন তাহলে? তপ্ত বাক্য বিনিময়ে ঝগড়া করেন। ইন্সট্যান্ট সর্বোচ্চ একটা দুইটা গালি দেন। কিংবা তাকে পরবর্তীতে এড়িয়ে চলেন।

এসব হলো আপনার ক্ষোভের একটা প্রতিকী আচরণ। সুস্থ বিবেকবান এবং বুদ্ধিমান মানুষ এসব বিমূর্ত আইডিয়া ধারণ করতে পারে। কিন্তু যেহেতু বিক্ষোভ দলে (mob) মানুষ নিজের স্বত্তাকে হারিয়ে ফেলে। তখন আর সে এই টাইপের উচ্চ মার্গীয় চিন্তা করতে পারে না।

তার চিন্তা ভাবনা হয়ে যায় প্রিমিটিভ পর্যায়ের। বিক্ষোভকারীরা তখন এমন উপায়ে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে চায় যেটা হবে মূর্তিমান এবং প্রকাশ্য। যেমন রাস্তা অবরোধ করা। গাড়ি ভাঙচুর করা। আগুন লাগানো। দোকান লুট করা। ইত্যাদি। [Momboisse(1970)]



এখন ক্ষুব্ধ মানুষেরা যে একটি দল হিসেবে আচরণ করে। এর কারণ কি? এক জনের ক্ষোভ কিভাবে অন্য জনের ভিতর ছড়ায়? জর্জ ফ্লয়েডের জন্য ৩৫ হাজার মানুষ কেন রাস্তায় নেমে পড়লো? কেন এক দুজন ছাত্র প্লাকার্ড হাতে রাস্তায় নামলে হাজার ছাত্র একাত্ম হয়?

এসব নিয়ে আসলে গত এক শতাব্দি ধরে মানুষ চিন্তা করেছে। নানা মুনি নানা মত দিয়েছেন। কয়েকটা নিয়ে দুয়েক কথায় বলা যাক।

কন্টাজিওন থিওরি গুস্তাভ লে বন ১৮৯৫ সালে তার 'দা ক্রাউড' নামের লেখা প্রকাশ করেন। তার দেওয়া 'ক্রাউড মাইন্ড' টার্মের কথা আগেই লিখেছি। তিনি বললেন, দাঙ্গাবাজদের ভিতর কিছু সংখ্যক মানুষ থাকে নাটের গুরু। তারাই সহিংস আচরণ শুরু করে। পরে সেটা বাকীদের ভিতর ছড়িয়ে পড়ে। অনেকটা ছোঁয়াচে রোগের মত। যেমন, যে কোন দাঙ্গায় কিছু মানুষ নির্দিষ্ট থাকে। যাদের কাজই হলো ভাঙচুর করা। সেটা গাড়ি, বাড়ি, মসজিদ, মন্দির যেটাই হোক।

কনভার্জেন্স থিওরি [Forsyth(1983)] এটা কন্টাজিওন থিওরির উলটা কথা বলে। এখানে ব্যক্তি আচরণের প্রভাবে কেউ বিক্ষোভে যুক্ত হয় না। বিক্ষোভকারী মানুষদের ভিতর একটা সাধারণ চাহিদা থাকে। সেই চাহিদার কারণে তারা জড়ো হয়। যেমন, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির শ্রমিকেরা গত তিনমাস বেতন পায় নি। তাদের টাকার অভাব। এই অভাবের কারণে তারা সারা বাংলাদেশ থেকে এসে একই জায়গায় জড়ো হয়েছে। আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গদের একসাথে জড়ো হওয়ার পেছনে কেবল জর্জ ফ্লয়েড ইস্যু কাজ করেছে তা নয়। তাদের দারিদ্র‍্যতাও একটা বড় কারণ। এই কারণে মধ্যবিত্ত হোয়াইট আমেরিকানরাও তাদের সাথে রাস্তায় নেমেছে।

ইমার্জেন্ট নর্ম থিওরি (Turner, R.C. and killian(1972)] এটা আসলে কন্টাজিওন থিওরির সীমাবদ্ধতা দূর করে। কন্টাজিওন থিওরি অনুযায়ী একজনে আগুন দিলে। বাকিরাও তাকে অনুসরণ করার কথা। কিন্তু আসল ঘটনার সময় কিছু মানুষকে দেখা যায় রাস্তার পাশে দাঁড়ায়ে হাত তালি দিচ্ছে! তারা বিক্ষোভে সমর্থন দিলেও হাতে কলমে সহিংসতায় অংশ নেয় না। কারণ কি? ইমার্জেন্ট থিওরি বলে আসলে সহিংসতা ছোঁয়াচে রোগ হলেও করোনার মতই এর মাত্রা সবার জন্য সমান না।

লেখার শুরুর দিকে বলেছিলাম বিক্ষোভকারীরা ব্যক্তি স্বত্তা হারিয়ে ফেলে। এবার সেটা আর একটু অন্যভাবে বলি। বিক্ষোভকারী ব্যক্তির সচেতন মন কাজ করে না। সে সম্মোহিত মানুষের মত আচরণ করে। কিন্তু মানুষের আচরণের উপর অবচেতন মনের (subconscious mind) বড় প্রভাব থাকে। দলীয় পরিবেশে যেহেতু সচেতন মন কাজ করে না। ফলে অবচেতন মনটাই বেশি কার্যকর হয়। এই থিওরিটা গুরুত্বপূর্ণ।

ইমার্জেন্ট নর্ম থিওরি অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, বিক্ষোভে এসে সঙ্গ দোষে কেউ খারাপ হয় না। বরং এই পরিবেশে মনের গহীন থেকে এক অজানা স্বত্তা বের হয়ে আসে। এতদিন যাকে বিবেক বুদ্ধি দিয়ে দমিয়ে রাখা হয়েছিলো। সেই আলাদিনের দৈত্যের মত বের হয়েছে।

এই তত্ত্বটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর সাহায্যে রেসিস্ট ধারণার পক্ষে সাফাই গাওয়া যায়। আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গদের চলমান আন্দোলনে যারা দোকান লুট করেছে, অফিস ভাঙচুর করেছে, সাংবাদিক পিটিয়েছে। আমরা বলি আফ্রিকান আমেরিকানরা জাত চিনাচ্ছে। এরা যতই শিক্ষিত হোক। আসলে এদের জাতটাই অলস, ফাঁকিবাজ, উদ্ধত এবং অপরাধ প্রবণ।

একটা গড়পড়তা গতানুগতিক (stereotypes) ধারণা দিয়ে একটা বিশাল জনগোষ্ঠিকে আলাদা বিবেচনা করাটাই হলো রেসিজমের মূল কথা। যদিও রেসিজম অনেক বড় ধারণা। সে হিসেবে রেসিজমের বঙ্গানুবাদ বর্ণবাদ কেবল মাত্র একটা দিক বোঝায়।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আফ্রিকান আমেরিকানদের যে আচরণ সেটা তাদের পূর্বপুরুষ আফ্রিকা থেকে এসেছে এই কারণে নয়। তিনশো বছর আগের হাতে পায়ে শিকল পরা আফ্রিকানদের সাথে বর্তমানে জ্যাজ এবং র‍্যাপ শোনা আফ্রিকান আমেরিকানদের আকাশ পাতাল তফাৎ। তারা যে আচরণ করছে তা পুরোপুরি আমেরিকান আচরণ। গত একশো বছরে আমেরিকায় যে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে সেটাই আজকের বিশাল জনগোষ্ঠির আচরণকে নির্ধারিত করেছে। বিক্ষোভে যে ধরণের সহিংসতা হচ্ছে এর পিছনে সম্পূর্ণভাবে আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট দায়ী। এখানে জেনেটিক্যাল কোন ব্যাপার নেই,পুরোটাই পরিবেশগত।

আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট কিভাবে বিক্ষোভ বা দাঙ্গা তৈরিতে উৎসাহ দেয়

তিন ধরণের প্ররোচনা(instigator) থাকে — নির্দিষ্ট, অনির্দিষ্ট এবং তাৎক্ষণিক।[staub(1993)]

অনির্দিষ্ট — পরিবেশের উচ্চ তাপমাত্রা, উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্ব। এই জন্য গ্রীষ্মকালীন দেশে দাঙ্গা বেশি হয়। গ্রামের থেকে শহরে দাঙ্গা বেশি হয়। মিল কারখানায় এবং জেলখানায় প্রায় বিক্ষোভ হয়। [United states riot Commission(1968)]

নির্দিষ্ট — সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট। সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট।

এখানে একটা মজার ব্যাপার আছে। বলা হচ্ছে যে, কেবল টাকা পয়সার অভাবে কেউ বিক্ষোভ করে না। কিন্তু বিক্ষোভের পিছনে অর্থনীতির একটা ভূমিকা আছে। দেশের অর্থনীতি যখন খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। তখন বিক্ষোভ হওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং উলটো দেশ যখন উন্নতি করছে তখনই বিক্ষোভ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

মানুষ তার নিজের গরিবী মেনে নেয়। কিন্তু পাশের বাসার মানুষকে উন্নতি করতে দেখলে তখনই সে নিজের দারিদ্র‍্যতার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। অর্থাৎ অভাব (absolute deprivation)-এর চেয়ে তুলনামূলক অভাবই (relative deprivation) মানুষকে বিক্ষোভের দিকে ঠেলে দেয়।[A.P. Goldstein & Segall(1983)]

যেমন, কন্টাজিওন থিওরিতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিক্ষোভের উদাহরণ দিয়েছিলাম। তারা তিনমাসের বেতন পায়নি। প্রথম মাসের বেতন বাকি থাকতেই কিন্তু বিক্ষোভে নামে নি। এক দুই মাস পর যখন দেখেছে অন্য ফ্যাক্টরিতে বকেয়া বেতন দেওয়া হয়েছে। তখনই তারা ঝাড়ু নিয়ে রাস্তায় নেমেছে।





একই ব্যাপার আমেরিকান বিক্ষোভেও ঘটেছে। দেশের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ হয়েছে। কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। 'চার কোটি মানুষ বেকার হয়েছে।'(সূত্রঃ চাঁদগাজি) মানুষ দেখতে পেয়েছে কিছু মানুষ অভাবে পড়ছে। অন্য দিকে কিছু মানুষ স্বচ্ছল জীবন যাপন করছে। 'ল্যান্ড অব অপরচুনিটি' এখন আর সবাইকে সমান অপরচুনিটি দিচ্ছে না। সাদারা সেটা সম্প্রতি অনুভব করছে। কালোদের অভিজ্ঞতা আরো বহু বছরের।

এই কারণে জর্জ ফ্লয়েড ইস্যুতে কালোদের সাথে সাদারাও রাস্তায় নেমেছে। এর পিছনে বিক্ষোভের সংজ্ঞানুযায়ী এন্টি রেসিস্ট আবেগ কাজ করলেও। অর্থনীতির বৈষম্যের একটি প্রত্যক্ষ ভূমিকা আছে।

ঠিক এই কারণেই বলা যায়, এই বিক্ষোভ কেবল বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে নয়। এইটা শুধু সাদার সাথে কালোর লড়াই নয়। গরীবের সাথে ধনীর লড়াই। সুবিধাভোগীদের সাথে সুবিধাবঞ্চিতদের লড়াই।




বর্তমান পৃথিবীতে ধনী গরীবের বৈষম্য কি জিনিস সেটা আমাদের থেকে অন্য কেউ ভালো বোঝার কথা না। সুবিধাভোগীরা দেশে কোন পর্যায়ের সুবিধা ভোগ করতে পারে তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।

আমরা রেসিস্ট জাতি নই। রেসিজম নিয়ে মাথা ঘামানো সময় নষ্ট। সেটা যদি সত্যি হয়ও, অন্তত এই দিকটির জন্যে আমাদের এই বিক্ষোভ নিয়ে ভাবা উচিত। আমাদের উচিত এই বিক্ষোভ থেকে শিক্ষা নেওয়া।

এত ক্ষমতাবান দেশেও যদি মানুষ রাস্তায় নেমে পুলিশের সামনে দাঁড়াতে ভয় না পায়। তাহলে একদিন এই দেশের মানুষ রাস্তায় নামলে কি অবস্থা হবে ভেবে দেখা উচিত। বিক্ষোভের সমস্ত প্রেক্ষাপটই এ দেশে উপস্থিত। স্পার্ক হিসেবে কেবল দরকার জর্জ ফ্লয়েডের মতো তাৎক্ষণিক(immediate/triggering) কোন প্ররোচনা(instigator)। কোটা সংস্কার আন্দোলন কিংবা নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে তার কিছু নমুনা দেখা গেছে।

সবশেষে আমেরিকান সুবিধাহীনরা (সাদা,কালো, বাদামী,নেটিভ,ইমিগ্রেন্ট সবাই) মানুষদের থেকে বাংলাদেশের বঞ্চিত মানুষেরা বেশি সভ্য

টেলিস্কোপিক ভিউপয়েন্ট দিয়ে এই ব্যাপারে মতামত দেওয়া কঠিন। যারা রাস্তায় নেমেছে তারা যতই সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠী হোক। শিক্ষায় সম্পদে পিছিয়ে থাকুক। উন্নত দেশের উন্নত পরিবেশে তাদের অবচেতন মন নিশ্চয়ই আরো উন্নত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তাদের আচরণে তা দেখা যায় নি।

আমরা অভাবে পড়ে বিক্ষোভ করেছি। ত্রাণের জন্য রাস্তা অবরোধ করা হয়েছে। ত্রাণের ট্রাকও লুট হয়েছে। কিন্তু তাই বলে এরকম কোথাও শোনা যায়নি যে গ্রামের মানুষ বাজারের দোকান লুট করেছে। পোশাক শ্রমিকরা বেতন পায়নি বলে সপিং মল থেকে লুট করে বাড়ি নিয়ে গেছে।

হয়তো আমরা নিজেরা নিজেদের জাতকে যতটা অসভ্য বর্বর মনে করি ততটা আমরা নই।



সূত্র:
The Psychology of Group Aggression.(Book) Arnold P. Goldstein.

ছবিসূত্র: Guuguru
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:২৯
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×